× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: শ্রাবণ, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
হিংসা নিরসনের পথ কোথায়?
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১১
সব্যসাচী দত্ত
ডাকে ডুয়ার্স
বন্যা এখন বনেও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে
বিমল দেবনাথ
দুয়ার বার্তা
ভুটানের শিল্পদূষণে ডুয়ার্সের গ্রাম আজ অসহায় রোগ-মৃত্যুর উপত্যকা!
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
কোচবিহার অনলাইন
কোচবিহারের প্যাডম্যান ভবঘুরে রাজা নীলাঞ্জন দত্ত
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
ক্রীড়া ও সংস্কৃতির শহর গড়ে তুলতে ক্লাবগুলির অবদান শিলিগুড়ির কেউ ভুলতে পারে?
নবনীতা সান্যাল
দিনাজপুর ডে আউট
ইসলামপুর মহকুমা উপসংশোধনাগার
মনোনীতা চক্রবর্তী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন | পর্ব - ৪
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর-পূর্বের চিঠি
হারিয়ে যেতে দেব কি আমরা ইতিহাসের বীরগাঁথা ও মায়ায় ঘেরা শনবিলকে?
মেঘমালা দে মহন্ত
পর্যটন
চিসাং ওয়াইল্ড উড হোমস্টে
সৌরভ রায়
নেট গল্প
যে দিন ভেসে গেছে
শাশ্বতী চন্দ
আমচরিত কথা
রেল রাহীর রচনা
তনুশ্রী পাল
পাতাবাহার
বর্ষায় লাউ চিংড়ি নাকি মেটে চচ্চড়ি? কোনটা খাবেন?
পাতা মিত্র
পুরানের নারী
অপ্সরা তিলোত্তমা
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী বিমল দেবনাথ

ক্রীড়া ও সংস্কৃতির শহর গড়ে তুলতে ক্লাবগুলির অবদান শিলিগুড়ির কেউ ভুলতে পারে?

নবনীতা সান্যাল
Krira o Sanaskritir Sohor Siliguri

পর্ব চার।

যে কোনো ইতিহাস আসলে হয় যৌথতার ইতিহাস অথবা ভাঙনের। একটা শহর গড়ে ওঠার পেছনে সেই সংঘবদ্ধতার ইতিহাসই স্হায়ী হয়। আর তাই শহরের কথা বলতেই আসে ক্লাব প্রসঙ্গ। এই ক্লাবগুলিই কোনো শহর হয়ে ওঠার, গড়ে ওঠার ইতিহাসকে ধরে রাখে। বাকি সবই চলমান, কেবলমাত্র স্থির চিত্র হিসেবে মূর্ত শহরের ক্লাবগুলি। ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে থেমে যেতে হয় সেই ক্লাবগুলির সামনে।

শৈলশহর দার্জিলিং সর্বকালেই লোকপ্রিয় আর চর্চিত শহর। এই শিলিগুড়ি শহর থেকেই পাহাড়ে ওঠানামা রাস্তা তৈরি প্রাথমিক ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়। আর তা করতে কম মাথা ঘামাতে হয় নি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারদের। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে তথা DHR তৈরিও হয়েছিল মূলত মালপত্র আনা নেওয়ার জন্য। মূলত তিনটি ট্রেন চলত তখন টাউন স্টেশন হয়ে। কর্মী হিসেবে যারা নিযুক্ত হলেন তাদের প্রায় সবাই বাঙালি। শৈলশহরের পাদদেশে শহর শিলিগুড়িতে সেই সব কর্মচারিদের একটা নির্দিষ্ট বা অস্থায়ী বাসভূমি ছিল। তখন মেরেকেটে হাজারখানেক লোকের বাস শিলিগুড়ি শহরে। দিনের শেষে বিনোদন আর ক্লান্তিকর একঘেয়েমি কাটানোর বিশেষ কিছু উপায় ছিলনা, একমাত্র ছিল একত্রিত হয়ে গল্পগুজব। সেও একসময় একঘেয়ে হয়ে উঠলে শহরের কিছু মানী মানুষ ক্লাব তৈরির পরিকল্পনা করলেন।

