 
                                            
                                        টানা তিন সপ্তাহের বর্ষণে ঘেঁটে ঘ হয়ে গিয়েছে উত্তর বাংলা৷ কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত তিন মাসে উত্তর বাংলার চার সমতলীয় জেলায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে চল্লিশ শতাংশ বেশি৷ উত্তরের মানুষ বলে, বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি বিছানাপত্র উঠোন সব পচে যাওয়ার জোগাড়৷ জল থৈ থৈ শহুরে ম্যানমেড বন্যার কথা আলাদা, এ দেশের ছোট-বড়-মাঝারি সব শহরেই সেই এক নিকাশী ব্যারাম, অথচ উত্তরের গ্রামীণ সমতলে এখনও পাহাড়ী নদীরা প্লাবন আনতে সক্ষম হয় নি৷ ফলে ধানচাষী উল্লসিতপ্রায়, গাছে আসছে পুরুষ্টু ধান৷ কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি সব্জিচাষীর দুঃখ বাড়িয়েছে অন্তহীন৷ সব্জির আকাশ ছোঁয়া বাজারে মন ভালো নেই সব্জি বিক্রেতাদেরও, দাম বেশি হওয়ায় লোকে কিনছে কম৷ জমিতে জল জমায় শীতের সব্জি লাগাতেও দেরি হচ্ছে৷ গ্রিন ভেজিটেবল হাব অর্থাৎ সবুজ সব্জির ভাণ্ডার বলে পরিচিত তিস্তা উপত্যকার সমতলে কৃষক আগাম হতাশ শীতের আনাজ ফলন নিয়ে৷ আর সেই সুযোগেই আলুর বাজারে ম্যানমেড আগুন৷ আলুকে যদি ফাটকাবাজির ফসল ধরে নেওয়া হয় তবে অবশ্য আলুর কোনও দোষ নেই বলতে হয়৷
আসলে বন্যা নদীনালা পথঘাট সব্জি বা আলু কোথাও নেই কোনও নজরদারি৷ কোথাও কোথাও ব্লক বা মহকুমা প্রশাসকরা সিভিক পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ন্যায্য মূল্যের আলু দোকান খুলে চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়ে দিতে চাইছেন, নিয়ন্ত্রণ বলে শব্দটি আপাতত সরকারি ম্যানুয়ালে ডিজএবল করে রাখা আছে৷ মন্ত্রীরাও তাই এসময় লঘু জীবন কাটাচ্ছেন, অন্যত্র সৃজনশীল৷ গ্রামের মুরুবিবরা দলের ব্লক সভাপতি হওয়ার দৌড়ে ব্যস্ত, শেষবেলায় যা মেলে তা-ই বা কম কী! পথঘাট ভেঙে চৌচির, ভাঙা সড়কে সেতুতে ঘেরা গ্রামগুলিকে কেমন অলস ঘুমে আচ্ছন্ন মনে হয়৷ ছোট ঠিকাদাররা পুরনো পাওনা মেটানোর দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে মুখর-- ক্লাবগুলি খিচুড়ি ও ক্যারাম পিটিয়েই দান খয়রাতি পাচ্ছে অথচ সরকারি বিল্ডিং হাসপাতালের মেরামতিবাবদ টাকা একবছর ধরে কাজ করেও নাকি পাওয়া যাচ্ছে না৷ আসলে বিরোধী কন্ঠ বলে আদতে কিছু হয় না, বামাচরণ, সবটাই মায়া৷ না হলে ‘সর্বনাশা’ বলে দেগে দেওয়া কৃষি বিলের সমর্থনে পথে নামল যারা তাদের মিছিলে ও সভায় অবিশ্বাস্য ভিড় কী প্রমাণ করে কর্তামশাই?
আশ্বিনের বস্তাপচা বর্ষণে একইদিনে পালিত হল কন্যা দিবস পর্যটন দিবস ও নদী দিবস৷ কন্যা বা নদী দুইই আমাদের পর্যটন-সম্পদ, কন্যা বা নদী কেউই কোনও দোষ করে নি, অথচ দুইয়ের দুর্দশা বা লাঞ্ছনাতে আমাদের ঘুম ভাঙে না, বা জেগে থাকলেও ভুরুটুকুও কোঁচকায় না আর৷ উৎসব এল কি এল না, বাজার জাগবে কি জাগবে না--- তা নিয়ে যেন কোনও ফিকির নেই সরকার বা বিরোধী কোনও শিবিরেই৷ পুজোর বাকি হপ্তা তিন, তবু ট্রেনে চেপে উত্তর বাংলায় পর্যটন এল কই? পুজোয় বুকিং হল কই? বাজারে গম গম আওয়াজ কই? বিকেলের সোনা রোদ্দুর হারিয়ে গেল কই হে মদনমোহন? আমার জল্পেশভূমিতে জ্যামে আটকে থাকে স্তব্ধ মায়ের কোলে মৃত সাপেকাটা সন্তান--- আমার চোখের জল বা তোমার ফোরলেন শেষ হয় কই?
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team
