নতুন প্রজন্মের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মীদের বারংবার একটা কথা স্মরণে রাখতে বলব যে কর্মচারীদের উপকার হয় এমন কোনও সুযোগ-সুবিধা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বা সরকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কর্মচারীদের হাতে তুলে দেয়নি। প্রবল আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকারের উপর চাপ তৈরী করেই আদায় করা হয়েছিল। আন্দোলনে একাধিক নেতা সাসপেন্ড হয়েছেন কেউ বা চার্জশিট পেয়েছেন। তাছাড়া কতবার যে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য বেতন কাটা গেছে, শাস্তিমূলক বদলি হয়েছে তার কোনও ইয়ত্তা নেই।
প্রয়াত সাংসদ আশীষ সেন, গুরুদাস দসগুপ্ত এবং শ্রী বাসুদেব আচারিয়া বহুবার সংসদে অর্থমন্ত্রীর কাছে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের দাবিদাওয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন উঠিয়েছেন। তাছাড়া বাসুদেব আচারিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার অর্থ দপ্তরের মন্ত্রী, রাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে AIRRBEA-এর টিম সাক্ষাত করেছিল। অর্থদপ্তর ও নাবার্ডের বহু অফিসারের সঙ্গে দিলীপদার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তাদের মধ্যে কিছু আমলা বিশ্বাস করতেন যে গ্রামীণ এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক যে পরিসেবা দেয় তার থেকে অনেকটাই ভাল পরিসেবা দিয়ে থাকে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক।
“সম কাজে সম বেতন”-এর লক্ষ্যে, জানুয়ারি ১৯৮৪তে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে কেসটি করেছিল রাজস্থানের AIGBWO ইউনিয়নের কর্মকর্তা জি.এস.কৌশিক। সেকালের লোকবল বা অর্থবলে AIGBWO ইউনিয়নের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে কেসটি নিয়ে লড়াই চালানো প্রায় অসম্ভব ছিল। কোনও কারণে AIGBWO ইউনিয়ন যদি সুপ্রিম কোর্টে কেসটি হেরে যেত তবে সমস্ত গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে যেত। এমন একটা অবস্থায় AIRRBEA আদালতে কেসটির সাথে যুক্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্টে সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই ছিল মূলত দুটি বিষয়ে ১) R.R.B. Act 1976 এর ১৭ নং অনুচ্ছেদ বাতিল করা (এই অনুচ্ছেদে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের বেতনের বিষয় বলা ছিল) ২) “সমকাজে সম বেতন” নীতি কার্যকর করা। ১৭.০৪.১৯৮৪-তে সর্ব্বোচ্চ আদালত AIRRBEA –কে প্রতিনিধিত্ব মূলক অবস্থানে বিচার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে অনুমতি জ্ঞাপন করেছিল। এটা একটা সাংগঠনিক স্বীকৃতি তো বটেই।
০১.০৯.১৯৮৭-এ সুপ্রিম কোর্টে অন্তিম শুনানি কালে মাননীয় বিচারপতিদ্বয় যথাক্রমে শ্রী ভেঙ্কটরামাইয়া ও শ্রী ডি,এন, সিংহ, ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন একটি ন্যাশনাল ইন্ডাসট্রিয়াল ট্রাইবুনাল (NIT) তৈরী করতে হবে এবং শর্ত দিয়েছিলেন যে NIT-র পর্যবেক্ষণ লব্ধ নির্দেশ ভারত সরকার ও কর্মচারী ইউনিয়ন উভয়েই মানতে বাধ্য থাকবে। AIRRBEA-এর সিনিয়র অ্যাডভোকেট শ্রী জি.মুখুটি দিনটিতে দুর্দান্ত তথ্য ও যুক্তি পেশ করেছিলেন। ভারত সরকার ২৫.১১.১৯৮৭ তারিখে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে NIT গঠন করেন। অন্ধ্র হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত চীফ জাস্টিস মহামান্য ওবুল রেড্ডি মহাশয় ট্রাইবুনালের চেয়ারপার্সন রূপে ভূষিত হয়েছিলেন। হায়দ্রাবাদে NIT-র অফিস ছিল, সেখানে AIRRBEA-এর বর্তমান সেক্রেটারী জেনারেল এস. ভেঙ্কটেশ্বর রেড্ডি (হালে রিটায়ার করেছেন) কিছুদিনের জন্য নিযুক্ত হয়েছিরলেন।
