× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

পুজোর সাথে জড়িয়ে থাকার সুযোগ কিন্তু প্রবাসেই মিলেছে

রুমি বাগচী
Opportunity to get involved with Pujo but in exile
ছবি - লস এঞ্জেলেসের ভারত সেবাশ্রম মন্দিরের দুর্গাপুজো

এবার দুর্গাপুজোতে নিজেকে সারেগামাপা-র ফাইনালিস্টের মতো মনে হচ্ছে। সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী -- এই চারদিনে পালা করে একদিনে শুধু মাত্র আট জন আর দু’জন পুরোহিতকে নিয়ে মোট দশ জনের জমায়েতের অনুমতি পাওয়া গেছে। সেই আট জনের মধ্যে আমি আছি। পুজোয় প্রতিদিন পাঁচশো-ছশো বাঙালি এই পুজোয় এসে থাকে। তার মধ্যে এবার মাত্র আট জন! লটারি পাওয়া অথবা সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ফাইনালে ওঠার মতো ব্যাপার।

এই আট জনের সিদ্ধান্তে আসতে পুরোহিত, কমিটি, ভক্তদের মধ্যে অনেক জুম মিটিং হলো। পুরোহিত বলছিলেন, দুর্গা মায়ের দরজা সবার জন্য খোলা থাক। কিন্তু অন্য দল বলছে, লস এঞ্জেলেসের এই পুজোর মহিমা অন্যরকম। করোনা-কালেও প্রচুর মানুষ আসবে। তাতে বিপদ বাড়বে। সরকার-ও সেটা মানবে না। আগে প্রাণ, তারপর পুজো। অতএব আট জনের বেশি একদম নয়। একই ব্যক্তি দু’দিন যেতে পারবে না। কীসের ভিত্তিতে এই আটজনকে এই সৌভাগ্য প্রদান করা হলো, সেটা মা দুর্গা-ই বলতে পারবেন।

ছবি - ভারত সেবাশ্রম মন্দিরের পুজো

এটি লস এঞ্জেলেসে ভারত সেবাশ্রম মন্দিরের পুজো।

যে কারণে এই পুজোর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব সেটি হলো লস এঞ্জেলেসের অন্য দুর্গাপুজোর মতো এটা উইকএন্ডের পুজো নয়। চারপাশে সবুজ টিলা আর গাছপালার মাঝে অনেকটা জায়গা নিয়ে ভারত সেবাশ্রমের মন্দির। বিদেশের অন্য পুজোর মতো সপ্তাহান্তের জন্য অপেক্ষা না করে একদম দেশের পঞ্জিকা অনুযায়ী তিথি, লগ্ন মেনে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এখানে পুজো হয়। আমেরিকাতে ছুটি খুব কম। সারা বছরের মূল্যবান সেই ছুটির তিনটে দিন খরচ করে তবেই এ পুজো দেখতে আসতে হয়। 

বৃহত্তর লস এঞ্জেলেসে পাঁচ-ছয়টি পুজো হয়। সব-ই উইকএন্ডের পুজো। হয়তো দিন তিনেক আগে দেশে আসল দুর্গাপুজো হয়ে শেষ। ফেসবুক সবার পুজোর ছবি, প্যান্ডেল, বিজয়া, সিঁদুর-মাখা  ছবিতে  ভরে গেছে। তখন আমেরিকায় আমরা কোনো এক শুক্রবারে সারাদিন অফিস করে সন্ধ্যেতে প্যান্ট-শার্ট ছেড়ে শাড়ি পরে সবে সপ্তমীর পুজোতে যাচ্ছি। আরো মজার ব্যাপার, যে উইক-এন্ডে লস এঞ্জেলেসে পুজো, হয়তো তার পরের উইক-এন্ডে সান ফ্রান্সিসকোতে, তার-ও পরের উইকেন্ডে নিউ ইয়র্কে।  

কেন এরকম করা হয় ? কারণ এবার হয়তো অমিতকুমার বা বাবুল সুপ্রিয় আসবেন। নয়তো সারেগামা-র জীমূত পৌষালি। তাঁরা তো মাত্র একটি অনুষ্ঠান করতে অত দূর থেকে আসবেন না। বিভিন্ন শহরের একাধিক পুজোর জলসার বরাত নিয়ে আসেন। একদিনে পুজো করলে কী করে তা সম্ভব? অফিসের ছুটি আর এই জলসা-- এই দুটো হচ্ছে আমাদের পুজোর প্রধান লগ্ন ও তিথি।

