× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

নিথর তিস্তাপারে কবে ফের জেগে উঠবে পর্যটনের কোলাহল? একটি কোভিড ডে আউট!

প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
A Covid Day out to Gajaldoba

উত্তরে বর্ষা এসে গিয়েছে। আকাশ বেশিরভাগ সময় মেঘে ঢাকা। বহুদিন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের উপায় নেই। আমার মত যারা চার দেওয়ালের মাঝে নিজেদের কোনদিনও আটকে রাখেনি তাদের সমস্যা বেশি। কয়েকদিন থেকেই মনটা চাইছে শহর থেকে সামান্য দূরে বোদাগঞ্জে ভামরীদেবীর মন্দির ঘিরে যে মানুষদের জীবিকা নির্বাহ হয় তাদের অবস্থাটা একবার সামনে থেকেই দেখে আসি। মন্দিরের লালবাবাকে আমার স্ত্রী ভক্তি করেন। শুনলাম তিনি নাকি ভাল নেই। পত্নীদেবী সায় দিলেন, চলো ঘুরেই আসি সাবধানে।

খাওয়াদাওয়া সেরে বেলা প্রায় সাড়ে বারোটায় রওনা দিয়েছিলাম, গাড়িকে জীবাণু-টিবানু মুক্ত করে। শহরের রাস্তায় লোকজন ওই সময়টায় কম থাকে। তবুও দেখলাম পেট্রোল পাম্পে প্রচুর বাইক ভিড় করে আছে, তেল নিচ্ছে। মোদিজী তেলের দামে সেঞ্চুরি হাঁকাতে চলেছেন কিন্তু ওদের পরোয়া নেই। এই বেপরোয়া মনোভাবটাই সম্ভবত মোদিজীর ভরসাস্থল।

গোশালার মোড় থেকে উত্তরের যে নতুন রাস্তাটা শিলিগুড়ি গেছে, সেই রাস্তায় অল্প কিছু বাইক ছিল, কিন্তু দাপিয়ে বেড়ানো বালি বোঝাই পে-লোডারদের দল যেন জাদুকরের চুটকিতে হাওয়া। চার-চাকার গাড়ি বা বাস ট্রাকও খুব একটা চোখে পড়ল না। বেশিরভাগ সময়ই লক্ষ্য করেছি ডেঙ্গুয়াঝাড় রেলগেট আমাকে দেখলেই যেন বন্ধ হয়ে যায়, এনিয়ে আমার আগাগোড়াই বিরক্তির শেষ নেই। কিন্তু আজ সেই রেল গেট একেবারে উন্মুক্ত, পাশের দু-চারটে দোকান হাফ খোলা। চকচকে জনশূন্য রাস্তা, ৩৫ মিনিটে এলাম বোদাগঞ্জে ভ্রামরী দেবীর মন্দিরে। মন্দির প্রাঙ্গণে গাড়ির ভিড় নেই। মূল প্রবেশ পথ টিন দিয়ে আটকানো। সামনে দুটো বাইক দাঁড়ানো ছিল। পরে এসে দাঁড়াল একটা সরকারি গাড়ি।

মন্দির ঘিরে ৮-১০টা পূজা সামগ্রীর দোকান ছিল সেগুলো নেই। বাম পাশে ছাউনি দেয়া চা জলখাবারের দোকানগুলো বন্ধ, একটা টিমটিম করে জেগে আছে। দোকানদার বলল "কেউ তো এখন আসেই না। বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি"।

মন্দিরের পশ্চিম দিকে একটা বড় গেট আছে। সেটা পেরিয়ে মন্দিরের লোহার দরজার সামনে দাঁড়ালাম। এক তরুণ পূজারী গেট খুলে প্রবেশ করতে গিয়ে আমাদের বললেন "ভেতরে আসতে পারেন দুজন, কেবল পাঁচ মিনিটের জন্য"। প্রণাম সেরে বাইরে এলাম।

এক প্রবীণা বহুদিন ধরে মন্দিরের সামনে বসে ভিক্ষা করছেন। তাকে আজ নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা পাওয়া গেল না। আজকাল পরিচিত কাউকে অনেকদিন না দেখলে মনে হয় সে আর নেই। যেমন সেদিন আমার এক বন্ধু তো রাস্তায় দেখা হতেই বেশ চিৎকার করে বলেছিল "তুই শা.... বেঁচে আছিস। কতদিন দেখা হয়নি ভেবেছিলাম ওপারে গিয়ে আবার দেখা হবে"।

তা দেখলাম সেই প্রবীণা স্থান পরিবর্তন করে মূল মন্দিরের বাইরে সরে এসেছেন। কেমন অক্লেশে বললেন "আমার ওই কঠিন রোগটা হয়নি রে। আমাকে এখানে আসতেই হয় নাহলে যে পেটের ভাত জুটবে না। আজকাল রোজ পেট ভরানোর মত ভিক্ষাও পাই না"। এখানেই কয়েকজন অল্পবয়েসী ছেলে সবজি বিক্রি শুরু করেছিল ওরাও কেউ আর আসে না।

শুনলাম মন্দিরের পূজারী লালবাবা অসুস্থ, শিলিগুড়িতে নার্সিং হোমে আছেন। কেউ একজন বলল কোভিড নয়। তবে ওনার শরীরের অবস্থা নাকি জটিল।

