× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
ডুয়ার্স থেকে দূরে নয়

মাত্র কয়েক ঘন্টায় মানাস! বর্ষা পেরোলেই চলুন এই অবাক ঐতিহ্যময় অরণ্যে

শান্তনু মাইতি
Manas National Park a few hours away

আমরা তখন জিপসি চেপে চলেছি বুড়াবুড়ি ক্যাম্পের দিকে। ক্যাম্প বাড়ির তিনতলা পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। জিপসিতে বসে বসেই দেখছিলাম অনেকটা দুরে এক পাল হাতি বাচ্চাকাচ্চা সমেত দ্রুত হেঁটে চলেছে। শুনলাম ওরা যাচ্ছে ঐ বুড়াবুড়ি ক্যাম্পের সামনের মাঠে, নুন খাওয়ার জন্য। অকুস্থলে পৌঁছে দেখি আগে থেকেই গোটা দশেক হাতি ওয়াচ টাওয়ারের সিঁড়ি ঘিরে রেখেছে, যেন অবরোধ গাড়ি থেকে নেমে সিঁড়ি অব্দি পৌঁছানোই মুশকিল। কিছুক্ষণ পরে এই দলটি পাশের জঙ্গলে চলে গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সেই হেঁটে আসা দলটির আবির্ভাব হল। এরা দেখি আরো আগ্রাসী, লম্বা শুঁড় বাড়িয়ে নুনের খোঁজে যেন আমাদের চুমু খেয়ে নেবে। যথেষ্ট ভয়ের বৈকি আমাদের মত শহুরে জঙ্গলপ্রেমীদের কাছে। বনকর্মীরা বললেন, যদি সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন এখানে, আরো কত নাটক দেখতে পাবেন। হাতির পরে ঘাস খেতে আসবে গাউর, মহিষের দল, কিছু সম্বর, হগ ডিয়ার, কয়েকটা গন্ডার। সন্ধ্যার মুখে হেঁটে আসবে লেপার্ড, টাইগার। আমাদের সে উপায় বা ভাগ্য নেই, তাই চললাম অন্য দিকে। 

সকাল সকাল রওয়ানা দিয়ে ঘন্টা চারেকেই পৌঁছে যাওয়া যায় এই অরণ্যে। দুপুরের ভোজন সেরে জঙ্গলে ঢোকার পালা। গেট পেরিয়ে পাঁচ মিনিটের মাথায় ডানদিকের সবুজ ঘাস জমির জঙ্গলে দেখলাম একটি বাচ্চাসহ দুটি মা গন্ডার। এও তো ডুয়ার্সই, বাংলার সীমানা পেরিয়ে আসামের ডুয়ার্স। কিন্তু আমাদের জলদাপাড়া বা গরুমারার নিরীহ নিরামিষ জঙ্গলের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর, অনেক বেশি বড় ও বৈচিত্র্যময়, অনেক বেশি রোমাঞ্চকর। জীব বৈচিত্র্যে মানাস ভারতের সব জঙ্গলের মধ্যে সবার উপরে। কাজিরাঙা বাদে একমাত্র জঙ্গল, যেখানে পাওয়া যাবে ইন্ডিয়ান বিগ ফাইভ, এলিফ্যান্ট, রাইনো, বাফালো, লেপার্ড আর টাইগার। আছে গাউর অর্থাৎ ইন্ডিয়ান বাইসন, এক জঙ্গলে বাফালো আর বাইসন, এ তো কোথাও দেখা যাবে না। তিনশোরও বেশি পাখি আছে, তার মধ্যে লুপ্ত প্রায় বেঙ্গল ফ্লোরিক্যানও খুঁজে পাওয়া যায়। এক জঙ্গলের মাথায় যত রকমের তকমা হতে পারে, তার সব কটি আছে মানাসের, ন্যাশনাল পার্ক, টাইগার প্রজেক্ট, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