মহামান্য ওবুল রেড্ডি মহাশয় সারা ভারতের ২২টি শহরে ঘুরে ঘুরে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন এবং ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিটি জায়গায় AIRRBEA তার টিম নিয়ে হাজির থেকেছে। এক সর্বভারতীয় সংগঠনের নেতা আমাকে বলেছিলেন, দিলীপদা নেতৃত্ব না দিলে, সাক্ষী জোগাড় না করলে এবং তথ্য প্রমাণ হাতে তুলে না দিলে NIT-র পর্যবেক্ষণ আমাদের বিপক্ষে যেতে পারত।
এই প্রসঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের অ্যাডভোকেট প্রয়াত কে.জি. কান্নাবিরনের নাম। তিনি নিজে NIT টিমের সঙ্গে সারা দেশ ঘুরেছেন এবং বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি ৩০শে ডিসেম্বর ২০২০তে দেহরক্ষা করেছেন। কান্নাবিরন ছিলেন মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের একজন উল্লেখযোগ্য নেতা। তিনি ছিলেন PUCL (পিউপলস্ ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিস)–এর একজন স্থপতি। সম্ভবত ২০০৬ সনে PUCL–এর এক অনুষ্ঠানে তিনি জলপাইগুঢ়িতে এসেছিলেন। দিলীপদার নির্দেশে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলাম। অত্যন্ত খুশি হয়ে বলেছিলেন “ গরীব মানুষদের যতটুকু পারবে উপকার করার চেষ্টা করবে”। কান্নাবিরনের নাম আমরা সারা জীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব।
৩০.০৪.১৯৯০ তারিখে জাস্টিস ওবুল রেড্ডি, হায়দ্রাবাদে NIT-র অফিস থেকে রায় ঘোষনা করে ভারত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন গ্রামীন ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য ভাতা স্পনসর-বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সঙ্গে সমতুল করার ব্যবস্থা করতে। এর পরেও সরকারের হেলদোল নেই। সরকারকে চাপে রাখার সবরকম অস্ত্রপ্রয়োগ চালু করা হলো। ০৫.১০.১৯৯০ তারিখে নাবার্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান পি. কোট্টাইয়ার নেতৃত্বে ইকুয়েশন কমিটি তৈরী হয়। কমিটি ০৮.০১.১৯৯১ তারিখে তার রিপোর্ট পেশ করেন।
অবশেষে ২২.০২,১৯৯১ –এ ভারত সরকার নির্দেশজারী করে NIT-র আ্যওয়ার্ড ০১.০৯.১৯৮৭ থেকে কার্যকরী করার কথা বলে। এর ফলে লড়াই আন্দোলনের একটা ধাপ শেষ হয়। কিন্তু কর্মচারীরা নানা রকম অবিচারের শিকার, কাজেই নতুন ইসু নিয়ে নতুন আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরী হয়। পাঠক, বিশেষত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কোনও সুহৃদ যদি NIT-র আন্দোলন নিয়ে আমার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত না হন তবে তার বক্তব্য বা মতামত জানালে আমি সমৃদ্ধ হতে পারি।
৩০.০৪.১৯৯০ তারিখে জাস্টিস মহামান্য ওবুল রেড্ডি যখন NIT-র আ্যওয়ার্ড ঘোষণা করছিলেন তখন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোর কর্মচারীরা পেনসনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই NIT-র সামনে আমাদের যে সব দাবি পেশ করা হয়েছিল সেখানে আমরা পেনসনের কথা মোটেই বলিনি, কারণ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোতেই তখন পেনসন ছিলই না। ১৯৯৩ সনে যখন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলোতে পেনসন লাগু হলো তখন সারা ভারতে আমাদের কোনও কর্মীবন্ধু রিটায়ার পর্যন্ত করেন নাই। দিলীপদা রিটায়ার করার পর প্রভিডেন্ট ফান্ড দপ্তর থেকে উনি বোধহয় ৩০০টাকা পেনসন (যা সাংমা পেনসন নামে পরিচিত) পেতেন। আমাদের দু-একজন টুকটাক রিটায়ার করতে শুরু করছেন ফলে পেনসনের দাবিও জোরাল হচ্ছিল।
কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল “তোমাদের পেনসন দেওয়ার কথা তো NIT একবারের জন্যও বলেনি, তাহলে তোমরা কেন আমাদের কাছে পেনসন নিয়ে দরবার করছ?”। আমাদের কোনও যুক্তি কোনওকালেই সরকার মানতে চায়নি, এবারও মানল না। এবার আমরা প্রথমে সাউথ মালাবার গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে পেনসন ইসুতে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট অর্ডারে বলেছিল হাইকোর্টে প্রথমে যেতে হবে।
