× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: জানুয়ারি, ২০২২
সম্পাদকের কলম
উত্তরের মঙ্গল কামনা
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
পর্যটনের ডুয়ার্স
কাশ্যম কামান
নন্দিনী চক্রবর্তী অধিকারী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
সততা ও সহকর্মীদের সখ্যতা ব্যাংকের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধকে অটুট রাখতো। পর্ব - ৭
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ৩
সব্যসাচী দত্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট। পর্ব - ১৫
সুজিত দাস
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ‘বইমেলা’ শুরু কিন্তু এই মুর্শিদাবাদেই
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
কোচবিহার কড়চা। এক অভাগা মহকুমা শহরের নাম তুফানগঞ্জ
অমরেন্দ্র বসাক
নিয়মিত কলম
ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব - ৪। খুনের অপরাধী যখন হেরে যায় মেডিক্যাল সায়েন্সের কাছে
নিখিলেশ রায়চৌধুরী
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব – ১১। খাতা কালি কলম
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? এক অন্য জয়ন্তীর কথা
শৌভিক রায়
পুরানের নারী
বেদবতী সীতা
শাঁওলি দে

সততা ও সহকর্মীদের সখ্যতা ব্যাংকের প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধকে অটুট রাখতো। পর্ব - ৭

প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
Gramin_Bank_7

মাদারিহাটের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক শ্রী প্রহ্লাদ ঘোষ। তার সঙ্গে প্রদীপ দাস সাহেবের সুসম্পর্ক ছিল। উনি কৃষি ঋণ সংক্রান্ত কাজ খুব ভাল জানতেন। ১৯৮৩-৮৪ সনে বেশ কিছু অফিসারকে ওই শাখায় ট্রেনিং নিতে পাঠানো হয়। দাস সাহেবের নির্দেশে এক রোববার সকাল দশটায় মাদারিহাট পৌছে গিয়েছিলাম। ওনার বাড়িতে আহার সেরে একটা লড়ঝড়ে বাইকে চেপে টোটোপাড়ায় গিয়েছিলাম। বাড়ির খোঁজে। শাখা উদ্বোধন করতে হবে, সরকারের চাপ ছিল।

রাস্তা খুব খারাপ। মাদারিহাট থেকে টোটোপাড়ার দূরত্ব ২৪.২ কিমি। পথে বড় পাহাড়ী নদী চারটে। এছাড়াও ছোট ছোট কয়েকটি শীর্ণকায়া নদী পার হতেই হবে, তাদের পাথুরে বুকের ওপর দিয়ে। কোনো সাঁকো, পুল, ব্রীজ কিছুই নেই। বর্ষাকালে জল একটু বাড়লে বাস বন্ধ, যাতায়াত বন্ধ। সমতল ছেড়ে হান্টাপাড়া চা বাগান একটু চড়াই। শ্রমিকদের কোয়ার্টারের মাঝ দিয়ে রাস্তা। ঢালু একটা জায়গায় নদী পার হওয়ার কিছু পরেই ঘন সবুজ বনাঞ্চল। শুকনো নদী ঝোরা ধুলো উড়িয়ে পার হয়ে এলাম টোটোপাড়া-বল্লালগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে। স্থানীয় মানুষ দু-এক ঘর মাত্র। একটু পরে টোটোপাড়া প্রবেশের মুহূর্তে এক বিশাল পাহাড়ী নদীর বুক ঠেলে প্রায় চার কিমি পথ পেরিয়ে এসেছিলাম। পৌছলাম টোটোপাড়া বাজারে।

