গলিতে গলিতে আজ রঙের হুল্লোড়। ধুলোয় বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে রঙ্গীন আনন্দরেণু, ভালোবাসা হয়ে ঝরে পড়ছে কিশোরীর নরম গালে। পিচকারি হাতে কোনও দুরন্ত কিশোর তার সেলফি-মত্ত নীলাঞ্জনাকে এই একটা দিন একটিবার একান্তে পেতে চায়, দুহাতে রাঙ্গিয়ে দিতে চায় তার প্রথম প্রেম। তাদের চালশে বাপেদের নেশাভাঙের মৌজমস্তিতে আজ কোনও বিধিনিষেধ লাগু নেই, গতরাতের লাইন দিয়ে কিনে আনা রেয়াজি খাসি টগবগিয়ে ফুটছে তাদের মায়েদের মড্যুলার কিচেনে। বারান্দার গ্রিলে ঢাকা সুরক্ষিত বেষ্টনীতে বসে হাস্যমুখ বার্ধক্য রোমন্থন করছেন তার বাল্য সুখস্মৃতি। আজ হ্যাপি হোলি, শুভ দোলযাত্রা! আসলে আজ মহল্লায় মহল্লায় উদযাপিত হচ্ছে বিজয় উৎসব। গত দুবছর ধরে কোটরে ঢুকে থাকা সন্ত্রস্ত মানুষ ভাইরাসের রক্তচক্ষুকে ইগনোর করতে পারার জয় পালন করছে। আবার স্কুল কলেজ খুলে গিয়েছে, পথেঘাটে তারুণ্যের দামাল স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জমে থাকা জীর্ণ আগাছা ক্লেদ। বসন্তে ডুয়ার্সের রঙ উপভোগ করতে আসে যে প্রকৃতিপ্রেমীর দল তাদের চোখেমুখেও বহুদিন পরে এমন খুশির ঝিলিক। এক এক শতাব্দীতে এমন রঙ্গীন হোলি বোধহয় একবারই আসে।
রঙের উল্লাসে মাতোয়ারা আজ প্রেমময় কৃষ্ণভূমি! কিন্তু হায়, উন্মত্ত রক্ত পিপাসুদের হিংস্রতা কমে কই? এক ইসকন মন্দিরে লক্ষ মানুষের ঢল নামে তো অন্য ইসকন মন্দিরে মৌলবাদী আক্রমণে সন্ত্রস্ত সহস্র ভক্তের দল! অবিলম্বে যুদ্ধবন্ধের জন্য বিশ্ব আদালতের কড়া নির্দেশ এবং যাবতীয় মানবাধিকার আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ইউক্রেনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া! শতাব্দীকাল জমিয়ে রাখা কোন বিজাতীয় ক্রোধে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষের সুস্থ থাকার মৌলিক অধিকারটুকুও কেড়ে নিতে চায়? প্রেমময় এই বসন্তকালে তারা এমন সারা পৃথিবীর সমস্ত ঘৃণা কুড়োতে চাইছে কেন? দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের স্বপ্নসারণীতে এ কোন অ্যান্টিথিসিস! সুদীর্ঘ নির্বাসনের মানসিক অবসাদ আপ্রাণ কাটিয়ে উঠতে চাইছে যখন গোটা দুনিয়ার জীবন যৌবন, তখন এই অযাচিত হিংসা বড় অমানবিক, বড় বেমানান, বড় বেদনার। ক্রমাগত পলায়নে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমরা, শান্তির পায়রা ওড়াই বা না ওড়াই, মোমবাতি মিছিল হোক বা না হোক, আজকের এই প্রেম উৎসবে অন্তত একটিবার আকাশে বজ্রমুষ্টি তুলে ধিক্কার জানাবো না এই বর্বরতার অবসান কামনা করে?
কোভিড নেই, কিংবা চলে যাবে একদিন। কিন্তু যাওয়ার আগে বিক্ষত সারা অঙ্গে রেখে যাচ্ছে যে বিষাদের গভীর পেরেক-ছাপ তা মুছবার দায়িত্ব নেবে কে? কে নিরাময় বয়ে আনবে, এইসব অর্বুদ ক্ষততে প্রলেপ বুলিয়ে দেবে কে? মগজ খোয়া যাওয়া মানুষের দুর্দশাময় এই ভুবনে কি চৈতন্যের আবির্ভাব হবে আর একবার? অরণ্যময় যে পথে সন্ধে নামে, গাছের ফাঁক দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ে বাসন্তী জ্যোৎস্না, সেই পথে কি আবার নেচে নেচে গাইবে শুভ্র বসনের কোনও যুগপুরুষ -- ঢালো আরো ঢালো রঙ প্রেম যমুনাতে...!!
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team