× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
আংসাং কথা - ৪

বিস্মৃত বীরাঙ্গনা মরিচমতীর বিদ্রোহ ও হামলার লক্ষ্য কোচবিহার রাজসিংহাসন ছিল না!

শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
Marichmati’s war was never for the CoochBehar throne

একজন বিস্মৃত বীরাঙ্গনার কথা বলব। তাঁর নাম মরিচমতী আই।

পলাশী যুদ্ধের আট বছর পর কুচবিহারের রাজা হলেন ধৈর্যেন্দ্রনারায়ন। তিনি তাঁর কাকাতো ভাই দেবেন্দ্রনারায়নকে গুপ্তঘাতক লাগিয়ে হত্যা করেছিলেন। নামের মধ্যে ধৈর্য থাকলেও ধৈর্যনারায়ন ছিলেন অতিশয় অস্থিরতাক্রান্ত ব্যক্তি। রাজা হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ। তিনি রাজা হওয়ার পর ভুটানিরা কোচবিহারের ওপর হামলা চালায়। ধৈর্যনারায়ন বন্দী হন। পরে অবশ্য তিনি ছাড়া পেয়েছিলেন, কিন্তু ততদিনে কুচবিহার অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছিল। রাজামশাই-এর অক্ষমতার কারণে বাধ্য হয়েই কুচবিহারের মহারানী কামতেশ্বরী দেবী রাজ্য পরিচালনায় এগিয়ে আসেন। এই সময় তাঁর প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন রাজবংশের কুলগুরু সর্বানন্দ গোস্বামী।

গোস্বামী ছিলেন ধূর্ত লোক। আধ্যাত্মিকতার পরিবর্তে ভূসম্পত্তির মালিক হওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। সে সময়ে কুচবিহারের 'নাজির' বা প্রধান সেনাপতির অধীনে ছিল রাজ্যের ভূসম্পত্তির নয় আনা। এ থেকেই তাঁর এবং সৈন্যদলের খরচ নির্বাহ হতো। রাজার অধীনে ছিল বাকি সাত আনা জমি। গোস্বামী সেই সাত আনা জমির একটা অংশ দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করছিলেন এবং কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। মহারানীর প্রিয়ভাজন হবার কারণে কুচবিহার রাজসভায় তার প্রতিপত্তি ছিল যথেষ্ট। সঙ্গত কারণেই গোস্বামীর এই উত্থান নাজিরের পছন্দ হয় নি। গোস্বামী নাজিরের অধীনে থাকা জমিতেও হাত বাড়িয়ে ছিলেন।

নাজির খগেন্দ্রনারায়ন থাকতেন বলরামপুরে। বংশপরম্পরা তাঁরা নাজির। খগেন্দ্র নারায়ন-এর আগে নাজির ছিলেন রুদ্রেন্দ্রনারায়ণ। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল মরিচমতী।  তিনি ছিলেন জাঁদরেল মহিলা। তিনি মনে মনে ভাবতেন যে, কুচবিহারের পাগলা রাজার পরিবর্তে খগেন্দ্রনারায়ন রাজা হলে সবার উপকার হবে। দেবেন্দ্রনারায়ন আততায়ীর হাতে মারা যাবার পর সম্ভবত নাজির বংশের কাউকে রাজা করার তোড়জোড় তিনি করেছিলেন এবং এই কারণেই রাজ পরিবারের সঙ্গে নাজির পরিবারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনুমান। গোস্বামীর উত্থান সহ্য করতে না পেরে খগেন্দ্রনারায়ন বেশ কয়েকবার গোস্বামীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এতে মহারানী নিশ্চয়ই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু নাজিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের সাহস তাঁর হয় নি।

ভুটানের কবল থেকে রাজাকে মুক্ত করার জন্য খগেন্দ্রনারায়ন ইংরেজদের শরণাপন্ন হন। তখন তিনি ইচ্ছে করলেই ইংরেজদের সাথে সন্ধি করে কুচবিহার দখল করে নিতে পারতেন ---  কিন্তু তা তিনি করেন নি। কিন্তু ইংরেজদের মনে হয়েছিল যে, খগেন্দ্রনারায়ন একজন দুর্বল চিত্তের লোক। রাজার সাথে ইংরেজদের যে চুক্তি হলো তাতে দেখা গেল যে গোস্বামী-র প্রতিপত্তি তো মোটেই কমলো না, উল্টে তার অধীনে থাকা জমিগুলিকে বৈধ বলে ঘোষণা করা হলো। এই ঘটনায় খগেন্দ্রনারায়ণের মুন্ডু গেল গরম হয়ে। কোন একটা কাজে কুচবিহারে এসে শুনলেন তাঁর লোকের সাথে রাজার লোকজনের খুব ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়ার স্থান: বাজার, এবং ঝগড়ার কারণ এক ভাঁড় দই আর কয়েকটি কলা। এই উপলক্ষে নাজির লোক পাঠিয়ে গোস্বামীকে তুলে এনে এমন ঠ্যাঙালেন যে বেচারা কিছুদিন শয্যাশায়ী হয়ে রইল।