প্রহ্লাদবাবু কথা বলে রেখেছিলেন। একটা কাঠের দোতলা বাড়ি বাজারের মাঝে। মালিকের সঙ্গে আলাপ হল। ওনাকে বলেছিলাম আগামী একমাসের মধ্যে শাখার উদ্বোধন হবে। ওই শাখার জন্য ক্যাশিয়ার পদে সরকারের নির্দেশে এলাকার একমাত্র শিক্ষিত ছেলে শ্রী ভক্ত টোটো নির্বাচিত হয়েছিল। এ জীবনে যত ভাল মানুষের সঙ্গলাভ করেছি তাদের মধ্যে অন্যতম সেই ছেলেটি। আজও সেই সম্পর্ক একই রকম উষ্ণ ও গভীর। স্কুল শিক্ষক ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য শ্রী হরেন শৈব মহাশয়ের সাক্ষাত পেয়ে অনুরোধ করেছিলাম উদ্বোধনের দিন কিছু গ্রাহক নিয়ে উপস্থিত থাকতে। উনি বলেছিলেন “এটা গরীব আদিবাসীদের গ্রাম। ওরা কী ভাবে ব্যাঙ্কের খাতা খুলবে বুঝতে পারছি না। তবুও আমি চেষ্টা করব”। তখন পাঁচ টাকা আর পরিচয়কারীর সাক্ষর দরখাস্তের ফর্মে থাকলেই ব্যাঙ্কে সেভিংসের বই খোলা যেত, KYC-র কড়াকড়ি ছিল না। পরে হরেনবাবুর বাড়িতে রাত্রিবাসও করেছি। তখন টোটোপাড়ায় মোট জনসংখ্যা ছিল ২৪০ এবং একসময় লোকসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছিল। ১৪ই মার্চ ২০২১-এ ফের একবার টোটোপাড়ায় গিয়েছিলাম। ভক্ত বলেছিল বর্তমানে টোটোরা সংখ্যায় বেড়ে হয়েছে ১৬৫০ জন। টোটোরা প্রকৃতির পূজারী। এককালে ওদের দখলে দু-হাজার একর জমি ছিল। বাইরের কিছু মানুষ বে-আইনি হস্তান্তরের সুযোগ নিয়ে টোটোদের জমি দখল করে টোটোপাড়াতেই দিব্যি জাঁকিয়ে বসেছিল। টোটো মেয়েদের সঙ্গে নেপালি ছেলেদের বিয়ে নিয়ে একদা অশান্তি হতো, এখন সমাজ কিছুটা মেনে নিয়েছে। এ কাহিনী শোনাব, পরে একদিন ।

১৯৮৪ সনের বর্ষামুক্ত এক সকালে এডিএম শ্রী দীপঙ্কর মুখোপাধ্যয় আইএএস-কে সঙ্গে নিয়ে টোটোপাড়া পৌছলাম শাখা উদঘাটনের জন্য। স্থানীয় টোটোরা বনের ফুল দিয়ে তোড়া বানিয়ে আমাদের স্বাগত জানিয়েছিল। ফিতে কেটে, প্রদীপ প্রজ্বলন করে শাখার দ্বার উদঘাটন হয়েছিল। ভক্ত টোটো ওই শাখায় চাকরিতে ষোগদান করায় আমাদের সুবিধাই হয়েছিল। প্রায় কুড়ি বছর পর সেই এডিএম ষখন প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তখন এক সরকারি অনুষ্ঠানে শিলিগুড়িতে দেখা হয়েছিল। কাছে ডেকে নিয়ে অনেক পুরনো গল্প করলেন। আমাকে অবাক করে দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন “টোটোপাড়াতে ব্যাঙ্কটি কেমন চলছে”?

সেদিন ফেরার পথে এডিএম মুখার্জি সাহেব বললেন “হাসিমারাতে অল্প কাজ আছে সেটা সেরে ফিরব”। আমি তো খুশি, তখন হাসিমারার ম্যানেজার সুশান্ত ব্যানার্জী আর ছিল বাপি (অরবিন্দ সিদ্ধান্ত), সিদ্ধার্থ ঘটক এবং মতিয়ার, ওদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে ভেবে। ওদের মেসে বহুদিন খেয়েছি আর থাকতাম সুশান্তর বাসায়। কাজের শেষে প্রচুর আড্ডা জমত। সেদিন মুখার্জি সাহেব এসে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে হাজির হয়ে পঞ্চায়েত সদস্যকে ডেকে পাঠালেন। বুঝলাম ওখানে একটা দমকল কেন্দ্র হওয়ার কথা, কিন্তু কিছু মানুষজন সেই জমি জোর করে দখল করে রেখেছে। মাত্র দুটি পুলিশ সাথে নিয়ে ওই মানুষদের তিনি বললেন জায়গা খালি করে দিতে। পুলিশকে বললেন ব্যবস্থা নিতে। যতদূর জানি পরে সেখানে দমকল কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। আমাদের হাসিমারা ব্রাঞ্চের ছেলেরা সেদিন আমাকে ভয় দেখিয়েছিল, “তুমি উচ্ছেদকারীদের দলে ছিলে, তোমাকে স্থানীয় লোকজন পরে যদি হাতে পায় তবে পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখাবে”।

