 
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             সুজিত দাস
                                            
                                                
                                                সুজিত দাস
                                            
                                            
                                         
                                            
                                        ২৯।
‘কেমন ফকফকা রোদ উঠছে, বলেন সাবিত্রীদি?’
সবাই অনুভব করছিল বটে কিন্তু ভগবানের কথায় সকলেই আবার আকাশের দিকে তাকায়। সত্যিই মধুপুরে আজ ডিসেম্বরের শীত ভেসে যাচ্ছে মিঠে রৌদ্রে। বলবিন্দর এতদিনে কাজ চালানোর মতো বাংলা শিখে নিয়েছে তবে স্থানীয় ভাষা এখনও বিপদে ফেলে দেয় এই শিখ মধ্যচল্লিশকে, ‘হোয়াটস্ দিস ফকফকা?’
‘ফকফকা মানে সোনা রং রোদ।’
‘কমলা রং রৌদ্রের ডাকনাম ফকফকা।’
‘এস্তো চাকিলো ঘাম।’
রীতিমত র্যাগিং শুরু হয়ে করে দিয়েছে ইলা, আরাত্রিকা আর সুমন ইয়োলমো ভগবানের ছুড়ে দেওয়া শব্দটিকে নিয়ে। বলবিন্দরের মুখের দিকে তাকিয়ে সকলেই হাসছে এখন। আজ আরাত্রিকা আর বলবিন্দর ফিরে যাবে কলকাতা। এখানকার কাজ এখন প্রকাশ্যেই করা যাচ্ছে। হরেন কুন্ডু জেলে যাওয়ার পর থেকেই পরিবেশ অনেকটা খোলামেলা। হরেনের ডায়েরির প্রত্যেকটি পাতা এখন লোকের মুখস্ত। কোনও একটা আননোন ফেসবুক পেজ থেকে ভাইরাল হয়ে গেছে সেই ডায়েরি। যদিও ‘দ্য নিউ এজ ডেইলি’র দৌলতে সেই ডায়েরির নির্যাস ছড়িয়ে গেছে দেশজুড়ে। তুষের আগুন যেন এখন অনেকটাই দাউদাউ।
আরাত্রিকা, বলবিন্দর আজ রাতের ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট-এ ফিরে যাবে। এতটা সময়ে এই অঞ্চলটাকে ভালোবেসে ফেলেছে দু-জনেই। মধুকুঞ্জের বিলাসী জীবন থেকে আপার চ্যাংমারির লেবু আর কলাবাগান। বাতাবাড়ির জঙ্গল থেকে মাদারিহাটের ধাবা। এই চিরহরিৎ আবহে অনেক লঘু হয়েছে আরাত্রিকার গম্ভীর চশমা। বলবিন্দর শিখে ফেলেছে চিফ রিপোর্টারের মুড স্যুইং-এর ছোটখাট কারণগুলো। উত্তর কলকাতার চওড়া দেওয়ালে নিপুণ সিঁধ কেটে ফেলেছে এই পাঞ্জাবতনয়। তবে সাবিত্রীর সঙ্গে গড়ে ওঠা সখ্য কোনোদিন ভুলবে না আরাত্রিকা। আজ অনেকদিন বাদে সাবিত্রী এবং এইচ ডি কারো সঙ্গে দেখা হবে। দু-জনেই বাতাসি থেকে খবর নিয়ে এসেছে অনেক। দিল্লির ব্যুরো চিফ খুব ইন্টারেস্টেড বাতাসি এবং সন্নিহিত অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে,
‘ভাল ছবি পাঠিও, ট্রাইবালদের ভিস্যুয়াল খুব ভাল হয়। ফার্স্ট পেজ, কালার।‘
আরাত্রিকা জানে সংবাদের দুনিয়ায় এখনও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠী ‘ভাল ভিস্যুয়াল।‘ এই মাইন্ডসেটটাই বদলানোর দরকার। তবে সময় বদলাচ্ছে। খুব দ্রুতই বদল আসছে। বদলাচ্ছে বলেই জন্নত, অরিত্র, জোজো, মহুয়ার মতো তরুণদল কেরিয়ারের পাশাপাশি পৃথিবীর জঞ্জাল পরিষ্কার করার দিকেও মন দিয়েছে। তবে এইচ ডি নিজের মোবাইলে তোলা ভাল ছবি পাঠাবে বলে কথা দিয়েছে। দিল্লির ব্যুরো চিফের চাহিদামত ‘ভাল ভিস্যুয়াল।‘
‘জন্নতকে দেখছি না আজ’, বোন চায়নার বাটিতে ধনেপাতা লাঞ্ছিত স্যুপ ঢালতে ঢালতে জিজ্ঞেস করেন ইলা।
‘জন্নত এখন কবিতা নিয়ে মেতে আছে।‘
সুভাষের কথায় হেসে ওঠে অরিত্র, ‘জন্নতের সঙ্গে কবিতা একদম যায় না সুভাষদা তবু লাস্ট দশ-বারো দিন একটার পর একটা কবিতার বই কিনছে। কী হলো মেয়েটার!’