বর্তমান মহানন্দা সেতুর নিচে তখন ছিল রেল কোয়ার্টার। ছিল সাহেব বাংলো প্রভৃতি। পাশেই থাকতেন তিনধারিয়ার ডাক্তারবাবু সুরেন রায়। আর ছিলেন রেলের ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়গোপাল সেন। এছাড়াও ছিলেন মোক্তার কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, হরসুন্দর মজুমদার, ব‍্যবসায়ী মণ্মথনাথ সরকার, রেলওয়ে অফিসের বড়বাবু ধীরেন্দ্রনাথ সান‍্যাল প্রমুখ। এদের উদ‍্যোগে ১৯০১ সালে 'ফ্রেণ্ডস ইউনিয়ন' নামে একটি ক্লাব তৈরি হয়। ১৯০৯ এর সরস্বতী পুজোর দিনে সেই ক্লাবটিরই নতুন 'মিত্র সম্মিলনী' নাম ঘোষিত হলো। এই বঙ্গীকরনে নিজ ভাষার ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ এবং স্বকীয়তার পরিচয়টি রোপিত হয়ে আছে। তাই শতবর্ষ পেরিয়ে অক্ষুন্ন 'মিত্র সম্মিলনী'র আভিজাত্য ও গৌরব। বর্তমান হিলকার্ট রোড নিকটস্থ 'মিত্র সম্মিলনী'র জমিটি দান করেছিলেন ব‍্যবহারজীবি সুরেন্দ‍্রনাথ ভট্টাচার্য।

১৯১৪ থেকে ১৯৫৪ এই সময় কালের মধ্যে প্রচুর সংস্কার সাধিত হয় এই ক্লাবের। শুরু হয় দুর্গোৎসবের। তৈরি হয় মঞ্চ। প্রতি মাসে এখানে অন্তত একটি করে নাটক অভিনীত হতে থাকে। চল্লিশের দশকে এখানে প্রথমে তৈরি হয় 'বিজলী টকিজ'। পরে 'তৃপ্তি টকিজ' নামে এই মঞ্চে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। এইসময় থেকেই উৎসাহী সদস্যদের তৎপরতায় বিভিন্ন ইনডোর গেম-- দাবা,তাস,ক‍্যারাম প্রভৃতির প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজিত হতে থাকে। ১৯৫৩ সাল থেকে উচ্চাঙ্গ সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো। এই মঞ্চ ধন‍্য হয় ভীমসেন যোশি, উদয়শংকরের পদধূলিতে। এই মঞ্চ উদ্বেল হয়ে ওঠে তৃপ্তি মিত্র ও শম্ভু মিত্রের অভিনয়ে। এই মঞ্চই বারেবারে মুখরিত হয় বহূ প্রতিভার আর্বিভাবে। এসেছেন অনেকেই--আমজাদ আলি খান, সুচিত্রা মিত্র, দেবব্রত বিশ্বাস, উৎপল দত্তের মতো স্বনামধন‍্য শিল্পীরা। ষাটের দশকেই নতুনভাবে সেজে ওঠে এই প্রেক্ষাগৃহ। ২০০৬ থেকে পুনর্নির্মিত হয় প্রেক্ষাগৃহটি। বর্তমানে পাঁচশোর বেশি দর্শক আসন বিশিষ্ট প্রেক্ষাগৃহ এই ক্লাবের অন‍্যতম সাফল‍্য। আর আছে ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসব। শহরের সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে এভাবেই শতাব্দী প্রাচীন এই ক্লাব। বস্তুত, মিত্র সম্মিলনীর প্রেক্ষাগৃহের অভিনয় থেকেই শিলিগুড়ি শহরে নাট‍্যচর্চারও হাতেখড়ি। শিলিগুড়ি শহরের অগ্রগমনে এক উল্লেখযোগ্য সহযাত্রী 'মিত্র সম্মিলনী' ক্লাব।

