× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: ভাদ্র, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
ডাকে মুক্তি
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১২
সব্যসাচী দত্ত
উত্তরের জনজাতি
যে সম্প্রদায়ের নারীরা বিধবা হয় না
প্রমোদ নাথ
দুয়ার বার্তা
উত্তরে সংঘাতে সংকটে প্রকৃতই বিপন্ন হস্তীকুল: সমাধানের পথ কী?
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
কোচবিহার অনলাইন
বোগেল সাহেবের ডাইরিতে তিব্বত-যাত্রার পথে কোচবিহারে রাত্রি যাপন
সৌরভ ঘোষাল
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
শিলিগুড়ির পাড়া কলোনি সরণী বেয়ে
নবনীতা সান্যাল
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টউন | পর্ব - ৫
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তরের বইপত্র
আজকের জাতিদাঙ্গার উৎস সন্ধানে এক জীবন্ত দলিল
অর্ক দেব
পর্যটন
এক অবাক অরণ্যের দিনরাত্রি
সুজাতা পুরকায়স্থ
নেট গল্প
পুরনো সে নক্ষত্রের দিন
রম্যাণী গোস্বামী
আমচরিত কথা
ফেলে আসা শিক্ষকবেলা
তনুশ্রী পাল

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী গৌতমেন্দু রায়

পুরনো সে নক্ষত্রের দিন

রম্যাণী গোস্বামী
Purono Se Nakkhotrer Din

প্রায় চল্লিশ বছর পর ফিরে আসা এখানে। বিহ্বল দৃষ্টিতে সে দেখছিল চারপাশ। আগেকার জৌলুসের কিছুমাত্র আর অবশিষ্ট নেই ছোট্ট জনপদটার। মলিন রাস্তাঘাট। পথের ধারে জঙ্গল, আগাছার ঝোপ। নিয়মিত পরিষ্কার হয়না, দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঝাঁপ নামানো পেঁয়াজি, চপ, মোমোর স্টল। তালাবন্ধ হোমস্টে। ছুটির দিনের প্রখরবেলা। রাস্তায় জনপ্রাণী নেই। কুকুরগুলো বট-পাকুরের ছায়ায় গোল হয়ে শুয়ে ঝিমোচ্ছিল। ওকে দেখে কেউ কেউ মুখ তুলল। টুকটুক করে লেজ নাড়ল। কেউ বা ভ্রূক্ষেপও করল না।

পাল্লাভাঙা চায়ের দোকানের সামনে একদল লোকের জটলা। রেডিওতে চালু হিন্দি গান বাজছে। সবার হাতে কাচের গ্লাসে দুধ-চা। সকাল থেকে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি আজ। ওর মনে পড়ল। দোকানের সামনেই কাঠের বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা। সে এগিয়ে যেতে একজন একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিল।

আলিপুরদুয়ার থেকে যে বাসটায় চেপে এসেছে সেটা ছেড়ে যাবে ঠিক বিকেল চারটেয়। পুরনো লোকজনেরা কে কোথায় আছে জানা নেই, তাই ভেবেছিল কিছু খেয়ে নিয়ে নদীর ধারে ছেলেবেলার মতো জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকবে খানিকক্ষণ। এখন দেখছে কোথায় নদী? যেদিকে তাকাও শুধু ধু-ধু রুক্ষতা। ধূসর বালুতট।  

‘রেলব্রিজটা? দেখতে পাচ্ছি না তো! কোথায় গেল?’ খাতির করে গরম চায়ের গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিল এক ছোকরা। তাকেই অবাক স্বরে জিগ্যেস করল সে।  

‘গোটাটাই বালি পাথরের তলায় সেঁধিয়েছে। মাথাটা জেগে আছে অল্প। দেখতে চাইলে নদীর বুক বরাবর হেঁটে যান মূল সোঁতার আছে।’ ছোকরা আঙুল তুলে সেদিকটা দেখিয়ে এঁটো গ্লাসগুলো নিয়ে চলে গেল। মুচকি হেসে বলল, ‘বাবু কি এখানে অনেকদিন পর নাকি?’   