মানুষ নেই, তাই ভিড় করেছে চেনা-অচেনা অনেক পাখি। তাদের অবিচ্ছিন্ন কলতানে মুখরিত প্রাঙ্গকণ। অন্যান্য দিন শতশত পূণ্যার্থীদের ভিড়ে দুপুরে মন্দির গমগম করে। বিশেষ তিথি ছাড়া সন্ধ্যায় আরতিপর্বে অল্প দু-চারজন আসে। বেশ কয়েকবার বিয়ে করতে দেখেছি তরুণ তরুণীদের, তারা কখনও শুধুই দুজন কখনও সঙ্গে বরযাত্রী। কেউ বা ঘটা করে আমাদের প্রণামও করেছে। প্রাণ খুলে ওদের আশীর্বাদ করেছি।  ইদানিং বিয়ের পাত্র-কন্যা একদম নাকি আসে না। সবাই যে পালিয়ে বিয়ে করে এমনটা নয়। আর্থিক সঙ্গতি কম থাকলে কেউ বা মাতৃমূর্ত্তিকে সাক্ষী রেখে আজীবন পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার শপথ নেয়। এই জনহীন মন্দিরে দাঁড়িয়ে কত কথাই না মনে ভিড় করে আসছিল।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির সেদিন বিরাম নেই। পৃথিবীর বুক থেকে সমস্ত তাপ কোন মন্ত্রবলে উধাও। হালকা এক অপার্থিব কুয়াশায় মোড়া অরণ্যপ্রান্ত। কেবল দুই আদিবাসী তরুণী ও এক তরুণ পরস্পরের হাত জড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল মন্দির প্রাঙ্গনে। ভাবছিলাম টোটো চেপে কাছাকাছি গ্রাম থেকে কত মানুষ আসত সেই ভক্তকুলের দেখা নেই। সেই টোটো চালকদের রোজগার তাহলে কি বন্ধ?

হাতে তখনও অনেকটাই সময়। ভাবলাম উত্তরের উদীয়মান পর্যটন কেন্দ্র ‘ভোরের আলো’ আর তিস্তা ব্যারেজ এই সুযোগে ঢুঁ মেরে এলে কেমন হয়? কত্তোদিন যাই নি সেই প্রিয় পথে!

ভাল লাগল বহুদিন পর বোদাগঞ্জ থেকে তিস্তা ব্যারেজ পর্যন্ত রাস্তাটার চকচকে মার্জিত রূপ দেখে। পথ আরও শুনসান। ভুট্টার আবাদ রবি মরশুমে ভাল হয়নি। বাদাম চাষ হয়েছিল বিপুল এলাকা জুড়ে। ফসল ভাল হয়েছে। কিছু মানুষ বাদাম বস্তাজাত করায় ব্যস্ত।

এসে পৌছালাম জনহীন তিস্তা ব্যারেজ প্রান্তে। হাওয়া মহলে গাড়ি রেখে তিস্তার তন্বী রূপ পরখ করতে পারে দাঁড়ালাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের ছায়া পড়েছে নদীতে। জল থেকে উঠে আসছে মিহি জলীয় বাষ্প, নিয়েছে কুয়াশার রূপ। ঝাপসা হয়ে রয়েছে চরাচর। লোকজন নেই। রাস্তার ওপারে প্রচুর খাবারের দোকান ছিল, সব বন্ধ। অন্য পারে পড়ে রয়েছে গোটা কুড়ি নৌকা যেগুলো পর্যটক নিয়ে পাখি দেখাতে সংলগ্ন জলাশয়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝিরা কেউ নেই। ভেসে আছে শ্রীহীন নৌকার সারি। 

সামনের বাজারে একটা দোকানর ঝাঁপ কিছুটা ওঠানো। সামনে উল্টে রাখা বৃষ্টি ভেজা প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল। জিজ্ঞেস করলাম ‘চা হবে’? একটি মেয়ে উত্তর দিল ‘কয়টা’? একটা সারমেয় এসে দাঁড়াল, বিস্কুটেই সন্তুষ্ট। মোছা চেয়ারগুলো স্যানিটাইজ করে বসলাম। চা খেতে খেতে মালকিনকে জিজ্ঞেস করলাম, সামনে তরি তরকারি, মাছ নিয়ে যে বাজারটা বসত সেটা কোথায়? মহিলা বললেন, নাই। জিজ্ঞেস করলেন পাল্টা, আপনারা না আসলে কিনবে কে? আর জলপাইগুড়ি টাউনে এত করোনা কেন? মানুষগুলান কি ভিড়ে যায়? মাস্ক পরে না? 

কোনও উত্তর না দিয়ে মৃদু হেসেছিলাম। চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবছিলাম, ডুয়ার্সের পর্যটন যে আজ কোন গভীর সঙ্কটে তার কোনও কুলকিনারা নেই। মনে হল, সময় হয়ত পরীক্ষা নিচ্ছে, দেখে নিতে চাইছে প্রকৃতির প্রতি মানুষের আচরণ আদৌ বদলেছে কিনা। অতিমারি বারবার এসে বলে দিয়ে যাচ্ছে, বেঁচে থাকাটা সত্যিই আজ করুণা!

দিনের আলো ফুরিয়ে আসছিল নিথর গজলডোবার তিস্তা জুড়ে। শুনলাম মানুষের ভিড় নেই তাই এলাকায় হস্তিকুলের আনাগোনা বেড়েছে। ওঁরাই পরামর্শ দিলেন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবার আগেই বেরিয়ে যাওয়ার। গাড়িতে উঠে বসতেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হল। ক্রমশ কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ছিল ক্যানেল পেরিয়ে ওপারের গাঢ় সবুজ বৈকুণ্ঠপুর অরণ্যে। তার মধ্যেই আমরা ধীরে ধীরে ফিরছিলাম, যেন এক পরাবাস্তবের পথ বেয়ে!

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team