× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: ফেব্রুয়ারি, ২০২২
সম্পাদকের কলম
বসন্ত এসে গেছে!
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
পর্যটনের ডুয়ার্স
সামসিং ফাঁড়ির মেজর হোম স্টে
শ্বেতা সরখেল
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
গ্রামীণ ব্যাংক কর্মীদের বেতন-পেনশন-সুবিধা আদায় হয়েছে প্রবল আন্দোলন করেই। পর্ব-৮
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। কোচবিহার। পর্ব - ৪
সব্যসাচী দত্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট। পর্ব - ১৬
সুজিত দাস
নিয়মিত কলম
কোচবিহার কড়চা। ঘোষিত ‘হেরিটেজ শহর’এর হাল কি এতটুকু বদলেছে?
অরবিন্দ ভট্টাচার্য
নিয়মিত কলম
ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব - ৫। দশ বছর বাদে মাটির নীচ থেকে বের হওয়া কংকাল থেকে সনাক্ত হল কিশোরী ও তার খুনীরা
নিখিলেশ রায়চৌধুরী
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব – ১২। জীবন নামক যাত্রাপালা
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? ডুয়ার্স রানি লেপচা খা
শৌভিক রায়
পুরানের নারী
নারদ পত্নী সুকুমারী
শাঁওলি দে

ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব - ৫। দশ বছর বাদে মাটির নীচ থেকে বের হওয়া কংকাল থেকে সনাক্ত হল কিশোরী ও তার খুনীরা

নিখিলেশ রায়চৌধুরী
LabDetective_FaceValue

একটা করোটি পাওয়া গেল। আর তা নিয়েই ফোরেনসিক এক্সপার্টরা এমন ভেলকি দেখালেন, কারেন প্রাইসের খুনিরা ধরা পড়ল।

কারেন প্রাইস কেস সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ব্রিটেনের এক বিখ্যাত অপরাধতত্ত্ববিদ বলেছিলেন, এই মামলা ব্রিটিশ ফোরেনসিক সায়েন্সকে অন্তত ২০ বছর এগিয়ে দিয়েছে।

তার চাইতেও বড় কথা, হতভাগিনী ন্যায়বিচার পেল। তার পরিবার জানত, মেয়ে ১০ বছর নিরুদ্দেশ। আদালতের রায় ঘোষণার পর কারেনের দেহাবশেষ সমাধিস্থ হল। তার আত্মা শান্তি পেল। কারেনের পরিবারও মেয়ের সমাধিতে ফুল দিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনার সুযোগ পেল।

কারেন প্রাইস খুন হয়েছিল এক দশক আগে। তার করোটি পাওয়া গেল ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর, বিকেলবেলা। ওয়েলশের রাজধানী কার্ডিফে। চার জন শ্রমিক ফিটজহ্যামন এমব্যাংকমেন্টের ২৯ নম্বর ঠিকানায় একটি পুরানো তিন তলা বাড়ি ভাঙছিলেন। গথিক টাইপের বিল্ডিং। পাড়াটা রেড লাইট এলাকার ধারে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীতে পড়ার মুখে যে সব বিল্ডিং তৈরি হয়েছিল, ওই এলাকায় সেগুলো ভেঙে নতুন ফ্ল্যাটবাড়ি উঠছিল।

সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কিথ লয়েড, সিড উইলিয়ামস, বিলি ডেভিড আর পল বোডেনহ্যাম নতুন পাইপ বসানোর জন্য বাগানে গর্ত খুঁড়ছিলেন। কিন্তু গর্ত কিছুতেই গভীর হচ্ছিল না। কোথাও যেন আটকে যাচ্ছে। বর্জ্য বয়ে যাওয়ার নালা। তার পাইপ। গর্ত গভীর না হলেই নয়। আটকে যাওয়ার কথাও নয়। কিথ লয়েড লাফ দিয়ে গর্তে নামলেন। গর্ত আরও ছয় ইঞ্চি গভীর করতে হবে। লয়েড গাঁইতি তুলে কোপ মারলেন। গাঁইতির ফলা নরম কিছুতে বসে গেল। কোপানো মাটি সরিয়ে, ভালো করে দেখে বুঝলেন— গোটানো একটা কার্পেট কেউ ইলেকট্রিক তার দিয়ে বেঁধে রেখেছে। অনেকটা সিগারের মতো দেখতে লাগছে। লয়েড, উইলিয়ামস, ডেভিড আর বোডেনহ্যাম মিলে কার্পেটটা গর্তের উপরে তুললেন। ইলেকট্রিকের তারের বাঁধন খুলতেই দেখা গেল, কার্পেটের মধ্যে জড়ানো আস্ত একটা নরকঙ্কাল।

