× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
সম্পাদকের কলম

লড়াইটা আমাদের আসলে কার সঙ্গে? সরকার? নাকি ভাইরাস?

প্রদোষ রঞ্জন সাহা
Virus is the enemy not the Govt.

হাসপাতালে ডাক্তারবাবু ও সিস্টারদের জীবনে এ এক কঠিনতম অধ্যায়, প্রত্যেককে এখন পালা করে কোভিড ওয়ার্ডে ডিউটি করতে হচ্ছে, গতবারের মত ডিউটির পরে ‘কোয়ারেন্টাইন’এর অবকাশ নেই আর। সেই মারণ ভাইরাস ফিরে এসেছে ডাবল শক্তি নিয়ে, সংক্রমণের হার মারাত্মক, সুস্থতা আশাপ্রদ হলেও মৃত্যুর হার ভীতিপ্রদ। প্রতিনিয়ত ডিউটিরত ডাক্তার-নার্সরা ভীত হয়ে আছেন নিজেদের জীবন নিয়ে, রুগীর কষ্ট বা রোগের চিকিৎসা নিয়ে ঠিকঠাক ভাবাটা আজ তাঁদের পক্ষে কতটা কঠিন ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।

ভ্যাক্সিনেশন বা টিকাকরণ এই সঙ্কটের একমাত্র স্থায়ী দাওয়াই, অতএব সেটাই প্রাথমিক টাস্ক। আর দ্বিতীয় টাস্ক, মানব সভ্যতার এই মহাসংকটের সঙ্গে লড়াইতে আমাদের প্রয়োজন প্রচুর ইয়াং ডাক্তার ও নার্স। তার জন্য চাই মান্ধাতা আমলের মেডিক্যাল শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর থেকে কোভিডের আগ পর্যন্ত কোনও সরকার দেশের হেলথ কেয়ার ব্যবস্থায় নজর দেয় নি, আধুনিকীকরণ তো অনেক দূরের ব্যাপার। এমন কথাই বলছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ দেবি শেঠি, কোভিড যুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের সদস্য, ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া দিন কয়েক আগের এক সাক্ষাৎকারে।   

কিন্তু আমাদের দেশটার নাম তো ভারত। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যখন দেশব্যাপী সুনামির মত আছড়ে পড়েছে, তখন এ দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় আছড়ে পড়েছে কেন্দ্র সরকার বিরোধী ঢেউ। ছন্নছাড়া বিরোধী পক্ষ হাতা গুটিয়ে নেমে পড়েছেন রে রে করে, বহুদিন পরে এইবার বুঝি সুযোগ মিলেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পেড়ে ফেলবার -- কেবলমাত্র ওই লোকটার জন্যই নাকি আমাদের এতদিনের সোনা ফলানো দেশটার আজ এত বড় দুরবস্থা? করোনা কাতর সমগ্র বিশ্ব আজ দেখছে, ১৩০ কোটি মানুষের যে সুবিশাল দেশে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে রাজ্যগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে রাখবার, নিজস্ব আবিষ্কৃত প্রতিরোধক দিয়ে যে দেশে পৃথিবীর বৃহত্তম টিকাকরণ কর্মসূচী শুরু হয়েছে, একই সঙ্গে যেখানে রয়েছে বেহাল অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার ও সামাজিক স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর মত ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ, এই পরিস্থিতিতে সেই দেশের মধ্যেই এক শ্রেণীর নেতিবাচক উগ্র সরকার বিরোধিতা আজ সাধারণ মানুষকে কনফিউজ করে দিচ্ছে – লড়াইটা আমাদের আসলে কার সঙ্গে? সরকার? নাকি ভাইরাস?

কেন এমনটা হচ্ছে? কোন অশুভ শক্তি কাজ করছে এর পেছনে? গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে মৃত্যু ও হতাশার কালো মেঘ যখন ছেয়ে আছে, দিশেহারা সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলতে পারে, কেন সরকার এত দেরি করে সব শুরু করল? কেন অক্সিজেন-বেড-টিকা এসব ঠিকঠাক মিলছে না? কেন এই মৃত্যু মিছিল? অস্বীকার করবার উপায় নেই, এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা ও ভয়াবহতা আগাম আন্দাজ করতে সরকারের সত্যিই খানিকটা দেরি হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির পারস্পরিক টানাপোড়েন ও বিলম্বিত নড়াচড়ার ফলেই এই আপাত প্যান্ডোমোনিয়ামের উদ্ভব হয়েছে।

