× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg

মহুয়ায় জমেছে ওই মৌ গো...

সুজিত দাস
Poetic thoughts on Bijoya Dashami
ছবি - সুজিত দাস

১। সিঁদুর খেলা।

তখন অন্যরকম সিঁদুর খেলা ছিল। এলোমেলো ভাবে ওই পারদ গুঁড়ো লেগে থাকত গালে, কপালে, গলায় এবং সিঁথিতে। তারপর সিঁথির মোড় থেকে সলসলাবাড়ি, ফেসবুক চলে এল। সঙ্গে ট্যুইটার, ইন্সটাগ্রাম আরো কত কী! এরপর সিঁদুরের গতিবিধি খানিক নিয়ন্ত্রিত। ফটোজেনিক এবং ক্যামেরা-ফ্রেন্ডলি।

শিবমন্দিরের সরোজিনী সংঘ, আবিরের মতো উড়ত সিঁদুর। শিলিগুড়ির জে টি এস, সিঁদুর খেলায় অসময়ের দোল ফিরে আসত। মালদার ঝংকার ক্লাব কিংবা ইউনাইটেড ইয়ংস্‌, চারপাশ লালে লাল। বাতাসে গুলালের মতো সিঁদুর। দোমহানীতে পল হোয়েল স্কুল মাঠের পুজোমন্ডপে সিঁদুর থেবড়ে থাকত হাসিমাখা ওই মুখগুলোতে।

তখন জমানা অ্যানালগ ছিল। ডিএসএলআর আসেনি।

এখন কলকাতা থেকে কালিয়াচক, হাওড়া থেকে হ্যামিলটনগঞ্জ... মন্ডপের সিঁদুর উধাও। বাড়ি থেকেই সিঁদুর মেখে আসে সবাই। যেভাবে মার্কোস কম্যান্ডো মুখে কালো রং মেখে অ্যাকশনে নামে, তার চেয়ে একটু কম মাত্রায়। নিখুঁত তিন আঙুলের সিঁদুর। পারফেক্ট ক্যালিগ্রাফির মতো গালে এঁকে দিয়েছে কেউ।

শীলা বউদির নাকে চকচক করছে গুঁড়ো সিঁদুর। ঘেমে ওঠার আগেই পাড়ার ট্যাপাদাকে ওই দৃশ্য ধরে ফেলতে হবে নিকর তিনশো এমএম-এ। ব্যাকগ্রাউন্ড পুরো ব্লারড করে দেওয়া অসম্ভব কারণ দুর্গার, মা দুর্গার, হালকা হলেও একটা ইমেজ রাখতে হবে। তবে ফোকাসে শীলা বউদি। তাই ডেপথ অফ ফিল্ড কমিয়ে ধরে ফেলতে হবে ওই ফর্সা মুখ, কানে জাঙ্ক, লালপাড় সাদা শাড়ি। শুধুই কি শীলা? ট্যাপাদা এই মফস্‌সল শহরের ক্যাসানোভা। ফেসবুকে ছয় হাজার ফলোয়ার, ইন্সটাগ্রামে আরো বেশি। অমাইক পুরনো গান বাজছে মাইকে, ‘ও জুলি, ও শীলা, ও রানো...’

২। চেতন শর্মা। জাভেদ মিয়াঁদাদ। চন্দন শেঠ। বৃন্দাবনি ময়দান।

১৯৮৬। শারজা কাপ ফাইনাল। ভিআইপি বক্সে দাউদ। বল হাতে চেতন শর্মা। ব্যাটে জাভেদ মিয়াঁদাদ। এদিকে দশমীর বিকেল। আইএমএ ভবনের সামনে মাটির খুরিতে মহুয়া, রেডিওয় শারজা। একটু দূরেই বৃন্দাবনি ময়দান। খুরিতে মহুয়া, রেডিওয় শেষ বল, ময়দানে ভাসানের মেলা। সদ্য কলেজ। সামনে বাল্যবন্ধু চন্দন। কেউ ভ্রূ-পল্লবে ডাকেনি, তবু। প্রথম মহুয়া স্রোত গলা দিয়ে নামছে যখন, যখন মিয়াঁদাদ ছক্কা মারলেন ঠিক তখনই শান্তিভারতীর পুজো ফার্স্ট হলো। পিঁয়াজি মোড়ে পটকা ফাটল। ভাসানের।

তখনও বোম্বে ব্লাস্ট হয়নি। তখনও বক্সে দাউদ। তখনও মিয়াঁদাদের মেয়ের বিয়ে হয়নি। তখনও রামচন্দ্র গুহা এবং রোমিলা থাপারের এলোকুয়েন্ট ইতিহাস পড়তাম আমরা। যদুনাথ সরকারও যে ইতিহাস লিখতেন, জানি না।

হেরে গেলে সবার মনখারাপ হয়। আমারও। মহুয়ায় সবার নেশা হয়, চন্দনের হয় না। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই ও কোমরে নাইনএমএম রাখত। লাইসেন্সড। এবং ওর জন্যই পায়েসের বাটি হাতে সুজাতারা অপেক্ষায় থাকত।

