× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
উত্তরের বন্যপ্রাণ
ভীমরাজ উধাও!
অভিযান সাহা
কোচবিহার অনলাইন
হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত কোচবিহারে সৌন্দর্যায়নের তত্ত্বতালাশ
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
ডাকে ডুয়ার্স
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের বগলে রিয়েল এস্টেট রমরমা সর্বনাশের ইঙ্গিত নয়?
মমি জোয়ারদার
দিনাজপুর ডে আউট
খন গান
মনোনীতা চক্রবর্তী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন | পর্ব - ২
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
খোলা মনে খোলা খামে
হারিয়ে যাচ্ছে মায়া ও মায়াবৃক্ষ
শ্যামলী সেনগুপ্ত
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ৯
সব্যসাচী দত্ত
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
বিশ্বায়নের রসায়নে খাবি খাচ্ছে সাবেকি খুচরো ব্যবসার বিধান মার্কেট
নবনীতা সান্যাল
সুস্বাস্থ্যই সম্পদ
গরমের মোকাবিলায় পান্তাভাত পুষ্টিগুণে তুলনাহীন
ডঃ প্রজ্ঞা চ্যাটার্জি
উত্তরের বইপত্র
জলপাইগুড়ি শহরের মুখবন্ধ
গ্রন্থন সেনগুপ্ত
উত্তর-পূর্বের চিঠি
মনিপুরের এই জনজাতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এ রাজ্যের পক্ষেও অশনি সঙ্কেত
সৌমেন নাগ
সম্পাদকের কলম
সবুজ শীতলতার খোঁজে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
আমচরিত কথা
এক টুকরো ভারতবর্ষ দর্শন | আমচরিত কথা | পর্ব - ১৭
তনুশ্রী পাল
দুয়ার বার্তা
আলিপুরদুয়ার সলসলাবাড়ির ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী মেলা
শিঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায়
নেট গল্প
একটি তারার মাঝে
মুকুলিকা দাস
পাতাবাহার
ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল
পাতা মিত্র
পর্যটন
তাকদার সেনাছাউনি
তড়িৎ রায় চৌধুরী

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী চন্দ্রাশ্রী মিত্র

হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত কোচবিহারে সৌন্দর্যায়নের তত্ত্বতালাশ

তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
Heritage Takmaprapto Coochbehar

রাজার শহর কোচবিহার। গোটা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন ছোটো বড় নানান স্থাপত্যের নিদর্শন। যেগুলোতে ইতিহাস আজও কথা বলে কানে কানে। সেই কোচবিহার ১৯৫০ সালে রাজ্যের গরিমা হারিয়ে সামান্য একটা জেলায় পরিণত হল। অবহেলার দিন শুরুও সেই দিন থেকে। শুধু জেলার নয়, স্থাপত্যেরও। না সরকার, না কোচবিহারবাসী নিজে, নজর দিলনা কেউ। সকলেই নিরাপদ দূরত্বে থেকে এক অদ্ভূত উদাসীন হয়ে থাকলো এসব অমূল্য সম্পদ রক্ষা করার ব্যাপারে। ফল যা হওয়ার তাই হল। যত্ন ও নজরদা্রির অভাবে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে গেল অনেক ঐতিহ্য। তার জ্বলন্ত প্রমাণ নীলকুঠির রাজবাড়ি। যার একটি ইঁটও আজ আর খুঁজে পাওয়া যায়না।

