× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
×
সংখ্যা: শ্রাবণ, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
হিংসা নিরসনের পথ কোথায়?
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১১
সব্যসাচী দত্ত
ডাকে ডুয়ার্স
বন্যা এখন বনেও বিধ্বংসী হয়ে উঠেছে
বিমল দেবনাথ
দুয়ার বার্তা
ভুটানের শিল্পদূষণে ডুয়ার্সের গ্রাম আজ অসহায় রোগ-মৃত্যুর উপত্যকা!
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
কোচবিহার অনলাইন
কোচবিহারের প্যাডম্যান ভবঘুরে রাজা নীলাঞ্জন দত্ত
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
ক্রীড়া ও সংস্কৃতির শহর গড়ে তুলতে ক্লাবগুলির অবদান শিলিগুড়ির কেউ ভুলতে পারে?
নবনীতা সান্যাল
দিনাজপুর ডে আউট
ইসলামপুর মহকুমা উপসংশোধনাগার
মনোনীতা চক্রবর্তী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন | পর্ব - ৪
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর-পূর্বের চিঠি
হারিয়ে যেতে দেব কি আমরা ইতিহাসের বীরগাঁথা ও মায়ায় ঘেরা শনবিলকে?
মেঘমালা দে মহন্ত
পর্যটন
চিসাং ওয়াইল্ড উড হোমস্টে
সৌরভ রায়
নেট গল্প
যে দিন ভেসে গেছে
শাশ্বতী চন্দ
আমচরিত কথা
রেল রাহীর রচনা
তনুশ্রী পাল
পাতাবাহার
বর্ষায় লাউ চিংড়ি নাকি মেটে চচ্চড়ি? কোনটা খাবেন?
পাতা মিত্র
পুরানের নারী
অপ্সরা তিলোত্তমা
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী বিমল দেবনাথ

হারিয়ে যেতে দেব কি আমরা ইতিহাসের বীরগাঁথা ও মায়ায় ঘেরা শনবিলকে?

মেঘমালা দে মহন্ত
Sonbeel

‘সপ্তডিঙা মধুকর চারিদিকে জল

শ্রাবণের অবিশ্রাম মনসা-মঙ্গল’

অজস্র ছোটো ছোটো মাছ ধরার নৌকা বুকে শ্রাবণের ঘোর বর্ষায় জল থৈ থৈ সাজে উদ্দাম হয়ে ওঠে শনবিল। ‘শ্রাবণীর দিগম্বরা দখিনা বাতাসে’ ডিঙি নৌকাগুলোয় চেপে বিল হাওরের জাল-টানা দামাল ছেলেরা যায় জলে। তির তির কুপি লম্পের আলোয় রাত জাগে মঙ্গল কামনার সুর ‘রেখো মা মনসা তার সর্বাঙ্গ কুশলে’।

করিমগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৪৩ কিমি দূরে রয়েছে এক বিস্তীর্ণ জলাশয়, শনবিল। বর্ষাকালে সিংলা নদীর মাধ্যমে মিজোরামের পাহাড়ি এলাকা থেকে নেমে আসা বিশাল পরিমাণ জলরাশি প্রায় ৩৪৫৮ হেক্টর জমিকে করে তোলে জলমগ্ন। উত্তর দিকে রামকৃষ্ণ নগর, ডলু, আনিপুর, দক্ষিণে রাকেশ নগর, করিমগঞ্জ শহর, আর পশ্চিমের নগেন্দ্র নগর, ফাখুয়া গ্রাম ছাড়াও গোপিকানগর, অর্জুননগর, ভৈরবনগর, বসন্তপুর, শান্তিপুর, শ্রীরামপুর, বাংলাটিল্লা, শৈল নগর, বাগান টিল্লা, ফাকুয়া এরকম অজস্র গ্রাম রয়েছে এই শনবিল এলাকা ঘিরে।

শনবিলবাসীদের জীবিকা মরশুম নির্ভর। বর্ষা আসার আগে বোরো ধানের চাষ, আর বর্ষায় মাছধরা, নৌকা চালানো, নৌকা বানানো, মাছের জাল তৈরি, শুঁটকি তৈরি এরকম নানা কাজে হাজার হাজার পরিবার শনবিলকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে। ১২.৫ কিমি দীর্ঘ, ৩.৯ কিমি প্রস্থের অপূর্ব সুন্দর এই বিলের মোহিনী টানে আকাশের তর্জন গর্জন ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে জল কাদা ভেঙে বৃষ্টি মাথায় অজস্র মানুষ ছুটে আসেন বর্ষাকালে। নৌকা ভাড়া করে ছোটো ছোটো ঢেউ ভেঙে এগিয়ে চলেন চারপাশের অলৌকিক মায়া চোখের আলোয় মেখে নিতে নিতে।

