বৃষ্টি সৃষ্টি করে, বন্যা করে ধ্বংস। বর্ষা নিয়ে এই দুটি কথা মনে আসে সহজে। ধ্বংসের পিছনেও যে সৃষ্টির কথা লুকিয়ে থাকে, বোঝা যায় গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি সমভূমিগুলোর গড়ে উঠার মধ্যে দিয়ে। যে কোনও অববাহিকার সঞ্চিত ও বৃষ্টির জল সব সময় নিম্ন খাতে প্রবাহিত হয়। জলের এটাই ধর্ম। এই খাতগুলোই ঝোরা, নদী এবং মহানদী। জল প্রবাহের পরিমাণ খাতগুলোর প্রস্থ ও প্লাবনভূমির এলাকা করে নির্দিষ্ট। জলের নিম্নগতি যেমন একটি ধর্ম, তেমনি অন্য ধর্ম প্লাবনভূমির ভাঙ্গা-গড়া। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অসংখ্য ক্ষুধার্ত পেটের জ্বালা মেটাতে চাই বেশি উৎপাদন, চাই অনেক অনেক জল। নদী বাঁধা পড়ছে পাড় ও বাঁধে; যা নদী নীতি বিরুদ্ধ, পাপ। সেকালে দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হলেও আধুনিক মানুষের পক্ষে তা আর সম্ভব নয়। এখন দেখা যায় নদীর পাড়ের ঢালে এবং বুকে রাতারাতি গড়ে ওঠে অসহায় মানুষের বসতি। এর ফলে সংকীর্ণ হয় নদীর পথ ও বুক। বর্ষায় বন্যা, পাড় ভাঙ্গা, বাঁধ ভাঙ্গা, ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়া এবং মৃত্যু এখন তাই অতি সাধারণ ঘটনা। ফি বছর বন্যা হয়, আর জলের সঙ্গে চলতে থাকে অর্থের খেলা। এতো সমাজ যাপন চিত্র। কিন্তু বন্যায় বনের অবস্থা কেমন হয় তা কি জানি সবাই?
বন হলো গিয়ে বর্ষার লীলাভূমি। পাড় নাই বাঁধ নাই খোলা আকাশের বুকে মুক্ত পাখি। না, একটু ভুল হলো – তীর বেঁধা পাখি। সমাজ জীবনের উন্নতির গোলা এসে পড়েছে বনের ভিতরেও। বনে বসবাস না করেও মানুষ নষ্ট করছে বনের শৃঙ্খলা। বেআইনি বনছেদন, মাটি খনন কিছুতেই প্রশমিত করা যাচ্ছে না ক্রমবর্ধমান চাহিদার চাপে। এই চাপ স্থানীয়, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক। প্রাকৃতিক নিয়মেই বহুতলীয় বন (High Forest) বৃষ্টির জলের নিম্ন গতিকে স্তিমিত করে এবং ভূ-ত্বকে জলের গতিকে (Surface runoff) দমিয়ে রাখে। বন ছেদনের ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বনের এই দুই বাস্তুতান্ত্রিক পরিষেবা (Ecological Service)। এর পরিণাম হচ্ছে ভয়াবহ। মাটির উপরে গাছের পাতার চাঁদোয়া সরে যাওয়াতে বৃষ্টির জল সরাসরি আঘাত করছে পাহাড় ও সমতলের মাটিতে। এর ফলে হচ্ছে ভূমিক্ষয়, নামছে ধস। প্রতি বছর বন্যার জলের সঙ্গে ধেয়ে আসছে হাজার হাজার মেট্রিক টন বালি কাঁকর পাথর। উঁচু হয়ে যাচ্ছে নদী বুক। নদীর দুই কূলে ছড়িয়ে পড়ছে বালি কাঁকর পাথর। প্রতি বছর চওড়া হচ্ছে নদী, ধ্বংস হচ্ছে দুপাশের শত শত হেক্টর বনভূমি ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। মাটির চরিত্র বদলে যাওয়ার জন্যে মরে যাচ্ছে হাজার হাজার গাছ। আবার বন্যায় ভেসে যায় বহু গাছ। শুধু বনভূমি নয়, নদী বুক উঁচু হয়ে যাবার জন্য নদী গতিপথ পরিবর্তন করে নষ্ট করে বনের রাস্তা কর্মচারির আবাস স্থল ইত্যাদি। তৈরি করে নতুন নতুন ভাবর (বালি, কাঁকরের) মরুভূমি।
যদিও বনের অভ্যন্তরে এমন হবার কথা নয়। নদীর কূল ভাঙ্গা ও গড়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠার কথা নতুন চর, যেখানে প্রক্রিয়া চলার কথা গাছের পর্যায়ক্রম উন্নতি (Plant Succession)। ঘাস থেকে গাছ, গাছ থেকে আরও বড় গাছ, সব শেষে উন্নীত হবে পরাকাষ্ঠা শালগাছ।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team