× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: কার্ত্তিক, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
ফিরিয়ে দাও মান, ফিরিয়ে দাও হুঁশ মাগো!
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
বিশেষ নিবন্ধ
সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে
রম্যাণী গোস্বামী
বিশেষ নিবন্ধ
উত্তরবঙ্গের পুজোয় বিবর্তন প্রসঙ্গে
জয়দীপ সরকার
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১৪
সব্যসাচী দত্ত
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টউন | পর্ব - ৭
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
টয়ট্রেনে চাপিয়ে হতো দুর্গামায়ের ভাসান: শিলিগুড়ির পুজোকথা
নবনীতা সান্যাল
কোচবিহার অনলাইন
কোচবিহারের কয়েকটি প্রাচীন দুর্গাপূজায় সাবেকিয়ানা আজও বজায় আছে
অভিজিৎ দাশ
উত্তর-পূর্বের চিঠি
প্রাগজ্যোতিষপুর সাহিত্য উৎসব ২০২৩
নব ঠাকুরিয়া
পর্যটন
অজানা পাহাড়ি গ্রাম তাকলিং
সৌরভ রায়
খোলা মনে খোলা খামে
কোথায় হারিয়ে গেছে সেই গাছে ফুলে সেজে থাকা শহর!
অর্পিতা মুখার্জী চক্রবর্তী
আমচরিত কথা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে
তনুশ্রী পাল
উত্তরের বইপত্র
টোটো সমাজে নারীর স্থান সম্মানজনক
অর্ণব সেন
পাতাবাহার
ইলিশ পুরান
পাতা মিত্র
পুরানের নারী
রেবতীর কথা
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী গৌতমেন্দু রায়

প্রত্যেকে আমরা পরের তরে

তনুশ্রী পাল
Protyeke Amra Porer Tore

যাপনক্ষেত্রে লাভবান হওয়ার বাসনা কার নেই? ধরুন সহজ সরল মর্নিংওয়াক, তাতে শুধু শরীর নয়, মনটাও তো বিশেষ ঝরঝরে ফুরফুরে হয় তাই না? নইলে কে আর শুধু শুধুই এ প্রকার কঠিন সাধনায় লিপ্ত হয়! যাঁরা বিন্দুমাত্র জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পদকের আশা না করে শরীরচর্চাকে সাধনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাঁদের শত শত কুর্নিশ জানাই। আমার মাতৃদেবীকে দেখেছি ঝড় জল বৃষ্টি, কাঁপন ধরানো শীতের কুয়াশাময় ভোর, সকল প্রতিকূল পরিস্থিতি সবই হেলায় তুচ্ছ করে নিজ সাধনায় তিনি রত থাকতেন। একা বয়স্ক মহিলার কতপ্রকার বিপদ হতে পারে ওই বিজন পথেঘাটে, সম্যক অবহিত করানোর পরেও তিনি অকুতোভয়। বেশি বললে তিনি অনশন ধর্মঘটের ঘোষণা দিতেন। যাইহোক সাধন গুণেই আশি উর্ধ্ব বয়সেও তিনি সচলই ছিলেন। শরীরচর্চার ফললাভ করে গেছেন। 

আমার সাধনগুণ নাই। থাকবার মধ্যে আছে বাঙালের ঠেঁটা স্বভাব। কথায় বলে 'উঠলো বাই তো কটক যাই' সেইরকম। চললাম সেদিন তড়বড়িয়ে মর্নিংওয়াকে। ঘুম ভাঙতেই রওনা হবার কারণ আগ্রহ, আকাশ অমন ঝকঝকে নীল হলেই, তিস্তাচরের ফুটফুটে কাশবনের ধারে দাঁড়িয়ে উত্তরে তাকালেই তিনি দৃশ্যমান হন, হ্যাঁ কাঞ্চনজঙ্ঘা! অপরূপ দৃশ্য! অবিরল ধারাপতন বিরতি নিয়েছে, রোদ্দুর উঠছে। আর এত এত ক্ষয় আর লয়ের পরেও অব্যক্ত আনন্দের ঢেউ জাগে প্রাণে, তিনি আসছেন! দশ প্রহরণধারিণী মা দুর্গা।