বুড়াবুড়ি থেকে ঘন্টাখানেক দুরে কুরিবিল ক্যাম্প। সন্ধ্যার আগে আগে সেখানে পৌঁছে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখি সামনে বিশাল সবুজ ঘাস জমি। কিছু হগ ডিয়ার চরে বেড়াচ্ছে আর কয়েকটা বার্কিং ডিয়ার দ্রুত লাফিয়ে রাস্তা পারাপার করল। উঁচু এলিফ্যান্ট গ্রাসের মাঝে চোখ যায় না। এক বন কর্মী বললেন, ঐ ঘাস বনে নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে বাঘ, আপনাদের ভাগ্য ভালো থাকলে দর্শন পাবেন, আমরা তো প্রায়ই দেখি। মানাসে বাঘ, ভাবলেই রোমাঞ্চ লাগে। ফেরার পথে মনে পড়ল, গতবার এই পথেই আমাদের রাস্তা আটকে রেখেছিল বিশাল চেহারার এক দাঁতাল, আধঘণ্টা চুপচাপ দাঁড় করিয়ে রেখেছিল, সে এক দমবন্ধ অবস্থা।

পরের দিন ভোর ভোর জিপসি সিধা চলল মাথানগুড়ির দিকে। বাঁশবাড়ি থেকে মাথানগুড়ি বাইশ কিলোমিটার। এ পথের দু ধারে চোখ মেলে রাখলে কত কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। শিংওয়ালা সম্বর অবাক চোখে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে, ক্যামেরার শাটার চাপার আগেই লাফ মেরে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। মাথার উপর উঁচু গাছের ডালে লাফিয়ে বেড়ায় জামবো সাইজের জায়েন্ট স্কুইরেল। পেখম ঝুলিয়ে বসে থাকে ময়ূর ,আরো অগুন্তি পাখি। আমার হয়েছে জ্বালা, সব সময় ক্যামেরায় চোখ রেখে থাকি, যদি একটা ভালো ছবি তুলতে পারি। জঙ্গলের অসাধারণ সৌন্দর্য, বাঁকে বাঁকে রহস্য রোমাঞ্চ, পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপট ভালো করে উপভোগ করা যায় না। 

এইসব করতে করতে পৌঁছে গেলাম মাথানগুড়ির টিলার উপর সরকারি বনবাংলোর সামনে। ক্যালেন্ডারের ছবি।  নীচে তীব্র স্রোতের মানাস নদী, আরেক নাম বেঁকি। ওপারে অল্প ঘাস জমি আর সবুজ জঙ্গলের উপর থরে থরে সবুজ নীল পাহাড়, ভুটান যেন হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। এখানে চা পাওয়া যায়। বাংলোর বারান্দার সামনে পাথরের উপর বসে সামনে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। নদীর ওপারে একটা দাঁতাল শুঁড়ে ধুলো উড়িয়ে গায়ে মাখছে। জলে গা ডুবিয়ে শুয়ে বসে এক দল ওয়াটার বাফালো। মনে পড়ল গতবার এই অরণ্য নিবাসেই ছিলাম আমরা চার বন্ধু পরিবার। রাতে বাইরে এক পা বাড়াতে ভয় করে, বাঘ না হোক একটা লেপার্ড যদি ওৎ পেতে থাকে। মহিষ আর হাতির পাল নাকি বাংলোর গেটের মুখেই চলে আসে। 

বাংলোর পেছনের রাস্তা ধরে সামান্য গেলেই ভুটান, একই অরণ্যের নাম রয়্যাল মানাস ন্যাশনাল পার্ক। নদীর এ পাড়ে যাওয়া যায় ছোট্ট ভুটানি জনপদ পানবাং পর্যন্ত, আর নদীর ওপারে নৌকা বেয়ে ওঠা যায় রয়্যাল মানাসের রহস্য ঘন জঙ্গলে। শুনলাম এখন সরাসরি ওপারে ল্যান্ড করা যায় না। থিম্পু থেকে পারমিট করে আনতে হয়। সেবার আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড ছিল আলম আর জামাল। লুপ্তপ্রায় গোল্ডেন লাঙুরের খোঁজ খবর করছিলাম। জামাল বলল, এখন ঐ সোনালি বাঁদরের দেখা পাওয়া যায় শুধু পানবাড়ি রেঞ্জে, এই বাঁশবাড়ি রেঞ্জে নয়, কিছু আছে ভুটানের মানাসে, নদীর ওপারে, ওদের এক ফরেস্ট গার্ডের সাথে চেনাশোনা আছে, চলুন আপনাদের ঘুরিয়ে আন। খরস্রোতা বেঁকি ছোট ডিঙি নৌকায় পার হয়ে ওপারে উঁচু পাহাড় জংগলে ঘুরে অনেক কষ্টে কয়েকটা লাঙুরের দেখা পেয়েছিলাম সেবার । ভুটানি ফরেস্ট অফিসের সামনে আলাপ হল রেঞ্জার সাহেবের সঙ্গে। তার পাশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল হরিণ আর গাউর। জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো পোষা নাকি? বললেন এখানে তো পোচিং হয় না, বন্যপ্রাণীরা তাই মানুষকে ভয় পায় না। আছে কুড়ির বেশি বাঘ, অনেক হাতি, গাউর, বাফালো। পুরো পাহাড় বলে জিপ সাফারির উপায় নেই, পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে, দু তিনটি ট্রেইল আছে,তবে থিম্পু থেকে পারমিট আনতে হয়।