এক ঘণ্টার মধ্যেই খুনের জায়গা হিসাবে পুলিশ গোটা এলাকা সিল করে দিল। ফোরেনসিক বিশেষজ্ঞরা মাটির স্যাম্পেল নিলেন। একজন পুলিশ প্যাথোলজিস্ট দেহাবশেষ পরীক্ষা করলেন। মাংসের তেমন কোনও নমুনা মিলল না। জামাকাপড়ের কিছু পচা টুকরো তখনও কঙ্কালে লেগে রয়েছে। করোটির মাথায় তখনও সামান্য কিছু কোঁকড়ানো সোনালি চুলের গোছা। অনুসন্ধানে দুটো গিল্টি করা কানের দুলও পাওয়া গেল। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞ অফিসার থেকে সদ্য কাজে যোগ দেওয়া পুলিশকর্মী, কারওরই বুঝতে অসুবিধা হল না— মৃতের পরিচয় জানা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ইংরেজিতে যাকে বলে ম্যামথ টাস্ক।

দক্ষিণ ওয়েলসের সিআইডি চিফ, ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জন উইলিয়ামস লাশের অবস্থা দেখে বললেন, “যা দেখছি তাতে আমার মনে হয় না এর থেকে কোনও মুখ ফুটিয়ে তোলা যাবে।”

পুলিশের প্রথম কাজ হল একটা খুনের মামলা রুজু করা। জন উইলিয়ামস দেখেই বুঝলেন, বাগানে লাশ পুঁতে দিয়েছে মানে খুন। ডিটেকটিভ চিফ অপরাধের তদন্তে ফোরেনসিকের সব শাখায় আবেদন জানালেন।

ফোরেনসিক আর মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের একটা কঠিন কেস পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। খুলিটা থেকে মুখ ফুটিয়ে তোলা যায় কি না, চ্যালেঞ্জ নিলেন। প্যাথোলজি, ওডনটোলজি (দন্তপরীক্ষাবিদ্যা), পরিধেয় বস্ত্রের ফোরেনসিক পরীক্ষা, নৃতত্ত্ববিদ্যা, এনটোমোলজি (কীটপতঙ্গ বিজ্ঞান)— সব বিজ্ঞান একযোগে কাজ শুরু করল। সঙ্গে একজন তীক্ষ্নবুদ্ধির মেডিকেল ইলাস্ট্রেটর এবং আরও কয়েক জন জিন বিজ্ঞানী। খুনিকে ধরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক গবেষকের অসামান্য অবদান ছিল।

কঙ্কালটা মর্গে পাঠালেন উইলিয়ামস। কার্ডিফ রয়্যাল ইনফার্মারির মর্গে ডাঃ বার্নার্ড নাইট সেটা পরীক্ষা করলেন। ডাঃ নাইট ওয়েলস ইনস্টিটিউট অফ ফোরেনসিক মেডিসিনের প্রফেসর। তিনি রিপোর্ট দিলেন, কঙ্কালটা এক শ্বেতাঙ্গিনীর। উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। হাড় বিশ্লেষণে বোঝা যায়, মেয়েটি টিন এজার। যাকে মিড-টিন বলে তা-ই। তবে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।

প্যাথোলজিস্টরা যখন কঙ্কাল থেকে মৃতার পরিচিতি শনাক্ত করতে ব্যস্ত তখন যেখানে মেয়েটিকে খুন করে পুঁতে দেওয়া হয় সেখানকার মাটি পরীক্ষা করলেন নিকোলাস কোলস। ওয়েলসের প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ। দুর্ভাগ্যক্রমে, সেখানে পরীক্ষা করে বিশেষ লাভ হল না। বেশির ভাগ মাটিই গর্তে নামার জন্য লয়েড, উইলিয়ামস, ডেভিড আর বোডেনহ্যাম, চার শ্রমিক সরিয়ে ফেলেছিল। সেইখানে তদন্ত আটকে গেল।

তবে, গয়েন্টের চিপস্টোয় স্বরাষ্ট্র বিভাগ বা হোম অফিসের যে ফোরেনসিক ল্যাবরেটরি ছিল, সেখানে পরীক্ষায় তদন্ত কিছুটা এগোল। কঙ্কালটা ছাড়া বেশির ভাগ নমুনাই পচে গিয়েছিল। তবু মাটিতে পাওয়া পোশাকের কিছু অংশ থেকে বোঝা গেল মেয়েটার পরনে কী ছিল। বিজ্ঞানীরা দেখলেন, তার অন্তর্বাসের মাপ ৩৬বি। বানিয়েছিল লিভারপুলের শ্যাডোলাইন নামে একটা কোম্পানি। কার্ডিফে মিসেস নিকারস নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে তা বিক্রি হয়েছিল।

