পিকনের পড়তে বসবার সময় হঠাৎ জানালা দিয়ে রায়কতদের খালি জায়গাটা চোখ পড়ে। সকালের নরম আলোয় ঝোপঝাড় আর দুর্বা ঘাসের জমিটাকে দেখলে মনে বেশ আরাম লাগে। কিন্তু আজকে কী এমন হলো যে এই জায়গাটাতে সাপ আর বেজিকে একসাথে দেখা যাচ্ছে। রোমাঞ্চিত হয়ে পড়া বন্ধ করে সে দেখতেই থকে – এই বুঝি সাপে নেউলে যুদ্ধ শুরু হবে।
হ্যাঁ, সাপ হলো সরীসৃপ, এরা মাংসাশী খুব ধূর্ত দীর্ঘ এবং হাত-পাবিহীন আঁশযুক্ত প্রাণী। এদের চোখের পাতা থাকে না। অনেক সাপের মুখে বিষ থাকে না আবার অনেক সাপের মুখে বিষ থাকে। সাপেরা পৃথিবীতে আবির্ভাব হয় আনুমানিক ৫০ লক্ষ বছর আগে মেসোজোয়িক যুগে।
নেউল বা বেজি হারপেস্টিড পরিবারে শ্বাপদ গোত্রের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা পৃথিবীতে আবির্ভাব হয় আনুমানিক ৩৩.৭ লক্ষ বছর আগে সিনোজোয়িক যুগে। এই যুগকে স্তন্যপায়ী প্রাণীর যুগ বলা হয়। এদের সারা শরীর লোমে ভর্তি থাকে। এরা খুব দ্রুত চলাচল করে। দিনের বেলায় খাবার সংগ্রহ করে। রাতে মাটিতে নিজেদের তৈরি করা গর্তে বাস করে শহরের ঝোপ ঝাড় বিশিষ্ট এলাকায়। এরা যে শুধু শহরে থাকে তা ঠিক নয়। গ্রামে ও বনেও থাকে। এরা খায় মাছ, হাঁস-মুরগি, অন্য ছোট প্রাণী। বেজি হলো অন্য তিন চারটি শ্বাপদের মধ্যে সাপের প্রধান শত্রু। এরা সাপও মেরে খায়। এরা দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীলতার দ্বারা সাপকে পরাস্ত করতে পারে। এদের শরীরের মধ্যে সাপের বিষের অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি আছে। বেজি সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় কোনও গাছগাছালি দিয়ে করে না, বিষ নিষ্ক্রিয় করে প্রকৃতির আশীর্বাদে তার পরিবর্তিত স্নায়ুতন্ত্রের কারণে।
এই পৃথিবীতে মানুষ প্রজাতি আসে আনুমানিক এক লক্ষ বছর আগে সেই স্তন্যপায়ীদের যুগে। আর আধুনিক মানুষের বয়স তো মাত্র ৬০০০ বছর। তাহলে এটা বলা যেতে পারে যে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সাপের কামড়ে বেঘোরে প্রাণ হারানোর হাত থেকে বাঁচিয়ে আসছে ৩৩.৭ লক্ষ বছর ধরে – এই বেজি। কারণ সাপের বিষ শুধু বেজিই হজম করতে পারে। আবার বেজি মানুষের আশেপাশে থাকতে পারে।
পিকনের অপেক্ষার শেষ হয় না। সাপ নেউল যুদ্ধ শুরু করে না। পিকন মাকে চুপি চুপি ডাকে।
-- মা মা এদিকে এসো।
জোড়া ঠোঁটে তর্জনী লাগিয়ে মাকে চুপ করে আসতে বলে। মা তা শুনবে কেন। মা জোরে জোরে কথা বলতে বলতে পিকনের ঘরে আসে।
-- কেন কী হয়েছে?
-- আহা আস্তে। ঐ দেখ। একটা সাপ একটা বেজি। বসে আছে কিন্তু ঝগড়া করছে না।
সত্যিই সাপ নেউলকে পাশাপাশি দেখে রমলা দেবী তো অবাক। তা হলে এতদিনের প্রবাদটি মিথ্যা! এত বয়স হয়ে গেল কোনও দিন তো সাপ নেউলকে এক সাথেই দেখে নি। যুদ্ধ দেখবে কী করে। এখন দেখি সাপ নেউল বন্ধুর মতো বসে আছে।
আসলে বন্ধু যে বিপদের সময়ই চেনা যায়। বন্যার সময় তাই দেখা যায় সাপ ব্যাঙ এক কলাগাছে ভাসছে! ব্যাং সাপ বেজি সবার এখন স্বার্থ কমন – সবার আজ বাসস্থান হারাবার সংকট।
পিকন বলে-- মা তুমি যে বল, পাশের বাড়িতে সকাল হলেই সাপ নেউলের যুদ্ধ শুরু হয়। আজ তো সেই যুদ্ধও নেই মা।
-- ঠিক বললি তো। দাঁড়া দেখি।
রায়কতদের বাড়িতে আজ খুব খুশির হাওয়া। বিদেশ থেকে জ্ঞাতিদের ফোন এসেছে। সব শরিকের কী সাজুগুজু। উঠোনে হাতল ভাঙ্গা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে গণ্যমান্য ভোম্বলদা। ভোম্বলদাই তো ভরসা। স্টিলের থালাতে সাজিয়ে দিয়েছে অনেক মিষ্টি। ভোম্বলদা বলে-- কাকাবাবু আপনি চিন্তা করবেন না। আমি প্রোমোটারকে সব বলে দেব। আগে পিছে যত জায়গা ছাড়ার কথা ততটা না ছাড়তে। তাহলে আরো বেশি টাকা পাওয়া যাবে। আর ঐ রকম ফাঁকা জায়গা থাকলে সাপ বেজি বাসা বাঁধবেই। হে হে হে…
রমলাদেবী ভাবেন, এই রে! এইবার সাপ বেজি যে উদ্বাস্তু হয়ে গেল। ওরা এখন কোথায় যাবে?
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team