× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: বৈশাখ, ১৪২৯
সম্পাদকের কলম
বৈশাখী উত্তরে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
সহকর্মীদের অপরাধের নানা কাহিনী। পর্ব - ১০
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ৬। কুশান
সব্যসাচী দত্ত
নেট গল্প
এবার রোজায় হামজা একটাও রোজা রাখতে পারনি
পাতাউর জামান
নেট গল্প
ময়ূরী
রম্যাণী গোস্বামী
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল: অতীতের গৌরব আজকের দীর্ঘশ্বাস
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব – ১৪। মায়েরা আছেন হৃদয় ভুবন জুড়ে
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
খুচরো ডুয়ার্স। বিরোধী নয়ন কভু কি দেখে উন্নয়ন?
ডাঃ কলম সিং,এম.বি. (ইউক্রেন),বি.এস (কলকাতা)
পুরানের নারী
রামায়ণের শান্তা
শাঁওলি দে

মুর্শিদাবাদ মেইল। শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল: অতীতের গৌরব আজকের দীর্ঘশ্বাস

জাহির রায়হান
MurshidabadMail_RadhaKrishnaSugarMill

১৯৪৭। বড়ো অস্থির সে সময়। তখনও দেশ বিদেশী শাসকের করায়ত্ত্বে। স্বাধীনতা উন্মুখ ভারতীয়রা উদ্বেল। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগের মাধ্যমে আসতে চলেছে বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতা। নানা রটনা ও ঘটনা পরম্পরায় দেশজুড়ে শুরু অপেক্ষার প্রহর গোনা।

১৯৪৭ সালের ১৫ জুলাই, ব্রিটিশ সংসদের ‘ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭’ নির্ধারিত করলো যে পূর্বোক্ত দিনটি থেকে ঠিক এক মাস সময়কাল পর ভারতবর্ষে শেষ হয়ে যাবে ব্রিটিশ রাজের শাসন, অবসান হবে ইংল্যান্ডের একচেটিয়া ঔপনিবেশিক আধিপত্য। এই অধিনিয়মে আরও সুস্পষ্টভাবে পরিভাষিত করা হল যে ব্রিটিশ ভারত দুটি স্বতন্ত্র নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্রে বিভাজিত হবে, যথা ভারত অধিরাজ্য এবং পাকিস্তান রাজত্ব।

কিন্তু জেলা মুর্শিদাবাদের ভাগ্যাকাশে তখনও দুর্যোগের ঘনঘটা। কারণ বিভক্তিকরণের প্রস্তাব এবং সীমানা কমিশনের কার্যধারার সুবিধার্থে দেশ ভাগের অস্থায়ী ‘৩ জুন প্ল্যান’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন প্ল্যান’ অনুযায়ী জেলা মুর্শিদাবাদ চলে গেছে প্রস্তাবিত পাকিস্তান রাজত্বের পরিসীমায়। অপর দিকে পূর্ব পাকিস্থান তথা অধুনা বাংলাদেশের ‘খুলনা’র অবস্থান উল্লিখিত হয়েছে ভারত অধিরাজ্যের অভ্যন্তরে।

অভূতপূর্ব এ ঘটনায় আলোড়িত হল সমগ্র মুর্শিদাবাদ জেলা। জেলাবাসীর একটি বৃহত্তর অংশ মুর্শিদাবাদের পাকিস্তান ভুক্তিতে অসন্তুষ্ট। প্রশাসনের উচ্চস্তরে তদ্বির তদারক ও প্রচেষ্টার ফল মিলল অচিরেই। স্বাধীনতা ঘোষণার তিন দিন পর বড়লাটের পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯৪৭ সালের ১৮ আগষ্ট, বৈকালে প্রকাশ করা হল র‍্যাডক্লিফ কমিশনের চূড়ান্ত মীমাংসা পত্র। প্রকাশিত ঘোষণা পত্রে দেখা গেল, খুলনা’কে পূর্ব পাকিস্থানের সঙ্গে যুক্ত করে, ‘মুর্শিদাবাদ জেলা’কে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে ।

এদিকে দেশ বিভক্তির টানাপোড়েন ও মুর্শিদাবাদ জেলা’কে নিয়ে দড়ি টানাটানির আবহে বন্ধ হয়ে গেল জেলার একমাত্র চিনিকল শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল। ২০০৩ সালের মুর্শিদাবাদ গেজেটিয়ারে উল্লিখিত রয়েছে উক্ত চিনি মিলের কথা। সেই উল্লেখ থেকে জানা যায়, ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পযর্ন্ত চালু ছিল বেলডাঙ্গার শ্রী রাধাকৃষ্ণ চিনিকল। দেশভাগ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও জমি দখলসহ নানান কারণে বন্ধ হয়ে যায় কারখানাটি। আজকের প্রতিবেদনের মূল বিষয় ঐ বন্ধ হয়ে যাওয়া চিনিকলটি।

