 
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             তনুশ্রী পাল
                                            
                                                
                                                তনুশ্রী পাল
                                            
                                            
                                         
                                            
                                        সকাল থেকেই তিনি গজগজ করেন, ‘ইতনি রাত গয়ে হাঁ, ফিরভি বাত করতে রহতে হ্যায় তব ক্যায়সে চলে গা। না ঠিকসে খাতি হ্যায়, না শোতি হ্যায়, সারে দিন বাত করনা পরতা হ্যায়, ফির রাত কো ভি বাত চলতে হি রহতে হ্যায়! হাঁ! ক্যায়া হ্যায় ইয়ে সব? বিমার পড় যাওগে তব সমঝমে আয়গা। হু।‘ ইন্ডিগিন্ডি গোটা আটেক বাচ্চাসহ স্বাস্থ্যবতী মা মুরগীটিও তাঁর পেছনপেছন যাতায়াত করে আর মালকিনের সঙ্গে সহমত পোষণ করত বেশ উচ্চৈঃস্বরে ডাকাডাকি করে। পাহাড়তলির ছোট্ট বসতির একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটা সকাল সকাল এতরকম শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে। কথা সাদ্রি ভাষায় না বলে ভাঙা হিন্দীতেই তিনি গজগজ করতে করতে বারান্দা দিয়ে বাসনপত্র নিয়ে একবার কুয়ো তলায় যাচ্ছেন আবার ধোয়াধুয়ি সেরে ওনাদের রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছেন। মুখ তার বন্ধ হচ্ছে না। ‘রাত কো ফোন কিউ নেহি বন্দ কর দেতে হ্যায় হাঁ? শিকসক হ্যায় হাঁ, তো উসকো অওর ক্যায়া সমঝাউ ম্যায়?’ বুঝতে অসুবিধে হয় না এই বাক্যবানের লক্ষ্যবস্তুটি আমি ছাড়া কেউ না। রাতের নির্জনে যে কোনও শব্দই অনেকবেশি স্পষ্ট আর জোরালো হয়। গতরাতের ওই বেকার ফোনালাপে শুধু আমার নয় ওনারও তো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে। ঘরের ভেতর ব্রাশ হাতে দাঁড়িয়ে জানালা পথে দৃশ্যমান মাঠ আর অদূরের পাহাড়ের সারির দিকে তাকিয়ে থাকি। বাইরে বেরোতে সংকোচ হয়!
মাঝরাতে ফোন করা সেই কবিনীটিকে নিরুচ্চারে গাল দিই। জেলাশহর থেকে রাজধানী শহরে গিয়ে বাস করছেন বছরদুয়েক। লেখালেখি করছেন, নানান কবিতা উৎসবে আমন্ত্রিত হন। বেশ কিছু পারিষদ জুটেছে শুনতে পাই, তাঁর রাজধানীস্থিত বাসভবনে মাঝেমধ্যেই সাহিত্যবাসর বসে। পদ্য ও আনুষঙ্গিক আরও নানা বিচিত্র ঘটনার মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন সেও কানে আসে। পানাহার সেরে আজকাল মাঝরাতে নানাজনকে ফোন করে করে উত্যক্ত করেন সেও শোনা ছিল, কিন্তু আমিও তার টার্গেট হতে পারি সে ধারণা ছিল না মোটে! গতরাতে তিনিই কাঁপা গলায় গান, কবিতা শোনাচ্ছিলেন, ভাট