এরপর AIRRBEA তার কর্ণাটক স্টেট ফেডারেশনের মাধ্যমে কর্ণাটক হাইকোর্টে ২০০৩ সালে রিট দাখিল করেছিল। বস্তুত এটাই পেনসনের দাবিতে প্রথম গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের সার্বিক আইনি লড়াই। ওদিকে ২০০৫ সনে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পেনসনার্স সমিতি নামে একটি সংগঠন রাজস্থান হাইকোর্টে পেনসনের দাবিতে অপর একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। ভারত সরকার নিযুক্ত আইনজীবিরা নানা অজুহাতে কোর্টে শুধুমাত্র নতুন তারিখ চেয়ে বা মুলতুবির আবেদন জানিয়ে কর্নাটক হাইকোর্টের সময় বরবাদ করেছিল।
অবশেষে ০৮.০৩.২০১১ তারিখে চূড়ান্ত শুনানি সমাপ্ত হয় এবং ২২.০৩.২০১১ তারিখে মহামান্য কর্ণাটক হাইকোর্ট NIT-র আ্যওয়ার্ডের নিরিখে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য পেনসনের সমতা ঘোষণা করেছিলেন। ২০০৯ সনে আমরা উত্তরবঙ্গে অবসরপ্রাপকদের নিয়ে একটা সংগঠন করেছিলাম। সেদিন দিলীপদা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মীরা পেনসন পাবেই, শুধু সময়ের অপেক্ষা।
অন্যদিকে ১৫.০৯.২০১১ তারিখে রাজস্থান হাইকোর্ট তার জাজমেন্ট ঘোষনা করেছিল এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কেই অনুসরন করেছিল। সরকার উভয় ক্ষেত্রেই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল কিন্তু দুটি ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গিল বেঞ্চের বিচার ও নির্দেশের মান্যতা দিয়েছিল। ভারত সরকারের ইতিবাচক কোনওরকম তৎপরতা চোখে পড়ছিল না। প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় ছিলেন দিলীপদার সহপাঠি। ২৫.০৬.২০১২তে দিলীপদা দেখা করে প্রণববাবুকে সদর্থক পদক্ষেপের অনুরোধ করেছিলেন। প্রণববাবু ফাইলে নোট দিয়েছিলেন “নীতিগত ভাবে (on principle)” পক্ষে আছেন। কিন্তু নানা পূর্বশর্তের কারণে সেটা কার্যকরী করা সম্ভব ছিল না। প্রণববাবুর গভীর মেধা ও মননশীলতার শ্রদ্ধা করি কিন্তু এটাও বলি তিনি কখনো কর্মচারী দরদী ছিলেন না। আমাদের অতি নিকটজন প্রয়াত আইনজীবি মনু ভট্টাচার্যের উনি ঘনিষ্ট ছিলেন, একবার ওই বাড়িতে দুপুরে খেতে এসেছিলেন। মনুদা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম “গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মীদের সম কাজে সম বেতনের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী”? উনি সোজাসুজি বলেছিলেন, “এটা অযৌক্তিক দাবি। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক লো কস্ট ব্যাঙ্ক। কর্মচারীদের বেতন যদি কমার্শিয়াল ব্যাঙ্কের মত দিতে হয় তাহলে ব্যাঙ্কগুলো চালানোই যাবে না”। সে সময় উনি সরকারে ছিলেন না অথচ তাই বলে দৃষ্টিভঙ্গীর কোনও পরিবর্তন নেই।
আবার পেনসন কেসের আলোচনায় ফিরে আসছি। ২৮.১১.২০১২ তারিখে ভারত সরকার ,মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে রাজস্থান হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে SLP দাখিল করেছিল। ১৮.০২.২০১৩ তারিখে মহামান্য বিচারপতি শ্রী পি. শিবদাসন ও শ্রী জে.এস.খেহর-এর কোর্টে SLP ( no 39288/2012) শুনানী বাতিলের জন্য আমাদের অ্যাডভোকেট জোরদার যুক্তির অবতারনা করেন। পক্ষান্তরে ভারত সরকারের অ্যাডভোকেটের দুর্বল যুক্তির পরেও SLP শুনানির জন্য গৃহীত হয়েছিল।
সে সময় আমাদের কর্মচারী আন্দোলনের সাথী শ্রীহরি মজুমদার, ভাস্কর দাস, জয়ন্ত ঘোষ সহ অনেকে দিল্লীতে ধর্ণায় বসেছেন, মিছিলে হেঁটেছেন। সংগঠনের নির্দেশে আমি সুপ্রিম কোর্টে কয়েকবার এবং দিল্লীর যন্তরমন্তরে দু-তিনবার সহযোগিদের সঙ্গে ধর্ণায় বসেছি। ধর্ণায় অন্যান্য সর্বভারতীয় সংগঠনের আমাদের ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকেছেন। ইতিমধ্যে নানা ঝড়ঝাপটা সামলে UFRRBU (United Forum of Regional Rural Bank Unions) তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। আমাদের সহকর্মী এবং অপর সংগঠনের অমল চৌধুরী, ভাস্কর সান্ন্যাল. দেবু, অশোকরাও দিল্লীর আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল।