এই সূত্রের উপর ভিত্তি করে পুলিশ ব্রিটেনের সব জায়গায় নিরুদ্দেশ কিশোরীদের ব্যাপারে খোঁজ নিল। মিসিং পারসনস ব্যুরো-র খবরের ভিত্তিতে এটুকু বোঝা গেল, মেয়েটি কার্ডিফেরই মেয়ে। সেখান থেকেই অন্তর্বাস কিনেছে। মেয়েটির গেঞ্জির যতটুকু অবশিষ্ট ছিল তার ফোরেনসিক পরীক্ষায় জানা গেল, গেঞ্জিটির সাইজ ১৮। বানিয়েছে একটি আমেরিকান সংস্থা, লেভি। এই কোয়ালিটির গেঞ্জি কেবল ব্রিটেনের বাজারের জন্যই বানানো হত। ১৯৮০ সাল নাগাদ এই ধরনের গেঞ্জি ব্রিটেনে আসত। মৃতদেহ মেলার এক দশক আগে।

খুলিটা পাঠানো হল লন্ডনে। ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে। সেখানে নৃতত্ত্ববিদ ডঃ ক্রিস্টোফার স্ট্রিঙ্গার আর থেয়া মলেসন করোটিটা বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে পরীক্ষা করলেন। কম্পিউটারে আড়াই হাজার বিভিন্ন টাইপের করোটির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেন। রিপোর্ট দিলেন, মেয়েটির খুলি ককেশীয় টাইপের নারীর খুলি।

চোয়াল আর দাঁত পরীক্ষা করেও নৃবিজ্ঞানীদের মনে হল, মেয়েটি হয়তো ব্রিটনের আদি বাসিন্দাদের বংশধর নয়। ব্রিটেনে পরে যারা এসেছে মেয়েটির পূর্বপুরুষেরা হয়তো তাদেরই কেউ। করোটি অটুট থাকায় ফোরেনসিক বিশেষজ্ঞদের কাজে সুবিধা হয়েছিল।

হোম অফিসের দাঁতের ফোরেনসিক উপদেষ্টা ডাঃ ডেভিড হুইটেকার খুলি থেকে একটা দাঁত তুলে নিলেন। গাছের বয়স জানার জন্য গাছের গুঁড়ি কেটে তার ভিতরে রিংগুলো গুনতে হয়। সেই ভাবে দাঁতটির ক্রস সেকশনের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ডাঃ হুইটেকার বললেন, তিনি ‘৮০ শতাংশ’ নিশ্চিত মেয়েটি যখন খুন হয় তখন তার বয়স ছিল সাড়ে ১৫ বছর।

একইসঙ্গে ডাঃ ডেভিড হুইটেকার মেয়েটির খুলির ক্যাপিলারিতে রক্তের চিহ্ন খুঁজে পেলেন। ক্যাপিলারি মানে কৈশিকা। শিরা আর ধমনীর মধ্যে একটি সরু সুতোর মতো নালী থাকে। সেটাই ক্যাপিলারি বা কৈশিকা। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে এই নালীতে রক্ত থাকার কথা নয়। কিন্তু মেয়েটির করোটির কৈশিকায় রক্তের নমুনা পেয়ে ডাঃ হুইটেকার বললেন, ভায়োলেন্ট ডেথ বা নিষ্ঠুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ জিনিস দেখা যায়। মেয়েটিকে কেউ শ্বাসরুদ্ধ করে মেরেছিল।

দাঁত দেখে তিনি আরও বুঝতে পারলেন, মেয়েটি বেশ কিছু দিন কোনও দাঁতের ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু যার কাছে গিয়েছিল সে হাতুড়ে ডাক্তার। ভালো কাজ করতে পারেনি। কোনও ভিনদেশি ডাক্তার। কোন দেশের তা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

গত দশ বছর ধরে ফিটজহ্যামন এমব্যাংকমেন্টের ২৯ নম্বর বাড়ি ও আশপাশের ঠিকানায় প্রায় ৭০০ জন বসবাস করেছে। তাদের অনেকে খুব বেশি দিন থাকেওনি। বেশির ভাগই উড়নচণ্ডী। পতিতাপল্লির আশপাশে যেমন বাসাড়ে ভিড় করে। এদের খুঁজে বের করে প্রশ্ন করার জন্য ৭০ জন পুলিশের একটি টিম নামালেন ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জন উইলিয়ামস। কেউই সোনালি চুলের কোনও টিন-এজার মেয়ের কথা মনে করতে পারল না। উইলিয়ামস বুঝলেন, এক ফোরেনসিক জাদুকররাই ভরসা। ‘মিস এক্স’ আসলে কে, এর উত্তর একমাত্র তাঁরাই দিতে পারেন।