হাঁটু কিংবা কোমর অবধি জলে ডুবিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে থাকা সারি সারি ঝাঁকড়া হিজল গাছ, কড়পাশের সবুজ গালিচা মোড়া টিলা, বন থেকে ভেসে আসা অজস্র পাখির ডাক, দল বেঁধে সাঁতার কাটতে থাকা হাঁসের গ্রীবায় পড়ন্ত সূর্যের লাল আভা, আর অপার জলরাশির ছলাত ছল শব্দ হাতছানি দেয় নির্জনতার নিজস্ব রহস্যময়তায়। কত গল্প, কত মিথ কিংবদন্তী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই শনবিলের আনাচে কানাচে। নৌকা রাতাবিলের দিকে সামান্য এগিয়ে গেলেই ডান পাশে কল্যাণপুরে চোখে পড়ে যমজ ভাইয়ের মত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সৈজা বাদশার মোকাম আর মোকাম-কালিবাড়ি।

“পূবেতে কাছাড়ের আইল / পশ্চিমে শনবিল

তার মাঝে করইন খেলা / বাবা সৈজা পির

হজরত শাহজালালের সঙ্গী তিনশো ষাট আউলিয়ার একজন শহিদ হামজা বা সৈজা বাদশার মোকামটি নিয়ে শনবিলের মানুষের মুখে মুখে ফেরে এই গান। পাশের কালিবাড়িটি ছিল যতি বাউলের সাধনস্থল। কথিত আছে সৈজা বাদশা এবং যতি বাউল ছিলেন অভিন্ন হৃদয় বন্ধু এবং বন্ধুর ইচ্ছেতেই যতি বাউল সন্ন্যাসীপাট্টা গ্রাম ছেড়ে এখানে এসে সাধন ভজন শুরু করেন । বাদশা-বাউলের বন্ধুত্ব ভালোবাসার গল্পের প্রাচীন সুবাস আজও এই দুই সাধনস্থলের আনাচে কানাচে ভেসে বেড়ায়। আপদ বিপদ ইচ্ছেপূরণের প্রত্যাশায় মোকামের প্রাঙ্গন ভরে ওঠে মোমের আলোয়, ধূপের ধোঁয়ায়। পরম শ্রদ্ধা ভরসায় সেসব জ্বালিয়ে দেন হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই ।

আরেকটু এগিয়েই সিপাইটিলা। স্থানীয় মানুষেরা বলেন, ‘সাহেবের টুপ’, অর্থাৎ সাহেবের টুপি। ছোট্ট একটা টিলার প্রায় পুরোটাই জলে ডুবে শুধু টুপির মতো চূড়োটা ভেসে থাকে বলেই হয়ত এমন নামকরণ। হাবিলদার রজব আলি এবং তার সহ সেনানীদের বীরগাঁথার নীরব স্মৃতি জাগানিয়া এই সবুজ ঘাসে ঢাকা সাহেবের টুপ। চট্টগ্রামে ইংরেজ সেনাবাহিনীর ৩৪ নম্বর নেটিভ বেঙ্গল পদাতিক বাহিনীর হাবিলদার ছিলেন রজব আলি। ১৮ই নভেম্বর ১৮৫৭ সিপাইদের এই ৩৪ নং রেজিমেন্ট ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে তাঁর নেতৃত্বে। প্রথমে তাঁরা ব্রিটিশ জেলখানায ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেন, তারপর ব্যারাকে হামলা চালিয়ে হাতি, গোলাবারুদ ও প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ করেন। সেই সময়ে সেনাদের আগ্রাসী রূপে বৃটিশ সৈন্যরা আতংকে আশ্রয় নিয়েছিল সমুদ্র-জাহাজে। রজব আলির নেতৃত্বে বিদ্রোহী চট্টগ্রাম সেদিন প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা ব্রিটিশ শাসনমুক্ত ছিল। ১৯ নভেম্বর রাতে সিপাহীরা পিলখানা থেকে হাতি নিয়ে সদলবলে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন।

