× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: বৈশাখ, ১৪২৯
সম্পাদকের কলম
বৈশাখী উত্তরে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
সহকর্মীদের অপরাধের নানা কাহিনী। পর্ব - ১০
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ৬। কুশান
সব্যসাচী দত্ত
নেট গল্প
এবার রোজায় হামজা একটাও রোজা রাখতে পারনি
পাতাউর জামান
নেট গল্প
ময়ূরী
রম্যাণী গোস্বামী
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল: অতীতের গৌরব আজকের দীর্ঘশ্বাস
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব – ১৪। মায়েরা আছেন হৃদয় ভুবন জুড়ে
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
খুচরো ডুয়ার্স। বিরোধী নয়ন কভু কি দেখে উন্নয়ন?
ডাঃ কলম সিং,এম.বি. (ইউক্রেন),বি.এস (কলকাতা)
পুরানের নারী
রামায়ণের শান্তা
শাঁওলি দে

ময়ূরী

রম্যাণী গোস্বামী
NetGolpo_Mayuree

জঙ্গল ক্যাম্পের সুসজ্জিত ডাইনিং হলে দুপুরে জম্পেশ একটা লাঞ্চের পরে সাফারি করতে যখন বেরব ঠিক তখনই ঝাঁপিয়ে নেমে এল ঝড়টা। ঝটপট শব্দে ধুলোবালি সমেত শুকনো পাতার একটা দল ঘূর্ণির মত পাক খেতে খেতে উড়ে গেল সামনে দিয়ে। তড়িঘড়ি কোথা থেকে মেঘের চাদর ধার করে এনে নিজেকে মুড়ে ফেলল আকাশ। পাখপাখালি সব হইচই করে যেন ঝিম ধরা পরিবেশটাকে সজাগ করে তুলে সদলবলে ফিরতে লাগল বাসায়। বনের দিক থেকে মুহুর্মুহু ময়ূরের কর্কশ ডাকে কান ঝালাপালা হওয়ার জোগাড়। এই রে! এখন বৃষ্টি এসে গেলে হুডখোলা জিপসিতে চেপে সাফারি করাটা না ভেস্তে যায়। এটাই লাস্ট ট্রিপ। ওদিকে কাল সকালেই আমাদের ফেরা। দেখলাম তুতুলের সঙ্গে সঙ্গে তার মায়ের মুখখানাও থমথমে হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তায়।

হালকা হেসে ওদের কিছু একটা বলে চাঙ্গা করতে যাচ্ছি, ঠিক সেই সময় আমার চোখদুটো আটকে গেল তিন নম্বর কটেজটার দিকে। একটি অল্পবয়সী দম্পতি বেরিয়ে এসেছে কটেজের ভিতর থেকে। ছেলেটার হাতে জলের বোতল। সস্তা টেরিলিনের নীল জামা চাপিয়েছে গায়ে। আমার ড্রাইভারও এর চাইতে ভালো মেটেরিয়াল পরে। শক্ত চোয়াল, চোয়াড়ে টাইপ দেখতে। মেয়েটার চমৎকার ফিগার। ফিকে জাফরানি সালোয়ার কুর্তা পরনে। সঙ্গে ম্যাচিং ওড়না। মুখটা ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। লম্বা বেণী দুলছে কোমরের কাছ অবধি। সবমিলিয়ে বেশ একটা আলগা লাবণ্য ছড়িয়ে আছে শরীরে। ওই হাঁটার ভঙ্গি, ঘাড় হেলিয়ে তাকানো এগুলো খুব চেনা লাগছে আমার।  

কে হতে পারে? কলেজের জুনিয়র কেউ? ভাবছি আর মেয়েটাকে আড়ে আড়ে দেখছি। চুম্বকের মত আকর্ষণ ক্ষমতা ওর। আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে ওরা সোজা এসে দাঁড়াল যেখানে পরিমল আমাদের জিপসিটা দাঁড় করিয়েছে, ঠিক সেইখানে। সেরেছে! এরাও আমাদের সঙ্গেই যাবে নাকি? কেন যেন ওই নীল জামাকে সহ্য হচ্ছিল না আমার। ভ্যাগাবন্ড ক্লাস। আমি নিজেও তো এককালে ওই শ্রেণীর মানুষই ছিলাম। বড়লোক শ্বশুরের কল্যাণে হালে জাতে উঠেছি। বিড়ি ছেড়ে নেভি কাট। তাই এদের ছায়াটাও আরও বেশী করে অসহ্য লাগে।   

