প্রমোদ নাথের নতুন বই (জানুয়ারি ২০২৩) ‘আদিম জনজাতি টোটো সমাজ জীবনে নারী’ বিষয়ে কিছু কথা লেখার আগে জানিয়ে দিই ২০০২ থেকে ২০২১ এই সময়কালের মধ্যে লেখকের বইয়ের সংখ্যা ৫০ অতিক্রম করেছে। তাঁর অধিকাংশ বই উত্তরবঙ্গের জনজাতি-সমাজ-সাহিত্য নিয়ে। তাই বিষয়টি আমাদের কাছে আনন্দদায়ক। পরিশ্রম-অধ্যাবসায়-আগ্রহ না থাকলে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব ছিল না।
এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। টোটো জনগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্রতম উপজাতি বা আদি বাসিন্দা, নৃতাত্ত্বিক বিচারে টিবেটো-মঙ্গোলয়েড নৃগোষ্ঠীর একটী শাখা। আলিপুরদুয়ার ভারত-ভুটান সীমান্তে টোটোপাড়া গ্রামে তাদের বসবাস। নিজস্ব ভাষার নামও টোটো। ২০২১এর হিসেবে মোট জনসংখ্যা ১৬৩২, পুরুষ ৮৪৮ এবং নারী ৭৪৮ জন।
রামমোহনের সমকালে তাঁর সহকারী কৃষ্ণকান্ত বসু ভুটানে জমি জরিপের কাজে যান। সেই সময় তিনি টোটোপাড়ার দুর্গম অঞ্চলে টোটোদের দেখা পান। অবশ্য তখন এলাকাটা ছিল ভুটানের অধীনে। কৃষ্ণকান্ত বসু একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধে প্রথম টোটোদের উল্লেখ করেন। ইংরেজিতে নিবন্ধ বেরোয় ১৮৬৫ সালে। সময়ের পরিবর্তনে এখন পার্বত্য অঞ্চলের টোটোপাড়া এলাকায় নেপালি, লিম্বু, ধীমাল ইত্যাদি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস।
টোটোদের নিয়ে প্রমোদ নাথ আগেই কয়েকটি বই লিখেছেন। এই বইটির বিশেষ গুরুত্ব হলো টোটো সমাজে নারীদের সম্পর্কে তথ্যবহুল আলোচনা। সমাজে পুরুষ ও নারীর অধিকার ও গুরুত্ব নিয়ে যখন বিশ্বজোড়া আলোচনা চলছে, অনেক আধুনিক সুসভ্য দেশেও নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা ও সামাজিক অবিচার চলছে, তখন প্রমোদ নাথ তাঁর এই বইতে উল্লেখ করেছেন, টোটো সমাজে নারীর স্থান বেশ উপরে। সেখানে নারী বা স্ত্রী পুরুষের বন্ধু, সহকারী। নারী নির্যাতনের ঘটনা টোটো সমাজে নেই। টোটো নারী চাইলে অন্য সমাজে বিয়ে করতে পারে, ধর্ম বদলও করে।
আদিম জনজাতি টোটো সমাজে নারীর বিষয়ে লিখতে গিয়ে প্রমোদ নাথ সংক্ষেপে টোটোদের জীবনচর্চা, বসবাস, নারী পুরুষের জীবন সংগ্রাম, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁদের কৃতিত্ব ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গের উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে অগ্রণী নারীদের বিষয়েও জানিয়েছেন বিস্তৃত তথ্য। সবশেষে আছে কিছু মূলবান তথ্য নিয়ে আলোচনা। পাহাড় ও ছোটবড় নদী ঘেরা টোটোপাড়ায় যাতায়াত কষ্টকর, যদিও বাস পরিসেবা আছে, তবে বসতিতে জলসংকট রয়েছে।
টোটো সমাজে নারী শিক্ষা চিত্র আলোচনা করতে গিয়ে লেখক জানিয়েছেন, ১৯৫১ সাল থেকে টোটোপাড়ার উন্নয়নের দিকে নজর পড়ে। ওয়েলফেয়ার সেন্টার সরকারি উদ্যোগে যোগেন সরকারের দায়িত্বে গড়ে ওঠে। পরবর্তী পর্বে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চেষ্টায় অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। লুথারেন ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নামে সুইডিশ সংস্থার অবদান সর্বাধিক। ১৯৬৯-৭০ সালে শিক্ষাদান শুরু। ১৯৭২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১৯৭৯ সালে ধনপতি টোটো মেমোরিয়াল স্কুল গড়ে ওঠে। দুজন টোটো ছাত্র মাধ্যমিক পাশ করে। মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্কুলে যান দেবী টোটো (১৯৬৫)। গৌরী টোটো প্রথম অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন। সর্বপ্রথম মাধ্যমিক পাশ করেন সূচনা টোটো (২০০৩)। সেই সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ রীতা টোটো। প্রথম ইংরেজি অনার্স স্নাতক সঞ্চিতা টোটো। ক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ নারী ও পুরুষের সংখ্যা বাড়ে। ২০২০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছাত্রী ৩০জন, ছাত্রও ৫০জন।
এই বইটির মধ্যে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক টোটো ছাত্রীদের বিস্তৃত তালিকা দেওয়া আছে। সবশেষে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন টোটো নারীর সচিত্র বিবরণ দেওয়া আছে। যেমন সঞ্চিতা টোটো কলকাতায় টাটা কনসাল্টেন্সিতে চাকুরি করছেন। অন্যান্যরা কেউ কেউ সরকারি চাকুরিও করছেন। যদিও সরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে টোটোদের জন্যও বিশেষ কোনও সুবিধা নেই। তাই বেকারত্ব টোটো সমাজে ব্যাপক, উন্নয়নও তেমন ঘটেনি এলাকায়। দারিদ্র্য তাদের অনেকেরই নিত্যসঙ্গী।
আদিম জনজাতি টোটো সমাজজীবনে নারী
প্রমোদ নাথ
এখন ডুয়ার্স। ১৯৫টাকা।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team