কাছাকাছি এলাকায় জয়গাঁ ও কালচিনিতেও আমাদের মেস ছিল। তাপস মৈত্রের নেতৃত্বে জয়গাঁর মেসটি বড়ই শ্রীহীন ছিল। জয়গাঁতে পছন্দমত বাড়ি ভাড়াও পাওয়া যেত না। মেসে মশারির চার কোনার দড়ি কোনোদিন বোধহয় খোলা হতো না। কিন্তু ওই সব মেসের বোর্ডাররা ছিল প্রাণবন্ত, বন্ধুবৎসল। ওখানে রাতে থাকলে ফুন্টসোলিং-এ সিনেমা দেখা আর চুটিয়ে আড্ডা চলতো গভীর রাত পর্ষন্ত। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে চলত ব্যাঙ্ক বিষয়ে নানা কথা। একটা কথা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলতে পারি আমাদের সতীর্থরা কাজে কোনোদিন খুব একটা অবহেলা করত না। কী করে প্রফিট বাড়তে পারে সে আলোচনা কম হতো না মোটেই। আর কোনো কর্মীর সামান্য পদস্খলন হলেই তাকে বয়কট করাটাই একরকম রেওয়াজ ছিল।

একবার সস্ত্রীক আলিপুরদুয়ার থেকে বাসে জলপাইগুড়ি ফিরছিলাম। কালচিনিতে বাস থামতেই আমি ছুটলাম ব্যাঙ্কের ভাইদের সঙ্গে দেখা করতে। ফিরে এসে দেখি স্ত্রীসহ বাস চলে গেছে। কিছুক্ষন পরে অন্য একটা বাসে এসে হাসিমারায় নেমে দেখি সহকর্মীদের সঙ্গে আমার স্ত্রী গল্পে মেতে আছে। পরে একটা বাসে জলপাইগুড়ি বেশ দেরিতেই ফিরেছিলাম। পাহাড়ে টুরে গেলে শিলিগুড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যেত, জলপাইগুড়ি বা কোচবিহার যাবার গাড়ি আর পাওয়া যেত না। সুশান্ত, তপন, জয়ন্ত বা অসীমের বাড়ি থেকে যেতাম। পরে বেশ কয়েকবার দুর্গেশের বাড়িও থেকেছি। অসীমের সাথে দীর্ঘক্ষণ ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ইসু নিয়ে আলোচনা চলত। ওর একটা স্পেশাল কুকার ছিল, রাত ১১টায় নানা আনাজ সহযোগে তাতে ভাত চাপানো হত। গরম সেদ্ধভাত ঘি দিয়ে আনন্দের সঙ্গে খাওয়া হত। অসীমের সেই বোহেমিয়ান জীবন যাত্রা কোনোদিন বদলে যায়নি বলেই জানি।

তখন কোচবিহারে ছিলাম। একদিন সকালেই দাস সাহেব বললেন “রম্বীবাজার ব্রাঞ্চ থেকে ফোন এসেছিল। ওখানে কিছু একটা অঘটন ঘটেছে। সকালে ভল্ট খুলে দেখা গেছে টাকা নেই”। এটাও বলেছিলেন “লোকাল পুলিশ ফাঁড়িও ব্যাপারটা জানে। গিয়ে দেখুন কী হয়েছে। আপনার রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেব”। রম্বী পৌছাতেই বেলা গড়িয়ে গিয়েছিল। শুনেছিলাম পরাশরের কাছে অফিসিয়ালি চাবি  ছিল। সোমবার সকালে সেফ খুলে দেখা গিয়েছিল সেটা ফাঁকা। টাকা খুব কমই ছিল। যদিও তখনকার দিনে পাঁচ হাজার সর্বার্থেই বিপুল টাকা। ছুটেছিল মালবাজারের বাড়িতে টাকা যোগাড় করতে। সন্ধ্যার মধ্যে পরাশর টাকা নিয়ে ফিরে এসেছিল। ক্যাশ মিলে গিয়েছিল, কাজেই ব্যাঙ্ক কোনো ব্যবস্থা আর নেয়নি। আমি রাতে শিলিগুড়ি ফিরে ট্রাঙ্ক-কল করে সম্পূর্ন ঘটনা দাস সাহেবকে জানিয়েছিলাম। সেদিন সবাই বুঝেছিল আসল শয়তানটি কে? কিন্তু তবুও চুপ করে থাকতে হয়েছিল। পরবর্তী কালে পরাশর ভাল ও দক্ষ কর্মচারী হিসেবে সুনাম অর্জন করে এবং এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছে। ওর সঙ্গে কয়েক যুগ দেখা হয়নি, তবুও মনের কাছেই আছে। ওদের চেষ্টা করেও ভোলা যাবে না।