১৯৩৩ সালে পূর্বস্থ একটি চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের কারখানার সংস্কার সাধন করে বেলডাঙ্গায় চালু হয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিলস্ লিমিটেড। শিল্পপতি রাধাকৃষ্ণ ঝাঝারিয়ার নামানুসারে নামকরণ করা হয় কারখানার। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয় ইংল্যান্ড থেকে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি এলাকাজুড়ে ছিল কাঁচা মালের সহজলভ্যতাও। নীল চাষের অবসান ঘটলে মুর্শিদাবাদ, নদীয়াসহ নানা জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে শুরু হয় আখ চাষ। যদিও প্রয়োজনীয় আখের অধিকাংশই যোগান দিত অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলা। তাছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ ১৯৩৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর, মাদাপুর, বানজেটিয়া, জীবননগর ও বহরমপুরে মোট ৪৭২.১ একর এবং নদীয়া জেলায় বেথুয়াডহরিতে ৪০৪.৭ একর জমি কেনে আখ চাষ করার উদ্দেশ্যে।

এক বছর পর থেকে রমরমিয়ে শুরু হয় চিনি উৎপাদন। বেশ জনপ্রিয় ছিল বেলডাঙ্গার চিনি। লালগোলা-রানাঘাট রেলপথ পত্তন হবার পর রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠে মিলের অভ্যন্তর পর্যন্ত। যার উপর ভর করে উৎপাদিত চিনি সহজেই পৌঁছে যেত কলকাতায়। কলকাতা ছাড়াও দেশের বহু স্থানে রপ্তানি করা হতো বেলডাঙ্গার চিনি। এমনকি শোনা যায় বেলডাঙ্গায় উৎপাদিত চিনি দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি দিত সুদূর ইংল্যান্ডেও। দেশ তখনও ইংরেজদের কবলে কাজেই সেটা অস্বাভাবিকও ছিল না সে সময়। আবার জলপথ ব্যবহার করে ভাগিরথী নদী বয়ে বেলডাঙ্গার চিনি পৌঁছে যেত নানান গন্তব্যে।

মুর্শিদাবাদ জেলা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার রটনা ও ঘটনার আবহে মিল বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হয়ে যায় জেলার একমাত্র চিনিকল বেলডাঙ্গা শ্রীরাধাকৃষ্ণ সুগার মিল। দীর্ঘ ১৪ বছর পর তেঁতো হয়ে যায় চিনির স্বাদ। কাজ হারায় অসংখ্য মানুষ। পরবর্তী কালে নিজেদের দেওলিয়া ঘোষণা করে মিল কর্তৃপক্ষ। লিকুইডেশনে রিসিভার নিয়োগ করে কলকাতা হাইকোর্ট। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রিজ দপ্তর কিনে নেয় কারখানাটি এবং সরকারি ভাবে কারখানা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল সুগার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন। নাগপুর থেকে চিনিকল বিশেষজ্ঞরা এসে পরিদর্শন করেন পরিকাঠামো ও শিল্প সম্ভাবনা। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় সেই প্রচেষ্টা। ফলশ্রুতিতে মিলের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় অজ্ঞাত গন্তব্যে। নিশ্চুপে বিরাজ করে অসীম শূন্যতা। অকালেই বিনষ্ট হয় বহু মানুষের রুটি-রুজির আধার। কারখানার দখল নেয় সাপখোপ ও নানাবিধ কীটপতঙ্গ।

স্থানীয় পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ওই সুগার মিল ও সংলগ্ন জমি লিজ নেয় চাঁপদানি ইন্ডাস্ট্রিজ। কাঁচা পাট ছাড়িয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাঁক দেওয়ার প্রজেক্ট গ্রহণ করে কোম্পানি, কিন্তু ব্যর্থ হয় সে পরিকল্পনা। বর্তমানে মিলের পরিত্যক্ত কিছু জমিতে র‍্যামির ফাইবার চাষ হয় এবং এই সংক্রান্ত ছোট একটি প্রসেসিং ইউনিটও আছে কারখানার দপ্তরে। তন্তু উৎপাদন করে তা থেকে তৈরি হয় সুতো। কিন্তু এই প্রক্রিয়া নামমাত্র। মিলের মূল ভবন বর্তমানে ঝোঁপ জঙ্গলে পর্যবসিত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় কারখানার বেশ কিছু জমিজমা হাতবদলও হয়েছে সম্প্রতি।

বেলডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কারখানাটির পুনরুজ্জীবন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয় বর্তমান সরকারের। মুখ্যমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক নির্দেশে তৎপর হয় প্রশাসন। মহাকুমা শাসকের নেতৃত্বে বন্ধ কারখানা পরিদর্শনে আসেন শিল্প ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তাব্যক্তিরা। তারপরও কেটে গেছে অনেকটা সময়। আবারও সব চুপচাপ। প্রাচীর ঘেরা একটি বিরাট চৌহদ্দিতে আগাছার রাজত্বে গগনচুম্বী তামার চিমনি নিয়ে অপেক্ষমান অতীতের শ্রী রাধাকৃষ্ণ সুগার মিল। শীতের গভীর রাত্রের নিস্তদ্ধতা খান খান করে ভেঙে কালেভদ্রে শোনা যায় সে কারখানার ঘন্টাধ্বনি। সময় যাপনের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া তার কাছে আর কিছু পাওয়ার নাই জেলাবাসীর।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team