নির্বাচনী ঝড়ে ভাসছিল বাংলা। সে ঝড় কমতেই কোভিডের দ্বিতীয় ঝড়, যার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমরা। ফলত খবরের পর্দায় সারি সারি জ্বলন্ত চিতার ছবিতে আতঙ্কিত মধ্যবিত্ত আবার তার মধ্যপ্রদেশের স্ফীতি নিয়ে উদবিগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্তত হাসপাতালের কাগজে কলমে দেখা যাচ্ছে আশপাশের যে টপাটপ মৃত্যু ঘটছে তাদের প্রায় সবার শরীরেই মিলছে কোভিডের বিষ। অসুস্থতার আরেক নাম এখন কোভিড পজিটিভ, সুস্থতার আরেক নাম এখন ‘বি নিগেটিভ’। সিস্টেম নড়বড়ে হলেই যে কোভিড ও কোভিড-সৃষ্ট আতঙ্কের কালো চাদর উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে তোমার আমার সাধের প্রাণ! গেলবারের গৃহবন্দীকালে নিগেটিভ থাকার বাসনায় সিস্টেম শুদ্ধ করবার যে প্রয়াস শুরু করেছিল শহরের মধ্যবিত্ত, তাতে ইদানিং কিঞ্চিৎ ভাটা পড়েছিল বইকি। সরকারের ইচ্ছা মোতাবেক ইমিউনিটি আর কোয়ারেন্টাইন এই শব্দদুটিতে আবার বিশ্বাস ফিরে আসছে, নাস্তিকের ঈশ্বরে বিশ্বাস ফিরবার মত করে।
বাঁচবার বাসনায় আজ প্রবল আর্তি জন্মেছে অক্সিজেনের প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় রচিত হচ্ছে শত শত আবেগ ও অক্সিজেন ভরা সাহিত্য। সত্যিই কি আমাকে অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্ব কেবল সরকারের উপরই বর্তায়! গত এক শতাব্দী ধরে যেভাবে নিজের হাতে জঙ্গল কেটে জলাশয় বুজিয়ে ঘরবাড়ি তুলেছি, গাছ কেটে সুদৃশ্য আসবাব বানিয়েছি, বাগান সাফ করে ইমারত তুলেছি, কই কোনও সরকার তো কখনও বাধা দেয় নি! তবু আজ আমার বুড়ো বাপটা কিংবা বাচ্চা ছাওয়াটা হাসপাতালে খাবি খেতে থাকলে তাঁকে অক্সিজেন জোগানোর দায়িত্ব কি কেবল সরকারেরই? না হলেই বিক্ষোভের আগুন জ্বলবে, শহীদের বেদীতে ফুল চড়াবে বিপ্লবী বাংলা? এমনটাই তো দেখে আসছি জন্ম ইস্তক! এমনটাই কি দেখে যেতে হবে মৃত্যু তক্, হে প্রভু?
কিন্তু এর পাশাপাশি মূঢ় অসচেতন-অর্থবান-অর্ধশিক্ষিত মানুষদের প্রকৃতিতে অক্সিজেনের খোঁজার তাগিদ কি বাড়বে? তাঁদের মাথায় কি প্রশ্ন আসবে না-- অক্সিজেন ছাড়া শুধু ইমিউনিটি বা কোয়ারেন্টাইন কি রক্ষা করতে পারে মানুষকে? বোধহীন জননেতাদের কি বোধগম্য হয় না যে ফুসফুসের নিয়মিত যত্ন না নিলে মানুষের জন্য তার হৃদয় শত ভেউ ভেউ কাঁদলেও তার হৃদযন্ত্রটি বিকল হতে পারে যে কোনও সময়? তবে কি এবার নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য রক্ষায় ঘরে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই হবে র্যাশন কার্ড দেখে? পাড়ায় পাড়ায় অক্সিজেন পার্লারের ছড়াছড়ি বাড়বে? অক্সিজেন সালোনে ইনভেস্ট করবে বড় বড় ব্র্যান্ড? না কি গাঁটের কড়ি খরচ করে নিয়মিত সপরিবারে বেরিয়ে পড়বার তাগিদ বাড়বে শুদ্ধ দেশি অক্সিজেনের খোঁজে?
আজ দক্ষিণে প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহে কোভিডের দুনিয়ায় বাংলার উত্তরে বইছে হিমেল বাতাস, বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্লাবনে কোয়ারেন্টাইন এখানে মধুর। বাংলার উত্তরেই মিলছে যাবতীয় ইমিউনিটির সন্ধান। বাংলার উত্তরে ডুয়ার্স-তরাই-হিমালয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিনির্ভর ইকোপর্যটনের প্রসার কেবল এই কোটি কোটি মধ্যবিত্তের সুস্থভাবে বেঁচে থাকবার বাসনাতেই সফল হয়ে উঠতে পারে। সমতলের বিরুদ্ধে যাবতীয় বঞ্চনা ও শোষণের অভিযোগের অবসান ঘটাতে পারে উত্তর বাংলার পাহাড়ি অচিন গ্রামগুলি, যেখানে অতিথিকে দেবতা মানা হয়। ডুয়ার্সের অভিভাবকহীন নদীগুলির সংরক্ষণ, জঙ্গলে মনুষস্যবসতি বিস্তারে কঠোর আইন, সীমান্তে বন্যপ্রাণ পাচারে নাকাবন্দি এবং সর্বোপরি লোকশিল্পের ঐতিহ্যকে রক্ষার শপথ নিলে তার বিনিময়েই শহুরে ক্ষত বিক্ষত ফুসফুসে মিলতে পারে অবাধ অক্সিজেন। মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে কীভাবে তার উত্তর আজ মিলতে পারে এই উত্তরের জানালায় বসেই।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team