তদন্তের পরের ধাপে কেস যাঁর হাতে পড়ল তিনি ডঃ জ্যাকেরিয়া এরজিংকলিওগ। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ। এনটোমোলজিস্ট। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ’৯০-এর জানুয়ারি, এই সময়ে-- খুলি, মাটির নমুনা, কঙ্কাল আর পোশাকের যতটুকু যা ছিল, সমস্ত কিছু পরীক্ষা করলেন। তিনি বেশ কিছু নতুন ক্লু দিলেন। কত দিন মৃতদেহ মাটির নীচে ছিল, সেটা তিনি বুঝতে পারলেন কঙ্কালের গায়ে মৃত পোকার টিস্যু দেখে। ঘুণপোকা, মশার মতো দেখতে ছোট ছোট উড়ন্ত কালো পোকা, মাছি— যেগুলি মৃতদেহের টিস্যু খায়, সব পোকাই তিনি অনুবীক্ষণের নীচে ফেলে দেখলেন। এছাড়া মাছির ডিম— ব্লু বটল লার্ভা।

ঘুণ আর টিস্যুভুক্ পতঙ্গ পরীক্ষা করে জ্যাকেরিয়া বুঝলেন, মেয়েটির মরদেহ অন্তত পাঁচ বছর মাটির নীচে ছিল। তাকে খুন করে পোঁতা হয়েছে ১৯৮৪ সালের আগে। চিপস্টো-র ফোরেনসিক রিপোর্টে তার পরিধেয়র সময়কাল যা বেরিয়েছে তার সঙ্গে কীটপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ ডঃ জ্যাকেরিয়া এরজিংকলিওগু-র রিপোর্ট মিলে গেল।

এর পর ব্লু বটল লার্ভা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে প্রফেসর বুঝলেন, কিশোরীর লাশ অন্তত দুদিন খোলা আকাশের তলায় পড়েছিল। খোলা জায়গা ছাড়া মরদেহে ব্লু বটল লার্ভা জন্মায় না। মেয়েটিকে খুন করার দু’ দিন বাদে তাকে মাটির নীচে চাপা দেওয়া হয়।

অনেক ক্লু মিলছে, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না কীভাবে এগোনো যাবে। পুলিশ অফিসারদের মধ্যে একজন ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট জন উইলিয়ামসকে এক বিখ্যাত শিল্পীর কথা বললেন। এই শিল্পীর কথা তিনি পড়ে জেনেছিলেন। ১৯৮৭ সালে কিংস ক্রস আন্ডারগ্রাউন্ডে আগুন লাগে। তাতে মৃতদের একজন এমনভাবে পুড়ে মারা যান, চেনার উপায় ছিল না। ওই শিল্পীর প্লাস্টার কাস্ট থেকে তাকে শনাক্ত করা যায়। ৫৪ বছরের সেই মেডিকেল ইলাস্ট্রেটরের নাম রিচার্ড নিভ। ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত।

মানুষের খুলির মাপ, সাইজ আর গড়ন দেখে রিচার্ড নিভ মুখ ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। উইলিয়ামস তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। রিচার্ড নিভ সবটা জেনে উৎসাহী হলেন। তিনি কাজটা ফোরেনসিক চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলেন। ‘মিস এক্সে’র করোটি কার্ডবোর্ড বক্সে পুরে পুলিশ নিভের কাছে পাঠিয়ে দিল।

মানুষের খুলি থেকে নিপুণভাবে মুখ ফুটিয়ে তলার জন্য রিচার্ড নিভ সাধনা করেছিলেন। ব্রিটেনের সব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে তিনি মড়া কাটা দেখতেন, সার্জিকাল অপারেশন দেখতেন। তার পর খুলির প্লাস্টারের ছাঁচ বানিয়ে তার উপর মডেলিং ক্লে দিয়ে মুখটা ফুটিয়ে তোলার কাজে হাত দিতেন। কত গভীর নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়ের সঙ্গে তিনি সেই কাজ করতেন, না দেখলে বিশ্বাস হয় না। রিচার্ড নিভের সাধনার ফল দেখে সবাই অবাক হয়ে যেত। এই সাধনায় রিচার্ড নিভ নৈপুণ্যের শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন।

