যামিনী রায়ের আঁকা প্রচ্ছদে দেবায়ন চৌধুরী সম্পাদিত, ‘এখন ডুয়ার্স’ প্রকাশনীর ‘উত্তরীয় ১’ প্রকাশিত হয়েছিল গত বছর পুজোর আগে। সংকলনটি ধারে ও ভারে শুরুতেই যে চমক দিয়েছে তা নিঃসন্দেহে অভিনব। প্রচ্ছদ নিবন্ধের কথাই ধরা যাক। প্রখ্যাত শিল্পী যামিনী রায়ের চিত্রকলার ওপর অঞ্জন সেনের আলোকপাত শিল্পপ্রেমী তো বটেই, নিতান্ত সাধারণ পাঠকদেরও ভাল লাগবে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই চটজলদির যুগে যেখানে অতীতের বহু শিল্পী বিস্মৃতপ্রায়, সেখানে তাঁদের একজনকে নিয়ে এই প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য। ডঃ অর্ঘ্য দীপ্ত কর ও শার্ণব নিয়োগীর যথাক্রমে ত্রিশক্তি ও অকাল-বোধনে ষষ্ঠী তত্ত্ব থেকে কুণ্ডলিনীর কুমারী তত্ত্ব এই পত্রিকার অন্যতম সেরা সম্পদ। অত্যন্ত জটিল দুটি বিষয়কে লেখকেরা প্রাঞ্জল ভাষায় সহজবোধ্য করে পাঠকদের উপহার দিয়েছেন। একই কথা প্রযোজ্য `লেখকদের লেখক' প্রয়াত অমিয়ভূষণ মজুমদারের `তাঁদের জন্য গোলাপ` নিবন্ধ ও অঞ্জন সেনকে লেখা তাঁর চিঠিগুলির ক্ষেত্রে। এই জাতীয় সংযোজন যে কোনও পত্রিকার মান বাড়িয়ে তোলে। সম্পাদকের মাস্টার স্ট্রোক এখানেই। সুনিপুণ দক্ষতায় তিনি বাংলা সাহিত্যের মণিমুক্তো সেঁচে এনেছেন।
পত্রিকায় একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ বাদে মোট প্রবন্ধ সংখ্যা আট। বরেন্দু মন্ডলের বাংলা কবিতায় মৃত্যুর শিল্প আগামীতে বাংলা সাহিত্যের ছাত্রদের অত্যন্ত সহায়ক হবে। লোকশিল্প গবেষণার ক্ষেত্রে ডঃ রাজর্ষি বিশ্বাসের লুপ্তপ্রায় পালাগান কুশান চমক দেয়। এই রাজ্যের উত্তর অঞ্চলে এরকম কত কী যে ছড়িয়ে আছে তা আজও অনেকের অজানা। এই জাতীয় আলোকপাত অবশ্যই এই অঞ্চলকে অন্যভাবে চিনতে সাহায্য করে। অনেকটা একই কথা বলা যায় রঞ্জন রায়ের `ত্রয়ী কাব্যে ডুয়ার্সের যাপনকথা` প্রসঙ্গে। কবি বেণু দত্তরায়, সমীর চক্রবর্তী ও পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্তর কাব্যগ্রন্থ নিয়ে অত্যন্ত জরুরি আলোকপাত করেছেন তিনি। একইরকমভাবে সনৎকুমার নস্কর আবাদমহলের আঞ্চলিক কবিতাকে তুলে এনেছেন তাঁর দীর্ঘ লেখায়। অন্যদিকে শ্রীনিত্যানন্দ, মণীন্দ্র গুপ্ত, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় এবং আখতারাজ্জুমান ইলিয়াসের সাহিত্যকৃতি নিয়ে লিখেছেন যথাক্রমে মুগ্ধ মজুমদার, নিতাই জানা, পঞ্চানন মণ্ডল এবং দেবর্ষি বন্দোপাধ্যায়। প্রবন্ধগুলি সুচিন্তিত এবং সুগঠিত হলেও ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে একটু একাডেমিক ভাবনা সম্পৃক্ত। ঠিক সাধারণ পাঠকদের জন্য নয়। তুলনায় শুভ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোচ দর্শন সহজবোধ্য এবং একটি মূল্যবান দলিল।
দীপালোক ভট্টাচার্যের মুক্তগদ্যের পাশাপাশি সম্পাদক পঞ্চাশ জন কবির কবিতা রেখেছেন পত্রিকায়। ভাল লেগেছে রানা সরকার, মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস, সুজিত দাস, অমিত কুমার দে, সুদীপ্ত মাজি, তনুশ্রী পাল, মানসী কবিরাজ, স্বপ্ননীল রুদ্র, অজিত অধিকারী, উত্তম চৌধুরী প্রমুখ প্রখ্যাত ও অগ্রজ কবিদের পাশাপাশি মানিক সাহা, পীযুষ সরকার, অনিমেষ, অমিত দে-এর মতো নবীন কবিদের একসঙ্গে দেখে। এঁরা বাদেও আরও অনেকেই রয়েছেন। প্রত্যেকের নাম উল্লেখ সম্ভব হচ্ছে না। কবিতাগুলি নিয়ে আলাদা করে বিস্তারিত বলবার অবকাশ নেই। প্রত্যেকেই নিজের সুনাম বজায় রেখেছেন। পত্রিকার মান সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের সৃষ্টিতে। সেদিক থেকেও পাঠকদের জন্য উত্তরীয় ১ একটি বড় উপহার।
মুদ্রণ ও কাগজ নিয়ে নতুন করে কিছু বলবার নেই। বরাবরের মতো এক্ষেত্রে প্রকাশক কোনও আপোষ করেননি। ঝকঝকে কাগজ ও মুদ্রণের সংকলনটি হাতে নিলেই ভাল লাগতে বাধ্য হতে হয়। সব মিলিয়ে উত্তরীয় ১ পাঠকের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team