বকছিলেন। নিজের মা-বাবা আর পতিদেবের নামে বিস্তর নিন্দেমন্দ করছিলেন, এরা কীভাবে তার সব স্বপ্ন ও ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিচ্ছে তা ব্যাখ্যা করেন। রেডিও-টিভি ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে চাকরির অফার নিয়ে কর্তৃপক্ষ ঝোলাঝুলি করছে কিন্তু বাড়ির লোকের অসহযোগিতায় তিনি কিছুই করতে পারছেন না। তিনি আরও জানান এই মুহূর্তে একটি লাল বর্ডার দেওয়া কালো স্লিপিং গাউন পরে গড়িয়ার সাততলা ফ্ল্যাটবাড়ির ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং যেকোনও মুহূর্তে ঝাঁপ দেবেন বা উড়ে উড়ে চাঁদের গায়ে হেলান দিয়ে বসে থাকবেন। আর সেখানে বসেই কবিতা লিখে লিখে পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করবেন।
কী সর্বনাশের কথা! এমতাবস্থায় ফোন কেটে দেওয়া যায়? মানবিকতা বলে একটা শব্দও তো আছে। তাই না? আমি তাকে জানাই, ‘বাংলা কাব্যধারায় এ মুহূর্তে তোমার মতো শক্তিশালী কবিতা আর কেউ লিখছেনা ভাই। চাঁদে গিয়ে কাজ কী? তুমি চাঁদের আলোয় ছাদে বসেই কবিতা লেখ বা ঘরে বসে লেখ, সেই চমৎকার হবে গো। কেন মিছিমিছি অত দূরে যাবে বল দেখি। যেও না।‘ ‘যাব না? আচ্ছা। তুমি কি জান একটু গান গাইলে, কবিতা আবৃত্তি করলে আমার মেয়ে পর্যন্ত আমায় অপমান করে! আমার নাকি গলায় সুর নেই, সুর জ্ঞানই নেই। আমি নাকি খুব খারাপ কবিতা লিখি! এত অপমান সহ্য হয় না, মরে যেতে ইচ্ছে করে আমার। নিজের মেয়ে এরকম বলে!’ তিনি ফুঁপিয়ে ওঠেন, খানিক কেঁদে ভাঙা গলায় বলেন। ‘ আচ্ছা আমার দুটো কবিতা শুনবে তুমি?‘ বড় বেশি শরীরী আবেদনময় তার কবিতা আমার তেমনটি পছন্দের নয় ঠিকই, কিন্তু চাঁদের দিকে ঝাঁপ দেওয়ার ইচ্ছে থেকে বিরত করাটাই তখন মূল উদ্দেশ্য। বলি ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই শুনব। আমার কী সৌভাগ্য! শোনাও শোনাও।‘ তিনি কবিতা বলেন আবার গানও গাইতে শুরু করেন থেকে থেকেই। রাত গড়ায় তিনি বলেন আমি শুনি। আবার বলেন, ওখানে বসে যা লিখছ লেখ এদিকে এসো না, বুঝলে। লোকজন ভালো না, আমার সঙ্গে অনেকেই খারাপ ব্যবহার করেছে জান? তিনি নানাজনের নাম উচ্চারণ করেই এটাসেটা বলেন, কাঁদেন। উপদেশও দেন, দূরে থাকবে এসব লোকের থেকে, হ্যাঁ।‘ ‘একদম, তুমি তাহলে এখন ঘরে যাও। চোখেমুখে জলটল দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নাও। কাল আবার কথা হবে।‘ রাত প্রায় দুটো অব্দি এসব ঝঞ্ঝাট, অযথা সময় নষ্ট; আর আজ সকালে বাড়িউলি মাতৃদেবীর গঞ্জনা।
