আলিপুরদুয়ার জেলার সলসলাবাড়িতে কালজানি নদীর ধারে অষ্টমী মেলার আয়োজন হয়ে আসছে সেই ১৯৩৬ সাল থেকে। প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু হলেও সময়ের সাথে সাথে মেলার শ্রী এবং কলেবর দুইয়েরই বৃদ্ধি ঘটেছে। বিগত দুই বছর মহামারীর কারণে মেলা বন্ধ থাকায় গত চৈত্র মাসে অষ্টমীর সকালে মেঘলা আকাশ এবং শিরশিরে ঠান্ডা উপেক্ষা করে পূণ্যার্থীদের ঢল নেমেছিল কালজানির তীরে মেলা প্রাঙ্গণে। লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল এই মেলায়। জাতীয় সড়কের পাশে এই মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেদিন ভয়ঙ্কর যানজট হয়েছিল। চৈত্রমাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ নদীতে ডুব দেয় পাপস্খলনের আশায়। কথিত আছে পিতা জমদগ্নীর আদেশে কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরাম তার মা রেণুকাকে কুঠারের আঘাতে হত্যা করে। পরে জমদগ্নীর রাগ প্রশমিত হলে পরশুরামের অনুরোধে পিতা জমদগ্নী, তার মা রেণুকার জীবন ফিরিয়ে দেন। কিন্ত মাতৃহত্যার অপরাধে পরশুরামের হাতে কুঠার আটকে যায়। জমদগ্নীর উপদেশে পরশুরাম ব্রক্ষকুন্ডে স্নান করলে তার পাপস্খলন হয় এবং কুঠার হাত থেকে খুলে পড়ে। সেইদিনটি ছিল চৈত্রমাসের শুক্লা অষ্টমী তিথি। পরশুরাম পৃথিবীর মানুষের পাপমুক্তির আশায় ব্রক্ষ্মকুন্ডের জল কুঠার দিয়ে ঠেলে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। এই পৌরাণিক কাহিনী শোনার পর মানুষের মধ্যে ধারণা হয় যে, এই তিথিতে নদীতে ডুব দিয়ে স্নান করলে পাপস্খলন হয়। তার থেকেই এই উৎসব এবং মেলার উৎপত্তি। এই মেলা নানা মানুষের ভীড়ে হয়ে উঠেছে বৈচিত্রের মিলনক্ষেত্র।
ডুয়ার্সের ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী মেলা হিসেবে চিহ্নিত সলসলাবাড়ির এই গঙ্গাবাড়ী মেলা। ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এই স্নানের গুরুত্ব আরোও একটি কারণে অপরিসীম, কারণ এদিন স্থানীয় মানুষ পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তিল তর্পণ করে থাকে এই ভেবে যে পূণ্য তিথিতে, পূণ্য স্নান করে তর্পণ করলে পিতৃপুরুষ জল পান। পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জল দেওয়ার পাশাপাশি অস্থি বিসর্জনও দেওয়া হয়। এই স্নানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেলায় আগত এক পূণ্যার্থী বলেন, যেখানে নদী আছে সেখানেই এই অষ্টমী তিথিতে পূণ্য স্নান হয়। স্থানীয় মন্দিরে এদিন বাসন্তী, গঙ্গা ও অশোকা অষ্টমীর পুজো হয়ে থাকে। সকাল থেকে পূণ্যার্থীদের ভিড় জমতে থাকে মেলা প্রাঙ্গণে। বহু পুরোহিতও আসেন তর্পণ করানোর জন্য।
মেলায় পূণ্য অর্জন ছাড়া রসনা তৃপ্তিরও সুবন্দোবস্ত থাকে। গ্ৰামীণ মহিলাদের হাতে বানানো মোয়া, মুড়কি, তিলের খাজা থেকে শুরু করে নিমকি, চিনির পুতুল যেমন পাওয়া যায় তেমনি জিলিপি, কচুরী, শিঙাড়ার গন্ধে ম'ম করে মেলা প্রাঙ্গণ। এছাড়া স্নান করে উঠে দই, চিঁড়ে, গুড় খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। খাওয়ার জিনিসের পাশাপাশি বাহারী রঙীন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে যায় দোকানীরা। তার মধ্যে থাকে চুড়ি, মালা, দুল এমনকি সংসারের উপযোগী বাসন, মাটির পাত্র, কাঠের হাতা, বেলন চাকি, বাচ্চাদের মনোহরণকারী রঙীন বেলুন, বাঁশি ইত্যাদি। অন্নপূর্ণা এবং বাসন্তীপুজো উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টমীর মেলা এলাকাবাসীর কাছে বড় আবেগের।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team