শিলিগুড়ি শহরের আরও এক উল্লেখযোগ্য ক্লাব আর্যসমিতি। ১৯৪৮ সালের সরস্বতী পুজোর দিন এই ক্লাবের পথচলা শুরু। বর্তমানে দেশবন্ধু পাড়ায় এর অবস্থান। খগেন্দ্রনাথ সেন মহাশয়ের বাড়িতে এই ক্লাব তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় এবং ১৯৪৮এর ফেব্রুয়ারি মাসে ল‍্যাণ্ডেল এণ্ড ক্লার্ক কোম্পানির অফিস প্রাঙ্গনে এই ক্লাবের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কোম্পানির বারান্দায় এবং পরবর্তীকালে দেশবন্ধু পাড়ার ফণীন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় অস্হায়ী চালাঘরে দিনে শিশু বিদ‍্যালয় এবং সন্ধ্যায় আর্যসমিতির কাজকর্ম চলত। আর্যসমিতির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কালীব্রহ্ম মুখোপাধ‍্যায় এবং সভাপতি বিজয়কৃষ্ণ ঘোষ। 'আর্যসমিতি' নামকরণ করেন কেশব মুখোপাধ‍্যায়। ১৯৫০ সাল থেকে প্রতি পূর্ণিমা তিথিতে এই ক্লাবে পূর্ণিমা সম্মেলন আয়োজিত হতে থাকে। এখানেই বসত স্বরচিত কবিতা পাঠ, গল্প পাঠের আসর। এই সম্মেলন থেকেই ১৯৫১ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ শিলিগুড়ি শাখা'র যাত্রা শুরু। পঞ্চাশের দশকে তৈরি হয় আর্যসমিতি ব‍্যয়ামাগার। ১৯৫৩ সালের সরস্বতী পুজোর দিন ক্লাবভবনেই প্রতিষ্ঠিত হয় আর্যসমিতি গ্রন্থাগার। পরে সদস‍্যগণের দেওয়া অর্থে তৈরি হয় বর্তমান গ্রন্থাগার ভবন। সত্তরের দশকে ক্লাব সংলগ্ন জমি কিনে সেখানে তৈরি হয় শিশু ক্রীড়াঙ্গন। সমিতি সদস‍্যদের দেওয়া চাঁদা এবং জনগণের থেকে সংগৃহীত অর্থ ক্লাবের পক্ষ থেকে নির্মিত হয় বহুমুখী প্রয়োজন সাধনের জন্য একটি ভবন এবং অভিনয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সম্মেলন ইত্যাদি উপলক্ষ্যে একটি প্রেক্ষাগৃহ। আজও শিলিগুড়ির নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করে রয়েছে এই ক্লাব। শহরের সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসে ওতপ্রোত জড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী 'আর্যসমিতি'র নাম।

সংস্কৃতিচর্চার অনিবার্য অংশ কিন্তু ক্রীড়া সংস্কৃতিও বটে। এই প্রসঙ্গে পুরনো ক্লাবের কথা বলতে গেলে অবশ্যই উঠে আসবে সায়গল ইনসিস্টিটিউট-এর কথা। তিরিশের দশকেই রেলের কিছু উৎসাহী কর্মীর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল সায়গল ইনস্টিটিউট। এখানেও মঞ্চায়ন ঘটেছে বহু নাটকের। বর্তমান শিলিগুড়ির নিউ সিনেমা হল সংলগ্ন অঞ্চলে ছিল এই ক্লাব। সংলগ্ন মাঠটিতে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান। এখানেই বসত বিভিন্ন যাত্রার আসরও। 'সায়গল ইনস্টিটিউট' বন্ধ হয়ে যায় পঞ্চাশের দশকে। কিন্তু শহরকে দিয়ে যায় কিছু মনযোগী সংস্কৃতিকর্মী এবং সফল ক্রীড়াবিদ। এদের অন‍্যতম স্বনামধন‍্যা ভারতী ঘোষ। যিনি ষাটের দশকে ক্রীড়া প্রশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন দেশবন্ধু স্পোর্টিং ক্লাবে, এবং টেবিল টেনিস প্রশিক্ষক হিসেবে অসংখ্য সফল খেলোয়াড় তৈরি করেন। বাকিটা ইতিহাস। শিলিগুড়ির শহরের নামের পাশে 'টেবিল টেনিস শহর' এর তকমা লেগে যাওয়ার তাঁর অবদান অপরিসীম। শিলিগুড়ি জংশন সংলগ্ন রেলওয়ে ইনস্টিউটের নামও প্রসঙ্গত স্মরণীয়। সাংস্কৃতিক ক্লাব হিসেবে স্বল্পস্থায়ী হলেও এই ক্লাব সংস্কৃতিমনস্কতার একটি আবহ তৈরি করতে পেরেছিল।