মায়েরা তো এভাবেই বলেন। সারাক্ষণ নজর রাখেন সন্তানের ভালমন্দের দিকে। নিজের ঘুম হয়নি বলে নয় আমার রাতে ঠিকঠাক ঘুম হয়নি বলেই তাঁর চিন্তা। যে দুটি বছর সেখানে ভাড়া থেকেছি প্রতি পলে নানা ঘটনায় তাঁর স্নেহময় হৃদয়টি স্পষ্ট দেখেছি। সেখানে খুব স্বল্প সরঞ্জামে সজ্জিত সংসার আমার। রান্নার দুচারটে উপকরণ সহ ছোটো একটা গ্যাসের চুলো। জুলেখা বিবি দুবেলা এসে ঘরদোর ঝাড়পোছ, রাস্তার কল থেকে খাবার জল আনা ইত্যাদি কাজ সেরে চলে যেত। স্কুলের তাড়ায় সকালে গল্প করার অবকাশ ছিল না কিন্তু বিকেলে চা নিয়ে বসে জুলেখার সঙ্গে কত গল্পই হত! সকালে সামান্য কিছু রান্না হত, রাতের খাবার আসত এক ছাত্রের বাড়ি থেকে। বেশ সুখেই কেটেছে দিনগুলো। সপ্তাহের কটা দিন ডেইলি প্যাসেঞ্জারির ঝামেলা থেকে রেহাই পেয়ে, স্কুল সিলেবাসের বাইরে নিজস্ব লেখাপড়ার অবকাশ মিলছিল। প্রকৃতি আর মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের সঙ্গ ছিল মহার্ঘ্য অক্সিজেনের মতো।
তা একদিনের ঘটনা বলি, চৈত্রের বিকেল, সোমবার। যথারীতি সেদিন দেড় ঘন্টার বাস জার্নি করে বাড়ি থেকে সোজা স্কুলে। দুপুরের পর হঠাৎ ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে এল। ফিফথ পিরিয়ডেই ছুটির ঘন্টা বাজিয়ে দেওয়া হল। পড়িমরি করে সব বাড়ির দিকে ছুট। আমার বাসাটি স্কুলের অদূরেই, সে পথটুকু আসতে আসতেই সোঁ সোঁ প্রবল হাওয়া, আকাশ চিরে বিদ্যুতের ঝলক আর মেঘের গর্জন। উঠোন পেরিয়ে বারান্দায় উঠতেই শুরু হল শিলা বৃষ্টি। এই বড় বড় শিল পড়ছে ঝপ ঝপ করে। কারেন্ট নেই, ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার! মোবাইলের টর্চটি ভরসা। চুপটি করে বসে থাকি, বাইরে ঝড়ের তান্ডব। জলের জাগ প্রায় শূন্য, তার মানে জুলেখা আজ আসেনি! ঘরে খাবার জল নেই! বাড়ি থেকে আনা জলের বোতলে তলানিটুকু পড়ে! দিয়াশলাই বক্সে আর কাঠি নেই! এত নেইয়ের কারণে দিনটি মনে আছে বেশ।
হাওয়ার দাপট কিছু কমলে আমার সেই মাতৃদেবী চা আর দুটো বিস্কিট দিয়ে যান। কী করে বোঝেন জলটল নেই! আমার আপত্তি নস্যাৎ করে জলের জাগ আর ছোট একটি কেরোসিন ল্যাম্প দিলেন। ‘জুলেখা বহুত বদমাস, দোদিন ছুট্টি মিলা ফির আজ কিউ নেহি আয়া’ গজগজ করেন। সন্ধের পর ঝড় বৃষ্টির প্রকোপ বাড়ল বই কমল না। রাত আটটার দিকে সে ছাত্রের মা ফোন করে, দিদিমনি এত বৃষ্টি, রাস্তায় বড় আমগাছটা ভাইঙ্গে পড়চে, লাইটও নাই, কী অন্ধকার! কেমন কইরে আপনার ভাত পাঠাই? আপনে আইজকে কষ্ট কইরে একটু রাইন্দে নিলে ভাল হয়।‘ ‘ঠিক আছে, কোনও অসুবিধা নাই। আজ আর ভাত পাঠাতে হবেনা।