পুরাণে অসংখ্য অপ্সরার দেখা মেলে যাদের মধ্যে চার-পাঁচজনকে আমরা সকলের ওপরের সারিতে রাখি। তাঁরা হলেন ঊর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা ও ঘৃতচি (অন্যমতে ঘৃতাচি)। লাস্যে, নৃত্যে, সৌন্দর্যে এঁদের ধারে কাছে কেউ যেতে পারে না। কত মুনি ঋষি রাজা মহারাজা যে এঁদের রূপে বশীভূত হয়েছিলেন তাঁর ইয়ত্তা নেই। ঘৃতচির কথা শুধুমাত্র স্বর্গীয় পুরুষের জন্য নয় মানব সন্তানের মা হওয়ার জন্য বহু পুরাণে উল্লেখিত আছে। ইন্দ্রের আদেশে ঘৃতচি স্বর্গের অপরূপা নারীর রূপ ধারণ করে বহু মুনি ঋষির তপস্যা ভঙ্গ করেছিলেন।
রামায়ণ, মহাভারত এবং বামন ও দেবীভাগবত পুরাণে বিভিন্ন সময়ে ঘৃতচির কথা জানতে পারা যায়। বামন পুরাণ অনুসারে ঘৃতচি দেব স্থপতি বিশ্বকর্মার সঙ্গে থাকতেন বলে জানা যায়। চিত্রাঙ্গদা ছিলেন তাঁর কন্যা। কিন্তু বিশ্বকর্মা চাননি তাঁর কন্যা কাউকে বিয়ে করুক। এর ফলস্বরূপ তিনি এই বলে অভিশপ্ত হন যে যতদিন না পর্যন্ত তাঁর পুত্র সন্তান জন্মাবে তিনি বানররূপ ধারণ করে থাকবেন। এর জন্য ঘৃতচি পরবর্তীতে নলের জন্ম দেন ও বিশ্বকর্মাকে মুক্ত করেন। এই নলই পরে রামচন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন যা রামায়ণে উল্লেখ আছে।
স্বয়ং বেদব্যাস একবার হোমাগ্নি প্রজ্জ্বলন করছিলেন এবং যজ্ঞের কাঠ নিয়ে ঘর্ষণ করছিলেন। এসময় তিনি ঘৃতচিকে দেখতে পান এবং তীব্রভাবে কামনা করেন। ঘৃতচি ভয়ে শুকপাখির রূপ ধারণ করে। তীব্র কামনার বাণে জর্জরিত হয়ে বেদব্যাসের বীর্য পতিত হলে সেখান থেকে শুকদেবের জন্ম হয়।
বিভিন্ন সময়ে ঘৃতচির বিভিন্ন সম্পর্কের কথা জানা যায়। ঘৃতচি গন্ধর্ব পর্জন্যের প্রেমে পড়েন। তাঁর সঙ্গে মিলনের ফলস্বরূপ বেদবতী নামে এক কন্যা জন্মায়। এছাড়াও রামায়ণেই বলা হয়েছে রাজা কুষণভের স্ত্রী হয়েছিলেন ঘৃতচি এবং জন্ম দিয়েছিলেন একশটি কন্যার। তখন রাজা কুশনভ পুত্রের ইচ্ছেয় পুত্রকামেষ্ঠী যজ্ঞ করেন। এরপর রাজার ও ঘৃতচির গাধি নামে এক পুত্র জন্মায়। ঘৃতচি রাজা রৌদ্রশ্বের দশ পুত্রের জন্ম দিয়েছিলেন, যিনি পুরু রাজবংশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই পুত্রদের নাম ছিল- রীতেয়ু, কাক্ষেয়ু, স্থাণ্ডিলেয়ু, কৃতেয়ুকা, জলেয়ু, সন্নাতেয়ু, ধর্মেয়ু, সত্যেয়ু, ব্রতেয়ু ও বানেয়ু। আবার মহাভারতে দেখা যায়, ঘৃতচি একবার চ্যবনের পুত্র ঋষি প্রমতিকে প্রলুব্ধ করেছিলেন এবং রুরুর জন্ম দিয়েছিলেন।
মহাভারতের আদিপর্বেও ঘৃতচির উল্লেখ পাওয়া যায়। ঘৃতচি একবার গঙ্গা নদীতে স্নান করছিলেন। এইসময় ঋষি ভরদ্বাজ তাঁকে দেখতে পান। ঘৃতচির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি। যৌন উত্তেজিত হয়ে তিনি সামনে রাখা এক ঝুড়িতে (দ্রোনী) বীর্যপাত করেন। সেই বীর্য থেকেই জন্ম হয় দ্রোণাচার্যর, যিনি পরবর্তীকালে পান্ডব ও কৌরবদের অস্ত্র শিক্ষাদান করেছিলেন। ঠিক এমনই আরেকবার ঋষি ভরদ্বাজ কামতুর হয়েছিলেন ঘৃতচিকে দেখে, তারই ফলস্বরূপ এক কন্যা শ্রুতবতীর জন্ম হয়।
অপ্সরাদের জন্ম হয় কোনো না কোনো বিশেষ কার্যসিদ্ধির জন্য। ঘৃতচি তাঁর মধ্যে অন্যতমা। কারণ তাঁর জন্মই হয় গর্ভে সন্তান ধারণ করার জন্য এবং তা তিনি করেওছিলেন। মাতা হিসেবে আজীবন লালন পালন না করলেও অসংখ্য পুত্র ও কন্যার জন্ম দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তাঁদের সকলের গর্ভধারিনী মা। রামায়ণ, মহাভারত ও অন্যান্য পুরাণের নারীদের মধ্যে তাই তাঁর স্থান উল্লেখযোগ্য।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team