× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

এই স্টিল লাইফ নড়েচড়ে উঠবে আবার হবে বেঁচে থাকার সেলিব্রেশন!

ধীমান সান্যাল
Life resumes again for celebration

খুব বেশি জায়গা ঘোরা হয়নি, বিশেষ করে শহর। মোল্লার দৌড় ডুয়ার্সের জঙ্গল আর দার্জিলিং গ্যাংটকের পাহাড়। তবে বিভিন্ন পর্যটন কাহিনি, গুগল নামক সর্বজ্ঞানী, প্রিয় কবি লেখকদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো আমার মানস ভ্রমণের অ্যাড্রিনালিন। সময় কাটানোর জন্য মোবাইলের গুগল ম্যাপস আর উইকিপিডিয়া অন্যতম হাতিয়ার। তা এদের নিয়মিত দেখে আর পড়ে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, বয়স অনুযায়ী মানুষের মত শহরেরও রূপ পাল্টায়, জৌলুস পাল্টায়। আজ যে শহর প্রাচীন, দশ বছর পর গিয়ে দেখা গেল সেই শহর রূপ পাল্টে ঝাঁ চকচকে আধুনিক একটি আস্তানা-- প্রাচীনত্বের ভগ্নাবশেষটুকুও আর নেই। মনখারাপ নিয়ে শহরের অলিগলিতে ঘুরতে গিয়ে হয়তো এক কোণে কোনোরকমে ধুঁকতে থাকা নেতাজী কেবিন টাইপ একটা চায়ের দোকান। দোকানদারের বিমর্ষমুখে বাড়িয়ে দেয়া এক কাপ চা, দু-পিস বাটার টোস্ট আর একটা ডাবল ডিমের পোঁচ যখন আপনি গ্রহণ করবেন ভাবছেন, তখনই পেছনের দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল একটা ক্যাফেটেরিয়া। হতভম্ব আপনি স্মৃতি হাতড়ে মাথা চুলকে কিছুতেই বুঝতে পারছেন না ওই চা তে চুমুক দিয়ে পোঁচটা শেষ করবেন কি না, তখনই উর্দিপরা বেয়ারা হাসি হাসি মুখে ট্রে তে করে এক কাপ ল্যাতে অথবা ক্যাপুচিনো নিয়ে হাজির। 

আবার ধরুন সেই শহরেরই কোনো এক প্রেক্ষাগৃহে আপনি শেক্সপীয়রের নাটক দেখতে ঢুকেছেন। ওভারকোটটা ছেড়ে কোলে ভাঁজ করে একটু আরাম করে বসেছেন, তখনই হ্যাঁ, ঠিক তখনই মঞ্চে ম্যাকবেথের বদলে গটগট করে প্রবেশ করলেন স্যুট-টাই পরা ধোপদুরস্ত এক মাল্টিপ্লেক্স। ব্যস আপনার নাটকের দফারফা। আপনার শরীরের প্রায় যত রকম ছিদ্র আছে সবগুলো দিয়েই থ্রি ডাইমেনশনাল শব্দ ঢোকা শুরু করল আর আপনি আর একদন্ডও বসে থাকবেন না স্থির করে উঠে হাঁটা লাগালেন…

গিয়ে উঠলেন বিশাল বিশাল গথিক স্থাপত্যে মোড়া এক ইউরোপীয় শহরের ফুটপাথে। একটু পরেই যার বিখ্যাত লাইট এন্ড সাউন্ড শো শুরু হবে। ইতিহাস আধুনিক যন্ত্রানুষঙ্গে আপনাকে স্বাগত জানাবে মধ্যযুগীয় স্থাপত্যে। আর এদিকে আপনি প্রচন্ড খিদের পেটে যখন একটা শুকনো স্যান্ডউইচ গলাধঃকরণ করার চেষ্টা করছেন, হঠাৎ অনুভব করলেন বাড়ি থেকে বহুদূরে চলে এসেছেন। আর আপনি যে বেঞ্চটায় বসে আছেন সেটা নান আদার দ্যান আমাদের রাজবাড়ি পার্কের বেঞ্চ। ব্যস আপনি কেমন ভেবলে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর…

(২)

পৃথিবীর সব দেশেই শহরের বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্য আছে সেটা নিজের নিজের দেশ, সংস্কৃতি, খাদ্যাভাসকে যেমন রিপ্রেসেন্ট করে ঠিক তেমন ভাবেই প্রত্যেকটি শহর আলাদা ভাবে নিজের দুর্নাম অথবা সুনাম অথবা কোনোটিই হয়তো নয় তার বদলে অন্য কিছু বহন করে চলেছে। যেমন সভ্য শহর, অসভ্য শহর, গানের শহর, প্রেমের শহর, খাওয়ার শহর, শিক্ষিত শহর, অশিক্ষিত শহর। উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। আজ বরং রংচটা এক চায়ের কাপে এক অন্য শহরের গল্প হোক। যাকে আমি চিনি আবার চিনি না, জানি অথবা জানি না। আসলে কোনো শহরকেই কি আর ঠিক করে জানা যায়? আমার বিশ্বাস মৃত্যুর পরেও না। 

