আজ থেকে সেই কতদিন আগে ঋতু দা, মানে ঋতুপর্ণ ঘোষ যখন একদিন সক্কালবেলা ডেকে এই গানটা শুনিয়েছিলেন, সেইদিন সকালবেলাটাই কেমন বদলে গিয়েছিল। তিস্তা, ছোটবেলা থেকে চেনা তিস্তা যে আমাদের আসলে কত মনখারাপ আর হৃদয়ের একূল ওকূল ছাপিয়ে যাওয়া দুঃখকে আশ্রয় দেয়, সেইদিন টের পেয়েছিলাম। একটা নতুন সূর্য ওঠা সকালে ঋতুদার ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়িতে বসে তিস্তার বয়ে যাওয়া টের পেয়েছিলাম।
আর ঋতুপর্ণ ঘোষ, তাঁর সেই যাদুকরী গল্প বলার ঢংয়ে বলে যাচ্ছিলেন মুম্বই লোনাভালা হাইওয়েতে গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়া শেখর সুমনকে দেখে কীভাবে তিনি তিতলি সিনেমার আইডিয়াটা পেয়েছিলেন| একজন তারকা, একটা পাহাড় থেকে ফেরার সময় যদি তাঁর গাড়ি খারাপ হয়ে যায়, তাঁকে রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়, এইসময় যদি আচমকা অনেক দিনের পুরনো বান্ধবীর গাড়ি এসে থামে, তাহলে যে সব, সব সম্ভাবনা, তাই নিয়েই ঋতুপর্ণ ঘোষ তিতলি সিনেমার গল্পটা লিখে ফেলেছিলেন। গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়া তারকার চরিত্রে ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী আর পুরনো বান্ধবীর ভূমিকায় অপর্ণা সেন আর অপর্ণা সেনের কন্যা হিসেবে কন্যাই, মানে কঙ্কনা সেন।
আচমকাই একটা মোলাকাত যে পাহাড়ের সামনের মোড়টাকে জীবনে অন্যভাবে নিয়ে আসতে পারে, সেটা ঋতুপর্ণ ঘোষ অসামান্য ভাবে দেখিয়েছিলেন। আর ওই গানটা দিয়ে তিস্তা যে আসলে আমাদের জীবনে কত অর্থ বহন করে, যন্ত্রণা স্বীকারোক্তির বয়ে যাওয়ার নাম, তা চিনিয়েছিলেন। আজও যখন গানটা শুনি, শ্রীকান্ত আচার্যর ব্যারিটোন আওয়াজ যখন মরমে পশিয়া যায়, তখন বারবার মনে হয় আর কেউ কেন তিস্তাকে নিয়ে এইরকম একটা গান লিখতে পারলেন না?
এবং সেখানেই আবার নিজেদের কলকাতা কেন্দ্রিকতার দিকে আঙুল তুলতে ইচ্ছে করে। কেন তোর্সা বা আত্রেয়ী আমাদের গানের, রোম্যান্টিক বুননের সঙ্গী হয়ে ওঠে না? প্রবাসী এক বন্ধু যখন ফোনে বলে, আসলে তোরা কলকাতার বাইরে কিচ্ছু চিনিস না, গলসি বা গুসকরার জীবনচর্যাও আমাদের সাহিত্য বা সিনেমাকে আকর্ষণ করে নি, তখন ভীষণ লজ্জা হয়। আজ থেকে কতবছর আগে একজন কুমুদরঞ্জন মল্লিক তো আমাদের মস্তিষ্কে ও বোধে দামোদরকে গেঁথে দিয়ে গিয়েছিলেন, আর আজকের নাগরিক কবিরা নিজেদের কন্ডোমে ঢাকতে ব্যস্ত।
কন্ডোমের কথায় মাথায় এল, উত্তরবঙ্গ নিয়ে এমনকি যুৎসই কেচ্ছা নেই। কেন? এই বঙ্গে কি কোন রাজনীতিক প্রেমে ভেসে পদ, সংসার সবই ছাড়েন না? এক বৈশাখে দেখা হল দুজনায় গান না? কোন যুগল তিস্তায়, হ্যাঁ, তিস্তাতেই ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে না? একটা লুকিয়ে পড়তে হয়, এমন পরকীয়া নেই? শিউরে ওঠার মতো খুন নেই? গডম্যান নেই? গডম্যানের নারীলোলুপতার দিল ধড়কে দেনেওয়ালা কাহানি নেই? এমন কেচ্ছা, সারা ভারতের সব চ্যানেলকে উত্তরবঙ্গ থেকে লাইভ করতে হবে!
উত্তরবঙ্গকে নিয়ে উথালপাথাল করে দেওয়ার মতো কেচ্ছা কেন নেই, যে কেচ্ছা দিল্লি বা মুম্বই কেন, লন্ডনে বসে লোকে হাপুস হুপুস করে গিলবে, ভাবতে গিয়ে সাংবাদিক জীবনের একদম শুরুতে শোনা মনে পড়ে গেল।
আসলে ডাল ডে বলে কিছু হয় না, ডাল রিপোর্টারই মুশকিল...
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team