× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
আলিপুরদুয়ার থেকে আটলান্টা-২

হারিয়ে যাওয়ার আগে একবারও মায়ের মুখ মনে পড়ে নি ওদের?

চৈতালী দে (নাথ)
Non resident North Bengalee writes from Atlanta
টাইবি আইল্যান্ডে

কোনও এক কনকনে শীতের সন্ধ্যায় ভাগ্য আমায় এনে ফেলেছিল মার্কিন মুলুকে। তারপর কেটে গেছে অনেকগুলি শীত গ্রীষ্ম বসন্ত। অচেনা অজানা ভিনদেশ একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছে মনের কুঠুরিতে। তবু আজও মন পড়ে থাকে সেই আপনজনের স্মৃতি মাখা ফেলে আসা দিনগুলিতে। ঘুমের মাঝেও সেই স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে সুখস্বপ্ন হয়ে। ছেলেবেলার স্কুল, স্কুলের সেই গলি, স্কুলের পেছনে রেললাইন আর বন্ধুরা। সকালে ঘুম ভাঙার পর চোখ বুজে আবারও সেই সুখস্মৃতি মনে করবার চেষ্টা করি আর মন আবেশে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ছেলেবেলার সবচেয়ে আনন্দের দিনগুলি মনে হয় ছিল গ্রীষ্মের ছুটি আর দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে। গ্রীষ্মের ছুটিতে মাঝে মাঝেই চলে যেতাম ত্রিমোহনি, পিসিমনিদের খামার বাড়িতে। বড় রাস্তায় বাস থেকে নেমে কিছুটা পথ সাইকেল রিকশা বা সাইকেল ভ্যানে করে যাওয়া। রাস্তার পাশের আম আর কাঁঠাল গাছের ছায়ায় কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে কুকুর, রাস্তার দু-ধারে একের পর এক ধান বা অন্য ফসল আর সব্জির খেত, আর গ্রীষ্মের দাবদাহে জল কমে আসা পুকুর - এই সবদেখতে দেখতে একসময় খামার বাড়ি পৌঁছে যেতাম। তারপর কটা দিন পুকুর থেকে ধরষ জ্যান্ত মাছ, আম, কাঁঠালের গন্ধ  আর সব ভাই বোনেরা মিলে খুনসুটি-আনন্দে কেটে যেত।

ছোটবেলাকার গরমের ছুটিতে খামারবাড়ির পথে

একবার, যখন আমি খুব ছোট, সবাই মিলে এই গরমের ছুটিতেই দার্জিলিং যাওয়া হল। আমি তখন আট আর বোন তিন। সেই ভ্রমণের স্মৃতি আজ এতদিন পর বড়ই ধূসর। তবে তিনটি ছবি এখনো আমার মনে টাটকা হয়ে রয়েছে। এক, ম্যাল এর বৃষ্টি ধোয়া রাস্তায় ধীর লয়ে হেঁটে চলা ঘোড়া। দুই, আমার রানী কালার এর পঞ্চু আমার থেকে ছিনতাই করে গায়ে গলিয়ে আমার বোনের ম্যাল-এর রাস্তায় নেচে নেচে হেঁটে চলা, আর তার পেছন পেছন চোখ কটমট করতে করতে এগিয়ে চলা আমি। আর তিন, ওই শীতের দেশেও ঠান্ডা জলে আমার দিদুনের রোজ অবগাহন।

বেশ কয়েকবার গরমের ছুটিতে জয়ন্তী বেড়াতে গিয়েছি। সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসা। স্টিলের টিফিন ক্যরিয়ারে করে খাবারদাবার নিয়ে সকাল সকাল সবাই মিলে বেরিয়ে পড়তাম। তখন এটিই মনে হয় রেওয়াজ ছিল। গাড়ি থামিয়ে রাস্তার ধারের রেস্তোরাঁতে সপরিবারে খাবার চল মনে হয় তখন খুব একটা ছিল না। ছোটদের সে ইচ্ছে ষোলো আনা থাকলেও বাড়ির বড়দের কড়া নিৰ্দেশ - রেস্তোরাঁর খাবার খেলে শরীর খারাপ হবে। অতএব, সেই টিফিন ক্যরিয়ার খুলে খাওয়াদাওয়া। তবে আয়োজন অবশ্য কোনও অংশে কম হত না। লুচি, আলুরদম, ডিম কষা বা মাংস কষা আর শেষ পাতে রসগোল্লা, সন্দেশ অথবা বড় সাইজের একখানি লাড্ডু। নৈসর্গের মাঝে এমন মন-প্রাণ ভরা পেটপুজো, আহা এর কোনও তুলনা নেই।