শিলিগুড়ি শহরের ক্রীড়া চর্চার ইতিহাসে যে ক্লাবগুলির নাম চলে আসে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দেশবন্ধু স্পোর্টিং ক্লাব, অগ্রগামী সংঘ, বাঘাযতীন ক্লাব, দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাব, কিশোর সংঘ, বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, রামকৃষ্ণ ব‍্যায়াম চর্চাকেন্দ্র প্রভৃতি। দেশবন্ধু স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪৮ সালে। ক্লাবের বর্তমানে প্রেসিডেন্ট অনুপ বসু জানালেন ঐতিহ্যমন্ডিত এই ক্লাব আগামী বছর পঁচাত্তরে পা দেবে। এ বছর থেকেই শুরু হবে তাদের তার প্রস্তুতিপর্ব। এই ক্লাবে ষাটের দশকের শেষ দিকে কোচ হিসেবে যোগদান করেন ভারতী ঘোষ। মান্তু ঘোষ, গণেশ কুণ্ডুর মতো খেলোয়াড়দের উত্থান ঘটে তাঁর হাত ধরেই। তারপর আরও অনেক খেলোয়াড়ই এই ক্লাবের হাত ধরে সাফল‍্য পান। ক্লাবটির মুকুটে যুক্ত হয় একের পর এক সাফল‍্যের পালক। এদেরই হাত ধরে শিলিগুড়ি হয়ে ওঠে টেবিল টেনিসের শহর। সেই ট্র‍্যাডিশন আজও বহমান।

শিলিগুড়ি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আরও একটি ক্লাবের কথা এই সূত্রেই উঠে আসে। ক্লাবের নাম' অগ্রগামী সংঘ।' আশ্রমপাড়ার পাকুড়তলা মোড়ের কাছে এই অগ্রগামী সংঘের প্রতিষ্ঠা ষাটের দশকে। ১৯৬২ সালে ওই অঞ্চলের কিছু ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ -- বাসুদেব ভট্টাচার্য, পরিতোষ ভৌমিক, পরিমল ভৌমিক, বিভাস দত্ত, জীবন দে, সুদর্শন ঘোষ প্রমুখের উদ‍্যোগে এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠা। এলাকায় খেলাধূলাচর্চার উদ্দেশ্যে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হলেও সত্তর দশক থেকে এই ক্লাব মূলত শহরের ক্রিকেট চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কোচ হিসেবে এই ক্লাবে যোগ দেন পুলক বিশ্বাস। এছাড়াও আসেন জয়ন্ত ভৌমিক, প্রশান্ত সাহা প্রমুখ। ক্রমে কোচিং-এর দক্ষতা ও পরামর্শে, আধুনিক ক্রীড়া সরঞ্জাম-এর ব‍্যবহারে এই ক্লাব ও তাদের ক্রিকেটাররা আলোচনার কেন্দ্র হয়ে উঠতে থাকেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে। এই ক্লাব থেকেই ক্রিকেটার  ঋদ্ধিমান সাহার উত্থান ও অগ্রগতি। তবে তিনি ছাড়াও বহু ক্রিকেটার রয়েছেন সত্তর থেকে নব্বই বা শূন্য দশকেও যাদের অবদান ক্লাবকে অনন‍্য মাত্রা দিয়েছে। প্রসঙ্গত, পলাশ ভৌমিক, সন্দীপ সান‍্যাল, সুমন্ত চ‍্যাটার্জী, দেবব্রত দাস প্রমুখের নাম করা যেতে পারে। শিলিগুড়ি শহরের অগ্রগতি বিশেষ করে খেলাধুলা চর্চার ক্ষেত্রে, এই ক্লাবের অবদান স্মরণযোগ‍্য।

এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠার অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আরও দুটি ক্লাব -- বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব এবং রামকৃষ্ণ ব‍্যায়ামাগার। দুটিরই প্রতিষ্ঠা ১৯৪৮এ। হাকিমপাড়ার বিবেকানন্দ ক্লাবও মূলত ব‍্যায়ামচর্চার কেন্দ্রই ছিল। সেই বছরেই প্রতিষ্ঠিত হয় দেশবন্ধু পাড়ার 'দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাব'। খেলাধূলা চর্চায় এই ক্লাবগুলির অবদান অনস্বীকার্য । মূলত ষাটের দশক থেকেই আরও অনেক ক্লাব গঠিত হয়, যেখানে মূলত ফুটবল খেলার চর্চাই হতে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহানন্দা পাড়ার মহানন্দা স্পোর্টিং ক্লাব, বিধান মার্কেট নিকটস্থ বিধান স্পোর্টিং ক্লাব, হিলকার্ট রোড সংলগ্ন স্বস্তিকা যুবক সংঘ প্রভৃতি। সত্তরের দশকের সূচনায় মহানন্দা স্পোর্টিং ক্লাব ভেঙে আরও একটি ক্লাব তৈরি হয়, তার নাম 'কিশোর সংঘ'। এই ক্লাবগুলি দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট তখন শিলিগুড়ি শহরকে উদ্বেলিত, আন্দোলিত করে তুলেছিল।
সেইসব স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে স্বস্তিকা যুবক সংঘ আয়োজিত সাম্প্রতিক 'শিলিগুড়ি প্রিমিয়ার লিগ। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই ক্রিকেট লীগ আলোড়ন ঘটিয়েছে শিলিগুড়ি শহরে সন্দেহ নেই।

ক্রীড়া সংস্কৃতির কথা উঠলে আরও একটি ক্লাবের নাম বিশেষ করে উঠে আসে-- শিলিগুড়ি কলেজের নিকটবর্তী বাঘাযতীন স্পোর্টিং ক্লাব। ১৯৬৩ সালে বাঘাযতীন পার্কের মাঠে এই ক্লাবের সূচনা হয়। প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে অমল গুহ (মিন্টু গুহ), শ‍্যামল গুহ, মন্টু চাকী, প্রণব বিশ্বাস,বাসুদেব ঘোষ প্রমুখের অবদান স্মরণীয়। এই ক্লাব শিলিগুড়ি কলেজের বিপরীতে উঠে আসে আশির দশকে। এই ক্লাবেরই সুযোগ্যা কন্যা তথা সফল ক্রিকেটার রিচা ঘোষ। কথা হচ্ছিল ক্লাবের প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট শিবনাথ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের সঙ্গে। দীর্ঘ ষোল বছর এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত আছেন শিবনাথবাবু। তিনি জানালেন, এই ক্লাবের সামাজিক ও ক্রীড়ামূলক কর্মকাণ্ডের ভূমিকা নেহাত কম নয়। অ‍্যাথলেট হিসেবে এই ক্লাবে বর্তমানে কোচিং নিচ্ছেন ১৮৩ জন। কোচিং চলে সকালে, কলেজের মাঠে। ক্রিকেট কোচিং হয়  এনজেপি রেলওয়ে গ্রাউন্ডে। মহালয়ার ভোরে এই ক্লাব আয়োজন করে 'সম্প্রীতি দৌড়'। এই মশাল দৌড়ে অংশ নিয়েছেন অনেক প্রথিতযশা খেলোয়াড়। খেলাধুলা তো বটেই সামাজিক গঠনমূলক বিভিন্ন কাজেও এই ক্লাবের ভূমিকা অগ্রগণ্য।

এরকম আরও অনেক ক্লাবই ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সংস্কৃতির পাশাপাশি সামাজিক গঠনমূলক কাজেও এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। এদের মধ্যে রয়েছে --উপকার অ‍্যাথলেটিক ক্লাব, উইনার্স ক্লাব, ফ্রেণ্ডস ইউনিয়ন, শক্তিগড় পাঠাগার, শক্তি সোপান, সেন্ট্রাল কলোনি, সঙ্ঘশ্রী, বান্ধব সংঘ, অরুণোদয় সংঘ, সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, লায়ন্স ক্লাব প্রভৃতি। শিলিগুড়ি শহর গড়ে ওঠার পিছনে ক্লাবগুলির অনস্বীকার্য ভূমিকা এ শহরের মানুষ তা কখনওই ভুলে যেতে পারেন না।

ঋণ: পৃথ্বীরাজ সেন, গৌরীশংকর ভট্টাচার্য, অনুপ বসু, শিবনাথ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়,পাপুন ভট্টাচার্য।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : রণজয় রক্ষিত, রমেন্দ্রনাথ সান‍্যাল
ছবি সৌজন্য : মমি জোয়ারদার।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team