কিছুদিন পর সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের উমাচরনপুর শাখায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। এ ক্ষেত্রে দোষী আর্মগার্ড পালিয়েছিল। অফিসিয়ালি ক্যাশিয়ারের কাছেই চাবি ছিল এবং টাকার পরিমাণ এক লক্ষ টাকার বেশি। তপাশীষ দে ছিলেন এল.ডি.এম। টাকা যোগাড়ের সবরকম চেষ্টা ব্যর্থ হলো। মনে আছে রিজিওনাল ম্যানেজার সমর মুখার্জী তার গলার সোনার চেনটা দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ক্যাশিয়ার ভদ্রলোক সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হলো। ব্যাঙ্কের সবাই জানতো ক্যাশিয়ার নির্দোষ ছিল। আমাদের ব্যাঙ্কের সহকর্মীরা বলেছিল এতবড় ব্যাঙ্কের বিশাল ইউনিয়ন ওদের একলক্ষ টাকা জোগাড় করা উচিত ছিল। পরদিন উনাকে পুলিশের লোকজন কোর্টে তুলেছিল কিন্তু আদালত জামিন দেয়নি। যতদূর মনে আছে উনাদের ধুপগুড়ির বাড়িতে তপাশীষদার সঙ্গে আমি গিয়েছিলাম। পরিবারের মনোকষ্টে আমরাও খুব ব্যথা পেয়েছিলাম। সেই যে নাইট গার্ড পালিয়েছিল আর কোনোদিন ফিরে আসেনি। পরে ক্যাশিয়ারবাবু আদালত থেকেই নির্দোষ তকমা পেয়ে ব্যাঙ্কে যোগদান করেছিলেন।

বীরেন রায় আমাদের ব্যাঙ্কের একজন প্রবীণ ম্যানেজার ছিলেন। সহজ, সরল মানুষ একজন। উনি এককালে কোচবিহারের নিশিগঞ্জে ম্যানজার ছিলেন। অফিসের সাবস্টাফ (নাম উহ্য থাকল) ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়, সেও আর ফিরে আসেনি। ব্যাঙ্ক পুলিশ কেস করেছিল। বীরেনদাকে কোনোরকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি, তবে কিছুদিন অবশ্যই টেনশনে ছিলেন। এসব ঘটেছিল ক্যাশ নিয়ে অযৌক্তিক আস্থা ও বিশ্বাসের কারনে।

অনেকেই বলেন ব্যাঙ্কের মিনি ডিপোজিট স্কিম সর্বদাই খুব ঝুঁকির। আমি বলি ব্যাঙ্কের সব স্কিমই ঝুঁকি পূর্ণ। ভাগ্যক্রমে বেশির ভাগ মিনি ডিপোজিট এজেন্ট যথেষ্ট বিশ্বস্ত ছিলেন। কাজটা অত্যন্ত পরিশ্রমের। কিছুক্ষেত্রে ফ্রড ধরা পরে এবং ব্যাঙ্কের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। যে এজেন্টরা সততার সঙ্গ কাজ করেন তাদের সুনামও কালিমা লিপ্ত হয়। ক্ষুদ্র দোকানদার থেকে চিকিৎসক মিনি ডিপোজিট স্কীমে অর্থ সঞ্চয় করে থাকেন। প্রতিটি গ্রাহকের কাছে প্রায় প্রতিদিন আমাদের এজেন্ট গিয়ে সঞ্চয়ের অর্থ সংগ্রহ করতেন, এখনও সেই প্রক্রিয়াই চালু আছে। শিলিগুড়ির মত শহরে একজন মিনি ডিপোজিট এজেন্টের অধীনে তিন থেকে চার জন সাব-এজেন্ট কাজ করে ।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আমানতকারীদের মিনি ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি রেখে প্রচুর পরিমান ঋণ দিয়েছে। ওই ডিপোজিট স্কীমটিকে আমাদের ব্যাঙ্ক বলে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প (কে.এস.পি.)। প্রতিদিনের সঞ্চয় পরদিন প্রথমার্দ্ধে ব্যাঙ্কে ডিপোজিট করতে হয়। প্রতি সোমবার সপ্তাহের কালেকশন গ্রাহকের খাতায় জমা স্লিপ ও চার্ট মিলিয়ে জমা করা হয়। এতে কাজের চাপ বাড়ে কিন্তু প্রতিদিন বেশ কিছু অর্থ জমা পড়ায় ক্যাশের সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়, যাকে বলে লিক্যুইডিটি বজায় থাকে। তবে নীতি নির্দ্ধারকরা চান না মিনি ডিপোজিট প্রকল্প ব্যাঙ্কে চালু থাক। এই ক্ষেত্রটিতে নতুন এজেন্ট নিয়োগ বন্ধ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকে। এত পরিশ্রম করা সত্ত্বেও ওরা এখনো ব্যাঙ্ক কর্মচারীর মর্যাদা পেল না এটা সত্যি দুঃখের।