শহর লাগোয়া নদী খানিক শান্ত, হলুদসংকেত সরে গেছে। তো যদি তাঁর দেখা পাই! আকাশে হেলান দিয়ে স্বমহিমায় বিরাজিত কাঞ্চনজঙ্ঘা! সে উদ্দেশ্যেই মর্নিংওয়াক। তিস্তায় যাওয়ার এই পথটিও ভারি মনোরম। ভোরবেলা করলানদীর বাঁধের পথ ধরে হেঁটে যাবার সময় মনে হবে যেন সেই পুরাতনকালের কোনও ঋষির আশ্রমেই যাচ্ছি। পথের ওপর দুপাশের নুয়ে পড়া গাছ আর তারই গাঢ় সবুজ ছায়া বিছিয়ে চারিধারে। অজস্র পাখপাখালির কূজন শুনতে শুনতে পৌঁছে যাওয়া সুসজ্জিত জুবিলী পার্কের কাছে। বেড়ানোর জায়গা হিসেবে চমৎকার এখন। ঠিক এখানেই করলা এসে ঝাঁপ দিত তিস্তার বুকে একসময়। তারপর বন্যার হাত থেকে শহর বাঁচাতে বাঁধের প্রহরায় করলার জলরাশিকে অনেকটা দূরে নিয়ে তিস্তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা হয়েছে। 

স্পারবাঁধ দিয়ে দিয়ে নদীকে শহর থেকে দূরে ঠেলে পাঠানো হয়েছে। হঠাৎ হঠাৎ পাহাড় থেকে নেমে আসা রুদ্ররূপী তিস্তা ভয়ানক তান্ডব দেখায় তো বটেই। কথায় বলে, 'নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারোমাস।' ১৯৬৮সালের বন্যার পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সক্কলে। তারপরেও পাহাড়ের ভারি বৃষ্টিতে তিস্তা ফুঁসে ওঠে। ঘুম উড়ে যায় সাধারণ মানুষের, প্রশাসনের! 

যাক সেদিনের কথায় আসি। পথের শেষে সামনেই বিস্তারিত চরভূমি। এখন সবুজের সমারোহ। নদী খানিক দূরে সরে গেছে। আজ উত্তরের আকাশে হাল্কা মেঘ, তিনি দর্শন দিলেন না। ইতস্তত কাশ ফুটেছে। আর কদিন গেলেই আরও ঘন হবে কাশবন। সামনে আলোময় পুবের আকাশ। 

আকাশমণি গাছের নীচে ডান ধারের লম্বা সিমেন্টের বেঞ্চে জনা তিনেক মহিলা বসে। তাদের পাশের ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসি। এধারে ওধারে স্বাস্থ্যচর্চারত লোকজন। স্কিপিং, ওঠবস, হাত পা কোমরের কসরত করছেন কেউকেউ।

'শিব বাবাকো মানতে হো আপ?'

অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে চমকে উঠি 'কী?'

'আপ বাবাকো পহেচানতে হো, মানতে হো না, হর হর মহাদেব?'

তিনি শিবনেত্র হয়ে, অঞ্জলিবদ্ধ হাত নিজ কপালে স্পর্শ করে বোঝাতে চাইলেন। মাঝবয়েসী মহিলা, কপালে সিঁথেয় চওড়া করে সিঁদুর, দুহাতে কাচের চুড়ি, কাঁচাপাকা চুলে পরিপাটি খোঁপা, পরনে হাল্কা গোলাপি শাড়ি। বলি মানতি হুঁ। দেবাদিদেব মহাদেব। সবনে উনকো মানতে হ্যায়। লেকিন কিঁউ আপ…?

