× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

দূষণমুক্ত আকাশে ঝকঝকে ভুটান পাহাড়, বাগান চলছে ধীর লয়ে তবু মন খারাপের নিস্তব্ধতা চায়ের ডুয়ার্সে

শৌভিক রায়
Pandemic looms large in Dooars Tea belt

চা-বাগান ঘেরা ছোট্ট জনপদ হলে হবে কী, বীরপাড়া মানেই সবসময় গমগমে একটা ব্যাপার। দলগাঁও স্টেশনের রেলগেটে বাস, ট্রাক, ট্রেকার, মোটর-বাইক, সাইকেল সব মিলে সারাদিন হৈচৈ, হরেক কিসিমের পণ্য সাজানো দোকানগুলিতে বাঙালি-নেপালি-মারোয়ারি-পাঞ্জাবি-আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভীড়, বাঙলায় করা প্রশ্নের উত্তরে হিন্দি বা সাদরিতে জবাব, চা-বাগানগুলি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আসা হাফ-প্যান্ট পরিহিত বাবুদের জিপ, শহরের দক্ষিণের হাইরোডে ভারী গাড়ি চলবার বিরতিহীন গর্জন... বীরপাড়া বলতে এরকম ছবিই চোখে ভাসে। তবে তার সঙ্গে আরও একটা কথা মনে পড়ে যায় যে, বীরপাড়া হল আক্ষরিক অর্থেই চায়ের শহর। কেননা এই ছোট্ট জনপদটিকে ঘিরে তাসাটি, দলগাঁও, নাংডেলা, ডিমডিমা, জয়বীরপাড়া, বান্দাপানি, মাকড়াপাড়া, মুজনাইয়ের মতো প্রায় সতেরো-আঠারোটি চা-বাগান রয়েছে। বীরপাড়ার জন্মও আসলে এই চা-বাগানগুলিতে কর্মরত মানুষদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরাবরাহ করা থেকে শুরু করে আধুনিক জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার জন্য। মোটামুটিভাবে সব কিছুই বীরপাড়াতে পাওয়া যায়। তাই ছোট থেকেই দেখে আসছি যে, ডুয়ার্সের বহু জায়গার মানুষ নিজেদের প্রয়োজনের জিনিসটি খুঁজতে বীরপাড়ার শরণাপন্ন হন। চা-বাগানের জনজীবন জানতে চাইলেও বীরপাড়ার বিকল্প বোধহয় নেই!

কিন্তু অতিমারী করোনা সব কিছুই বদলে দিয়েছে। উধাও হয়ে গেছে বীরপাড়া-সহ চা-বাগানগুলির চেনা ছন্দ। প্রথমদিকে যখন আলিপুরদুয়ার জেলা গ্রিন জোনে ছিল, তখনও বীরপাড়া বা চা-বাগানগুলিতে এই মুহূর্তের অবস্থাটা কল্পনা করা যায় নি। সেই সময়ে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও সরকারি নির্দেশানুসারে চা-বাগান বন্ধ রাখতে হয়। বন্ধ রাখতে হয় ব্যবসাবাণিজ্যও। মনে রাখতে হবে যে, বীরপাড়ার নিজস্ব অর্থনীতির মূল কিন্তু ব্যবসা। আর সেই ব্যবসার সিংহভাগ চা-বাগানকে কেন্দ্র করে। ফলে যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ থেকে টানা লকডাউনের ফলে চা-বাগানগুলির সঙ্গে বীরপাড়াও ধুঁকতে শুরু করেছিল। ক্রমশ কিছু সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে চা-বাগানগুলিতে কাজ শুরু হলে, খানিকটা রেহাই মিলেছিল ঠিকই, কিন্তু আনলকের প্রক্রিয়া শুরু হতেই বেড়ে গেছে সংক্রমণ। কেননা ততদিনে ভিনরাজ্য থেকে অনেকে ফিরেছেন।

এই সংক্রমণ এখন এমন চেহারা নিয়েছে বা নিচ্ছে যে, বাধ্য হয়ে বীরপাড়াবাসী নিজেরাই লকডাউনের রাস্তায় হাঁটছেন। যেমন এই মুহূর্তে, বাইশে আগস্ট অবধি লকডাউন চলছে। ফলে বীরপাড়ার সেই চেনা ভীড় উধাও। যে রেলগেটে তিল ধারণের জায়গা থাকে না, তা আজ ফাঁকা। এমনিতেও ট্রেন চলছে না বলে, দলগাঁও স্টেশনের সেই ব্যস্ততা আর নেই। তার সঙ্গে লকডাউন যোগ হওয়ায় চিত্রটি এখন একেবারেই ভিন্ন। বাজার এলাকায় গলিঘুজিতে দু'একটা চায়ের দোকান খোলা পাওয়া গেলেও, মোমো বা ফাস্টফুডের দোকানের সামনে রঙিন পোশাকের জনতার দেখা মিলছে না। মালের ব্যাগ নিয়ে স্কুটার বা মোটর সাইকেলে যেতে দেখা যাচ্ছে না সিন্ধ্রী বা পাঞ্জাবি ব্যবসায়ীকে।

