× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
×
সংখ্যা: জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
উত্তরের বন্যপ্রাণ
ভীমরাজ উধাও!
অভিযান সাহা
কোচবিহার অনলাইন
হেরিটেজ তকমাপ্রাপ্ত কোচবিহারে সৌন্দর্যায়নের তত্ত্বতালাশ
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
ডাকে ডুয়ার্স
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের বগলে রিয়েল এস্টেট রমরমা সর্বনাশের ইঙ্গিত নয়?
মমি জোয়ারদার
দিনাজপুর ডে আউট
খন গান
মনোনীতা চক্রবর্তী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন | পর্ব - ২
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
খোলা মনে খোলা খামে
হারিয়ে যাচ্ছে মায়া ও মায়াবৃক্ষ
শ্যামলী সেনগুপ্ত
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ৯
সব্যসাচী দত্ত
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
বিশ্বায়নের রসায়নে খাবি খাচ্ছে সাবেকি খুচরো ব্যবসার বিধান মার্কেট
নবনীতা সান্যাল
সুস্বাস্থ্যই সম্পদ
গরমের মোকাবিলায় পান্তাভাত পুষ্টিগুণে তুলনাহীন
ডঃ প্রজ্ঞা চ্যাটার্জি
উত্তরের বইপত্র
জলপাইগুড়ি শহরের মুখবন্ধ
গ্রন্থন সেনগুপ্ত
উত্তর-পূর্বের চিঠি
মনিপুরের এই জনজাতি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এ রাজ্যের পক্ষেও অশনি সঙ্কেত
সৌমেন নাগ
সম্পাদকের কলম
সবুজ শীতলতার খোঁজে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
আমচরিত কথা
এক টুকরো ভারতবর্ষ দর্শন | আমচরিত কথা | পর্ব - ১৭
তনুশ্রী পাল
দুয়ার বার্তা
আলিপুরদুয়ার সলসলাবাড়ির ঐতিহ্যবাহী অষ্টমী মেলা
শিঞ্জিনী চট্টোপাধ্যায়
নেট গল্প
একটি তারার মাঝে
মুকুলিকা দাস
পাতাবাহার
ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল
পাতা মিত্র
পর্যটন
তাকদার সেনাছাউনি
তড়িৎ রায় চৌধুরী

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী চন্দ্রাশ্রী মিত্র

ভীমরাজ উধাও!

অভিযান সাহা
Bhimraj Udhao

দৈত্যকায় চেহারায় দাঁড়িয়ে ভীমরাজ। উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে চোখে পড়বার মতো মাকনা (দাঁতবিহীন পুরুষ হাতি) । প্রায় দশ ফুট আট ইঞ্চি ছুঁইছুঁই। ভারতীয় হাতিদের ক্ষেত্রে কাঁধের উচ্চতা দিয়ে নির্দিষ্ট হাতিটির উচ্চতা বিশ্লেষণ করা হয়। (আফ্রিকার হাতিদের ক্ষেত্রে এই উচ্চতা পিঠ দিয়ে বিচার করা হয়।)

বছর সাতেক আগেকার ঘটনা। মারাপুর চা বাগানের রাস্তা ধরে ফিরছি, সময়টা এক ভ্যাপসা গরমের দুপুর বেলা। ‘টুকরা’ বস্তি পেরিয়েই সামনে দেখি কিছু মানুষের জটলা। মাটির দিকে আঙুল দেখিয়ে কী বলাবলি করছে। তারই মাঝে চেনা মুখ, 'সোনম', আমায় হাত দেখিয়ে দাঁড়াতে বলল। 'অভিযান ভাই, বড় একটা ছাপ আছে, দেখেন না'। গাড়ি দাঁড় করিয়ে সামনে গিয়ে দেখি বিশাল বিশাল কয়েকটা গোলাকার আর তার সঙ্গে কয়েকটা ডিম্বাকার পায়ের ছাপ। দেখেশুনে যা মনে হল, এক অতিকায় কোনো হাতি। চা-বাগান আর জঙ্গলের সীমানার রাস্তা ধরে বহুদুর গেছে। তারপর কয়েকশো মিটার যাওয়ার পর রাস্তা ছেড়ে একটা শুকনো ঝোরা ধরে নেমে জঙ্গলে ঢুকে গেছে।  