‘কখনও কখনও কবিতাই আমাদের শেষ আশ্রয়, অরিত্র’, আরাত্রিকা মেন কোর্সে মন দেয়, ‘তাছাড়া স্নিগ্ধসুন্দরের পার্সোনালিটি বোধহয় ভার্জিন মোহিতো’র লিড সিঙ্গারকেও মোহিত করে ফেলেছে।’
এই দু-তিন মাস খুব ভাল কেটেছে ইলা ব্যানার্জির। এমনিতেই বাড়িতে অতিথি এলে উল্লসিত হয়ে ওঠেন ইলা। আর এই দু-জন এতদিন ধরে ওঁর কাছে থাকায় প্রায় নিজেদের লোক হয়ে গিয়েছিল। আরাত্রিকাকে খাইয়ে সুখ নেই। পাখির আহার মেয়েটির। তবে বলবিন্দর ভোরাসিয়াস ইটার। কোনও বাছবিচার নেই। শুরুতে মাছের কাঁটা ঠিকঠাক বেছে নিতে পারত না, এখন বেড়ালের থেকেও বেশি মাছ ভালোবাসে। তাছাড়া সুপ্রভাতের সেলার প্রায় ফাঁকা এখন। ছেলেটিকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন মধুপুর শহরের এই বেস্টম বেস্ট উকিলবাবু। নিজের চেম্বারে বলবিন্দরের তোলা রুফাস হর্ণবিলের ছবি টাঙিয়ে রেখেছেন। সুপ্রভাত মদ খান না তেমন, সোস্যাল ড্রিঙ্কার। তবে সেলারে মদ সাজিয়ে রাখাটা ওঁর নেশা। বলবিন্দরকে ভালোবেসে একটার পর একটা বোতল দিয়ে গেছেন। আর বলবিন্দর সেসব শেষ করেছে অবলীলায়। সঙ্গে ইলার পাঠানো রকমারি স্ন্যাক্স। সুপ্রভাত ভাবেন এত খাওয়ার রাখে কোথায় ছেলেটা, বলবিন্দরের কি হাঁটু অবধি স্টমাক!
এইচ ডি আজ আরও কিছু কাগজ নিয়ে এসেছে। বাতাসি, খড়িবাড়ি আর পানিট্যাঙ্কি এলাকার এল আর রেকর্ড। বহু খুঁজেপেতে বের করেছে এসব। ছেলেটার এলেম আছে। সুপ্রভাত মনে মনে তারিফ করেন, উকিলের কাজ অনেকটা সহজ করে দিয়েছে হরি। ট্রাইবাল আর পাট্টার জমিন কীভাবে নন-ট্রাইবালদের হাতে ঘুরপথে হস্তান্তরিত হয়েছে, দেখবার মতো। অনেক কেসই সলিড, ওয়াটার টাইট। কিছু কাগজ আরও দরকার। তেমন হলে জুনিয়রদের দিয়ে আরটিআই করাবে সুপ্রভাত। তবে যতটা এসেছে ওঁর তূণীরে তাতেই ল্যান্ড ডিপার্টমেন্টের কড়িবরগা নড়ে উঠবে। ভূমিসংস্কারের দশ বছর পর থেকে জমি মাফিয়া আর দালাল চক্র বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিল। মামলা করলে মাটির দশহাত নীচ থেকে কত কঙ্কাল যে উঠে আসবে! চিন্তাসূত্র ছিঁড়ে যায় ইলার ডাকে। চেম্বার থেকে লিভিং রুমের দিকে পা বাড়ান সুপ্রভাত।
মধুকুঞ্জের লিভিং রুমে তখন চরম নাটক।
এই নাটক হয়ত মঞ্চে আসতই একসময় কিন্তু ইলা ব্যানার্জির একটা সহজাত প্রতিভা আছে মানুষকে খাওয়া এবং বিয়ের ব্যাপারে প্ররোচিত করবার। আরাত্রিকার মনে যেটুকু দ্বন্দ্ব ছিল, ইলা সেই মেঘ সরিয়ে দিয়েছে। আজ মধুপুর ছেড়ে যাওয়ার দিনে তাই এই নাটকের শেষ দৃশ্য। আসলে প্রথম দৃশ্য। আজ আরাত্রিকার পরনে সাবিত্রীর দেওয়া সাদা খোলের শাড়ি, মোটা সুতির ব্লাউজ। গম্ভীর চিফ রিপোর্টার মেয়েটিকে মানিয়েছেও দারুণ।
হাঁটু মুড়ে, আংটি হাতে আরাত্রিকাকে কপিবুক প্রপোজ করছে বলবিন্দর,
‘উইল ইউ ম্যারি মি, আরাত্রিকা?’