গ্রীষ্মের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার রেওয়াজটা এখনো আছে। কখনো দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমরা দুটিতে, কখনও আবার দল বেঁধে সব বন্ধুরা মিলে হৈ হৈ করে। একবার যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে (চৌঠা জুলাই) গেলাম এদেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে। পুরো শহরটা নানা ঐতিহাসিক মিউজিয়াম দিয়ে সাজানো। লিংকন মেমোরিয়াল, ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু মেমোরিয়াল, মাদাম তুসো, স্মিথসোনিয়ান মার্কিন আর্ট মিউজিয়াম, ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট, আরও কত কিছু। মিউজিয়াম দেখা শেষ করে গেলাম হোয়াইট হাউস দেখতে। লোহার শলাকা যুক্ত উঁচু প্রাচীরের বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে সেই প্রথমবারের জন্য পৃথিবীখ্যাত শ্বেত ভবনটি স্বচক্ষে দেখলাম। পরের ডেস্টিনেশন মনুমেন্ট। আমেরিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন-এর স্মৃতিতে পৃথিবীর দীর্ঘতম পাথরের এই কাঠামোটি তৈরি হয়েছিল। মনুমেন্টের পাদদেশে পৌঁছে থিকথিকে ভিড়ের মাঝে কোনওরকমে একটুখানি জায়গা বের করে খবরের কাগজ বিছিয়ে বসে পড়লাম। সন্ধে হতেই শুরু হল ফায়ার ওয়ার্কস। চোখ ধাঁধানো সেই আতসবাজির প্রদর্শনী চলল বেশ কিছুক্ষণ।

টাইবি আইল্যান্ডে

পাহাড় আমার পছন্দের তালিকায় প্রথম হলেও, বাড়ির বাকি সকলে সমুদ্রঅন্তপ্রাণ। কাজেই মাঝে মাঝেই গ্রীষ্মের ছুটিতে সবাই মিলে পাড়ি দিই সমুদ্র সৈকতে। সেরকমই এক সৈকত ভ্রমণ শুরু হয়েছিল মন খারাপের সুর দিয়ে। দল বেঁধে সারা রাস্তা হৈ-হুল্লোড়, গান আর খাওয়া দাওয়া করে যখন সেবারের ডেস্টিনেশন টাইবি আইল্যান্ড, জর্জিয়াতে পৌঁছলাম, দেখি আমাদের রেন্টেড হাউসে ঢোকার সব রাস্তা পুলিশের গাড়ি দিয়ে আটকে দেওয়া। প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি আমাদের রেন্টেড হাউসটি একদম সী বিচ লাগোয়া ছিল। যাইহোক, অনেক ঘুরে পথে অবশেষে সেই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারলাম। এবং দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনের বিচ পুলিশে ছয়লাপ। জানা গেল সেদিন দুপুরে কয়েকজন হাই স্কুলএর পড়ুয়া সমুদ্রে স্নান করতে নেমে সমুদ্রের জলে তলিয়ে গেছে। তারা সাঁতার দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল উপস্থিত লোকেদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে। জোয়ারের জল বেড়ে যাওয়াতে তারা আর পাড়ে ফিরতে পারেনি। মনটা পুরো বিষাদে ভরে গেলো। সারা রাত মাথার ওপর হেলিকপ্টার চক্কর কাটল দেহগুলোর সন্ধানে। পরদিন সকালবেলা দেখেছিলাম এক মা হারিয়ে যাওয়া ছেলের বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে সমুদ্রের দিকে অপলকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃশ্য এখনও মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। কখনো কখনো মনে হয় সেই ছেলেটি যখন তারুণ্যের উদ্দামতায় সবার সতর্কতা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন কি একবারও মায়ের মুখ মনে পড়েছিল? অথবা যখন আর ফিরে আসার সব প্রচেষ্টা বিফল হচ্ছিল, তখন?

এবছর তো কোভিডের কৃপায় সব বেড়ানোই স্থগিত। আশাকরি খুব শিগ্গির সব স্বাভাবিক হবে। সেই আগের মতই ছুটির ঘন্টা বেজে উঠবে। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা রংবেরঙের জামাকাপড় পরে মুক্ত বাতাসে ছুটে বেড়াবে। বাবা মায়ের হাত ধরে ফুলের বাগানে ঘুরতে যাওয়া কচি মুখ নানা রঙের ফুল, প্রজাপতি দেখে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আমরা আবার আগের মত দল বেঁধে সবাই হুল্লোড় করতে করতে বেরিয়ে পড়ব অজানার সন্ধানে।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team