'ঠিক হ্যায়, আপ মেরে সাথ বলিয়ে ওঁম নমঃ শিবায়ঃ নমঃ শিবায় নমঃ শিবায়ঃ…'

দুটি চরণ শিবস্ত্রোত্র উচ্চারণ করেন মহিলা। সঙ্গে আমিও। কিন্তু হচ্ছেটা কী? হঠাৎ এইসব? তিনি জানান রোজ তিনবার এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে সঙ্গে আরও দুজন লোককে শেখাতে হবে 'শিববাবা'র মন্ত্র। এতে লাভ? 'ইসসে আপকি ফায়দা হোগি, দুসরকো ভি বহৎ ফায়দা হোগা। ইস জগত জো হ্যায়, হাঁ ইসকা ভি বহত ফায়দা হোগা।' ওনার পাশে বসে থাকা দু'জন মহিলাও মাথা নাড়েন সমর্থনের ভঙ্গিতে। তারা বোঝাতে চেষ্টা করেন,'বাবাকি কৃপা সেহি করোনা গয়া। নেহিতো অরভি য্যাদা আদমি মর যাতা করোনা মে। জানতে হো না আপ।' পৃথিবীর যত ক্ষয়, লয়, দুঃখ, বেদনা,অসুখ-বিসুখ, বন্যা, মহামারী সবই বন্ধ হয়ে যাবে শিববাবার কৃপায়। যে মানুষ শিববাবার স্মরণ নেবে তার জীবনেও আর কোনও সমস্যাই থাকবেনা।

'আজ তো হো গিয়া। চল রে।' তিনি গাত্রোত্থান করেন, এধার ওধার থেকে আরও ক'জন মহিলা চলে এলেন, দলবেঁধে তাঁরা রওনা দিলেন। যাবার আগে আবারও বলে গেলেন 'বহত ফায়দা হোগা।' মানে এই দলের সদস্যবৃন্দ একটা মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ভোর ভোর তিস্তাবাঁধে ইদানিং আসেন হয়তো। এমন সহজে মানুষ ও জগতের ফায়দা হলে মন্দ কী!

বহুকালের পুরনো স্কুলবেলার বন্ধু ফোন করে হঠাৎ, 'সুতপা, তোর নাম্বারটা পেলাম নূপুরের কাছে। কেমন আছিস? কতদিন বাদে যোগাযোগ হল বল।'

'তাই তো। তুই কেমন আছিস? কোন পাড়ায় থাকিস?'

'দ্যাখ একই শহরে থেকেও যোগাযোগ নেই! নিউটাউন পাড়ায় বাড়ি আমার। চাকরি করিস স্কুলে তাইনা, শুনলাম যেন কার কাছে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে তোকে। সেই ছোটবেলার বন্ধু আমরা, বল। একদিন যাবো তোর বাড়ি। বল তো ঠিকানাটা।'

ভালো করে বুঝিয়ে দিই ঠিকানা। আমন্ত্রণ জানাই। সত্যিই কতকাল দেখা হয়নি, প্রায় ভুলেই গেছিলাম যে দীপিকা নামে আমার কোনও বন্ধু আছে! তরুণ বয়সে মহারসিক আর বিশ্বপ্রেমিক ছিল সে। মুহুর্মুহু প্রেমে পড়ে যেত!