মিলন গোম্বু থেকে প্রশান্ত কর অবধি সবাই একসঙ্গে কোরাসে আওয়াজ তোলে, ‘ইয়েস, ইয়েস, ইয়েস।‘
আরাত্রিকার মুখে কোত্থেকে এত লাল এসে মিশে যায়, নিজেও বুঝতে পারে না। চিফ রিপোর্টারের মুখে তখন রঙের রায়ট। মধুকুঞ্জের পাশের আমলকী গাছ থেকে ডেকে ওঠে একটি ফাজিল পিউ কাহাঁ। পিউ কাহাঁ, পিউ কাহাঁ। সুমন ইয়লমো পালটা শিস্ দেয়, ব্রেন ফিভার, ব্রেন ফিভার। ইলা ব্যানার্জি সুরেলা আওয়াজ যোগ করেন, ‘খুকি হোক, খুকি হোক।‘
নাংডালা চা-বাগান থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে, এইচ ডি-র স্ট্রবেরি খেত থেকেও কিলোমিটার দুয়েক দূরে ভুটান বর্ডারে পাহাড়ের একদম গা ঘেঁষে ‘প্র্যাকটিস’ চলছে। ফুটবলাররা বাটা সুভাষের রিক্রুট। আজ প্রায় কুড়ি দিন হলো ওরা এই শেল্টারে। মাঝে মধ্যে ‘প্র্যাকটিস’ করতে হয় নইলে নাকি নিশানা ঠিক থাকে না। দু-দিনের জন্য পুরোনো জায়গায় এসেছে শুক্রা। ‘প্র্যাকটিস’ ওর মূল লক্ষ্য না। আসলে যে চারজন লোক এসেছে শার্প-স্যুটার হিসেবে, এরা কেউ এতদিন ওই টমেটো-আলু ঝোল খেয়ে থাকার লোক না। সপ্তাহে একবার করে এইচ ডি ওদের জন্য মুর্গা কিংবা মাছ পাঠায়। টাকা সুভাষদা আগেই দিয়ে রেখেছে কিন্তু লোকাল হাট থেকে ওদের খোরাকি কেনে না এইচ ডি। বীরপাড়া হাট থেকেই নিজে কিংবা কাউকে দিয়ে কিনে পাঠায়।
‘এরা সব ভাড়ার লোক হরি। এদেরকে রসেবশে রাখতেই হবে।‘
‘তা তো রাখিই সুভাষদা, আসলে বাতাসি থেকে এতকিছু ম্যানেজ করাটাই সমস্যার।‘
‘চারজনের খোরাকি দশজনের সমান। টাকা তো আপনি দিয়েই রেখেছেন কিন্তু হঠাৎ করে এত জিনিস একবারে কিনলে লোকের একটা সন্দেহ হয়।‘
‘এই চারজনকেই কিছুদিন বাদে বাতাসিতে নিয়ে গিয়ে এলাকাটা রেকি করিয়ে দিও। আমার লোক বুঝিয়ে দেবে ঠিক কী করতে হবে। বাকিরা অ্যাকশনের দু-তিনদিন আগে এলেও হয়ে যাবে। কয়েকজনের এলাকাটা চিনে রাখা দরকার।‘
‘ওকে দাদা, তবে এই ফুটবলারদের খাইখোরাক শুধু না আমার স্ট্রবেরি খেতের মেয়েদের দিকেও তিরছি নজর। সেটা সামলে নিয়েছি তোমার নাম বলে।‘
‘শোনো হরি, আমাদের কেউ গুলি্গোলা ছোড়ার লোক না। ট্রিপল আরের কড়া নির্দেশ তাই এখানকার লোককে জড়াইনি। এরা কাজ করবে, রক্তপাত ছাড়াই স্রেফ ভয় দেখাবে তারপর নিজের নিজের জায়গায় চলে যাবে। আমাদের কোনও দায় থাকবে না। তাছাড়া জেনে রেখো, মার্সিনারিদের বিপ্লবী বলে গ্লোরিফাই করাটাই ভাবের ঘরে চুরি।‘