‘ব্রিজটা আর নেই!’ অস্ফুটে বলল সে। চায়ে চুমুক দিতেও ভুলে গেছে। অথচ চা-চেষ্টা পেয়েছিল।

তিরানব্বইয়ের বন্যায় ব্রিজ সমেত নদীর জল দুদিকের পাড় ভেঙে রেলের কোয়ার্টারগুলো অবধি ভাসিয়ে নিয়ে গেছিল। সে খবরটা পেয়েছিল নিউজে। অথচ যখন ছোট ছিল ওই ব্রিজের দৈর্ঘ্যের সমানই চওড়া ছিল নদী। বর্ষায় জল থইথই করত। তার বাবার ডলোমাইটের ব্যবসা ছিল। একটা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি ছিল ওদের। বাড়িটা আর নেই। লনে বসে মা উল বুনতেন। বাংলো ঘিরে প্রচুর গাছ। আম কাঁঠালের সময় বাঁদরের পাল লাফালাফি করত ডালে ডালে। নানা রঙের প্রজাপতি খেলা করত বাগানে। গাছের ডালে পাখিরা শিস দিয়ে গান শোনাত। সবসময়ই ঝিমঝিমে শীত অথবা ছমছমে বর্ষা জেগে থাকত এসব জায়গায় তখন।    

নদীর দিকে তাকালে চোখে ধাঁধা লাগে। রিভারবেড জুড়ে শুধু বালি আর পাথর। রোদ পড়ে ঝলসে যাচ্ছে যেন। জল কোথায়? অথচ এখন শ্রাবণ মাস।

‘এত গাছপালা, তবুও মেঘ টানতে পারছে না! কী অবস্থা!’ স্বগতোক্তি করল সে।

পাশের লোকটি খবরের কাগজ থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হুম। বৃষ্টি এবারে হয়নি মোটে। একটাই সোঁতা দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। বাদবাকি শুখা। নদীর এরকম হাল বর্ষার মরসুমে কখনও দেখা যায়নি আগে। তবে জল বাড়লে আসতে পারতেন না। পথঘাট ভাসিয়ে দেয়। এখন অফ সিজনে যেটুকু ট্যুরিস্ট দেখছেন তা জল নেই বলেই সম্ভব হয়েছে।’     

ট্যুরিজম। হ্যাঁ। সেইতো এখন ভরসা। ওটা না থাকলে আদৌ অস্তিত্ব থাকবে জায়গাটার? তারপরই মনে পড়ল, ‘আর স্টেশনটা? ওটারও কোনও চিহ্ন দেখছি না তো?’

‘স্টেশনটা আর নেই। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল বহুদিন। তারপর সব উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল রেলকোম্পানি।’

শুনে বুকের ভিতরে যেন শেল বিঁধল তার। ওর কিশোরবেলাটাই যেন উপড়ে নিল কেউ। স্টেশনটাও নেই? শৈশবের চিহ্নগুলো মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এককালে এই এলাকা ছিল জমজমাট মাইনিং হাব। ট্রেনে করে ডলোমাইট সাপ্লাই হত বিভিন্ন জায়গায়। বাবার হাত ধরে সে স্টেশনে এসেছে কত। রেলক্যান্টিনে বাবার পাশে বসে ডালপুরী আর হিং দেওয়া আলুর দম খেয়েছে। এখনও মুখে লেগে আছে সেই স্বাদ।  

পরে মাইনিং বন্ধ হয়ে গেল। পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের পাশে সবুজের ঘন আচ্ছাদন গজিয়ে উঠল। মনখারাপ হলে স্টেশনের নিরিবিলিতে একা বসে থাকত। যেখানে আর একটিও ট্রেন আসবেনা কোনওদিন। ওর মনে হত আমাদের জীবনটা ওই ট্রেনের মতোই। অবিরাম চলমানতা যার ভবিতব্য। একটা নিরন্তর জার্নি। ইচ্ছে থাকলেও কোনও নির্দিষ্ট স্টেশনে ফিরে আসার উপায় নেই।   