আমার ব্যাগে সবসময় কম্পাস, ফিতে, পেন, ডায়েরি মজুত থাকে। সামনের ও পেছনের পায়ের গোলাই-এর মাপটা নিয়ে নিলাম। সামনের পায়ের গোলাই পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির চেয়ে একটু বেশী। সাধারণত সামনের পায়ের গোলাই-এর দুই গুণ হয় হাতির কাঁধের উচ্চতা। অর্থাৎ দশ ফুট আট ইঞ্চি প্রায়। এত বড় হাতি, তাও আবার এই অঞ্চলে গা ঢাকা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ব্যাপারটা আমায় কেমন খোঁচা দিল। মনের মধ্যে এক আবেগ কাজ করে চলেছে। নাঃ 'মহারাজ' এর একবার দর্শন নিতেই হবে।  

এরপরের তিন রাত কোনোমতে কাজ সারলাম রামশাইতে। চতুর্থ দিনে সকালে বাড়িতে ঢুকেই কোন মতে প্রাতরাশ সেরেই মারাপুরের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম। ওখানে পৌঁছতেই গত তিন দিন যাবৎ হাতিটির সমস্ত কাণ্ডকারখানা কানে এল। রান্নাঘরে মজুত রাখা চাল থেকে শুরু করে সেনানিবাসে ঢুকে ক্যান্টিন থেকে খাবার-দাবার সাবাড় করা, এমনকি গেট ভেঙে পাকা কাঁঠাল গাছ থেকে টেনে নামিয়ে খাওয়া, সবই শুনলাম। হাতিটি তখন মারাপুর ও তার সংলগ্ন চা-বাগান অধ্যুষিত অঞ্চলে এক বড়োসড়ো আতংক বলা চলে। চা-শ্রমিকদের দেওয়া নাম ‘ভীমরাজ’।

এই ভীমরাজের প্রথম আবির্ভাব ২০১৪ সালের এক কনকনে শীতে। মেচি নদীর পারের বাসিন্দারা পুরো শীতটাতেই রবি ফসলের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ধান আর সব্জি। রীমা ছেত্রী, শীতের এক কাকভোরে ঘরের পিছনে খস খস আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখে এক বিশাল হাতি তার সব্জি ক্ষেতে ঢুকে পেটপুরে ফুলকপি সাবাড় করছে। এত বড় হাতি সে আগে কোনদিনও দেখেনি। গাঁয়ের লোক লাইট নিয়ে পেছন পেছন হাতিটাকে তাড়া করেও লাভের লাভ হয়নি। এ হাতি নাকি কাউকে পাত্তাই দেয় না। গজ চালে চলে, হাজার লোক পেছনে ভিড়লেও ফিরে তাকায় না। হাতিটি পুরোপুরি ‘একোয়া’। একা একাই বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। বয়স হয়ে যাওয়াতে কিংবা সঙ্গিনী দখলের লড়াইতে হেরে গিয়ে এখন একাই ফাটাকেষ্ট সে।

এরপর থেকে চারিপাশে শুধুই ভীমরাজের কীর্তন শুনতে আরম্ভ করলাম। যেখানেই যাই না কেনো সবার কাছে তার তান্ডবলীলার কথাই শুনি। ধীরে ধীরে সে যেন এই অঞ্চলের এক ঘরোয়া বাসিন্দা হয়ে গেল। মানুষ অভ্যস্ত হতে আরম্ভ করল। সবাই বুঝতে পারল ভীমরাজ অতিকায় হলেও স্বভাবে ভারি শান্ত। মানুষের উপর তার রাগ নেই। শুধু পেটের জ্বালা মিটলেই হল। মেচি নদী পারের খয়ের, শিশু, জারুল, শিমূল এর জঙ্গল ছিল তার বাসস্থান। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে সে এই অঞ্চল জুড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। 