১৯৭০ সাল। মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণের মৃত্যুর পর কোচবিহারের রাজপ্রাসাদ পড়ে থাকল অনাদরে, অবহেলায়। এর ঠিক বারো বছর পর ১৯৮২ সালে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কোচবিহার রাজপ্রাসাদ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ততদিনে চুরি হয়ে গেছে প্রাসাদের চারিদিকের লোহার সীমানা প্রাচীর, লুট হয়েছে রাজপ্রাসাদের ভেতরের বহু মূল্যবান জিনিস। আর ঐতিহ্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই কাজগুলো করেছে কোচবিহারেরই মানুষ। হাতেগোনা দুএকজন যে প্রতিবাদ করেনি তা নয়, কিন্তু সেটা এতই অল্পসংখ্যক যে সেই আওয়াজ কারোর কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। এর ফলে ইতিহাস যেমন বিপন্ন হয়েছে, চপেটাঘাত হয়েছে ঐতিহ্য শব্দটির মুখে। এরপর ২০১৭-এর ২৫ এপ্রিল কোচবিহার রাসমেলা ময়দানের একটি জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারকে হেরিটেজ সিটি ঘোষণা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হেরিটেজের তালিকায় একই সঙ্গে নবদ্বীপের নামও উঠে এসেছিল। 

তারপর থেকেই শুরু হয় চিন্তাভাবনা। ওয়েস্ট বেঙ্গল টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি প্ল্যানিং অ্যাক্ট ১৯৭৯ ও ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন অ্যাক্ট ২০০১ এই দুটোর ওপর ভিত্তি করে মূলত শহর কোচবিহারকে ধরে শুরু হল হেরিটেজের চিন্তাভাবনা। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর নগর উন্নয়ন বিভাগ হেরিটেজ কমিশনের মতন বেশ কয়েকটি দপ্তরের সহযোগিতায় কাজ শুরু হয়। কোচবিহারের প্রশাসনের তরফ থেকে একটি হেরিটেজ কমিটিও তৈরি হয়। বেশ কয়েক দফার  খড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়াররা এবং আর্কিটেক্টরা এসে কোচবিহারের নানান জায়গা ঘুরে দেখেন এবং ১৫৫টি স্থান ও স্থাপত্যের  একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। ২০১৯ এর ৫ জুলাই রাজ্য সরকার সেই তালিকাটি প্রকাশ করেন। 

প্রথমে শুধুমাত্র স্থাপত্যগুলোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হবে বলে চিন্তা করা হলেও পরবর্তীতে গোটা শহরটাকেই হেরিটেজ শহর হিসাবে তুলে ধরতে আগ্রহী হয় রাজ্য সরকার। হেরিটেজ শহর হিসাবে কী কী করতে হবে, সেই সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ১০ বছরের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ল্যান্ড ইউজ এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (এলইউডিসিপি) এবং ল্যান্ড ইউজার ম্যাপ এন্ড রেজিস্টার (এলইউএমআর)। হেরিটেজের কাজ হবে দু'রকম ভাবে। পুরনো বিল্ডিং সংস্কার বা রেস্টোরেশন এন্ড প্রিজারভেশন আর নতুন নির্মাণ। ২০২০ সালে পৌরসভাকে কোচবিহার টাউন প্ল্যানিং অথোরিটি করা হয়।

প্রাথমিক কাজগুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে কোচবিহারের হেরিটেজ লোগো। এতে একদম ওপরে রাজ আমলের বিল্ডিংয়ের আর্চ রয়েছে। মাঝে মদনমোহন বাড়ির গম্বুজ, আর একদম নীচে জলের ঢেউ কোচবিহারের দিঘিগুলোকে বোঝাচ্ছে। সেই সাথে হেরিটেজ ট্যুরিজম প্ল্যান, হেরিটেজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, হেরিটেজ ডিজাস্টার মিটিগেশন প্ল্যান বানানো হয়ে গিয়েছে। হেরিটেজ ট্যুরিজম এর উপর প্রমোশনাল অডিও ভিডিও ক্লিপ বানানো হয়েছে। তৈরি হয়ে গেছে কোচবিহারের ওপর একটি কফি টেবিল বুক যা অনুমোদনের জন্য পাঠানো আছে। এই বইটিতে কোচবিহারের কালচারাল হেরিটেজকে ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রমোশনাল ইভেন্ট হিসেবে গতবছর হওয়া  হেরিটেজ ম্যারাথন প্রতিবছর করার কথা ভাবা হচ্ছে। হেরিটেজ এর নিয়ম মেনে প্রথম পর্যায়ে শহরের ৪০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ কেবল এর কাজ শেষ হয়েছে খরচ হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর অপেক্ষা।