তাঁর দশ আঙুলের দক্ষতায় মিশরের মমির মুখ ফুটে উঠেছিল। একইভাবে তিনি আলেকজান্ডারের বাবা, মাসিডনের অধিপতি ফিলিপের মুখও ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ব্রিটেন ছাড়িয়ে নিভের সুনাম বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৮৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর রিচার্ড নিভ খুলিটা হাতে পেলেন। খুলিটা হাতে পাওয়ার পর প্রথমে ‘মিস এক্সে’র করোটির প্লাস্টারের ছাঁচ গড়লেন। তার পর মডেলিং ক্লে দিয়ে তার উপর মুখ ফুটিয়ে তুলতে লাগলেন। অ্যানাটমিক্যাল স্কেচবুক বানিয়ে, সেই স্কেচবুক অনুসরণ করে প্রতি স্কোয়ার সেন্টিমিটারে তিনি খুলির উপর শিরা-উপশিরা, পেশি, হাড়ের উপর মাংস ফুটিয়ে তুললেন। জীবন্ত মানুষকে মডেল করে পেশির অবস্থান এবং ত্বক বানালেন। করোটি যার, তার বয়স অনুযায়ী মাংসপেশির উপর ত্বক তৈরি হল। রিচার্ড নিভ নিজেই বলতেন, খুলির উপর মুখ ফুটিয়ে তোলার কাজটা ‘বিজ্ঞানের সঙ্গে শিল্পকলার মেলবন্ধন’। ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু নিভ নিজের হাতে যে নিপুণ সূক্ষ্মতার সঙ্গে বিজ্ঞান আর শিল্পকলার যুগলবন্দি ঘটাতেন, বিশ্বে তার তুলনা ছিল না।

কাজটা রিচার্ড নিভকে খুব মেথডিক্যালি করতে হত। যত্ন করে। টুকরোর পর টুকরো সাজিয়ে। বিনয়ের সঙ্গে নিভ বলতেন, “আমি ভাস্কর নই। শিল্প সৃষ্টি করছি না। এটা বৈজ্ঞানিক নির্মাণ।” ‘মিস এক্সে’র কেসে এই মেডিকেল ইলাস্ট্রেটর বলেছিলেন, “বিশেষজ্ঞরা যা তথ্য দিয়েছেন আমি সেগুলো মাথায় রেখে কাজ করেছি। মনে রাখতে হয়েছে, মেয়েটির বয়স মাত্র সাড়ে ১৫ বছর। স্বাস্থ্যবতী। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে মুখ আরও ভাঙবে। জীবনের ঝড় তার মুখের উপর দিয়ে বয়ে যায়নি।”

আশ্চর্যের হলেও সত্যি, মাত্র দুই দিনের মধ্যে এই কঠিন কাজ শেষ করেছিলেন রিচার্ড নিভ। প্রথমে নাক আর ঠোঁটের কাজ শেষ করলেন। কারণ, তাদের মাপ আর পুরুত্ব করোটির গঠনের উপর নির্ভর করে না। তার পর তিনি ভুরু, কপাল, গাল, থুতনি, কপাল তৈরি করে ফেললেন। আটচল্লিশ ঘণ্টায় কাজ সাঙ্গ হল। নিভ নিজের কাজ দেখে সন্তুষ্ট হলেন।

১৯৯০ সালের ৮ জানুয়ারি ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেনডেন্ট উইলিয়ামস কার্ডিফে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকলেন। টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের প্রতিনিধিদের হাতে নিভের বানানো মুখের ফটোগ্রাফ তুলে দিলেন। একই ফটো দিয়ে পুলিশ পোস্টারও বানাল। “মেয়েটিকে আপনারা কি দেখেছেন?”— ছবির সঙ্গে এই প্রশ্ন ছাপিয়ে ব্রিটেনের সর্বত্র পুলিশ থানাগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়া হল। থানা সেইসব পোস্টার রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাস, থিয়েটার-সিনেমা হল, গির্জা সব জায়গায় সাঁটিয়ে দিল।

এমনিতে নিরুদ্দিষ্ট ও অপরাধীদের ছবি এঁকে যে ধরনের পোস্টার রাস্তাঘাটে সাঁটা হয়, নিভের গড়া মুখ একেবারেই তেমন নয়। একটু ফোলা নাক আর এলোমেলো চুলের নিরুদ্দিষ্ট কিশোরীকে দেখেই চেনা যাচ্ছে। পুলিশের প্রেস কনফারেন্স ও নিরুদ্দিষ্টের পোস্টার বেরনোর আটচল্লিশ ঘণ্টা বাদে কার্ডিফের দু’জন সমাজকর্মী পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।