পরিমল জিপসির চালক। এতক্ষণ কিচেনে ঢুকে কুকদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল। ওদের এদিকে আসতে দেখে সেও এবারে দৌড়ে এল। মুখে বিগলিত হাসি এনে বলল, স্যার, আপনারা টোটাল পাঁচজন হলে গাড়ি ফুল। এবার স্টার্ট করি? দেখলাম পরিমল নীল জামাকে উপেক্ষা করে আমার দিকেই তাকিয়ে পারমিশন নেওয়ার ভঙ্গিতে প্রশ্নটা করল। মনে মনে খুশি হয়ে উদার স্বরে বললাম, তা বেশ তো। একসঙ্গেই যাওয়া যাক।

ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের ভিতরে দেড় দুই কিলোমিটার পথ থেমে থেমে চলল জিপসি। তারপর হাইরোডে উঠে গতি বাড়াল। পেখমতোলা ময়ূরের নাচ এই প্রথম দেখলাম। অপূর্ব অস্থিরতায় কেঁপে কেঁপে উঠছে মিলনেচ্ছুক শরীর। পড়ন্ত রোদে যেন রঙের বান নেমেছে পাখনায়। দূরে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারটে ময়ূরী। মুখোমুখি সিটে আমরা পাঁচজন। গলায় বাইনোকুলার ঝোলানো তুতুল আনন্দে ছটফট করছে। কখনও উঠে দাঁড়াচ্ছে। কচি কচি হাতে আঁকড়ে ধরছে জিপসির রড। ওকে সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে আমার বউ পল্লবী। মেয়েটা সেটা দেখে পল্লবীকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজেও একটু হলে টাল খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল। ওর হাঁটুর সঙ্গে ঠেকে গেল আমার হাঁটু। এক পলক চোখাচুখি। আমার কান মাথা ঝাঁঝাঁ করে উঠল। হলকা দিয়ে আগুন বেরবে এমন ভাব। মেয়েটার ঠোঁটের কোণায় মোহিনী হাসি। ওর টানাটানা অতল দুই চোখে স্পষ্ট আদিম আহ্বান! অবাধ্য শরীরে বুনো ঝুমকোলতার গন্ধ।

ঠিক দেখলাম তো? নাকি আমারই চোখের ভুল! ছেলেটা এবার উঠে দাঁড়িয়ে একহাতে শক্ত করে রড ধরে অন্য হাতে জড়িয়ে ধরল মেয়েটার কোমর। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। একটু আগে খাওয়া চিতল কালিয়ার তেতো ঢেঁকুর উঠল টাকরায়। মুখের ভিতরটা বিস্বাদ হয়ে গেল। আমাদের জিপসি তখন হাইওয়ে ছেড়ে ঢুকে পড়েছে জঙ্গলের কোর এরিয়ায়। ডুয়ার্সের সবুজ প্রকৃতি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরতে চাইছে আমাদের। ডালপালা গায়ে এসে লাগছে। উঁচু উঁচু মহীরুহে মন্দিরের ঘণ্টার মত একটানা বেজে চলেছে একধরনের পোকার ডানা ঝাপটানোর শব্দ। শুনতে শুনতে আমিও ডুবে যাচ্ছিলাম অতীতের কোলে। ওই চোখ! ওই হাসি! কোথায় দেখেছি যেন আগে।