(৩)

আমি যে শহরকে চিনি (চিনি মানে জানা নয়) জানি (জানি মানে চেনা নয়) যার শিরা উপশিরায় আমার যাতায়াত তার চিলছাদে উঠলে প্রথমেই একটা নদী দেখা যায়, তারপর একে একে নাম হারানো উঠোন, আলতো ছোঁওয়া কার্নিশ, পিলারের টংয়ে ঝুলতে থাকা লতপতে ঘুড়ি যার মাঞ্জা দেওয়া সুতো কারো গলা না কেটে চুপচাপ শুয়ে আছে আমগাছের মগডালে। আরও নীচে পাশাপাশি দুই ছাদের উপর ছড়িয়ে থাকে প্রতিবেশীর উষ্ণতা। আধচুমুক চায়ের গ্লাস, বেশি রাতের চিৎকার আর বিয়ারের বোতল। টুকরো টাকরা সংলাপ এখনও এদিক সেদিক পরে আছে হয়তো। দেয়ালেরও কান আছে কিনা! আমি যে শহরের কথা বলছি সেই শহরের ঘুম ভাঙে একটু দেরিতে, রাজার আলস্যে। চায়ের উনুনে জল চাপে। একে একে শহর জাগে, দোকান জাগে। পেপারওয়ালা পেপার ছুঁড়ে দেয়। মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা রাস্তা ঝাঁট দেয় খসখস শব্দে। সেই শব্দে কেউ পাশ ফিরে শোয়। পায়ের গোছটা একটু উঠে গিয়ে গতরাতের ভালোলাগারা ফিরে আসতে চায়।

যারা তাড়াতাড়ি ওঠে এই কাহিনি তাদের জন্য নয়। আবার যারা দেরি করে ওঠে নয় তাদেরকে নিয়েও। আসলে এখানে কোনো কাহিনিই নেই। তাদের ভোরবেলায় ওঠা বা দেরি করে ওঠার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। 

(৪)

শহরের পাশের নদীর ঘাটে কোথাও নৌকো বাঁধা থাকে না। কোনো বট গাছ হয়তো ছিল অনেককাল আগে, এখন নেই। তবে নদীর উপর বাঁশের সাঁকো আছে। সেটাও সারাবছর থাকে না। বর্ষাকালে জল বাড়লে পাততাড়ি গুটিয়ে নিলে পড়ে থাকে অথবা ভেসে যায় ভাগশেষেরা। তবে নদীটি বেশ ঝলমলে ছিল কিছুদিন আগেও; এখন কিছুটা জরাগ্রস্ত আর আপন খেয়ালে শৃঙ্খলিত। নদী নয় আসলে নদীর মনখারাপ আমাদেরকেই চিহ্নিত করে। আমার বিশ্বাস এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোনো নদীই ভালো নেই। একটা সর্বজনীন মনখারাপ নিয়ে সবাই বেঁচে আছি অথচ নদীর ধারে গিয়ে দু-দণ্ড বসা নেই। চিনে বাদামের খোসা ছাড়ানো নেই। চায়ের কাপ নেই। শহরের অলি-গলি-রাজপথ কোন মন্ত্রবলে ফাঁকা। সেখানে চা নেই, চায়ের ফাঁকে বিড়ি বা সিগারেট নেই। দুনিয়া তোলপাড় করে দেওয়া আড্ডা নেই। মাঝে মধ্যে সাইরেন বাজিয়ে হুসহাস শব্দে অ্যাম্বুল্যান্স বেরিয়ে যাচ্ছে আতঙ্ক ছড়িয়ে। 

(৫)

আমার এই শহর প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছিল না কোনোদিন, বরং ঐতিহ্যানুসারী একটা রাজকীয় গাম্ভীর্য ছিল। তাই আজ দিশেহারা সমস্ত কিছু মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হলে হরিশ পাল মোড়ে আবার জমাটি আড্ডা হবে, চিলাপাতা হবে, ধাবা হবে, রাজলক্ষ্মী হবে, রাতের লং ড্রাইভ হবে… আরো আরো অনেক কিছু হবে জীবনে।

আবার জম্পেশ করে হবে বেঁচে থাকার সেলিব্রেশন।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team