টলোমলো পায়ে বাড়ি ফিরছি সন্ধের একটু বাদে। সবে এইচ এস পাশ তরুণের সামনে ফোয়ারা মোড়ে শ্লথ হয়ে আসে একটি রিকশা। হুড টেনে রাখা সেই ‘আবু ঘ্রাইব’ ক্যাম্পে বার্লো গার্লস-এর টপার। চোখে ভারি চশমা, ভ্রূ সবসময় সেকেন্ড ব্র্যাকেট, গম্ভীর মুখ। কিছু ইঙ্গিত অনুচ্চারিত। ‘আমি সামান্য রায়গঞ্জ কলেজ, ইউনিয়ন করি। কাফকা পড়া হয়নি, সুধীন দত্তও।’

তবু কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে উঠে পড়লাম।

ফার্স্ট গার্লেরা বেশি কথা বলে না। ব্যাক বেঞ্চারেরা আদেখলার মতো তাকিয়ে থাকে। ফোয়ারা মোড় থেকে বি এস রোড যে এত আলোকবর্ষ, তাই বা কে জানত। কেই বা জানত, ফার্স্ট গার্লের গলায় নীল শিরা। এমনকী জল খেলেও বাইরে থেকে দেখা যায়, এতটাই স্বচ্ছ ত্বক! ঠিক গহরজানের মতো। ব্যাকবেঞ্চারদের হাত থেমে থাকলেও মন খুব দ্রুত চলে।

‘আবু ঘ্রাইব’ থেকে নেমে আসার সময় রিনরিনে আওয়াজ শুনলাম, ‘এত ভাল কবিতা লেখো তবু মহুয়া খাও?’

মৃদু আমি তখন সদ্য কমিশনড সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের মতো সাহসী, ‘আজই প্রথম। মহুয়ায় মেঘ জমল বলেই না তোমাকে দেখতে পেলাম, গহরজান।’

তখন শারজায় দাউদ হাসছেন। শান্তিভারতীর পুজো পুরস্কার নিচ্ছে। মেলায় মুক্তমঞ্চে সি পি এম বইয়ের স্টল দিয়েছে। চন্দন শেঠ পায়েস খাচ্ছে সুজাতার হাতে। খাপে খাপ, মন্টুর বাপ। মাইকে ঢাক। ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন।

৩। একটু চা খেয়ে গেলেই পারতেন, আজ বিজয়া।

দ্য গ্যাঞ্জেস।

গঙ্গা একটি গ্রেট ডিভাইডার। এপার ওপার। দুপারের মানুষই ভাল। তবু ম্যানিপুলেটিভ আমি লোকটা ওইপারের লোকদের জন্য  এত ভালবাসা পুষে রাখি কেন? ওপারে রক্ত নেই, ওপারের মানুষেরা যেন ‘উঠে আসে’ এপারে, তবু?

আজ পুজোর দিন। নিউটাউনে আলোর রোশনাই। দিনের বেলায় আকাশ নীলসাদা। শুধু আকাশ নয়। ফুটপাথ অবধি নীলসাদা। শার্টের কলার নীল, বাকিটা সাদা। মায়ের শাড়ি সাদা, আঁচল নীল। তবু একটা গাঢ় নীল মনখারাপ আমাকে ঘিরে নৃত্য করে চলেছে। কলকাতার বন্ধুরা আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছে। একশ আটটা স্থলপদ্ম দিয়ে আবাহন করেছে এই চণ্ডালকে। পরিচিতি এবং রুটি, দুটোই দিয়েছে। তবু আমার এই দুঃখবিলাস পাশোয়ান আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।

অনেক ট্র্যাফিক, অনেক বন্ধুর পথ উপেক্ষা করে এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম আজ। আজ দশমী। উঠে আসার সময় বন্ধুর বউ আমায় বলল, ‘একটু চা খেয়ে গেলেই পারতেন, আজ বিজয়া।’ অথচ এই কলকাতা শহরেই আমার মৃত্যুপথযাত্রী বাবাকে রক্ত দিয়েছে একজন অপরিচিত মানুষ, পকেটমার হয়ে যাওয়া আমাকে বাসভাড়া দিয়ে অজানা কেউ আমার মান বাঁচিয়েছে। সম্পূর্ণ সাদা কালো বলে কিছু নেই। মানুষের মধ্যে এভাবে র‍্যাডক্লিফ লাইন টানা যায় না। তবু।

তবু এ পরবাসে রবে কে হায়...

পলহোয়েল হাইস্কুলের ঠাকুর দেখে ফিরে আসার সময় জোনাকির স্রোত আমাকে টানে। হিলকার্ট রোডের লিকুইড চাদরের ওম মিস্‌ করি। গ্যাবার্ডিনের গোগো প্যান্ট, অরবিন্দনগরের একচালা ডাকের সাজের মা, উইনার্স ক্লাবের ‘বিচিত্রানুষ্ঠান’, সেন্ট্রাল কলোনির রাতের খিচুড়ি…

কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে।

এই ফিরছি নিউটাউনের মণ্ডপ থেকে। ‘ঝিনচ্যাক পূজা’ দেখে ফিরছি।

মাইকে মান্না দে। হৃদয়ে লেখো নাম।

আমার ‘রিদয়’ জুড়ে একটা গোটা উত্তরবঙ্গ। ডায়না। শিলতোর্ষা। রায়ডাক। করলা। তিস্তা।মহানন্দা। টাঙ্গন।

‘নিমকিটা খা, নইলে জুতিয়ে লম্বা করে দেবো।‘

‘একটু চা খেয়ে গেলেই পারতেন, আজ বিজয়া।’

চন্দন, বন্ধু আমার, আজও কি মহুয়ায় মৌ জমেনি?

ছবি - সুজিত দাস

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team