হঠাৎ ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ল জিপসি। ফাঁকা জায়গায় প্রচুর বক উড়ছে। একটা সাঁকোর ওপাশে রাস্তা পেরচ্ছে একপাল গাউর। দলপতির ইয়াবড় মাথা। প্রকাণ্ড হাতির মত কালো কুচকুচে দেহ। পায়ে সাদা মোজার দাগ। পিঠের উপরে তিনটে বক বসে আছে। দলটার সমবেত খুরের আঘাতে ধুলোময় হয়ে যাচ্ছে সরু মেঠো পথ। ক্রমশ যেন মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে দৃশ্যটা। পরিমল ঠোঁটে আঙুল দেখিয়ে সকলকে চুপ করতে বলল। ঠিক সেই সময় মেয়েটার সঙ্গে আবারও আমার চোখাচুখি হল। ওর ঠোঁটের কোণায় বিষাক্ত হাসির ছিটে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎপৃষ্টের মত মনে পড়ে গেল বছর সাতেক আগের সেই রাতটাকে। লজটার যেন কী নাম ছিল? ময়ূরী? নাকি ওটা সেই মেয়েটারই নাম? পটা। হ্যাঁ, পটা ভাড়া করে নিয়ে এসেছিল মেয়েটাকে। পটা আমার পাতা খাওয়ার ঠেকের জিগরি দোস্ত। তখন আমরা কলেজ পাশ কাঠবেকার। কাজকর্ম করি না। বাইক হাঁকিয়ে বেড়াই শহরের বুকে। পাবলিককে চমকাই। মাঝে মাঝে সাট্টায় বড় দাঁও মারলে বন্ধুরা মিলে শহরের বাইরে নিরিবিলিতে গিয়ে ফুর্তি দাবড়াই।

ওই চটকদার মেয়েটাকেও নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা তিন দোস্ত একটা অল্টো ভাড়া করে। লাটাগুড়ির জঙ্গলে সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে মস্তি করে সন্ধে নাগাদ গিয়ে উঠেছিলাম জঙ্গলে ঢোকার মুখেই নির্জন হাইওয়ের ধারের একটা চিপ লজে। লজ ম্যানেজারকে আগেভাগেই ফিট করে রাখা ছিল। মেয়েটা প্রথমটা খেলাধুলো করলেও তারপরে না করেছিল। আমরা শুনিনি। বাড়াবাড়িটা যখন চরমে উঠল তখন আর উপায় না দেখে লজ ম্যানেজারের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে রাতের অন্ধকারে আমরা কুত্তার মত পালিয়েছিলাম।

এই কি সেই মেয়ে? ও বেঁচে আছে তারপরেও? আমাকে চিনতে পেরেছে কি? সমস্ত রাত একই রিসর্টে থাকা। ও যদি পল্লবী’কে সবকিছু বলে দেয়? একেই তো বড়লোকের দুলালি’কে বিয়ে করেছি। সারাক্ষণ নজরদারিতে থাকতে থাকতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বাথরুমে গেলেও মোবাইল ফোনটা সঙ্গে নিয়ে যাই। বিয়ের আগের এসব কীর্তির কথা জানতে পারলে বাপকে বলে আমাকে স্ট্রেট বাদশা থেকে ফের রাস্তার ভিখারি বানিয়ে দেবে আমার বউ।

উফ্‌, হঠাৎই একটা বিটকেল অস্বস্তি আমায় জাপটে ধরে। গুমগুম মেঘের আওয়াজ কাড়ানাকাড়ার মত বেজে ওঠে আকাশে। মেয়েটার ঠোঁটের কোণায় বিষাক্ত হাসিটা এখনও ঝুলে রয়েছে অদ্ভুতভাবে। সেটা বিষ মাখানো ফলার মতো বিঁধে যাচ্ছে আমার বুকে। আমি দরদর করে ঘামছি। বুকের বাঁ দিকে চাপচাপ ব্যথা। খাবারগুলো হজম হয়নি? অ্যাসিড হয়ে গেছে কি?   

জিপসির রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে আছে সেই পালের গোদা বাইসনটা। সবাই গদগদ হয়ে তাকেই দেখছে। কী গুমোট করে এসেছে চারপাশে। হয়ত বৃষ্টি নামবে। জলের বোতলটা কোথায় রেখেছে পল্লবী? চারপাশে এত অন্ধকার কেন? আমি কাতর স্বরে বাকিদের ডাকতে চাইছি। কিন্তু খুব কাছেই তীক্ষ্ণ কণ্ঠের একদল ময়ূর ময়ূরীর ডাকে আমার গলাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে বারবার।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team