সত্যি দিন দশেক পরে একগাল হাসি নিয়ে বন্ধুটি উপস্থিত, সেই ছিমছাম পাতলা চেহারায় বেশ গত্তি লেগেছে। ফুলছাপ কুর্তি, ঘিয়ে রঙা পালাজো, বয়কাট চুলে মানিয়েছে বেশ! সঙ্গে ঢাউস দুটি ব্যাগ আর ফর্সাপানা গোলগাল চেহারার এক মেয়ে। নাম তার জয়ী, দীপিকার আত্মীয় এবং সে খুব করিৎকর্মা, জানায় দীপিকা। চা খেতে খেতে টিচারদের কথা, বন্ধুদের কথা, পুরাতন প্রেম, বর্তমান স্বামী, প্রেসার, কোমরব্যথা, ছেলে-বৌ, মেয়ে-জামাই, বেড়ানো, শাহরুখের জওয়ান, শাড়ি, ফ্যাশান, স্কিন ট্রিটমেন্ট কত বিষয়ে কথা হয়! ভাবি বাপ রে এত কথা জমা ছিল নাকি!

গৃহ ও অন্দরসজ্জার খুব প্রশংসা করে ওরা দুজন। তাদের মধ্যে চোখে চোখে কথা হতে দেখি তারপর জয়ী একটি ঢাউস ব্যাগ সামনে টেনে এনে চেইন খোলে। বলে, 'দ্যাখো ঘর সাজানোর কিছু শো-পিস, ডোকরার কত্ত জিনিস, পেতলেরও আছে। কাঠের ওপর কাজ করা সব ওয়াল হ্যাঙ্গিং, ভালো সব পেইন্টিং। তোমার ওয়ালগুলো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। নিতে পারো বড়ো বুদ্ধের স্ট্যচুটা। কী সুন্দর না!' বাঃ দারুণ কালেকশন তোমার তো! এতকিছু টেনে নিয়ে ঘুরছ!' 'ঘুরতে তো হবেই গো। আমার বাড়িতে আরও প্রচুর জিনিস আছে। বুদ্ধটা তুমি রেখে দাও। কী নিখুঁত, মুখখানা দ্যাখো। একুশশো, হ্যাঁ।'

এবারে আরেকটা ব্যাগ খোলা হল। তাঁতের শাড়ি, সিল্কের শাড়ি, কুর্তি, মেখলা আরও কত আইটেম। আমার বন্ধুটি হাসিমুখে চেয়ে রয়। তিনশো টাকা দিই বুদ্ধমূর্তির দাম। বাকি ইনস্টলমেন্টে নেবে। জয়ী জয়ের হাসি হেসে বলে, 'আমার আরেক বন্ধুর হার্বাল প্রোডাক্টের ব্যবসা আছে। খুব ভাল! তোমার মুখের সব দাগ চলে যাবে। দাম একটু বেশি। কিন্তু তুমি নিজেকে নতুন করে ভালবাসবে। এখানে সব ডাক্তারটাক্তারদের বউদের দেয় ও। দুর্দান্ত ফেসিয়ালও করে। যদি নিজের পছন্দের প্রোডাক্ট দিয়ে করাতে চাও করাতে পারো, তিনশো নেবে। আর ওর প্রোডাক্টে করালে আলাদা রেট। পার্লার ফার্লারে যাবার হ্যাপা নেই। নাম্বারটা রেখে দাও। রুমা ওর নাম। ফোন করে নিও। আর দ্যাখো পুজোতে সবাই নতুন কিছু চায় তাইনা বল।'

জিনিসপত্র গোটায় তারা। বেরনোর আগে জয়ী বলে 'শোনো সুতপাদি। তোমার কিন্তু লাভই হল। বুদ্ধমূর্তির সামনে সকালে আর বিকেলে চুপ করে দু'মিনিট বসবে। দেখবে ভেতরটা একদম শান্ত হয়ে যাবে। এনার্জি পাবে। আমি পরের মাসে ফোন করে আসবো, হ্যাঁ। সামনের মাসে একটু বেশি দিও।' দীপিকা বলে, 'হ্যাঁ রে, এ বয়সে মেডিটেশন করা দরকার। আমরা সবাই দিনের শেষে সেই একাই, নিজের মনের কাছেই দাঁড়াতে হয়, এতেই লাভ। আমার বাড়ি যাস কিন্তু। ফোন করিস।' দরজা বন্ধ করে এসে বুদ্ধমূর্তির সামনে দাঁড়াই। লাভ, ফায়দা শব্দদুটি ভাবায়। এ ভাষা ক্রেতা আর বিক্রেতার! 