সংস্কারের কিছু কাজ ইতিমধ্যে হয়েছে বা শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পুরানো হেরিটেজ স্থাপত্যগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে রাজকীয় জলাধার সংস্কারের কাজ। যা করতে খরচ হয়েছে ৪৪.৭৪ লক্ষ টাকা। রামকৃষ্ণ মঠে বেশ কিছু কাজ হয়েছে। খরচ হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। রাজকীয় মুদ্রণালয় বা গভর্নমেন্ট প্রেসের রুফ রেস্টোরেশন, দেওয়াল, ভিতরের অংশ পরিষ্কার করে কাজ শুরু হয়েছে। এখানে ইলেকট্রিক্যাল এবং সিভিল দু ধরনেরই কাজ করা হবে। কদিন আগেই রাজমাতা ও ডাংগরআই মন্দির এর কাজ শেষ হয়েছে। চলছে দিলখুশ ভবনের কাজ।  ল্যান্সডাউন হল, কাউন্সিল হাউজ, এসডিও অফিস, ওল্ড ইলেকশন অফিস, মোতি মহল, ভিক্টর প্যালেস, লেবার অফিস, সাবিত্রী লজ,  ভিক্টোরিয়া কলেজ, ম্যাগাজিন রুম, জেনকিন্স স্কুল সবগুলোর প্রাথমিক কাজ হয়েছে। বহু বছর নষ্ট থাকার পর রাজবাড়ির পেছনের দিকের দ্বিতীয় গেটের পিলার সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে পিডাব্লুডি। সেখানেও হেরিটেজের নিয়ম মেনে কাজ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে মদনমোহনের রথটিকেও। 

নির্মীয়মান কাজগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-- কোচবিহারে ঢোকার মুখে খাগড়াবাড়ির দিকে তৈরি হচ্ছে হেরিটেজ ওয়েলকাম গেট। ১৭ মিটার উঁচু ১৬ মিটার চওড়া এই গেটটি তৈরি করতে ১ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে বাবুরহাট চেকপোস্টের কাছে তেপথিতে ৮ ফুট বেদীর উপরে ১৫ ফুট উঁচু বীর চিলারায়ের গ্র্যান্ড স্ট্যাচু তৈরির কাজ চলছে। সাগরদিঘি অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যানে সাগরদিঘি স্কোয়ারের চারপাশে যে রাজ আমলের অফিস বিল্ডিংগুলো রয়েছে তার সামনে হেরিটেজের আদলে দেওয়াল বানানো হয়েছে। হেরিটেজ তালিকাভুক্ত ৪১ স্থাপত্যের বাইরে প্লেক লাগানোর কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। সেখানে লেখা  সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে নতুন প্রজন্ম এইসব স্থাপত্যের সাথে যেমন পরিচিত হতে পারবে তেমনি পর্যটকদেরও বুঝতে সুবিধা হবে।

প্রতিবেদনের এরপরের অংশটি হলো প্ল্যান অনুযায়ী যে কাজগুলি ভবিষ্যতে করা হবে তার বিবরণ। যেমন দুটি অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান রয়েছে সাগরদিঘি এবং বৈরাগীদিঘিকে নিয়ে। দিঘির পাড়ে থাকবে সবুজ গাছের সারি, তারপর পেভার্স ব্লক। সাগর দিঘির দিকে ড্রেনের ওপর কোবল স্টোনের ফুটপাত হবে। ফুটপাত পেভার্স ব্লক রাস্তা সব একই লেভেলের হবে। রাস্তার দুদিকে জিগজ্যাগ প্যাটার্নে বসবে হেরিটেজ লাইট। সাগরদিঘির গ্রিলের উচ্চতা কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হবে। ভেতরে বসার জন্য হেরিটেজ আদলে কিছু বেঞ্চ বানানো হবে। ঘাটগুলো সংস্কার করে নতুনভাবে তৈরি করা হবে। এছাড়াও সাগরদিঘিতে চারটে নতুন ক্যান্টিলিভার ঘাট তৈরি হবে যা সাগর দিঘির ভেতরে যাবে কিন্তু দিঘির জল ছোঁবে না। সাগর দিঘি চত্বরে বিজ্ঞাপনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকবে। একটি হেরিটেজ ওয়াল তৈরি হবে। সেখানে গ্রানাইটের ওপর কোচবিহার সম্পর্কিত লেখা থাকবে।

