পুরনো দিনের মানুষজন বলছেন, আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিকের আগমন ঘটে গেল, তবু রোদের তেজ কমে না। ঘুর্ণিঝড়ের ভ্রূকুটি থাকলেও নীল আকাশে শরত বা হেমন্তের ছিটেফোটা নেই। বিজ্ঞানী গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতি নাকি ঘেঁটে ঘ হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর ওয়াটার টাওয়ার তিব্বতকে করায়ত্ত রাখার অহঙ্কার করে যে চীন, সেই চীনে নাকি মহাপ্লাবনের ইঙ্গিত, কোটি কোটি মানুষের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা। তাঁরা বলেন, রুষ্ট হিমালয়ও যে কোনওদিন আছড়ে পড়তে পারে ক্লাউড বার্স্ট হয়ে, যদিও কেদারনাথের নমুনা এর আগে যা পেয়েছি তাতে আমাদের খুব একটা হেলদোল ঘটেছে বলে মনে হয় না। প্রকৃতির রোষ একটা আম্ফান বা একটা কোভিডে শেষ হয়ে যাওয়ার নয় একথা বোধহয় সবাই টের পাই এখন। তাই চীনের দুঃখে আমাদেরও দাঁত বের করে মজা পাওয়ার কিছু নেই।
তবু বাঙ্গালীর দেবীপক্ষে নানা পক্ষের চাপানউতোর অব্যাহত থাকে। একপক্ষ আছেন যাদের রোজ রুটিনের বাইরে না বেরোলেও চলে যায়, খবরে তীক্ষ্ণ নজর রাখেন, তাঁরা বলছেন ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ এসে পড়ল বলে। তাঁদের আগের বারের পূর্বানুমান মেলেনি ঠিকই, এবার কিন্তু হাসপাতালে জায়গা থাকবে না। দ্বিতীয় পক্ষ বলছেন সব বোগাস। কারণ লক্ষ লক্ষ কোটি মুদ্রার স্যানিটাইজার শিল্প বা ভ্যাক্সিন বাণিজ্য শেষ হয়ে যেতে পারে মানুষের ভয় যদি কমে যায়। ভয় বজায় রাখতেই করোনাকে রাখতে হবে। তৃতীয় পক্ষ এই দুয়ের মাঝে বিরাজ করছেন, আহা পেটের ভাত জোগাতে বের হতে তো হবেই, আরও পাঁচটা রোগের মত বা হার্ট অ্যাটাক কিংবা পথ দুর্ঘটনায় মরতে হতেই পারে, তাই সাবধানে চলাফেরা করাই একমাত্র পথ।
এরপর চতুর্থ থেকে দশম বাকি সব পক্ষ রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, তাঁরা করোনাকে ভয় করেন না আর, ক্ষমতা দখল বা টিকিয়ে রাখা তাঁদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাঁরা লকডাউনের সময়ে মানুষকে চাল দিয়েছেন, তারপর জনসংযোগ করেছেন, তারপর কিছুদিন অন্য নেতাকে কাঠি করেছেন, তারপর একে একে করোনাক্রান্ত হয়েছেন, তারপর তাঁরা কেউ কেউ পক্ষ বদল করছেন। আগামী পাঁচ ছটা মাস পুরোপুরি তাঁদের দখলে থাকবে, তাঁরা মানুষকে নানা পক্ষের নানা রঙের টুপি পরাবেন, হাতে নানা রঙের ঝান্ডা ধরাবেন। ভাঙ্গা বাটি হাতে ভিখিরি কমাস আগে যেমন অবাক হয়ে দেখেছে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সিল করা মিনারেল জল, তেমনই কমাস পরে অবাক হয়ে দেখবে কোনও নতুন মহামন্ত্রী আসছে বলে উৎখাত করা হচ্ছে তাদের ফুটপাথের ডেরা।
তবু এ সবের মাঝেই দেবীপক্ষ আসে, নতুন ধানের নুয়ে পড়া শিসে দোল খায় ফিঙ্গেপাখি, গ্রামবাংলার হাজার লক্ষ দিঘিতে পুকুরে সন্ধ্যায় ভাসে মঙ্গল প্রদীপ, এ কটা দিন মায়ের গন্ধ গায়ে মেখে ঘুমোতে যায় অবোধ অভাগা সন্তান। তারপর তো সব মাকেই একদিন চলে যেতে হয়, তখন যাবতীয় পক্ষ বিপক্ষ তুচ্ছ করে শত শত কোলাকুলি হয়, সব রং মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। কার প্রকৃত বর্ণ কী এসময় সত্যিই ঠাহর করা যায় না। তারপর হাজার শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবীর বিসর্জনে সূচিত হয় নতুন আশার কাল। নতুন যুগের পথ এঁকে দিয়ে যায় মহানিরঞ্জন।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team