‘ সত্যি দিনটা আজ খারাপই, রাতে উপবাস। স্বল্প ল্যাম্পের আলোয় কিছু পড়া যায়না, চুপচাপ শুয়ে বৃষ্টির ধ্বনি শুনি। রাতে বিস্কিট আর জল। ভাবলে হবে! ন’টা নাগাদ দরজায় ঠকঠক, দরজা খুলে দেখি হাতের থালায় ভাত আর সব্জি সাজিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে মাতৃদেবী আমার। হয়তো নিজের খাবারের অংশ থেকেই নিয়ে এসেছেন। গৃহকর্তার স্থায়ী কাজ নেই। ছুটকো ছাটকা কাজ করে সংসার চালান। যেখানে চাকরি করতেন সে চাবাগান অনেকদিন বন্ধ! রোগা, লম্বাটে চেহারার মাঝবয়সী এই আদিবাসী রমণী আমার বাড়িউলি, যাকে আমি মা ডাকি। ওনার গভীর প্রীতিপূর্ণ হৃদয়ের আলোটি স্পর্শ করেছিলাম। তাঁর গভীর আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার আমায় পরম আত্মীয়তার বাঁধনে বেঁধেছিল। রক্তের সম্পর্কহীন রমণীটিকে মা ছাড়া আর কোনও সম্বোধনে ডাকা সম্ভব ছিলনা। চাকরিসূত্রে ওনাদের বাড়িতে ভাড়া থেকেছি বছর দুয়েক। স্কুল ছেড়েছি সে বাড়িতে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে কিন্তু সে মাতৃমূর্তি ঠাই নিয়েছে হৃদয় গভীরে।
আমচরিতের এ পর্বে আমি মায়েদের কথাই বলতে চাই। পার্শ্ববর্তী রাজ্যের আরেক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল সাহিত্য চর্চার সূত্রে। প্রায় সমবয়সী সে কন্যাকে মনেমনে মা ডেকেছি, কী অফুরান ভালবাসবার ক্ষমতা সে মেয়ের; স্নেহ, যত্ন, আন্তরিকতা পূর্ণ ব্যবহার কোনওদিন ভোলবার নয়। তার সাহিত্যপ্রীতি, নারীর অধিকার নিয়ে ভাবনা, দৃঢ়চিত্ততা, আত্মবিশ্বাসে জাগ্রত থাকা, অপরকে জাগিয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে সে অনন্যা! এ ভাবেই তো অন্ধকার, বিবশ হৃদয়ে আলো জ্বালানো যায়। এই কাজটি তিনি করে চলেছেন।
আরও দুই রমণীকে মা সম্বোধন করি। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী হয়েও জনকল্যাণমুখী বহু কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। এক জনকল্যাণকামী সংগঠনের সম্পাদক তিনি। দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সহায়তা দান, চিকিৎসা পরিষেবা, রক্তদান শিবির, এম্বুলেন্স পরিষেবা, সুন্দরবন অঞ্চলে উন্নয়নমূলক নানা কাজ হচ্ছে তাঁরই সুচারু পরিচালনায়। কী চমৎকার শান্ত শ্রী তাঁর! সে সংগঠনের সাহিত্যনির্ভর মুখপত্রটি সম্পাদনা করেন। প্রতিটি সংখ্যায় সম্পাদকীয় লেখেন। পাঠে মুগ্ধ হই। এই মাতৃস্বরূপা রমণীর কাছে পেয়েছি অপার স্নেহ, উৎসাহ।
সদ্য চলে গেলেন আমার জন্মদাত্রী জননী। তাঁর সঙ্গে ছিল আমার টক-ঝাল-মিষ্টির সম্পর্ক। যার শাসনে এককালে তটস্থ থেকেছি, তিনিই আমার চোখের সামনে ধীরে ধীরে যেন এক কিশোরী হয়ে গেলেন। আরও সব মায়েদের মতো একটা সময় সবটা এনার্জি ঢেলে দিয়েছেন সংসারে, সন্তানে। কী চমৎকার রান্নার হাত। তাঁর হাতের পিঠেপুলি থেকে পায়েস, পুডিং, কেক সবই অতি সুস্বাদু। ধনেপাতা আর বড়ি দিয়ে লাউঘন্ট, ট্যাংরামাছ দিয়ে মুলো চচ্চড়ি, ফ্রায়েড রাইস, মাংস, জিভে জল এনে দেওয়া রান্না সব! নাতিদের জন্মদিনে নিজের হাতে কেক বানিয়ে নিয়ে আসতেন। এই কেক আর ফ্রায়েড রাইস অনেক পরে শিখেছিলেন। তাঁর হাতে বোনা সোয়েটার বা মেশিনে সেলাই করা জামা কাপড় পরেই আমাদের বড় হয়ে ওঠা। মনে পড়ে তাঁর সদাব্যস্ত হাতদুটি, গেরস্থালীর কাজ সেরেই উলকাটা, কুরুশ বা খুরপি হাতে বাগানে।