এই অধ্যায় লেখার সময়ে মহামান্য বিচারপতি শ্রী মোহন শান্থনা গৌড়া দিল্লীতে পরলোক গমন করলেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি ও মাননীয় বিচারপতি শ্রী অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টে আমাদের পেনসন কেসটি শুনেছেন এবং আমাদের ‘রেড লেটার ডে’ অর্থাৎ ২৫.০৪.২০১৮ তারিখে মহামান্য জাস্টিস কুরিয়েন যোশেফ ও তিনি পেনসন কেসটির রায় আমাদের পক্ষেই দিয়েছিলেন। মূলত তারা কর্ণাটক ও রাজস্থান হাইকোর্টের জাজমেন্টের নিরিখে গ্রামীন ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের পেনসনের সমতা প্রদান করেছিলেন এবং ছয় মাসের মধ্যে সেটা লাগু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। জাস্টিস শান্থনা গৌড়ার মৃত্যুতে সারাভারত গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা শোক প্রকাশ করেছিলেন।
গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো সেই নির্দেশ পাওয়ার পর ছয় মাস কেটেছিল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙতে। তারপর গেজেট নোটিফিকেশন, তারপর পিপিও তৈরী, তারপর পেনসন চালু হয়েছিল। কিন্তু সমতা এলো না। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে পেনসন চালু হয়েছিল ০১.১১.১৯৯৩ থেকে অথচ গ্রামীণ ব্যাঙ্কে চালু হলো ০১.০৪.২০১৮ থেকে। সর্বোচ্চ আদালতের জাজমেন্ট পরোয়া না করে কেন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত? অর্থ দপ্তরের দেওয়ালে কাল পাতলে শোনা যেতে পারে “অত টাকা এরিয়ার দিলে ব্যাঙ্কের লাভ-ক্ষতির উপর প্রচন্ড চাপ পড়বে। এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো লোকসানের মুখে পড়বে”। ওদিকে আমার মত অনেক হতভাগা যে প্রায় ২০-২৩ লক্ষ টাকা এরিয়ার থেকে বঞ্চিত হয়েছি তার বেলা? আর একটা কথা, সরকার সুপ্রীম কোর্টের অর্ডার না মানলেও দেখলাম কিছুই হয় না।
একবার দিল্লীতে ধর্ণায় গিয়ে আমি ও জয়ন্ত প্রচন্ড ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছিলাম। একদিন আমরা নিরুপায় হয়েই রাত দশটায় শুয়ে পড়েছিলাম। শুয়ে শুয়েও আমাদের কথাবার্তা চলছিল। কথায় কথায় সহকর্মী জয়ন্ত রেগে বলে উঠেছিল-- “ব্যাঙ্কের লাভ করার সহজ উপায় হলো ১) গ্রাহকদের সুদ না দেওয়া আর ২) সমস্ত কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধে অর্দ্ধেক করে দেওয়া”। আমি চুপচাপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলাম। যদি অন্য কোনও যুক্তি দিয়ে তখন ওকে বোঝাবার চেষ্টা করতাম দিতাম তবে জয়ন্ত সেদিন হয়ত দুচার ঘা লাগিয়ে দিতে পারত। তাই ঘুমের ভান করে শুয়ে কাটানোর পথটাই সে রাতে সঠিক মনে হয়েছিল। ও সরকারের নেতিবাচক ভাবভঙ্গি মোটেই বরদাস্ত করত না, সর্বদাই কড়া আন্দোলনের পক্ষে।
আমাদের ব্যাঙ্ক গেজেট নোটিফিকেশনের পরও চুপচাপ। চিঠি চাপাটি চলছে। সর্বভারতীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত দু-একবার দেখা করেছিল। উত্তর একটাই-- “শীঘ্রই হয়ে যাবে। ওটা নিয়ে ভাবনা নেই”। প্রচন্ড চাপের মুখে এবং আদালত অবমাননার সামনে পড়ে নাবার্ড ডেকে নিয়ে গিয়ে বোঝানোর পর আমাদের এখানে অনুষ্ঠান করে পি.পি.ও (৮ই জুন ২০১৯) বিলি হয়েছিল। বলাটা সমীচীন কিনা জানি না, তবুও সবার জানা উচিত সেই অনুষ্ঠান হলের ভাড়া বাবদ খরচের টাকা আমাদের ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্তদের দুটো ইউনিয়ন শেয়ার করতে বাধ্য হয়েছিল।
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team