ইংরেজরা ইতিমধ্যে কুচবিহারের রাজার নিরাপত্তার জন্য লোকলস্কর নিয়োগ করেছেন। এই অবস্থায় গোস্বামী ঘোষণা করলেন যে, নাজিরের আর দরকার নেই। তাঁর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হোক। এইসব অস্থিরতার মধ্যেই কুচবিহার রাজবাড়িতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আবার এলেন খগেন্দ্রনারায়ন। তখন কারা জানি রটিয়ে দিল, তিনি কোচবিহার রাজবাড়ি দখল করতে আসছেন। রাজপ্রাসাদের দরজায় তার জন্য "নো এন্ট্রি" ঘোষণা হলে খগেন্দ্রনারায়ণ প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলেন এবং ধরেই নিলেন যে এর পেছনে রয়েছে গোস্বামী। অতঃপর তার লোকজন গোস্বামীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল--- এমন সময় একটা ঘটনা ঘটলো। গোস্বামীকে কিডন্যাপ করার খবর পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধৈর্যনারায়ন খোলা তলোয়ার হাতে রে রে করে তেড়ে গেলেন। রণংদেহি রাজাকে দেখে কিডন্যাপাররা ঘাবড়ে গিয়ে তখনই চম্পট দিল। গোস্বামী মুক্ত হলেন।

কিন্তু ধৈর্যনারায়ণের মৃত্যুর পর গোস্বামী পড়লেন ফ্যাসাদে। কালেক্টর মিস্টার গুটল্যান্ড রাজকীয় হিসাব পরীক্ষা করে দেখলেন গোস্বামীর প্রচুর "কালো টাকা"। গোস্বামীকে ব্লাকলিস্টেড করলেন এবং ঘোষণা করলেন যে খগেন্দ্রনারায়ন হলেন প্রকৃত রাজপ্রতিনিধি। গোস্বামীর পক্ষে কুচবিহারের বাস করা অসম্ভব হয়ে পড়লো। কিন্তু সবকিছু গোলমাল করে দিলেন রংপুরের নতুন কালেক্টর  পিটার মুর। গুটল্যান্ডের-এর জায়গায় তিনি আসতেই গোস্বামী থাকে এমন উপঢৌকন পাঠালেন যে পিটারবাবু গলে জল। সেই উপঢৌকন বইতে প্রায় পাঁচশো জন লোক লেগেছিল।  পিটারবাবু খুশি হয়ে  ভাবলেন "গোস্বামী ভালো, পাজি হল নাজির।" সময় তখন ১৮৮৪।

অতঃপর এবার নাজিরের পালিয়ে যাওয়ার পালা। তিনি কোথায় আত্মগোপন করলেন তা অবশ্য গোস্বামী বহু চেষ্টা করেও খুঁজে পান নি। নাজিরের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলো। তাঁর পরিবার হয়ে পড়ল গরীব। এই অবস্থায় আসলে নামলেন স্বয়ং মরিচমতী। চেষ্টা চরিত্র করে হাজার তিনেক মুদ্রা জোগাড় করলেন তিনি। সেই টাকায় বিদ্রোহী সন্ন্যাসী এবং কয়েকটি ডাকাত দলকে নিয়ে গড়ে তুলেন এক সেনাবাহিনী। তারপর অপেক্ষা করলেন সুযোগের জন্য। ঠিক এই সময় কোচবিহারের মহারানি চালে একটি ভুল করে বসলেন। তিনি গেলেন গঙ্গাস্নানে। সাথে নিয়ে গেলেন গোস্বামীকে। কোচবিহারে এর প্রতিক্রিয়া হলো খুবই খারাপ। ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কুচবিহারে গোস্বামীর শত্রুও খুব একটা কম ছিল না। 

মরিচমতী দেখলেন এই সুযোগ। তিনি হামলা চালালেন কুচবিহারে। রাজপ্রাসাদে হাহাকার পড়ে গেল। রাজপরিবারের লোকজন মদনমোহন মন্দিরে ছুটল আশ্রয় নিতে। ডাকাত আর সন্ন্যাসীরা রাজপ্রাসাদ লুঠ করল। রাজপ্রাসাদে সুরক্ষার জন্য ইংরেজরা যাঁদের রেখেছিলেন, তাঁরা সকলেই চম্পট দিল।  প্রাক্তন নাজিরের বড় ভাই ভগদত্ত নারায়ন ছিলেন এই বিদ্রোহী অভিযানের সেনাপতি। কোচবিহারের মহারানি এবং তাঁর শিশুপুত্র বন্দী হলেন। পরে অবশ্য ইংরেজদের হস্তক্ষেপে মিটমাট হয়। যেহেতু বিষয়টা ছিল কোচবিহারের আভ্যন্তরীণ বিবাদ এবং কোম্পানির আইনের বাইরে, তাই মরিচমতীর শাস্তি হয় নি। একই কারণে খগেন্দ্রনারায়নকেও ক্ষমা করা হয়েছিল।

মরিচমতী আই ('আই' শব্দটি সম্মানসূচক) বিস্মৃতির আড়ালে চলে গেছেন। অথচ তিনি ভারতের ইতিহাসের একজন বীরাঙ্গনা। কুচবিহারের মহারানি এবং তাঁর শিশুপুত্রকে বন্দী অবস্থায় তিনি হত্যা করতে পারতেন। এই ধরনের খুনোখুনি সিংহাসন দখলের প্রশ্নে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তা না করায় কুচবিহারের রাজবংশ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। মরিচমতীর বিদ্রোহ প্রমাণ করে দেয় যে কুচবিহার রাজবংশের নিরাপত্তা বলে আদৌ কিছু নেই। কোম্পানি এরপর কুচবিহারের রাজাকে রাজ্য শাসন বিষয়ক শিক্ষাদানের জন্য একটি পদ সৃষ্টি করে এবং কোচবিহার ক্রমশ নেটিভ স্টেট হওয়ার পথে হাঁটতে থাকে। 

আমানতউল্লা খান এই ঘটনার দীর্ঘ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team