বিকেলের সাফারি আক্ষরিক অর্থেই হয়ে গেল বার্ডিং ট্যুর। জঙ্গলের পথে চলতে চলতে এ সময় সহজেই কানে আসে ব্লু থ্রোটেড বারবেটের কুরুল কুরুল ডাক। খুঁজে পেলাম লিনিয়েটেড, কপার স্মিথ আর গ্রেট বারবেট। এ জঙ্গলে রেড জাংগল ফাউলের সংখ্যা অনেক। জঙ্গলের একটানা ঘন সবুজ রং যখন চোখে একটু একঘেয়েমি ক্লান্তি আনে, তখন সেই সবুজ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা বন মোরগের তীব্র লাল হলুদ রং কী আনন্দ যে আনে, বলে বোঝানো যায় না। আর অবাক হয়ে গেলাম যখন ড্রাইভার হঠাৎ জিপসি থামিয়ে অল্প দুরে আঙ্গুল তুলে দেখাল, কালিজ ফিজানট। একটা বাচ্চা সহ মা গাউর রাস্তা পার হল, এদের দেখা পাওয়া আজকাল ভাগ্যের ব্যাপার। ইয়েলো ফুটেড গ্রিন পিজন, বড় সাইজের ইম্পিরিয়াল গ্রিন পিজন, অল্প চেনা রেড কলারড ডাভের ছবি তোলার পর অবাক করে দেয় এমারালড ডাভ। রোজ রিংড প্যারাকিট ছাড়া আরেক আকর্ষণ অগুন্তি রেড ব্রেসটেড প্যারাকিট। আগের দিন দুবার দেখেছি ক্রেস্টেড সারপেনট ঈগল, আজ পেলাম একটা ব্ল্যাক ঈগল। 

ঘন জঙ্গলে পথ আটকানো এক রাস্তা ধরে চলতে চলতে এক বাঁকের মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড বললেন, ঠিক ঐ খানে তিন দিন আগে দেখা গেছে ব্ল্যাক প্যান্থার। জানি আমাদের ভাগ্য অত প্রসন্ন নয়, একটা লেপার্ড পেলেই যথেষ্ট। সামনে উঁচু গাছের ডালে এদিক ওদিক ওড়াউড়ি করছিল দুটো র‍্যাকেট টেইলড ড্রংগো, ছবি তুলতে পারলাম না। ঠিক উল্টো দিকে চুপচাপ বসে ছিল একটা ডলার বার্ড, সেটার মোটামুটি একটা ছবি হল। সব গাইডের মত আমাদের গাইডেরও চোখ ভালো, বলল, ঐ দুরের গাছের উপর দুটো হর্ন বিল এসে বসল। দ্রুত সেখানে পৌঁছে বুঝলাম আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন, কয়েক জোড়া ওরিয়েন্টাল পায়েড হর্ন বিল দেখলাম ওড়াউড়ি করছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে। ফেরার পথে ব্রেক করে গাড়ি দাঁড়াল, পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মত পেয়ে গেলাম কয়েকটা গ্রেট ইন্ডিয়ান হর্ন বিল। বললাম, সবই তো হল, বাঘ বা লেপার্ড নয় একটা বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান খুঁজে পেলে ষোলো আনা পূর্ণ হয়ে যেত। বুঝতেই পারছি, দু চারবারে দেখে ফেলার জঙ্গল নয় মানাস, এই অবাক অরণ্যে ছুটে ছুটে আসতে হবে বারবার। 

 

তথ্যঃ উত্তরবঙ্গ থেকে ছোট ছোট গ্রুপে মানাস ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে নিয়ে যায় ‘হলিডেইয়ার’ নামে একটি সংস্থা। চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ৯৪৩৪০৪২৯৬৯

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team