একইভাবে বৈরাগী দিঘি অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যানেও সাতটি ঘাট সংস্কার হবে। প্রসঙ্গত বৈরাগী দিঘির সৌন্দর্যায়নের উদ্দেশ্যে এর আগে বিশাল পরিমাণ টাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর থেকে খরচ করা হয়েছিল অথচ সেই কাজের নমুনা ও হতাশাব্যঞ্জক পরিণতি দেখে শহরবাসীর মধ্যে যথেষ্ট অভিযোগ ও বিতর্কের সূচনা হয়েছিল। এবার জানা গেল সেই দিঘির জলে নিমজ্জিত ফোয়ারাটিকেই আবার চালু করার কথা হচ্ছে। ফোয়ারাটিকে সোলার এনার্জি দিয়ে চালানো যায় কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৈরাগী দিঘির চারপাশে প্রাত-সান্ধ্য ভ্রমনকারীদের  জন্য সেই সময় তৈরি হওয়া ওয়াক ওয়েটিও নাকি নতুন করে তৈরি হচ্ছে। ভেতরে বসার জায়গাও করা হবে। মদনমোহন বাড়ির ড্রেনের ওপর ফুটপাত ও কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। বৈরাগী দিঘির অপর দিকে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ বিল্ডিংটির সংস্কার হবে। সেখানের মাঠে তৈরি হবে একটি মুক্তমঞ্চ। যেখানে ১০০ জন মত দর্শক বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে।

জানা গেল, এছাড়াও শহরের  ৩০টি দিঘি সংস্কার করা হবে। তার মধ্যে সাতটি বড় দিঘি রাজমাতা, নরসিংহ ইত্যাদি চিহ্নিত করে তাদের সৌন্দর্যায়ন হবে। পুরনো বিল্ডিংগুলোর মধ্যে সাবিত্রী লজকে মিউজিয়াম তৈরির কথা চিন্তা করা হয়েছে। এছাড়াও একটি হেরিটেজ বুটিক হোটেল তৈরি করা হবে বলে জানা গিয়েছে। হেরিটেজ তালিকায় না থাকলেও জেডি হাসপাতালকে সংস্কার করে একটা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের মর্যাদা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের রাসমেলা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাবার জন্য ন্যাশনাল ট্যুরিজম ম্যাপে মেলাটিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজবাড়ী সংলগ্ন ইকো হেরিটেজ পার্কটি সংস্কার করা হবে। এতে ২ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে শহরকে হেরিটেজ হিসাবে পরিকাঠামগত উন্নয়নের জন্য আড়াইশো কোটির মত বাজেট রাজ্য থেকে অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। তার কিছু কাজ হয়েছে, কিছু হচ্ছে, কিছু হবে। কোচবিহারে হেরিটেজের কাজের জন্য আড়াইশো কোটি টাকার মতো বাজেট ধরা হয়েছে, ১৮ নভেম্বর ২০১৯-এ এসে এমনটাই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। প্রজেক্ট প্ল্যানিং করা হয়েছিল সেই অনুযায়ী। হেরিটেজের কাজের জন্য বাজেট আছে। সেই অর্থে আলাদা কোনো ফান্ড নেই। তাই হেরিটেজের এই কাজগুলো যেসব দপ্তর করেছে, টাকা সরাসরি সেই সব দপ্তরের কাছে চলে যাবে। শহরের বাইরেও বহু রাজ আমলের স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে। জেলাশাসকের নির্দেশে সেগুলোরও একটা তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে বিডিওদের। যাতে সেগুলোকেও রক্ষা করা যায়। 