বাবা গেলেন, তাঁর সংসারের রীতিও ক্রমে পাল্টে গেল; মনে মনে একা হলেন। অন্য নিয়মে নিজেকে বেঁধে ফেললেন মা। ভোর তিনটেয় এলার্ম বাজলে বিছানা ছাড়া। প্রাতঃকৃত্যাদি সেরে যোগ ব্যায়াম, ধ্যান, প্রাণায়াম। তারপর অল্প কিছু মুখে দিয়ে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে পড়া। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা এ নিয়মের বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি নেই। সবকিছু ঘড়ি ধরে; খাওয়া, ঘুম, লেখাপড়া সব। এই ঘড়ির কাঁটার নিক্তিতে যাপনকে ভাগ করে নিয়ে চলা এ আমার সবচেয়ে অপছন্দের বিষয়! আরে বাবা! ঘড়ি কেন ছড়ি ঘোরাবে মানুষের জীবনের ওপর, তাহলে স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে? তুমি কি অফিসে যাবে? বেশ খটাখটি লেগে যেত। সত্তরোর্ধ বয়সে লেখালেখি শুরু হল। কবিতাও লিখতেন। কঠোর হয়েই বলেছি, ‘দ্যাখো মা, এত বয়সে এসে কবিতা হয়না? বিস্ময়, আকাঙ্খা, প্রেম, কৌতূহল, জিজ্ঞাসা ফুরিয়ে গেলে কবিতা হয়? আর যারা ওরকম ঘড়ি ধরে খায়, ঘুমোয় তাদের পক্ষে কবিতা লেখা কঠিন।‘ তার গম্ভীর মুখের দিকে চেয়ে বলেছি, ‘আচ্ছা বেশ, কবিতা লিখতে ইচ্ছে করলে লিখতে থাক কিন্তু গদ্য লেখ মন দিয়ে। তোমার ফেলে আসা সময়ের কথা লেখ।‘ একেবারে শেষপর্বে রোগজীর্ণ শরীরটি তাঁকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। স্মৃতিও বিলুপ্ত হয়েছিল। চলেও গেলেন। ইহজগতে আমার জন্যে উৎকণ্ঠিত হওয়ার মানুষটির চিহ্ন রইল না কোথাও! মনে মনে প্রার্থনা করি, ‘মাগো! যাত্রা শুভ হোক তোমার।‘
আত্মীয় অনাত্মীয় বহু মানুষের সঙ্গ, কত না আকস্মিক বা নৈমিত্তিক ঘটনার অভিজ্ঞতা জীবন পুরের পথিকের ঝোলায় এসে জমা পড়েছে। সেইসব আমজনতা আর ঘটনা নিয়েই আমচরিত কথার চলাচল। জন্ম ইস্তক যেন এক চলমান রেলগাড়ির জানালার ধারের আসনটিতে ঠাই পেয়েছি। এ স্টেশনে সে স্টেশনে গাড়ি থামে, ইনি ওঠেন তিনি নামেন। আশপাশের সহযাত্রীর সঙ্গে আলাপ-পরিচয়, ভাব বিনিময় হয়। এনার পরোটা-আলুরদম, আমার ভাত-ডিমের কারি সেও ভাগাভাগি, গল্পসল্প। মনে হল চিরকালের সখ্য বুঝি! কিন্তু বাস্তব তো তেমনটি হবার নয়। প্রত্যেকের স্টেশন বা গন্তব্য পৃথক। অবধারিত নেমে যেতে হয় নিজ নিজ স্টেশনে। আবার এক নতুন যাত্রী এসে পাশের সিটটিতেই বসলেন! গোমড়ামুখো সে লোকের সঙ্গে একটি বাক্যও হয়তো বিনিময় হল না কিন্তু বসে তো রইলাম পাশাপাশি!
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team
