দিব্যি মহাতামাক সেবন করিয়া গাছবাড়িতে ঘুমাইতেছি। স্বপ্ন দেখিতেছি গন্ডার আসিয়া আমার ফোটো তুলিতেছে ফেসবুকে দিবে বলিয়া। স্বপ্নে বিজ্ঞাপনের বিরতিও আসিতেছিল। কোন এক ট্রাভেল কোম্পানি কহিতেছিল ‘হোম টু সিবিআই ভায়া উডবার্ন’। হেনকালে ফোন বাজিতেই ঘুম ভাঙিয়া গেল। দেখি সম্পাদক ফোন করিতেছেন। স্পিকার অন করিতেই উনি ব্যগ্রস্বরে কহিলেন, ‘তুমি কী করিতেছ বলো তো? ওইদিকে যে বৈকুন্ঠপুর অমাত্য-আপিসের পিগি ব্যাংক চুলের কাঁটা দিয়া খোঁচাইয়া কে বা কাহার জানি তিন কোটি টাকা লইয়া ভাগিয়াছে।’
প্রথম তিন কোটি শুনিয়া পাত্তা দিই নাই। হামেশাই লোকে হাজার কোটি, শত কোটি লইয়া ভাগিতেছে। সেইখানে তিন কোটি আবার টাকা হইল নাকি? কিন্তু সম্পাদক যখন বিশ্লেষণ করিয়া কহিলেন, একশো টাকা পুরিয়া মহাতামাক তিন কোটিতে কয়টা মিলিবে তখন টনক নড়িল। পাশেই ভূপর্যটক নিত্যম ভট্ট ভদকা পানান্তে ঘুমাইতেছিলেন। তাঁহাকে তুলিয়া তাঁহার সাইলেন্সারহীন এনফিল্ডে চাপিয়া, অরণ্যের শান্তি বিঘ্নিত করিয়া সশব্দে বৈকুন্ঠপুর হাজির হইয়া শুনিলাম ভয়ানক ঘটনা। সত্যি সত্যিই কে বা কাহারা অমাত্য-আপিসের ভাঁড় ভাঙিয়া ইনস্টলমেন্টে তিন কোটি গায়েব করিয়াছে। ব্যাপার শুনিয়া মহামাত্য পিউকাঁহা দেবী, এক্স মহামাত্য সম্মোহনবাবু, এক্স বিরোধি শিবধনুকবাবু সবাই একবাক্যে বিস্মিত।
কেবল বৈকুন্ঠপুরবাসী খুব একটা বিস্মিত হয় নাই। উহারা সব শুনিয়া-পড়িয়া মাথা নাড়িয়া কহিতেছেন, ‘তাই তো! এইসব না হইলেই আশ্চর্য হইতাম। হইয়াছে যখন তখন আর চিন্তা নাই।’
চৈত্র মাসে গাজন ছাড়াও ডুয়ার্সে নানা রকম রোমাঞ্চকর কান্ড ঘটিয়াছে। শিলিনগরের অদূরে হ্যাভকপুলে কয়দিন আগেই কারা জানি বোমা ফাইটাইয়া গাড়ি জ্বালাইয়া দিয়াছিল। কান্ড দেখিয়া পাব্লিক জলের বালতি লইয়া ছুটিলে জানা গেল উহা নাকি বায়োস্কোপ শুটিং-এর অঙ্গ। এমনিতেই হ্যাভকপুলের দশা ভালো নয়। তদুপরি চারদিকে নবীন ভঙ্গিল পর্বত। সেইখানে এইরূপ বিস্ফোরক কান্ড দেখিয়া আমি তদন্তে যে নামি নাই তাহা নহে। কিন্তু জানিলাম উক্ত বিস্ফোরণের অনুমতি থাকিলেও পার্মিশান ছিল না। অবশ্য এই রকম না হইলেও অন্যরকম আগেও ঘটিয়াছে। বায়োস্কোপের ফোটো তুলিতে আসিয়া স্বনামধন্য ডিরেক্টর একখানি প্রাচীন বাংলো ভাঙিয়া ফেলিয়াছিলেন। সেই ভাঙিয়া দাও গুঁড়াইয়া দাও ঘটনা আমি লিপিবদ্ধ করি নাই কারণ ডিরেক্টর বলিয়াছিলেন পরের বায়োস্কোপে তিনি লাস্যময়ী নায়িকার সহিত একখানি সিনে আমাকে অভিনয় করিতে দিবেন।