একদিন রুমা নামের মেয়েটি ফোন করে, 'জয়ীর কাছে আপনার নাম্বার পেয়েছি দিদি। কবে আসবো বলুন। আগের দিন জানাবেন, একদম টাইমলি চলে যাবো। আমি আসলে একটা স্টোরে কাজ করি তো।' 

'তাই নাকি? চাকরি কর? আচ্ছা। তাহলে বাড়িবাড়ি গিয়ে কী করে ফেসিয়াল করার সময় পাও?'

'আমাদের ডিউটি সকাল এগারোটা থেকে তিনটা আবার বিকেলে পাঁচটা থেকে রাত্রি নয়টা। সানন্দা স্টোর চেন? ওখানে কাজ করি। তার পাশে 'পাতাবাহার বিউটি স্পা' আছে না? ওটা আমার পিসতুতো দিদির। কবে আসবো দিদি?' খুব সহজেই সে আপনি থেকে তুমিতে আসে।

'আমি ফোন করে ডেকে নেব তোমায়।'

'আচ্ছা। সকালের দিকে ন'টা থেকে এগারোটার মধ্যে আর বিকেলে তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে, হ্যাঁ। ডাকবে দিদি। একটু বয়স হলে হার্বাল প্রোডাক্ট ব্যবহারে বেশি লাভ হয়। স্কিনের ভাঁজ থাকেনা, টাইটনেস আসে।'

'আচ্ছা বেশ ডাকবো একদিন। আজ রাখছি।' এ তো দেখছি বিজনেস চেইন! একজন অপরজনকে প্রোমোট করছে। বিউটিশিয়ান, ফিজিও থেরাপিস্ট, মেসেজার, টেইলার সবার সঙ্গে সবার যোগ! বাঃ! দারুণ তো! 

প্রয়োজনে কখনওসখনও ইন্দ্রের কাফেতে যাই। ভিড় লেগে থাকে। ফোন করেই যাই, দোকান খোলামাত্র বা রাতে বন্ধ হবার আগে কখনও হয়তো ফাঁকা থাকলো, তখন হাজির হই। ছেলেটি শান্ত, সুভদ্র, হাসিমুখেই কাস্টমার সামলায়। বেশ সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক আমার সঙ্গে। আধার সংযুক্তি, আপডেট বা কারেকশন, ডাউনলোড। পাশপোর্ট সাইজ ছবি তোলা। যতপ্রকার নেট মাধ্যমের কাজ সবই হয় ওখানে। পেন ড্রাইভে এট সেটা নিয়ে যাই, প্রিন্ট আনি। আধার আপডেট করাই। কিছু কাজ মেইল করে দিই, প্রিন্ট বের করে বাড়ি যাবার সময় দিয়ে যায়। ইদানিং ওর দোকান খোলার টাইমের গড়বড় দেখছিলাম। একদিন বলে 'অর্ডার ছিল তো, দিয়ে আসলাম। দেরি হয়ে গেল।'

'ও। অর্ডার সাপ্লাই কর। কী জিনিস ইন্দ্র?'

'বউ কেক বানায়। দিয়ে আসি আমি। কালকে দোকান বন্ধ রাখলাম না, ওই। বউ দুইরাত ঘুমায় নাই। পুরা খাটনি। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দাম। দ্যাখেন।' সে মোবাইল খুলে বিরাট সুদৃশ্য কেকের ছবি দেখায়।

সত্যি দারুণ তো! বাপরে এত দামের কেক?' বিস্মিত হই, এ শহরে এত দামের কেক কেনে লোকে! তা কাস্টমার কীভাবে পাও তোমরা? পেজ খুলেছ ফেসবুকে। খুব দাম তো!