রেলব্রিজের গলা অবধি বালিতে ডুবন্ত কঙ্কাল দেখে চোখে জল এলো। জঙ্গলের গেট অবধি গিয়ে সে ফের চলে এলো হারিয়ে যাওয়া স্টেশনের দিকটায়। এখন এখানে একটি জলখাবারের দোকান। অফ-সিজন বলেই হয়তো ফাঁকা ভিতরটা। আসার পথে বিট অফিস ছাড়িয়ে চোখে পড়েছে লতাপাতায় আকীর্ণ ভুতুড়ে বাড়ির আকার নেওয়া গাইড-শেড। এই ঘরটিতেই এককালে জঙ্গলে ট্যুরিস্ট নিয়ে ঢোকার আগে গাইডরা বিশ্রাম নিত দলবেঁধে। অতীত এভাবে মুছে যায়? এত অনায়াসে?       

‘কী খাবার পাওয়া যাবে ভাই?’  

‘রুটি ঘুগনি। অমলেট চাইলেও ভেজে দিব। ভিতরে আসেন স্যার। এই তপন, ফ্যানটা চালায় দে জলদি।’

এইটুকু পথ হেঁটে আসতেই রোদে ঝলসে গেছে শরীর। ঘামছে দরদর করে। বাতাসে ফিল লাইক ছেচল্লিশ। গ্লোবাল-ওয়ার্মিঙের যুগ শেষ। চলে এসেছে গ্লোবাল-বয়েলিঙের যুগ। বিজ্ঞানীরা কি সাধে এমন বলছেন? ভিতরে ঢুকে ঘাম মুছতে মুছতে চারপাশটা দেখছিল। ডুয়ার্সও কত বদলে গেছে। রোজ বদলে যাচ্ছে বড়বড় পা ফেলে। শিলিগুড়িতে মৈনাক হলে অফিস কনফারেন্সে এসেছিল। পরশু দিল্লি ফেরার ট্রেন। বাকিরা একটা বোলেরো ভাড়া করে চলে গেল লামাহাটা দার্জিলিং বেড়াতে। আর সে দলছুট হয়ে একাই চলে এলো এখানে। শিকড়ের অমোঘ টান। ছেলেবেলার সুবর্ণ স্মৃতি। অস্বীকার করা যায়না।

যদিও এখন মনে হচ্ছে না এলেই ভালো ছিল।  

হঠাত দোকানঘরের ভিতরে ডানদিকের কোণে সবুজ রঙের একচিলতে কামরার দিকে চোখ পড়াতে চমকে উঠল।

‘শুনুন ভাই, ওই ঘরটা কীসের? আমার ভীষণ চেনা লাগছে...’  

‘ফাঁকা ঘর স্যার। কিস্যু নাই। এককালে ওটা রেলের ক্যান্টিন ছিল। আমার দাদুই ক্যান্টিনটা চালাত। পরে টাইগার রিজার্ভের জন্য মাইনিং বন্ধ হল। স্টেশনসমেত ক্যান্টিনও উঠে গেল। কোম্পানি থেকে রেলের কোয়ার্টারগুলো ভেঙে দিল একেএকে। লোকজন সেই জায়গায় নিজেদের বসতবাড়ি গড়ে তুলল। বাবাও এই জায়গাটাকে বাড়িয়ে আজকের হোটেলটা করল। কিন্তু দাদু কিছুতেই ওই ঘরটা ভাঙতে দিল না। বাবাও শেষদিকে বলত, অতীতের একটা চিহ্নও কি জিইয়ে রাখতে নেই খোকা? আপনার ঘুগনিতে পেঁয়াজকুচি দিই?’     

‘ওই ঘরটায় আমার জীবনের অনেক কিছু সঞ্চিত আছে বুঝলেন। গোটা ছোটবেলাটাই। একবার যাই? দেখে আসি?’

সকলের অবাক চোখের সামনে সে ঝুলকালি মেখে অবহেলায় পড়ে থাকা ঘরটার দিকে পা বাড়াল। আধভেজা পাল্লাদুটো হাত দিয়ে ঠেলে সরানোর আগে রোমাঞ্চে কেঁপে উঠল তার শরীরের প্রতিটি রোমকূপ।

পরিচিতের দেখা পেয়ে গোটা মুখে বলিরেখা পড়ে যাওয়া ঘরখানাও ফোকলা দাঁতে হেসে উঠল। বহুযুগ পর।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team