মেয়েটি এই সমাজকর্মীদের আশ্রয়ে ছিল। ১৯৮১ সালে সে তাঁদের কেয়ার সেন্টার থেকে পালিয়ে যায়। মেয়েটির নাম কারেন প্রাইস। বয়স ১৫। পুলিশ দুই সমাজকর্মীকে বার বার জিজ্ঞাসা করল, তাঁদের কোনও ভুল হচ্ছে কি না। তাঁরা জোর দিয়ে বললেন, কারেন প্রাইস ছাড়া কারও মুখ এটা হতে পারে না। কারেনের পাশাপাশি সমাজকর্মীরা আরও কয়েক জন নিখোঁজের নাম পুলিশকে দিলেন। কিন্তু কারেন ছাড়া বাকি সবাইকেই খুঁজে পাওয়া গেল।

নাম-বয়স জানা গেল। কিন্তু তদন্ত যেভাবে এগিয়েছে তার সঙ্গে মিলিয়ে তো দেখতে হবে, যার খুলি সে-ই কারেন কি না। পুলিশের উপর কারেনের দাঁতের চিকিৎসার নথি বের করার দায়িত্ব পড়ল। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসের শেষে কার্ডিফের স্থানীয় এক দন্তচিকিৎসকের স্টোররুম থেকে সেই রেকর্ড বের হল। হোম অফিসের দাঁতের ফোরেনসিক উপদেষ্টা ডাঃ ডেভিড হুইটেকারের কাছে তা পাঠানো হল। ডাঃ হুইটেকার দেখে বললেন, মৃতার নাম কারেন প্রাইস। কোনও সন্দেহ নেই।

আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ লন্ডন হসপিটালের ফোরেনসিক মেডিসিনের সিনিয়র লেকচারার ডাঃ পিটার ভেনেজিসের কাছে কারেনের একটা ছবি পাঠাল। সর্বাধুনিক ভিডিও-কম্পিউটার টেকনোলজি ব্যবহার করে কারেনের খুলির উপর কারেনের ছবিটা সুপার-ইমপোজ করলেন ডাঃ ভেনেজিস। ছবিটা কারেনের করোটির সঙ্গে খাপে খাপে মিলে গেল।

মৃতার পরিচয় নিয়ে আর বিভ্রান্তি নেই। এবার পুলিশের কাজ হল, খুনিদের খুঁজে বের করা। জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে কারেনের ডিএনএ জানতে পারলে খুনিদের ধরতে সুবিধা হবে। কারেনের উরুর হাড় থেকে একটা টুকরো কেটে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ মলিকিউলার মেডিসিনে ডাঃ এরিক হ্যাজেলবার্গের কাছে পাঠাল পুলিশ।

১৯৯০ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই, টানা সাত মাস ধরে তদন্ত চলল। ডাঃ এরিক হ্যাজেলবার্গের তত্ত্বাবধানে ঠাণ্ডা লিকুইড নাইট্রোজেনে হাড়ের টুকরোটা চোবানো হল। তার পর ডিএনএ বের করার জন্য সেটা গুঁড়ো করা হল। সেই ডিএনএ কারেনের মা-বাবার রক্তের নমুনার সঙ্গে মেলালেন লিসেস্টার ইউনিভার্সিটির জেনেটিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর অ্যালেক জেফ্রিস। অ্যালেক জেফ্রিস ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের আবিষ্কর্তা। দুই বিজ্ঞানীর গবেষণার মাঝখানে পুলিশ কারেন প্রাইসের মা-বাবাকে খুঁজে বের করে। তাঁদের রক্ত নিয়ে কারেনের ডিএনএ-র সঙ্গে মেলানো হয়। ১৫ বছরের একটা মেয়ের হাড়, তাও দশ বছর মাটির নীচে চাপা পড়ে থেকে ক্ষয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও, জিনিয়াস অ্যালেক জেফ্রিসের পরীক্ষা সফল হল। রিপোর্ট দিলেন, তিনি “৯৯.৯ শতাংশ নিশ্চিত— দেহাবশেষ কারেন প্রাইসের।”

পুলিশি তদন্তে জানা গেল, কিশোরী কারেনের মাত্র ১৫ বছরের জীবন সুখে কাটেনি। কারেন যখন শিশু তখন তার বাবা মাইকেল এবং তার মা অ্যানিটা নিকোলাইডিসের ডিভোর্স হয়ে যায়। কারেনের যখন ১০ বছর বয়স তখন ভরণপোষণের জন্য গ্ল্যামারগান সোশ্যাল সার্ভিসেসের হাতে তাকে তুলে দেওয়া হয়।

