আষাঢ়ের মেঘ যখন ঢেকে দেয় সমস্ত আকাশ, অনবরত বৃষ্টিতে ক্লান্ত- নীরব হয়ে থাকে মফস্বলের গলিরাস্তারা, সেসময় কিন্তু প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর। পাড়ার ছেলেরা মিটিং কবে ডাকবে বলে চিন্তাভাবনা করতে থাকে। সুবর্ণ জয়ন্তী বা বিগ বাজেটের পুজো হলে অন্যবার এসময়ে সমস্ত বায়না কমপ্লিট। স্বাধীনতা দিবসের সকালেই এসে পড়তেন সুদূর কাঁথির মণ্ডপশিল্পীরা। কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণিতে জুলাই মাসেই গিয়েছিলেন, জানালেন নীহার হোড়-- কোচবিহার বয়েজ ক্লাবের পুজোর বিশিষ্ট কর্মকর্তা। ভাগ্যিস আমাদের সময় এমন কিছু হয় নি। তাহলে কী যে হতো ভাবতেই পারছি না। তিনিই জানালেন প্রতিবেশী ক্লাব এবার বিগ বাজেটের পুজোর প্রস্তুতি নিয়েও পিছিয়ে এসেছে। বিপুল চক্রবর্তী প্রায় তিরিশ বছর ধরে বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে যুক্ত আছেন, তিনি বললেন- এবার মানুষের কাছে চাঁদা চাইতেই সংকোচ হবে। আর বাড়ি বাড়ি ঘুরে টাকা আদায় করাটাও যে সমস্যার।
প্রতিমাশিল্পীদের সংকটের কথা সংবাদমাধ্যমে জেনেছি আমরা। বায়না হচ্ছে না। প্রচণ্ড আর্থিক চিন্তার মধ্যে রয়েছেন ডেকোরেটার্স থেকে লাইট, মাইক থেকে মুদ্রণ শিল্পীরা। পুজোকে কেন্দ্র করে কর্পোরেট স্পনসর যোগাড় করাটাও এবার সমস্যার। আসলে যেখানে জীবনই অনিশ্চিত, সেখানে উৎসবের পরিকল্পনা করা দুঃসাহসের বইকি। এই বিষম বিপদের মধ্যে কেমনভাবে হবে পুজো, কী ভাবছেন বন্ধুরা? আমরা তো জানি, ভাগ্য সবসময়ই দুঃসাহসীদের সঙ্গেই থাকে।
দিনহাটা কলেজের অধ্যাপক জয় দাস পুজো নিয়ে অবশ্য আশাবাদী। তাঁর মতে- মহামারি পরিস্থিতি মেনে আনন্দ-আয়োজনের মাধ্যম পাল্টে নিলে ক্ষতি নেই। সেক্ষেত্রে পুজোর কদিন না হয় গুগল মিটেই আড্ডা হবে বন্ধুদের নিয়ে। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে-- জুম করলে কি দেখা যাবে মৃন্ময়ী ও চিন্ময়ীকে একইসঙ্গে? ভার্চুয়াল পৃথিবীতে পুজোকে কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছেন নবারুণ দত্ত। শারদ স্মরণিকাগুলিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার স্বপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন তিনি। বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী অর্ক মহলানবীশ গত কয়েক বছর ধরেই উত্তরের বিভিন্ন পুজোয় থিম সং করছেন। লকডাউনের মধ্যেও প্রকাশ পেয়েছে তাঁর মিউজিক ভিডিও। পুজোর গান নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনার সঙ্গেই তিনি চাইছেন শ্রোতারা যেন শিল্পীদের আর্থিক দিকটিকেও মাথায় রাখেন। ক্রাউড ফান্ডিং করে বিভিন্ন ইভেন্ট ক্রিয়েট করতে চাইছেন অনেকেই।
ঘরে ফেরার গান আপাতত মূলতুবি। ট্রেনের টিকিট কেটে বাড়ি ফেরার দিন গোনা এখন বুঝি অতীত। চেনা দুঃখ চেনা সুখের পৃথিবী নতুন অসুখে যে মগ্ন। তবু স্বপ্ন দেখা চলবেই। এবছর হয়তো মুখোশের আড়াল থেকেই চিনে নিতে হবে পুজোর মুখ। করোনাসুরকে বধ করুন দুর্গা এই তো চাই। মা মেনকা ইদানীং ভোলা মহেশ্বরকে নিয়েই বেশি ভাবিত। শ্মশানে-মশানে ঘুরে বেড়ায়, কী যে হবে… ভালোয় ভালো উমা চলে আসুক সন্তানদের নিয়ে। স্যানিটাইজার মাখিয়ে তারপর নাহয় গণেশের হাতে তুলে দেবেন ইয়াব্বড়ো লাড্ডু। সিংহের কেশরে স্প্রে করতে হবে মনে করে। এইসব ভাবতে ভাবতেই মেনকা একা একাই হাসতে থাকেন। গিরিরাজ জিজ্ঞেস করেন—কী হয়েছে তোমার? মেঘভাঙা রোদের দিকে চেয়ে তিনি বলেন— মা আসছেন…
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team