দেবত্র ট্রাস্টের অধীনে থাকা দশটি মন্দিরে কাজ হবে। শহরের মধ্যে দু-দুটো বাস টার্মিনাস থাকায় এত বছর ধরে অসম্ভব নাকাল হতে হয়েছে শহরবাসীকে। অবশেষে খাগড়াবাড়ি চৌপথির পূর্ব দিকে শহরের বাইরে তেরো একরের মতো জমি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে এই বাস টার্মিনাস দুটোকে সরানোর কাজ শুরু হবে খুব শিগগিরই এমনটাই জানালেন জেলাশাসক। এই কাজের জন্য ২৫ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে।

একটু বর্ষাতেই আজকাল শহর ভেসে যায়। আগে প্রচুর বৃষ্টিতে জল জমলেও খুব দ্রুত নেমে যেত। কোচবিহারের জমির ঢাল পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। রাজ আমলের  ড্রেনগুলো লক্ষ্য করলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। সেই কথা মাথায় রেখে নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় কনটুর ম্যাপিং এর কাজ শেষ হয়েছে।  শুধুমাত্র নিকাশির কাজে খরচ হতে পারে দেড়শ কোটি টাকা। রাজ আমলে পুরনো স্থাপত্যগুলো যখন তৈরি হয়েছিল, সেই সময়টা ছিল চুন-সুরকির কাজ। বর্তমানে সেই বিল্ডিংগুলো সংস্কার করতে চুন, সুরকি, ঝোলা গুড়, মেথি ভেজানো জল এবং কিছু ক্ষেত্রে সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে এখানকার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সহ ঠিকাদার, রাজমিস্ত্রি সকলকে ট্রেনিং দেওয়ানো হয়েছে।

সব স্থাপত্যগুলো সংস্কারের কাজ হয়ে গেলে সেখানে রাতে জ্বলবে ফাসাদ ইলুমিনেশন। তাতে রাতের আলোয় আরো মোহময় হয়ে উঠবে স্থাপত্যগুলো। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে কিছু নতুনত্ব আনতে চাইছে জেলা প্রশাসন -  মহারাজা এক্সপেরিয়েন্স ও হেরিটেজ ওয়াক।  হেরিটেজ ওয়াকে গাইড থাকলেও পর্যটকদের জিআইএস ট্যাগ করা হেডফোন দেওয়া হবে। সেখানে জিপিএস থেকে তারা বুঝে যাবে  কখন কোন স্থাপত্যের সামনে আছে এবং তার ইতিহাস। হেডফোনে ভাষা বদল করে শোনারও সুবিধা থাকবে। কেবল তাই নয়, কলকাতা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে এক ধরনের সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি ঘুরে বেড়ায় সেভাবেই কোচবিহারে বিশেষ একটি রাস্তা দিয়ে এই ধরনের রাজকীয় ভ্রমন করানো সম্ভব কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

সুসজ্জিত হেরিটেজ শহর হিসাবে তুলে ধরতে পারলে অসম-বাংলা সীমান্ত শহর কোচবিহারের পর্যটনশিল্পে উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই। হেরিটেজ পরিকল্পনার দ্রুত ও সার্বিক রূপায়ন হলে এ শহরের পুরনো গ্ল্যামার পুনরুদ্ধার সম্ভব। নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়েও কোচবিহারবাসীদের তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। নিজের শহর সেজে উঠলে গর্ব হয় যে কোনও নগরবাসীর, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে অন্যত্র। এককালে সিটি অব বিউটি খ্যাত রাজনগর কোচবিহার আজ জনবিস্ফোরণ, যানবাহন ও জঞ্জালে যেভাবে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ হয়ে উঠেছে তার থেকে পরিত্রাণের উপায় কি মিলবে কিছু? শহর সম্প্রসারণের কিংবা আধুনিকীকরণের কোনও বাস্তবিক কারিগরি প্ল্যান কি আছে এখানকার কোনও নেতা আমলা কিংবা প্রশাসনের কাছে? নাকি হেরিটেজেই সব সমাধান হয়ে যাবে!

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team