ছবি - ফ্রেঞ্চ মেয়েদের নাচ

দুর্গাপুজোর পরের সপ্তাহান্তে লক্ষ্মী পুজো করা হয়, অনেক সময়ই আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ  থাকে না। কিন্তু মনের মধ্যে ভক্তি থাকলে কোনো অসুবিধে হয় না। লক্ষ্মীপুজোতে একটু কম খরচের শিল্পী আসে। 

কিন্তু ভারত সেবাশ্রম মন্দিরের পুজো একদম দেশের পঞ্জিকা মতেই হয়। এই মন্দিরে সবচেয়ে বড়ো ও সুন্দর ঘরটিতে সারাবছর ধরেই উঁচু অর্ধ বৃত্তাকার মঞ্চে ঐতিহ্যপূর্ণ ডাকের সাজের দুর্গা প্রতিমা আলো করে থাকে। তাকে ঘিরে তিনশো-চারশো চেয়ার পাতা। সেখানে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বসে পুজোর যজ্ঞ, আরতি, অঞ্জলি সব দেখা যায়। সামনে একশো আটটা প্রদীপ জ্বলতে থাকে। মঞ্চের এক পাশে প্রধান স্বামীজী বসে থাকেন। পুজোর শেষে দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য শোনান। অন্যপাশে আমরাই ঢাক বাজাই। দেশ থেকে ঢাক আনা হয়েছে। কিন্তু ঢাকি আনা হয় নি।

পাশে রান্নাঘরে তখন তিনটে বিশাল কড়াইতে আমরা রান্না করছি-- খিচুড়ি, দু’রকম তরকারি, চাটনি, পায়েস। মিষ্টিটা কেনা। পুজোর জন্য শ্রম উৎসর্গ করা-- সেটা পুজোর ফল কাটা, মালা গাঁথা, ধুনুচি জ্বালানো, কলা বৌ সাজানো অথবা পাঁচশো, ছ’শো মানুষের রান্না করার মধ্যে যাঁর যেরকম ইচ্ছে। কিন্তু দুর্গাপুজো বলে কথা! সবাই যদি এই বিধি-নিষেধ না মেনে চলে আসে তাহলে কি হবে! সব ভক্তই তো সমান। সেটা ঠেকানোর জন্য পার্কিং লট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ইমেইলে সেটা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।  যে আট জন অনুমতি পেয়েছে, তাঁদের আশ্রম থেকে ব্যাজ এবং পার্কিং পারমিট দেওয়া হয়েছে। সেটা দেখিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হবে।

কিন্তু অন্য ভক্তরা কী করবে তাহলে ?

তাঁদের জন্য অনলাইনে লাইভ পুজো দেখার ব্যবস্থা। যেমন নানা শিল্পী এখন ফেসবুকে ডিজিটাল অনুষ্ঠান করছেন। তেমনি দূর্গাপুজো-ও এবার ডিজিটাল। অনলাইনেই অঞ্জলি। তার জন্য কিন্তু চাঁদা-ও আছে। শুধু  আগেরবারের চাইতে কিছুটা কম। বাঙালি ক্লাবের পুজোগুলো এবার কারোর বাড়িতে নমো নমো করে সেরে ফেলা হচ্ছে। বড়ো হল ঘর ভাড়া নেওয়ার অনুমতি নেই। জলসার তো কোনো প্রশ্নই নেই। এইসব কারণে ভারত সেবাশ্রমের পুজোর গুরুত্ব এবার আরো বেড়ে গেছে। এই যে এতো কড়াকড়ির মধ্যে পুজো, এও কিন্তু এক ধরণের নতুন উত্তেজনা। প্রথম দশ জনের মধ্যে থাকতে পেরে নিজেকে তাই কোনো গুনাগুন ছাড়াই বেশ সেলেব্রিটি মনে হচ্ছে।

ছবি - অনুষ্ঠান দেখতে আসা দর্শক

প্রসাদের ব্যাপারটাও এবারে একদম অন্য রকম। মন্দিরে কোনো রান্না হবে না। এই আটজন ভাগাভাগি করে রান্না করে নিয়ে যাচ্ছি। দুর্গাপুজোর জন্য নিজে রান্না করার অভিজ্ঞতা, সত্যি বলতে, নিজের দেশেও কোনোদিন হয় নি। শিলিগুড়ির পুজো শেষ দেখেছিলাম, ঊনত্রিশ বছর আগে। প্রতি বছর নিজের শহরে যাই, কিন্তু পুজোর সময় যাওয়া হয় না। দেশ ছাড়ার আগে যখন পুজোতে থাকতাম, তখনও কিন্তু ক্লাবের দুর্গাপুজোতে আমি কোনোদিনই সরাসরি অংশ নিতে পারি নি। বারোয়ারি খিচুড়ি ছাড়া কোনোদিন কোনো প্রসাদ-ও পাই নি। সেটাকেই স্বাভাবিক ভাবতাম --ওসব শুধুমাত্র ক্লাবের মেম্বাররাই পাবে, যাঁরা কাজ করে। 