ভীমরাজের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল মারাপুর হয়ে টুকরা বস্তি যাওয়ার রাস্তাতেই। দিনদুপুরে বাবু লোহাগড় পাহাড় থেকে জল খেয়ে নেমে এসে মারাপুর চা-বাগানের রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল। হাটের দিন, টুকরা বস্তির লোকজনকে বাধ্য হয়ে প্রায় আড়াই মাইল পথ হেঁটে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়েছিল। তখনও কিন্তু ‘ভীমরাজ’ নামকরণ  হয়নি। লোকে তাকে ঘরভাঙা হাতি বলেই ডাকতো। আমার ক্যামেরায় বহু ছবি নিয়েছিলাম। মদ্দা হওয়া সত্ত্বেও তার দু'টো দাঁতই ছিলো না। বিশাল মাথা, পেল্লাই কান ও মোটা শুঁড়। বড় মিরগা বাঁধের হাতি ছিল সে। আমাদের হিমালয়ের পাদদেশে মিরগা ও কুমেরা বাঁধের হাতি প্রচুর আছে। কিন্তু ভীমরাজের শরীরের গঠন ছিল মনে রাখবার মত। সারা গায়ে, কপালে,  শুঁড়ে ছিলো তার অজস্র কাটা-ছেঁড়া। সে যে একাই গুণ্ডারাজ চালাত তা তার হাবে-ভাবেই স্পষ্ট ছিল। এত বড় মাকনা সমগ্ৰ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরেও আমি পাইনি। তার চেহারাই ছিল অদ্ভুত রকমের, কেমন জানি কার্টুন এর মতো। আমি যদিও তার নাম রেখেছিলাম 'ডাম্বো'। 

মেচি পারের দীনেশ সুব্বার একটি পোষ্য বাদামি কুকুর ছিল। স্বভাবে ছিল ভারি ছ্যাঁচড়া। মানুষ, গরু, হাতি, বাঘ কোনও কিছুই তার হাত থেকে রেহাই পেত না। দেখলেই খ্যাঁক খ্যাঁক শুরু। ভীমরাজও ছাড় পায়নি তার হাত থেকে। সে এক মজার ঘটনা। বর্ষায় মেচি নদী ফুলে ফেঁপে ওঠে। আর সেই বর্ষার ঘন স্রোতে মেচিকে যে চিনতে পারবে না, সে ভুল করবে। এরকমই এক প্রবল বর্ষাস্নাত মেচি নদীতে বিকেলের দিকে দিব্যি স্নানে ব্যস্ত ছিল ভীমরাজ। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। ছবি তুলতে ব্যস্ত বাচ্চা বুড়ো সকলেই। ভীমরাজ শুঁড় ওলটপালট করে সারা গায়ে জল ছিটিয়ে নিচ্ছে। এমন সময় কোথা থেকে দীনেশের ছ্যাঁচড়া কুকুরটা এসে হাজির। সঙ্গে আবার তার মস্তান গ্যাং। হাতি দেখে তো তার চক্ষু চড়কগাছ। পিঠের লোম খাঁড়া করে সেই যে চিৎকার শুরু করল,এক্কেবারে থামলো যতক্ষন না পর্যন্ত ভীমরাজ জল ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠে আসে। সে দৃশ্য ভোলবার মত ছিল না। অত বড় পাহাড়ের মত একটা হাতি, যার সামনে কুকুরটা তো চুনোপুঁটি। ভীমরাজ কান খাঁড়া করে তার খ্যাঁকখ্যাঁকানি শুনে যাচ্ছে। অবশেষে 'নে বাবা তোর খ্যাঁক খ্যাঁকানি তোর কাছেই থাক' বলে জঙ্গল পথে রওনা হল।  