হাইরোড থেকে বীরপাড়া হাই স্কুলকে দেখেও খারাপ লাগছে। যেখানে সবসময় ছাত্রদের দেখা যেত, সেই মাঠ আজ ফাঁকা। বড় বড় ঘাস আর বর্ষার জলে পুষ্ট আগাছা মাঠ দখল করেছে। শহরের স্বাভাবিক ব্যস্ততার বিন্দুমাত্র নেই কোথাও। চা বিক্রি হচ্ছে বুঝতে পেরে যে নেপালি মহিলার দোকানে গেলাম, তিনি প্রথমটায় সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। পরে অবশ্য খানিকটা কথা বললেন। জানাতে ভুললেন না যে, প্রশাসনের ভয়ে এভাবে চোরের মতো চা বিক্রি করছেন। 'করছেন কেন' প্রশ্নের উত্তরে মৃদু স্বরে বললেন, 'পেট কা সওয়াল ভাইয়া'। একই সমস্যায় চোরাগোপ্তা পান বিক্রি করছেন জয়সওয়াল বদরিমল। ওনার সমস্যা অবশ্য আরও একটু বেশি। পান-সহ কাঁচামাল পচে যাচ্ছে। সমস্ত বীরপাড়াতেই অস্বাভাবিক স্তব্ধতা যা অবশ্যই নির্জনতা নয়।

চা-বাগানগুলি তুলনায় একটু ভাল অবস্থায় আছে হয়ত। কিছুদিন আগেও, চা-বাগান ও তার আশেপাশের এলাকায় ত্রাণ বিতরণের যে হিড়িক পড়েছিল, তা এখন স্তিমিত। শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে একসঙ্গে সকলে নন। পাতা তোলা ও উৎপাদনের কাজও নিয়মিত হয়েছে। আগের অবস্থা ফিরে না এলেও, ডুয়ার্সের অর্থনীতির প্রধান চাকাটি যে খানিকটা হলেও ঘুরতে শুরু করেছে, সেটাও অনেক। নাংডেলা ও জয়বীরপাড়া চা-বাগানের মধ্যে বয়ে চলা ডিমডিমা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলবার পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার আওতায় রাস্তা নির্মাণও চলছে। চা-বাগানের মধ্যে থাকা সামান্য কিছু দোকানপাটও খোলা পাওয়া গেল।

জনমানবহীন স্টেশন

এসব স্বাভাবিক থাকলেও, সচেতনতার অভাব কিন্তু বিশেষভাবে দেখা গেল এইসব এলাকায়। মনে হল, সামাজিক দৈহিক বিধি, মাস্ক ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়গুলি থেকে চা-বাগানের আমজনতা অনেকটাই দূরে রয়েছেন। রাস্তার কলে জল নেওয়ার জন্য ভিড় করা প্রমীলাবাহিনী বা চা কিংবা হাড়িয়ার দোকানে উপস্থিত মরদদের কারোরই কোনও সচেতনতা গড়ে ওঠে নি। শিশু-কিশোররাও একইরকম উদাসীন। ফলে কখন যে কী হবে সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই। দু-চারজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল যে, অতিমারী সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই নেই। লকডাউন, আনলক, কোয়ারেনটিন ইত্যাদি বহু পরের ব্যাপার। অথচ চা-বাগান ও তার সন্নিহিত এলাকা থেকেই কিন্তু ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান বলছে যে, ডুয়ার্সের চা-বাগানগুলি থেকে বিগত পাঁচ বছরে অন্তত আটাশ শতাংশ মানুষ অন্য রাজ্যে গেছেন বিকল্প কাজের সন্ধানে। লকডাউন শুরু হলে তারা ঘরে ফিরেছেন এবং সেই ঘর ফেরাদের অনেকেই কোভিড পজিটিভ ছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা তাদেরকে বোঝাতে পারি নি আজও। ফলে চা-বাগানগুলি যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তবে চা-বাগানের বাবু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ব্যাপারটি নেই। তারা সচেতন। নিজেরা যেমন সব বিধি মানবার চেষ্টা করছেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে, তেমনি মানাবার ও বোঝাবার চেষ্টা করছেন আপ্রাণ।

তবে লকডাউন এবং আনলক ইত্যাদির জন্য বীরপাড়া ও তার সংলগ্ন এলাকার প্রকৃতিতে কিন্তু বহুকাল আগের অবস্থাটি আবার ফিরে এসেছে। ধুলো-ধোঁওয়া ও দূষণ কম থাকায় ঝলমল করছে নীল আকাশ। ভুটান পাহাড়ের ভাঁজগুলোও স্পষ্ট। চা-বাগানে দেখা যাচ্ছে ধবল বকদের। ঠিক কতদিন পরে এরকম পরিবেশ আবার ফিরে এল, মনে করতে পারছেন না প্রবীণ মানুষেরাও। তবু, ডুয়ার্সের বীরপাড়া আর চা-বাগানগুলির মহামারী সময়ের এই চেহারায় মন বিষন্ন হয়। চেনা চেহারার সেই ডুয়ার্স কেমন যেন অচেনা। রঙচঙে পোশাকের প্রাণচঞ্চল জনজাতি মানুষ, গম্ভীর মুখের বাবুর দল, ধুলো ওড়া রাস্তায় হরপ্রিতের সঙ্গে কমলের আড্ডা, মোমোর মনকাড়া গন্ধ, মাদলের দ্রিমি দ্রিমি শব্দ...মনে হচ্ছে যেন সেই কবেকার কথা! মন খারাপের ডুয়ার্সে এখন শুধু একটাই চাওয়া- ছন্দে ফিরুক জীবন, রঙিন হক বেঁচে থাকা।

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team