“স্বাধীনতা দিবস আসে। স্বাধীনতা দিবস যায়। কিছু ভারী ভারী শব্দ উচ্চারিত হয়। দেশপ্রেমমূলক গান বাতাস মথিত করে তোলে। ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হাওয়ায় দোল খায়। কিন্তু যাদের আত্মবলিদান, শ্রম ও সাধনা, ত্যাগে ও আবেগে ইংরেজ শাসকের নাগপাশ থেকে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা, তাঁদের কথা ক’জন বলে? ক’জন ভাবে? জানেই বা ক’জন?”—‘স্বাধীনতার শত সেনানী : যেন ভুলে না যাই’ বইয়ের মুখবন্ধের শুরুতেই সংকলক শাশ্বতী চন্দ প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন আমাদের। একথা অনস্বীকার্য যে, আমরা স্বাধীনতা উদযাপন করি যতটা ব্যস্ততায়, অনুভব করতে চাই না মনোযোগ দিয়ে। যা পরিশ্রমসাধ্য, তাতে আমাদের অনীহা। সে ইতিহাসের খোঁজ হোক কিংবা স্মৃতির সন্দর্ভ!
স্বাধীনতার ৭৫ পেরিয়ে আমরা যখন বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলির সঙ্গে সবদিক থেকে পাল্লা দিতে চাইছি, সেইসময় খুব বেশি জরুরি ইতিহাসের পুনরুদ্ধার-- কীভাবে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এই স্বাধীনতা সত্য না মিথ্যা—এই প্রশ্ন নিয়ে বার্ষিক ফেসবুক বিতর্কের মধ্যে যেন ভুলে না যাই স্বাধীনতা না পেলে এই প্রশ্নটাই আমরা তুলতে পারতাম না। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, দেশগঠনের সংকল্পকে যদি ঠিকমতো পৌঁছে দিতে না পারি নতুন প্রজন্মের কাছে; তাহলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপন্ন হবে, সেকথা নতুন করে না বললেও চলে। মনে রাখা আর ভুলে যাওয়ার মধ্যে সুচতুরভাবে কাজ করে চলে শাসকের মতাদর্শ।
যে বাংলা ছিল বিপ্লবীদের পীঠস্থান, সেই বাংলায় আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত স্বাধীন ভারতের কাণ্ডারীরা। আলোচ্য বইয়ের ব্লার্বে খুব সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে—“স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কেউ ছিলেন গান্ধীজীর অনুসারী, কেউ ছিলেন বামপন্থায় বিশ্বাসী, আবার কেউ ছিলেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী। কিন্তু দেশপ্রেম ও পরাধীনতা মোচনের লক্ষ্যে এঁরা সবাই ছিলেন এক ও অভিন্ন।” বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের খোঁজই আমাদের অন্বিষ্ট।
তিলকা মাঝি থেকে শিবরাম হরি রাজগুরু পর্যন্ত একশো জন বীর সেনানীকে বেছে নেবার কাজটি সহজ ছিল না নিঃসন্দেহে। বইটি সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার সংগ্রামকে দেখতে চেয়েছে। আর এই সূত্রেই সংযোজক ও প্রকাশক প্রদোষ রঞ্জন সাহা-র ভূমিকার প্রশংসা করতেই হয়। মূলত ‘কিশোর বয়সী স্কুল পড়ুয়াদের জন্য তৈরি এই সংকলন’ সকলের ভালো লাগবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। কেননা বইটি তথ্যে ভারাক্রান্ত হয়নি। ইতিহাসের মূল সত্য অবিকৃত রেখে গল্প বলা খুব সহজ কাজ নয়। শাশ্বতী চন্দ সেই কাজটি অনায়াস দক্ষতায় করেছেন।
বিপ্লবীদের নতুনভাবে দেখার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় এই সংকলনে। যেমন বিপিন চন্দ্র পাল সম্পর্কে লেখা হচ্ছে—‘তিনি নিজেও যেমন পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে এক বিধবা নারীকে বিয়ে করেছিলেন তেমনই তাঁর বিধবা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন বিপ্লবী উল্লাস কর দত্তের সঙ্গে।’ ভগিনী নিবেদিতা, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের বহুবিধ পরিচয়, নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্যসহ বিভিন্ন বিষয় ছুঁয়ে গিয়েছে এই বইটি। সঙ্গে রয়েছে প্রত্যেক সেনানীর ছবি। দু-একটি মুদ্রণ প্রমাদ ছাড়া ২৬৪ পৃষ্ঠার বইটি এককথায় সংগ্রহযোগ্য-- স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে অনন্য প্রাপ্তি।
স্বাধীনতার শত সেনানী : যেন ভুলে না যাই
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team