ডাঃ দেবি শেঠির মতে, সরকারের সমালোচনা করা সবচেয়ে সহজ কাজ। কিন্তু যে পরিমাণ কোভিড পেশেন্ট এখন এ দেশের সরকা্রি হাসপাতালগুলিতে সামলাতে হচ্ছে, পৃথিবীর কোনও উন্নত দেশের সরকার বা মেডিকেল ব্যবস্থার পক্ষে তা সম্ভব নয়। সত্যিই, কেবল ভারতই নয়, কোভিডের এবারকার তীব্রতা আগাম অনুমান করতে ভুল বা দেরি হয়েছে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতেও। আমেরিকা ইউরোপ জাপান আর্জেন্টিনার মত দেশ যেখানে জন ঘনত্ব ও সংখ্যা অনেক কম সেখান থেকেও খবর পাওয়া যাচ্ছে অক্সিজেন ও ভ্যাক্সিন মিলছে না ঠিকঠাক, চূড়ান্ত অব্যবস্থা চলছে। আসলে প্যান্ডেমিকের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যই এটা। আর এই পরিস্থিতির মোকাবিলাই কোনও সরকারের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ভারতের মত দেশকে কোভিডের বিরুদ্ধে আরও দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে হবে পরিকাঠামো ও প্রযুক্তিতে। যদিও ডাঃ দেবি শেঠির মতে, বেড-ভেন্টিলেটর-অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির পক্ষে কঠিন কিছু নয়। কিন্তু সবার আগে টিকার অপ্রতুলতা মেটাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ১৮ বছরের বেশি বয়সী আরও ৫১ কোটি মানুষকে দু-দফার টিকা দেওয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। তাঁর মতে, একদিনে লকডাউন হলে দেশের মোট ক্ষতি আনুমানিক ১০,০০০ কোটি টাকা, আর ৫১ কোটি মানুষকে টিকাকরণের খরচ ৭০,০০০ হাজার কোটি টাকা। সরকার যদি একাধিক টিকা প্রস্তুত কোম্পানিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে সব টিকা সাপ্লাই দিতে হবে এই শর্তে ১০,০০০ কোটি টাকা আগাম দিয়ে দেয় তবেই দেশের মানুষের অতি দ্রুত টিকাকরণ সূচী সম্পন্ন হওয়া সম্ভব। কারণ তাঁর মতে আগাম টাকা ও অর্ডার না পেলে কোনও টিকা কোম্পানিই অল্পদিনের মধ্যে একসঙ্গে কোটি কোটি উৎপাদনের ঝুঁকিতে যাবে না। আগামী কয়েক মাসের টিকাকরণ এই কোভিড ক্রাইসিস বা আনুমানিক থার্ড অয়েভ থেকে শেষ অব্দি বাঁচার একমাত্র পথ।

তারপরেই তাঁর মতে যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, হাসপাতালে আরও অনেক ডাক্তার ও নার্স প্রয়োজন। তিনিই জানালেন, দুলক্ষ কুড়ি হাজার ট্রেইন্ড নার্স ফাইনাল পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে বলে কোর্স শেষ করে বসে আছে। তেমনই পোস্ট গ্রাজুয়েশনের এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য দেশে প্রায় লাখ দুয়েক এমবিবিএস ডাক্তার ঘরে বসে আছে, সে পরীক্ষাও শেষ অব্দি বাতিল হয়ে গেল। এই সময় এই সব নার্স-ডাক্তারদের সরকার এমন অফার দিতেই পারে, দুই বা তিনমাস যে কোনও সরকারি হাসপাতালে কোভিড ডিউটি করলে সামনের এন্ট্রান্স বা ফাইনাল পরীক্ষায় ১০% বা ২০% গ্রেস মার্ক দেওয়া হবে। ৭৮% স্বাস্থ্য কর্মীর ঘাটতিসম্পন্ন এই দেশে ডাক্তার-নার্স যখন আশানুরূপ হারে তৈরি হচ্ছে না তখন এই সদ্য এমবিবিএস-দের সার্ভিস পাওয়ার জন্য সরকারের এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তবে হ্যাঁ। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এই ইয়াং ব্যান্ডের ডাক্তার নার্সদের কাজে লাগাতে গেলে কেন্দ্র ও রাজ্যের হাত ধরাধরি করে এগোনো প্রয়োজন। এরাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদেরও তাই অভিমত, কোভিড যুদ্ধে রাতের পর রাত জাগবার ক্ষমতা রাখে যে ইয়াং ব্রিগেড হেলথ সার্ভিসে তাঁদেরকেই আজ দরকার।