বিদ্রোহীরা স্থির করেছিলেন যে, তাঁরা ইংরাজের রাজত্ব ছেড়ে স্বাধীন ত্রিপুরার নিরাপদ অঞ্চলে গিয়ে আশ্রয় নেবেন। কিন্তু চট্টগ্রামের কমিশনার ত্রিপুরা রাজার কাছে আগেভাগে সংবাদ পাঠিয়ে তাদের আটকানোর ব্যবস্থা করেন। তারা ত্রিপুরায় প্রবেশে বাধা পেয়ে বর্তমান করিমগঞ্জ জেলার লাতু মালেগড়ে আশ্রয় নেন। মালেগড়ে মেজর বিং সহ পাঁচ ইংরেজ সেনাকে তারা হত্যা করেন। মারা যায় বিদ্রোহী সেনাদলের তিরিশজন। মালেগড় যুদ্ধে বিধ্বস্ত রজব আলির দল সেখান থেকে মনিপুরের জঙ্গলের দিকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই যাত্রাপথে ক্লান্ত ক্ষুধার্ত সৈনিকেরা এই সিপাহিটিলায় এসে বিশ্রাম নিয়েছিল। আজও যখন মাছধরা ডিঙি কিংবা যাত্রীবাহী নৌকা এই সাহেবের টুপের সামনে জলপথে এগিয়ে যায় ক্লান্ত মাঝিরা এক পলকে ছুঁয়ে আসেন ইতিহাসের পাতা। হয়তবা নিজের অজান্তেই সুর ছড়িয়ে দেন শনবিলের ভেজা বাতাসে,

“যাইও না যাইও না ভাইরে

লাতুর বাজার দিয়া

শ’ইয়ে শ’ইয়ে সিপাই আইছইন

ইংরেজ খেদিয়া …”

অতীতের এরকম অসংখ্য বেদনাবিধুর গৌরবগাঁথা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শনবিলের আলো হাওয়া রোদ জল অন্ধকারের পরতে পরতে। বর্ষার মরশুমে এই অঞ্চলের মানুষগুলো যেন এক ঘোর লাগা জলপোকা-জীবনে মেতে ওঠে। জলের বুকে লালিত জীবন হারিয়ে যেতে চায় জলের বুকেই চিরস্থায়ী কোনো রহস্য রেখে। ঠিক যেমন করে হারিয়ে গেছিল নুপুর মাঝি কোনো এক মায়াবী রাতের ডাকে। কে যেন গভীর রাতে নাম ধরে ডেকেছিল নুপূর মাঝিকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ফাকুয়াটিলার ঘন জঙ্গল থেকে ধীর পায়ে নেমে এসে শনবিলের বুকে নৌকা ভাসিয়েছিল নুপূর মাঝি। তারপর হারিয়ে গিয়েছিল, আর ফিরে আসেনি। শনবিলের মানুষ বিশ্বাস করে স্বয়ং মহাদেব এসে ডেকে নিয়ে গেছেন তাঁকে। গভীর বিশ্বাস থেকেই আজও জ্যোৎস্নারাতে কোনো কোনো সৌভাগ্যবান জেলে মাছ ধরতে ধরতে দেখতে পান ভেসে যাচ্ছে নুপুর মাঝির নৌকা। দূর থেকে সোনার বৈঠা হাতে এক ঝলক দেখা দিয়ে আবার বাতাসে মিলিয়ে যায় মাঝি। এই দৃশ্য দেখার পর অবধারিত ভাবে সেদিন সেই জেলের জাল ভরে ওঠে প্রচুর মাছে। কৃতজ্ঞতায় শ্রদ্ধায় দু’হাত জোড় করে কপালে ঠেকায় জেলে ।

এমন এক মায়াবী রহস্যে মোড়া বিশাল জলাশয় কিন্তু ক্রমশই হারিয়ে চলেছে তার রূপ সৌন্দর্য বৈভব। উধাও হয়ে যাচ্ছে চারপাশের সবুজ ঘন বনানি, বছরের পর বছর গোটা মিজোরাম থেকে ধেয়ে আসা পলিমাটি অতি দ্রুততায় ভরাট করে দিচ্ছ শনবিলের বুক। ‘বুশমিট’ শিকারীদের উপদ্রবে কমে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা। তবু চেষ্টার ত্রুটি নেই এলাকার প্রবীণদের। ‘ডহরের ঘোর-লাগা গহনের টানে’ পরম মমতায় সরকারি সাহায্য প্রতিশ্রুতির কোনও তোয়াক্কা না করেই শনবিলকে ভালোবেসে, আঁকড়ে ধরে, অবলম্বন করে বেঁচে আছেন বংশ পরম্পরায়। শেকড় ছড়িয়েছেন গভীর থেকে গভীরতরে।

কিন্তু ইদানীং যেন বড় দ্রুত পালটে যাচ্ছে সবকিছু। নতুনের চোখ স্বপ্ন দেখে শনবিলের বিশাল জলরাশি পেরিয়ে অন্য এক ঝা চকচকে জীবনের। ডাক আসে অহরহ স্রোতে ভাসার। কিন্তু সেই ডাক নুপুর মাঝির মতো শনবিলের বুক নয়, সেই ডাক ভেসে যেতে বলে ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কালীদহে…’।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team