১৯৮১ সনে কলেজ অফ এগ্রিকালচার ব্যাঙ্কিং (সি.এ.বি), রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আব ইন্ডিয়া, পুনেতে তিন সপ্তাহের ট্রেনিং-এ গিয়েছিলাম, সঙ্গে গিয়েছিল আমাদের সেকেন্ড ব্যাচের অফিসার তপন দে। রিজার্ভেশন ছাড়া বোম্বে মেলে চেপেছিলাম হাওড়া থেকে। টিটি সাহেবের বদান্যতায় যতসামান্য উপঠৌকন দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর দুটি রিজার্ভেশন জোগাড় হয়েছিল। কল্যানে ট্রেন পাল্টে এলাম পুনায়। সঙ্গী হিসেবে তপনের তুলনা নেই। কখনও কোন ব্যাপারে বিরোধিতা নেই। অসমের ছেলে দিবসমনি বড়ুয়া সর্বদাই আমাদের সঙ্গেই কাটাত। প্রশিক্ষনে মাঝে ফিল্ড ভিজিটে বাইরেও গিয়েছি। ওই প্রশিক্ষন কাজের ক্ষেত্রে আমার খুব কাজে লেগেছিল। পুনে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্টেলে থাকা ও খাওয়াদাওয়া বেশ ভাল মানের আর ওখানকার আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম।

চাকরি জীবনে আমি অনধিক কুড়ি-পঁচিশটি ট্রেনিং নিয়েছি। সবচেয়ে বেশি গিয়েছি নাবার্ড পরিচালিত বার্ড, লক্ষ্ণৌ। তাছাড়া সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের মুম্বাই, ভূপাল, কলকাতা, নিসিয়েট হায়দ্রাবাদ, রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টার, নাবার্ড বোলপুর ইত্যাদি বহু কেন্দ্রে প্রশিক্ষন নিয়েছি। নাবার্ড বোলপুরে যেমন ট্রেনিং নিয়েছি, আবার ওখানে প্রশিক্ষন দিতেও গিয়েছি। রবিবার রাতে দার্জিলিং মেলে চেপে পরদিন ভোরে বোলপুরে নেমে, দুটো ক্লাস নিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম শান্তিনিকেতনের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়াতে। রাত সাড়ে বারটার ট্রেন ধরে ফিরে এসেছি। মঙ্গলবার অফিস করেছি।

কল্যানী এস.আই.পি.আর.ডি-তে ডি.আর.ডি.সি. আধিকারিকদের প্রশিক্ষন দিতে ডেকেছিল। সে সময় ওখানে ছিল শুক্তিসীতা ভট্টাচার্য, সহকারী অধিকর্তা। রেসিডেন্সিয়াল ট্রেনিং নিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আধিকারিকরা এসেছিলেন। আমার আলোচনার মূল বিষয় ছিল ‘স্বনির্ভর দলের উৎপাদিত পন্যের বিপনন’। তখন “স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগার যোজনা”-র জমানা। শক্তিশালী স্বনির্ভর দল তৈরি এবং মূলত নারীদের ক্ষমতায়ন ছিল মূল লক্ষ্য। ব্যাঙ্ক ঋণ ও সাবসিডি যুক্ত করে প্রকল্প রূপায়নের মাধ্যমে গরীব পরিবারগুলোর আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটানো ছিল প্রকল্পটির বার্তা। পাঁচটায় আমার ট্রেনিং সেশন শেষ হওয়ার কথা। শেষ পর্যায়ে  আলোচনা গড়িয়েছিল ব্যাঙ্ক ঋণের বিশেষ সমস্যার দিক নিয়ে। সন্ধ্যা সাতটায় সেশন শেষ করে কল্যানী সীমান্ত স্টেশন থেকে রওনা দিয়ে শিয়ালদা। দমদমে আটকে ছিলাম বেশ কিছুক্ষন। প্লাটফর্মে রাতের খাবার খেয়ে দার্জিলিং মেলে ফেরেছিলাম।