কারেনের চোয়াল আর দাঁত দেখে নৃবিজ্ঞানীরা রায় দিয়েছিলেন, মৃতা ভিনদেশিদের বংশধর। কারেনের মা ছিলেন গ্রিক-কিপ্রিয়ট (কিপ্রিয়ট মানে সাইপ্রাসের বাসিন্দা) পরিবারের মেয়ে। কারেনের দাঁতে তাই ‘ভিনদেশি’ সূত্র মিলেছিল।

১০ বছর বয়স থেকে অনাথদের মতোই কারেন সোশ্যাল কেয়ার সেন্টারে বেড়ে ওঠে। কিন্তু সেখানেও তাকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। ১৬ বছরের জন্মদিনের আগে কারেনকে উচ্ছৃঙ্খল অপ্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাসেসমেন্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৯৮১ সালের ৮ জুলাই কারেন পালায়। মূলত পারিবারিক অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ সহ নানা কারণে ব্রিটেনে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা প্রচুর। ১৯৮১-র ৮ জুলাই থেকে কারেন তাদেরই একজন হয়ে গেল। কেউ তার জন্য পুলিশে খবর দিল না। কারেন হারিয়ে যাওয়ায় কেউ চোখের জলও ফেলল না। নিরুদ্দিষ্ট কিশোর-কিশোরীদের ক্রমবর্ধমান তালিকায় কারেন আর একটা সংখ্যা হিসাবে যুক্ত হল।

প্রায় দশ বছর বাদে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটার নাম-পরিচয় জানা গেল ফোরেনসিক জাদুকরদের পরিশ্রমে। আর, এক প্রতিভাবান মেডিকেল ইলাস্ট্রেটরের আঙুলের ছোঁয়ায়। মা-বাবা জানতে পারলেন, তাঁদের মেয়ে আর বেঁচে নেই।

এবার পুলিশ একেবারে হাউন্ডের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। কারেন প্রাইসের খুনির খোঁজে। তারা নতুন করে আবেদন জানাল। ফিটজহ্যামন এমব্যাংকমেন্টের ২৯ নম্বর ঠিকানায় যারা ওই সময়ে বাস করত, পুলিশ আবার নতুন করে তাদের খোঁজ নিতে আরম্ভ করল। এবার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারল, ওই ঠিকানায় অ্যালান চার্লটন নামে এক বাসাড়ে একেবারে বেসমেন্টের ফ্ল্যাটে বাস করত। ওই ফ্ল্যাটের কার্পেট কেটেই কারেনের লাশ মুড়িয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ যখন অ্যালান চার্লটনকে খুঁজে বের করল তখন সে সমারসেটের ব্রিজওয়াটারে বাস করে। ৫৫ বছরের এক মহিলাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে জেলে গিয়েছিল। সবে ছাড়া পেয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই, পুলিশের সন্দেহ তার উপর গিয়ে পড়ল।

চার্লটনকে প্রশ্ন করার পর, খুনিদের খোঁজে টিভিতে আবার আবেদন জানানো হল। তাতে পুলিশ আরও তথ্য পেল। কারেনের সঙ্গে একটি মেয়ে স্কুলে পড়ত। সে পুলিশের সঙ্গে দেখা করে বলল, ইদ্রিশ আলি নামে এক জন কারেনের ব্যাপারে অনেক কথা বলছে। ইদ্রিশের দাবি, সে কারেন প্রাইসকে চিনত। পুলিশ ইদ্রিশের সঙ্গে কথা বলল। পুলিশের ভাষায় যেটা সন্দেহভাজনদের বাদ দেওয়ার রুটিন সেশন বলে, সেই সময় ইদ্রিশ ভেঙে পড়ল। স্বীকার করল, “আমিই ওকে খুন করেছি। আমি দুঃখিত।”

পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার সময় ইদ্রিশ আলি আর এক জনের নাম করল। বলল, দু’জনে মিলে কারেনকে মেরেছিল। অ্যালান চার্লটন। জেলখাটা আসামি। ইদ্রিশ আরও একটি মেয়ের নাম করে। মামলা চলার সময় তার পরিচয় গোপন রাখা হয়। পরে, সাক্ষ্যদানে রাজি হওয়ায় মেয়েটিকে অভিযুক্তের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই মেয়েটিই হল কারেন প্রাইস হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী। শুনানিতে জানা গেল, অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসরদের স্কুলে পড়ার সময় ইদ্রিশ কারেনের বন্ধু হয়। দু’জনে একসঙ্গে পড়ত। কারেনকে পতিতাবৃত্তিতে নামানোর জন্য ইদ্রিশ ক্রমাগত ফোসলাতে থাকে। ইদ্রিশ নিজে কারেন ও ওই মেয়েটির কুটনি বা দালালের কাজ করত। মামলা চলার সময় পরিচয় গোপন রাখা সাক্ষীকে ‘মিস এক্স’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইদ্রিশ কারেনকে যখন খারাপ পথে নামানোর চেষ্টা করছে এমন একটা সময়ে তাদের জীবনে অ্যালান চার্লটনের আবির্ভাব ঘটে। অ্যালান তাদের বলল, ফিটজহ্যামন এমব্যাংকমেন্টের বেসমেন্টের ফ্ল্যাটে সে পর্নো মুভি আর মাদকের ব্যবস্থা করতে পারে। মেয়েরা খদ্দের ধরল। তার পর সবাই মিলে টাকাটা ভাগ করে নিল।

কিন্তু যেভাবে অ্যালান চার্লটন আর ইদ্রিশ আলি ভেবেছিল, ঘটনা সেভাবে এগোল না। কারেন নগ্ন হয়ে ছবি তুলতে রাজি হল না। তার সঙ্গে চার্লটন আর ইদ্রিশের ঝগড়া বাধল। চার্লটন খেপে গেল। বেসমেন্টেই পিটিয়ে কারেনকে খুন করল।

চার দিন কারেন প্রাইসের লাশ সেখানেই পড়ে রইল। সে কারণেই কঙ্কালে ব্লু বটল লার্ভা জন্মেছিল। চার দিন বাদে ২৯ নম্বর অ্যাপার্টমেন্টের পিছনের বাগানে চার্লটন আর ইদ্রিশ মিলে কারেনকে কার্পেটে জড়িয়ে মাটি চাপা দেয়। প্রায় দশ বছর এই সিক্রেট কেউ জানতে পারেনি। দুজনেই ভেবেছিল, তাদের আর চিন্তা করতে হবে না। পুলিশ কিছু টের পায়নি।

কিন্তু সত্য ঠিক বের হল। একটা কঙ্কাল থেকে কারেন প্রাইস আবার জেগে উঠল। পাঁচ সপ্তাহ ধরে কার্ডিফ ক্রাউন কোর্টে মামলা চলার পর ১৯৯১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি হোসের রায়ে চার্লটন আর ইদ্রিশ দোষী সাব্যস্ত হল। দু’জনেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল।

দণ্ড ঘোষণার পর বিচারপতি হোস পুলিশ, ফোরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানী, সকলেরই প্রশংসা করলেন। কারেনের পরিচয় বের করতে যে রকম নিঃস্বার্থ ভাবে তাঁরা কাজ করেছেন তা দেখে তিনি মুগ্ধ। ডিটেকটিভ চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট জন উইলিয়ামস তখন অবসর নিয়েছেন। তিনি সব থেকে বেশি প্রশংসা করলেন মেডিকেল ইলাস্ট্রেটর রিচার্ড নিভের। উইলিয়ামসের মতে, কারেনের মুখের পুনর্গঠন খুনিদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি সহায়তা জুগিয়েছে। নিভের প্রশংসা করতে গিয়ে উইলিয়ামস মন্তব্য করেন, “তিনি না-থাকলে অপরাধীদের ধরা যেত কি না, আমি জানি না।”

দুই অপরাধীর শাস্তির প্রসঙ্গে উইলিয়ামসের প্রতিক্রিয়া, “আমাদের কাছে আসল চ্যালেঞ্জ ছিল মেয়েটির পরিচয় প্রমাণ করা। বোনাস হিসাবে দু’জনকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত করতে পেরেছি। পুলিশ অফিসার হিসাবে ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন কেস পাইনি। পুলিশ আর ফোরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছিল।”

এক দিন যাঁদের অশান্তি ও বিচ্ছেদের ঘূর্ণিতে একটি ফুলের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল, ফুলের কুঁড়িটা ফুটে উঠেছে না অকালে শুকিয়ে ঝরে গিয়েছে খবরও যাঁরা রাখেননি, কারেনের সেই মা-বাবাই অবশেষে মেয়ের জন্য শোক পালনের সুযোগ পেলেন। খ্রিস্টান মতে কারেনকে সমাধিস্থ করা হল। পুলিশ আর ফোরেনসিকের অসাধ্য সাধনে ছোট্ট জীবনের শেষে কারেন প্রাইস পাথরের বুকে সামাজিক স্বীকৃতি পেল।

 

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team