সারা বাংলায় এই পাখি দেখা যায়। শুধু বাংলায় কেন সারা পৃথিবীর প্রায় ৮০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকাতে এদের দেখা যায়। এই পাখির আবাস স্থল রৌদ্রোজ্জ্বল বন, মানুষের আবাস স্থলের আশেপাশের ঝোপঝাড় গাছপালা, গ্রাম বাগান। এই পাখি গম্ভীর স্বরে খুব জোরে জোরে কুব কুব করে একবারে ৬-৭ বার ডাকে। অনেক দূর থেকে শোনা যায়। একবার একদিকে কুব করে ডেকে উঠলে অন্যদিকে আর একটা কুবো ডেকে ওঠে কুব কুব করে। এরা সকালে ও সন্ধ্যায় বেশি সক্রিয় থাকে বলে কুব কুব ডাক সে সময়ে বেশি শোনা যায়। বাংলায় এই পাখিকে কুসংস্কারবশত অমঙ্গলের পাখি বলা হয়। এর সঠিক কারণ কী, কেউ জানে না। হয়তো সন্ধ্যার শঙ্খধ্বনিতে বিঘ্ন ঘটায় বলে এই সুন্দর পাখিটির ডাক মানুষের জন্য অমঙ্গলের বলে ভাবা হতে পারে।  

এই পাখিকে গজাল নখ পাখিও বলে। কারণ পায়ের নখগুলো গজালের। এই নখ দিয়ে, ব্যাঙ গিরগিটি বিষাক্ত ভাইপার সাপ ইত্যাদি শিকার ধরে। এদের ঠোঁট খুব শক্ত এবং তীক্ষ্ণ। এই ঠোঁট দিয়ে শামুক, হলদে করবী ফুলের বিষাক্ত ফল ফাটিয়ে খায়। যে পাখি ভাইপারের বিষ, হলদে করবী ফলের বিষ হজম করে তাকে অশুভ না বলে নীলকণ্ঠ বলা যেতে পারে। অবশ্য এই পাখির গলায় নীলাভ আভা থাকে। পিঠ বা ডানা তামাটে বাদামী। শরীরের নিচের দিক কালো। চোখ রক্তের মতো লাল।  

এই পাখি একা বা জোড়ায় থাকে। এদের ডানা শরীরের থেকে বড় হলেও এরা হেঁটে বেড়াতে ভালোবাসে। অল্প দূরত্ব ওড়েও। প্রজননের জন্য নারী বিশ্বাস রাখে এক পুরুষে। ঝোপঝাড়ে বা বড় গাছের ডালে আগোছালো বাসা বানায় পুরুষ পাখি। পূর্বরাগে পুরুষ পাখি নানা ধরণের খাদ্য এনে এনে খাওয়ায় স্ত্রী পাখিকে। খাদ্যে সন্তুষ্ট হলে স্ত্রী পাখি মিলনে রাজি  হয়। ৩-৫ টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী পুরুষ দুজনেই ডিম তা দেয়। দুই সাপ্তাহ পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। সব পাখিদের হয়ে দাঁড়কাক কুবোদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধে নামে। কুবো যেমন অন্য পাখিদের ডিম ছানা খেয়ে নেয়, দাঁড়কাক কুবোদের ডিম সুযোগ পেলে খেয়ে নেয়। প্রাক বর্ষা বা বর্ষাকালে এই জন্য আকাশে কুবো আর দাঁড়কাকের লড়াই দেখা যায়।     

কুবোরা নিজেদের এলাকা নির্দিষ্ট রাখে। এক জোড়া কুবোর জন্য আনুমানিক ৪ হেক্টর বা ৩০ বিঘা বা ৬০০ কাঠা জমি প্রয়োজন। গ্রামে বাগানে বনে এদের বাসস্থানের অভাব না হলেও, শহরে এদের বাসস্থানের অভাব হচ্ছে। শহরের গাছের সংখ্যা এবং ঝোপঝাড়ের এলাকা কমে যাবার জন্য এদের পছন্দের হাঁটার জায়গার অকুলান হচ্ছে। পছন্দের জায়গা না থাকলে কে আর থাকে! শহরে কমে যাচ্ছে কুবোদের সংখ্যা। কুবোরা কমে গেলে শহরের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা ভাইপারদের শিকার করবে কে? শহরে শঙ্খচূড় নেই যে সাপ ধরে ধরে খাবে। জনবহুল শহরে ভাইপার বাড়লে তো সমূহ বিপদ। সমাজ বন্ধু কুবোদের শহরে ফেরাতে রক্ষা করতে হবে গাছ জলা আর ঝোপঝাড়। 

শ্রেণী: পক্ষী (Aves) বর্গ: কুকুলিফর্মিস (Cuculiformes) পরিবার: কুকুলিডি (Cuculidae) গণ: সেন্ট্রোপাস ( Centropus) প্রজাতি: সাইনেন্সিস (sinensis)।