সে সময় বিশেষ দুটি বিষয়ে অন্যান্য ব্যাঙ্কেও ট্রেনিং চালাতে হয়েছিল ১) সার্ভিস এরিয়া অ্যাপ্রোচ ২) এ.আর.ডি.আর (কৃষি ও হস্তশিল্পীদের ঋণ মকুব প্রকল্প)। সার্ভিস এরিয়া অ্যাপ্রোচ-এর উপর দার্জিলিঙে এল.ডি.এম. দেবব্রত ঘোষ ও আমি সপরিবারে গিয়েছিলাম। দার্জিলিঙের এল.ডি.এম. জহুরী সাহেব আমাদের থাকার এবং প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা ট্যুরিস্ট লজে করেছিলেন। খুব মজায় কেটেছিল দিনগুলো। আর দেবুদার সঙ্গ সর্বদাই মহার্ঘ, সময় কীভাবে এগিয়ে চলে টের পাওয়া যায় না।

আশির দশকের শেষে ন্যাশনাল ইন্ডাসট্রিয়াল ট্রাইবুনাল (NIT)-এ সাক্ষী দিতে গিয়েছিলাম। জাস্টিস ওবুল রেড্ডী ছিলেন NIT–এর চেয়ার পার্সন। কলকাতায় গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের রজনীগন্ধা হলে এজলাস বসেছিল। দিলীপ মুখার্জী, অজিত ঘোষ, পি.এস.এম.রাও মোটামুটি ভাবে কী কী ইসুতে জাস্টিস জানতে চাইতে পারেন তার একটা ধারনা দিয়েছিলেন। সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত অন্য সাক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের তৈরি করার দায়িত্বও নিতে হয়েছিল।

পরদিন আমার নিজের সাক্ষী দিতে হবে একটু নার্ভাস ছিলাম। দিলীপদার সঙ্গে কথা বলতেই সব দুর্বলতা উধাও। কান্নাবিরন ছিলেন আমাদের কাউন্সেল। দুর্দান্ত ব্যক্তিত্বশালী আর গ্রামীন ব্যাঙ্ক যেন তার আত্মার আত্মীয়। অন্য ব্যাঙ্কের অফিসারদের বা সরকারি আধিকারিকদের কী বিষয়ে আমি প্রশিক্ষন দিয়েছিলাম সেকথা মহামান্য জাস্টিস জানতে চেয়েছিলেন। উনি নিজেই প্রশ্ন করেছিলেন দু-একটা। আমার উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন বুঝতে পেরেছিলাম। জাস্টিস ওবুল রেড্ডী ১৯৯০ সনের ট্রাইবুনালের আ্যাওয়ার্ড ঘোষনা করেন। বাণিজ্যিক স্পনসর ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের বেতনের সঙ্গে গ্রামীন ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য ভাতার সমতার কথা দ্বিধাহীনভাবে রায় দিয়েছিলেন।  

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রফেসর মধু দন্ডবতে ১২.১০.৯০ তারিখে সেই ফাইল অনুমোদন দিয়ে দিলীপদার সামনেই অতিরিক্ত অর্থ সচিবকে সমর্পন করেছিলেন। আ্যাওয়ার্ডটি ছিল ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ঐতিহাসিক আন্দোলনে জয়লাভের অমোঘ দলিল। সেই NIT-তে আমারও যে অতি ক্ষুদ্র যোগদান ছিল তা ভেবে জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এখনও রোমাঞ্চিত হই। কয়েকদিন আগে শ্রী অজিত ঘোষের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে ফোন করেছিলাম। তিনি সেদিনের আমার সাক্ষীর অংশটুকু চমৎকার বর্ণনা করেছিলেন। এক বর্ষীয়ান নেতার স্বীকৃতিতে সেদিন অভিভূত  হয়েছিলাম।

(চলবে)

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team