সেদিন আমার ক্যামেরায় ভীমরাজকে অনেক্ষণ ধরে বন্দী করে চলেছি। নদী চরের 'কাশিয়া' ঘাস খেতে ব্যস্ত সে। এমন সময় সেই কুলক্ষণে কুকুর ঘেউ ঘেউ করতে করতে দৌড়ে এসে সোজা ভীমরাজকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। খাদ্যের শান্তি ভগ্ন, এবার ভীমরাজ গেলো চটে। হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে কান খাঁড়া করে উল্টো কুকুরটিকে চার্জ করে বসল। ব্যাস প্রা্ণরক্ষায় কুকুর তার মালিককে না পেয়ে সোজা আমার কাছে। তারপর তো আপনারা বুঝতেই পারছেন, না হলে এ লেখা আর হত না। 

কিন্তু ভাবতেও অবাক লাগে এই চুনোপুঁটি কুকুরের তান্ডবেই নাকি ভীমরাজ তার রাজত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছে। অবশ্য তা লোকের কথা, আমার নয়। আমি একথা মানতে নারাজ। কুকুরটি বেজায় সাহসী ছিল বটে। বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতো, খরগোশ, বেজি, বনমোরগ ধরেও খেতো নাকি শুনেছি। দীনেশ বলেছিল, পরে বেশ কয়েকবার সে ভীমরাজের সামনাসামনিও হয়েছিল। একটা সময়ের পর থেকে দুজনই দুজনকে বেশ একটা মেপে নিয়েছিল। হয়ত একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিলো দুজনের মধ্যে। অবাক হলাম শুনে যেদিন দীনেশের কুকুরটিকে চিতাবাঘে নিয়ে গেলো। কিন্ত তার চেয়েও বেশি অবাক কান্ড, ঠিক পরের দিন থেকে ভীমরাজকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। কোথায় যে উধাও হয়ে গেল, কে জানে।

শুনেছি এখন ভীমরাজ দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে কারশিয়াং-এর পাদদেশের জঙ্গলগুলোতে। ধান আর ভুট্টার ঋতুতে তাকে দেখা যায় বাগডোগরা কিংবা পানিঘাটার জঙ্গলে। কখনও সে একাকী আবার মস্তিতে এলে দলের সাথে সাথে ভিড়ে যায়। পুরুষ হাতিদের স্বভাবই তাই, যতদিন শরীর, জুত চাঙ্গা থাকে ততদিন সে নিজের দৈহিক চাহিদায় মাদীদের পেছন পেছন ঘুরঘুর করে, প্রজনন করে আবার দলে ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। ভীমরাজও তাই, আর বিশেষ করে মস্তিতে এলে তো কথাই নেই। মস্তির সময় তো মদ্দা হাতিরা বিপদ নিয়ে খাবার সাবাড় করবে, তছনছ করবে, ধান খাবে, ভুট্টা খাবে, লোক তাড়াবে, উদ্দেশ্য একটাই মদমত্ত অবস্থায় এসে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। প্রতিটি মদ্দার জীবনে মস্তির দশা আসে, তবে প্রত্যেকের সময় আলাদা আলাদা। প্রকৃতির কী নিয়ম, সবাই একসাথে মস্তির দশায় এলে তো নিজেদের মধ্যে মারামারি করে মরে যাবে! তা কিন্তু হয় না, কান ও চোখের মাঝামাঝি টেম্পোরাল গ্রন্থি থেকে এক ধরণের তরল, চ্যাটচ্যাটে রস বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বেড়িয়ে আসে। যাকে বলে মস্তি। যাই সব কিছু একজায়গায় বললে গুলিয়ে যাবে। হাতিদের মস্তি নিয়ে আলোচনা পরে হবে। তবে এর সাথে অবশ্যই থাকবে ভীমরাজ যার বর্তমান নাম ডাম্বো বা ঢঙ্গি বাবা। সম্ভবত এতো বড় মাকনা আমাদের উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে এখনও নথিভুক্ত নেই।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team