ঘটনা অবশ্য এইখানেই শেষ নহে। বিমান নামিতে নামিতে শিলিনগরের বন্দরের রাস্তা যে বসিয়া গিয়াছে তাহা কে না জানেন? ‘ফোর্লেন’ সরণীর জমি জটিলতা যে ফেলুদ-হোমস মিলিয়া সমাধান করিতে পারিতেছিল না, তাহাও বা কাহার অজ্ঞাত? এইসবের মধ্যেও ডুয়ার্সে আলুর প্লাবন আসিয়াছিল। সকলের ক্ষেতে উপচাইয়া পড়িয়াছিল আলু। সকলেই আলু লইয়া হিমঘরের দিকে যাত্রাও করিয়াছিল কিন্তু হিমঘরে মালিকগণ নাকি কহিতেছে ‘ঠাই নাই ঠাই নাই ছোট সে হিমু (হিমঘরের ডাক নাম)/ সবার আলুর দোষ কী রূপে নিমু?’ ফলে ঘরের সম্মুখে ট্রাকের লাইন লম্বা হইয়া পাশের জেলায় চলিয়া যাইতেছে। ট্রাকভর্তি আলু ফিরাইতে গিয়া ড্রাইভার দেখিতেছে ডিজেলের দাম বাড়িয়া গিয়াছে। তাই যাওয়ার ভাড়া কম হইলেও ফিরৎ লইবার ভাড়া বাড়িয়া গিয়াছে। তদুপরি ট্রাকের লাইনে এমন জ্যাম লাগিয়াছে যে গেরস্ত বাজার করিয়া সাইকেল কাঁধে বাড়ি ফিরিতেছে।
এইসব অশৈলী কান্ড দেখিয়া বিরোধিপক্ষ কোথায় সহানুভূতি দেখাইবে তাহা নয় উলটা কহিতেছে যে শাসক দলে নাকি চৈত্র সেল চলিতেছে। তোলা আদায়ে বিশ পার্সেন্ট ছাড়। এইসব যে নিতান্তই রটনা তাহা অবশ্য ছোটফুল ছাড়া আর কেহ বিশ্বাস করিতেছে না। তবে বিরোধীরাও যে ভালো বোধ করিতেছেন, তাহাও নহে। বড়ফুলের পার্টি আপিস যে ভাঙিয়াছিল তাঁহাকেই আবার দেশপ্রেমিক সম্মান দিয়া বরণ করা হইয়াছে। দুই দিন বন্ধ ডাকিয়া হস্ত-হাতুড়ি এখনো বুঝিয়া উঠিতে পারে নাই যে ধম্মঘট সফল না ব্যর্থ। এইসবের মধ্যেই অবশ্য মহাদিদি আসিয়া পাহাড়ে মোমো বানাইয়া খবর হইয়াছিলেন। নিন্দুকদের মতে মোমোর একপাশ সাদা হইলেও অপর দিক পুড়িয়া নীল হইয়া গিয়াছিল।
যাহা হউক। বৈকুন্ঠপুরে তিন কোটির কাহিনী ব্যতীত আর কোনো টাকা গায়েবের কাহিনী এখনো পাই নাই। ডুয়ার্স জুড়িয়া পুরভোটে ছোটফুল সদ্য সদ্য জিতিয়াছে। টাকা পয়সা লোপাটের জন্য উহাদের আরো কিছু দিন সময় দিতে হইবে বলিয়া হিংসুক বিরোধিরা টিপ্পনি কাটিয়াছে। কোচরাজ্যের মহাসূর্য অবশ্য বলিয়াছেন তিনি ‘নতুন’ কিছু করিবেন। এই কথা টেলিগ্রাম করিয়া প্রখ্যাত কবি পুরন্দর ভাটকে জানাইতে তিনি ফেসবুকে একখানি কবিতা পোস্ট করিয়াছেন যাহার লাইক কয়েক মিলিয়ন। তবে তিনি আপনাদের ফ্রেন্ডলিস্টে নাই বলিয়া কবিতাখানি উল্লেখ করিতেছি--
সবগুলি পুরসভা হয়া একজোট।
গণনা করিয়া দেখে কত হয় নোট।।
পাঁচ-পাঁচ আনা করি ভাই-নেতা লবে।
পাঁচ আনা বিজ্ঞাপনে ব্যয় করা হবে।।
বাকি যেই এক আনা শুন সুধীজন।
উহাতে দাঁড়ায়ে ঠিক যাবে উন্নয়ন।।
নয়নে নয়নে নয় নয়া উন্নয়ন।
এমত যে ভাবে তার বিরোধী নয়ন।।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team