ডুয়ার্স সম্বন্ধে কিছু কথা
ডুয়ার্স। মুখে মুখে এই নামটি সারা দুনিয়ায় কমবেশি ছড়িয়ে পড়লেও ভুগোল বইতে এ নামের কোনও অস্তিত্ব নেই। ইংরেজ আমলে পাহাড়ি দেশ ভুটানে ঢোকার এন্ট্রি পয়েন্টগুলিকে বলা হত ‘দুয়ার’। তাকেই ইংরেজরা বলত ডুয়ার্স। সম্ভবত ইংরেজি শব্দ ‘Door’ আর বাংলা শব্দ ‘দুয়ার’ সমার্থক হওয়ায় ব্রিটিশ শাসকরা মুখে মুখে দুই ভাষার এই দুই শব্দের মেলবন্ধন ঘটায়। Doors আর ‘দুয়ার’ এই দিয়ে মিলে তৈরি হয় ডুয়ার্স বা Dooars.
তারপর নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। ইতিহাসের বহু সংযোজন ও সংকোচন-সম্প্রসারণের ফলে ভুগোলে ম্যাপে অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। বাংলার উত্তরে এই একফালি ভূমির সীমানা এখন মোটামুটি পুবে সংকোশ থেকে পশ্চিমে তিস্তা নদী। উত্তরে ভুটান আর দক্ষিণে বাংলাদেশ। নদীবহুল এই ভুখণ্ডের জলসম্পদ রাজ্যের মোট জলসম্পদের ৬০ শতাংশ। বনসম্পদও যথেষ্ট গর্ব করবার মত বইকি। অরণ্য-আকীর্ণ এই অঞ্চলে দুটি ন্যাশনাল পার্ক ও একটি টাইগার রিজার্ভ রয়েছে। রয়েছে আরো কয়েকটি অভয়ারণ্য।
ইংরেজরা উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে তুলেছিল চা-সাম্রাজ্য। উন্নতমানের এই চা-পাতাই একসময় নিয়ন্ত্রণ করত এখানকার অর্থনীতি। ইংরেজদের ছেড়ে যাওয়া সেই চা-সাম্রাজ্য আমরা ভারতীয়রা রক্ষা করতে পারি নি। যার ফলে শদেড়েকের বেশি চা-বাগানের বেশির ভাগের অবস্থাই খুব ভাল নয়। গত চল্লিশ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে নি।
পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে নদী জঙ্গল চা বাগান-- প্রকৃতি ডুয়ার্সকে এক অপরূপ সাজে সাজিয়ে তুলেছিল, যা পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবার পক্ষে আদর্শ। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যের নির্দিষ্ট পর্যটন নীতির অভাবে কিছু সরকারি অসরকারি রিসর্ট ছাড়া সেভাবে কিছু আজো কিছু গড়ে ওঠে নি, পুরোটাই ‘সম্ভাবনাময়’ পর্যায়েই আটকে আছে। একটা সময় স্থানীয় পর্যায়ে বন্যপ্রাণ বিভাগের উদ্যোগে জনপ্রিয় হয়েছিল ডুয়ার্সের ইকোপর্যটন। এখন সেই উদ্যোগের অস্তিত্ব সংকটে হলেও সেই ধাক্কাতেই এখনও খুঁড়িয়ে চলেছে এখানকার পর্যটন।
রেল ও বায়ুপথে যোগাযোগে আসাম ও উত্তরপুর্বের সুবিধাটুকু ভোগ করে বাংলার এই প্রান্তিকভূমি। কলকাতা ও দেশের নানা প্রান্তের সঙ্গে সহজ সংযোগের ব্যবস্থা থাকলেও সড়কপথে ফোরলেন তৈরির কাজে স্লথগতির ফলে মানুষের দুর্ভোগের চূড়ান্ত চলেছে গত কয়েক বছর ধরে। রাজ ঐতিহ্যময় কোচবিহারের গৌরব ডুয়ার্সের গররব হলেও, বহু প্রচেষ্টার পরেও আজ অবধি কোচবিহার বিমানবন্দর চালু না হওয়াটা যথেষ্ট অস্বস্তিকর তো বটেই, তা শিক্ষায় ও চিকিৎসায় ডুয়ার্স অঞ্চলের উন্নতির পথে অন্যতম অন্তরায়।