অক্সিজেনের ঘাটতি প্রশ্নে ডাঃ শেঠির স্পষ্ট বক্তব্য, প্রয়োজনের বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করার ক্ষমতা আমাদের আছে এবং সরকারও এ নিয়ে খুব ভালো কাজ করছেন। কিন্তু আজ যদি রাতারাতি অক্সিজেনের চাহিদা দশ গুণ বেড়ে যায় তবে সেই অক্সিজেন উৎপাদন করাটা সরকারের পক্ষে কঠিন কাজ মোটেই নয়, সমস্যাটা তার পরিবহণের বাস্তবতা নিয়ে। সেই অক্সিজেনকে পশ্চিম বা দক্ষিণ ভারতের প্ল্যান্ট থেকে উত্তর বা পূর্ব ভারতের হাসপাতালে পাঠাতে গেলে দশ গুণ পরিবহণ বাড়িয়ে ঘন্টায় সর্বোচ্চ তিরিশ কিমি বেগে ছু্টিয়ে সেই রাতারাতি চাহিদা মেটানো যে প্রায় অসম্ভব সেটা বাস্তববুদ্ধি থাকলে তবেই বোঝা যাবে।

তাই দেশের এই অভুতপূর্ব বিপর্যয়ের দিনে কে ক্ষমতায় আছে তার বাছবিচার করাটাই অস্বাভাবিক, কারণ ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন সমগ্র স্তরের স্বতস্ফূর্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক সমর্থন না পেলে একা একাজ করা কখনই সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য রক্ষা ও চেতনা যেহেতু রাজ্য সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, অতএব এই পরিস্থিতিতে জাত-ধর্ম-দল নির্বিশেষে সমস্ত বিরোধ তাকে তুলে রেখে কেন্দ্র-রাজ্য একযোগে হাতে হাত মেলাতে হবে দেশ ও মানুষকে রক্ষার জন্য। একশ বছরে একবার আসা এই সংকটে মনুষ্যত্বের কাছে এমনটাই দাবি বা আশা করা যায়।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাস্তবে তা হচ্ছে কই? আজ বিশ্ব জুড়ে একটি সত্য অনস্বীকার্য যে এই ভয়াবহ মারণ ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে চীনে। বিশ্বের বিজ্ঞানীরা আজ কেউ কেউ দাবি করছেন, উহানের পশু বাজার নয়, এই ভাইরাস নাকি ল্যাবরেটরিতেই সৃষ্ট। কোভিডের প্রথম ঢেউকে নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দেখিয়েছিল ভারত, এখানকার জরুরি ভিত্তিতে তৈরি পরিকাঠামো দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল হু এবং সমগ্র বিশ্ব, তাই আজ স্বভাবতই এই সুতীব্র জৈব আক্রমণের মূল টার্গেট হতে পারে বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশ ভারতই। অতএব ধরেই নেওয়া যায় দেশের মধ্যেই সরকার-বিরোধী ইন্ধন যোগানোর অভাব হবে না। যেমনটি অতীতে নানা জাতীয় সংকটকালে বা বিশ্বযুদ্ধের সময় বারবার দেখা গিয়েছে, তা সে কেন্দ্রে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, কোনও না কোনও এক মহল থেকে সমালোচনা নিন্দে-মন্দ অব্যাহত ছিল সবসময়।

তাই একসময় যাদের দেখা গিয়েছে লকডাউনের কড়া সমালোচনা করতে, দেশজ টিকা বাজারে নামবার পর তা নিয়ে মস্করা করতে, টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান মন্তব্য করতে, অবাক কাণ্ড হল তারাই আজ অস্থির সোচ্চার হয়েছে কঠোর লকডাউনের পক্ষে, টিকার অপ্রতুলতায়। তবে তাই বলে সেই সব শ্রেণীর মানুষ বা মানসিকতার সমালোচনা বা নিন্দা করারও সময় বোধহয় এখন নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে কেন্দ্র-রাজ্য একযোগে এই সংকট মেটাতে এখুনি ঝাঁপিয়ে না পড়লে, এখনও বিরোধিতা-প্রতিযোগিতার পথে হাঁটলে যে ভয়ংকর বিপদ অবধারিত তা কিন্তু দল-মত-ধর্মের বাছাই করে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বা তাঁর সরকারের হিসেব নেওয়ার সুযোগ ইভিএমে অবশ্যই আগামীদিনে আসবে, কিন্তু ইভিএম ব্যবহার করার মত মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকবে তবেই তো তা সম্ভব, তাই না?

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team