তবুও তখন আনন্দ ছিল সীমাহীন। এক সাথে কয়েকটা নতুন জামা কেনা, বাজি ফোটানো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মণ্ডপে ভীড় ঠেলে ঠেলে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা, অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার অনুমতি-- এসব একটা  বল্গাবিহীন আনন্দ দিতো যা আমি অনেককাল হল   হারিয়ে ফেলেছি । আমার জীবনে এখন শিলিগুড়ির শরৎকালের আকাশ নেই, সোনারঙের রোদ নেই, শিউলিফুল নেই, চোখের সামনে বাঁশ দিয়ে মণ্ডপ বানানো নেই, চন্দননগরের আলো নেই, নাচতে নাচতে ভিড়ের মধ্যে ট্রাকে করে সেই ভাসান নেই। এসব ছাড়া কোনো জীবন হতে পারে, তখন ভাবতেই পারতাম না। 

তবু এই বিচ্ছেদ বেদনাকে সহ্য করার সাহস দেখিয়ে বাইরের জগতে পা বাড়িয়েছিলাম, বৃহত্তর জীবনকে দেখবো বলে। এই জীবন আমাকে অন্য অনেক কিছু দিয়ে দু’হাত ভরে দিয়েছে।

“রাখতে যদি আপন ক’রে,

বিশ্ব-ঘরে পেতাম না ঠাঁই।”

ভারত সেবাশ্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুর্গাপুজোর রান্না করেছি সবাই মিলে নিজেদের হাতে যা চারশো-পাঁচশো মানুষ খেয়েছে। গত কয়েক বছরে মালা গেঁথেছি, নৈবেদ্য করেছি, কলা-বৌ সাজিয়েছি। পুজোর সাথে এভাবে জড়িয়ে থাকার সুযোগ কিন্তু বিদেশেই হলো। এ ছাড়া তার সাথে আছে আমার সেই বৃহত্তর জগৎ। শিলিগুড়ি, কলকাতা, মালদা, মেদিনীপুর ছাড়াও শিলং, জামশেদপুর, মীরাট, ইন্দোর, দিল্লি, পুনে, মুম্বাই, ভাগলপুরের বাঙালি লস এঞ্জেলেসে থাকেন। তাঁদের সাথে এই পুজোয় নানারকম গল্প হয়। অনেকে গল্পে গল্পে তাঁদের ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতিচারণ করে। সেসব শুনতে শুনতে আমি আরো বড়ো এক দুনিয়ায় ছড়িয়ে যেতে থাকি। এ ছাড়া আসে বাংলাদেশের বাঙালি-- হিন্দু, মুসলিম দু’ধর্মেরই, আর শাড়ি পরে গলদ ঘর্ম হওয়া আমেরিকান মেয়ে, পাঞ্জাবি পড়া আমেরিকান ছেলে। 

ছবি - ২৫ বছর আগে প্যারিস এর দুর্গাপুজো

আমেরিকায় আসার আগে ফ্রান্সে থাকতাম। সেখানকার পুজো-ও দেখেছি। ধবধবে সাদা সোলার দুর্গামূর্তি ওই প্যারিসেই দেখি। আর যেটা দেখেছি সেটা ভোলার নয়, ফরাসি মেয়েরা পুজো মণ্ডপে ভারতীয় নাচ নাচছে। সেখানেই আলাপ হয়েছিল ইউনেস্কো-র এডুকেশন বিভাগের প্রধান বিকাশ সান্যাল, প্রীতি সান্যাল, মূকাভিনয়-এর শিল্পী তপন মজুমদার, পেইন্টার শক্তি বর্মনের সাথে। এঁদের অনেকেই তার পর থেকে বন্ধু। 

বিদেশের দুর্গাপুজো আমাকে একধরনের নতুন জগতে নিয়ে যায়, যাঁর স্বাদ পেতেই দেশ ছেড়েছিলাম। মূর্তি পুজোর চাইতেও এ আমার কাছে মিলন মেলা--  বাঁশ দিয়ে বানানো মণ্ডপ, রাস্তা জুড়ে টুনি লাইট, মাইকের গান, ভাসানের নাচের বিকল্প হিসেবে যাকে আমি পেয়েছি।  জীবন বদলে গেছে কতবার। তার সাথে পুজোর ধরণধারণ। এবার মহামারীতে সেই পুজো না হয় আরেকবার বদলাক।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team