'না না, ওই মুখে মুখেই জানে লোকে। সব রকম দামের কেক পাবেন। এই পার্টিটা বাচ্চার ছয়মাস বয়স থেকেই নানা অনুষ্ঠান করে। আর কেক আমার বৌয়ের কাছ থেকেই শুধু নেয়।' স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা, দুজনে দুরকমে। 

কম্পিউটার বেগড়বাই করলে আনন্দকে ডাকি। সে প্রাইভেট ফার্মে আছে। তাদের ফার্ম নানা অফিসের কম্পিউটার দেখাশোনার দায়িত্ব সামলায়। অতি সজ্জন কাজের ছেলে সে, কথাবার্তাও সুন্দর। চটপট অসুখটি ধরে ফেলে, ফটাফট সারিয়ে দিয়ে যায়। বিয়ে করল আসামের মেয়ে। করোনার সময় একদিন ওকে ডাকতে হল। কাজ করতে করতে গল্প শোনায়, বউ বাপেরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়ে আর তাকে উদ্ধার করা নিয়ে কত নাটক। কঠিন অভিজ্ঞতা! তখন আসাম বর্ডারে ভয়ংকর কড়াকড়ি। শ্বশুরবাড়ি থেকে বউ ফেরৎ আনা প্রায় দুঃসাধ্য, কত বুদ্ধি করে সে বউ ফেরৎ আনতে পেরেছিল সেই গল্প। 

বহুদিন পরে একদিন সে ফোন করে, 'ভালো আছেন ম্যাডাম। কম্পিউটার ঠিকঠাক তো? অনেকদিন যোগাযোগ হচ্ছে না।'

'ভালো আছি। সবই ঠিক আছে আপাতত। খুব খুশি হলাম আনন্দ তুমি ফোন করলে। তোমাদের খবর?'

'আমরাও ঠিক আছি। ম্যাডাম একটা কথা ছিল। আপনার হোয়াটস অ্যাপে কিছু আসাম সিল্ক শাড়ি আর মেখলার ছবি পাঠালাম। দেখবেন। পছন্দ হলে আমাকে হোয়াটস অ্যাপ করবেন। ডিটেইলস দিয়ে দেব, আমি নিয়ে যাবো আপনার বাড়িতে। আমার বউ নতুন শুরু করেছে এই কাজটা। দেখবেন ম্যাডাম।'

'নিশ্চয়ই দেখবো আনন্দ। খুব ভালো খবর তো। জানাব তোমায়।'

সত্যি আনন্দ হচ্ছে। সব ক্রিয়ারই প্রতিক্রিয়া হয়। নিরাপদ সরকারি চাকরির সম্ভাবনা ক্রমে ক্ষীণ। বিকল্প যায়গা মানুষ ঠিক সৃষ্টি করে নিচ্ছে ক্রমে ক্রমে। টিঁকে থাকবার প্রচেষ্টা মানুষের জিনের মধ্যেই। শুধু চাকরির দাবিতে অনশন ধর্মঘট নয়, উপার্জনের ভিন্ন পথ খুঁজে নেবে। স্বল্প পুঁজির ব্যবসাই সই। বলার কথা এই, লাভ বা ফায়দার দিকে চেয়ে দুনিয়াদারি চলে। দেবীর বোধন, পূজাও সন্নিকটে। আনন্দময়ী মা আসছেন আনন্দ বিতরণে সে কথা স্মরণে রেখে লাভালাভের আনন্দবার্তাই দিতে চাইলাম। নারী পুরুষ নির্বিশেষে বেশিরভাগ মানুষের আকাঙ্খা পূরণের সাধনা থাকে, সে সাধনায় কিঞ্চিৎ লাভবান হলেও জীবন ফুরফুরে, স্বচ্ছন্দ, গতিময়।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team