সুভাষের কথা বলার ধরণটাই এমন তারপরে আর কোনও কথা বলা যায় না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে মাস্টার্স, পি এইচ ডি করতে করতেই মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যবসায়। শিলিগুড়ির বেতাজ বাদশা অথচ কোনও পুলিশ রেকর্ড নেই। পলিটিকাল লোকেদের টাকা খাটে ওর কাছে। কম কথার মানুষ এবং প্রতিটি শব্দের আলাদা ওজন আছে। কোড গ্রিন-এর সবচাইতে বড় ফাইনারসার। সুভাষ-দার এক কথায় বৃষ্টির মতো টাকা ঝরে পড়ে। নিজের সব উপার্জনই ঢেলে দিয়েছে ট্রিপল আর-এর সংগঠনে। হরেন কুণ্ডুর কিডন্যাপের এমন নিখুঁত প্ল্যান দেখে পুলিশ মহল পর্যন্ত চমকে গেছে। এই নাংডালা বাগানের সেফ-হাউসের আয়োজনও সুভাষদাই করে দিয়েছে। স্ট্রবেরি খেত বানানোর টাকা, জমি কেনার প্রায় পুরোটাই ওঁর দেওয়া। কী কী ঘটবে, কেমন ভাবে হবে সব যেন আগে ভাগে ভেবে রাখা দাবার চাল। খুব স্নেহ করে এইচ ডি-কে।
বীরপাড়া হাট থেকে কয়েক কেজি খাসির মাংস, আনাজপাতি আর কিছু টুকিটাকি রেশন কিনে ফিরেছে একটু আগে। দূরে প্র্যাকটিস চলছে। তিনদিক ঘেরা পাহাড়ে গুলির আওয়াজ বাইরে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাছাড়া ভুটানের ডলোমাইট ফ্যাক্টরির আওয়াজে বাকি আওয়াজ ফিকা হয়ে আসে। হালকা বারুদের গন্ধের সঙ্গে মাংস রান্নার সুঘ্রাণ মিশে যাচ্ছে এই ষড়যন্ত্রের বাসরঘরে। শুক্রার টেস্ট বাডগুলো জেগে উঠছে।
আসলে এই কাজটা নিজেই করতে চেয়েছিল হরিদা। কিন্তু শুক্রা খানিকটা যেচেই এসেছে এবারে, দু-দিনের জন্য। দুলারি-দিদিকে রান্নার যোগান দিচ্ছে যে মেয়েটা ওকে দেখলেই নাংডালা চা-বাগানে ঝড় আসবে বলে মনে হয়। দুবছর আগেই ওকে এখানে নিয়ে এসেছে সাবিত্রীদি। ইউ পি থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে যখন তখন বাসন্তীর বয়স বড়জোর ষোলো। চৌদ্দ বছরে বিয়ে, বিয়ের দু-মাস পর ওকে বেচে দিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে আসা বাগানের ওভারসিয়ারবাবু সেই যে হাওয়া, আর পাত্তা নেই। মিলনজী অনেক খুঁজে, কায়দা কানুন করে যখন নিয়ে আসে এখানে, বাসন্তীর আর বেঁচে থাকার কথা নয়। সুভাষদা আনন্দময় নার্সিংহোমে প্রায় মাসখানেক চিকিৎসা করিয়ে এখানে পাঠিয়ে দেয়। বাসন্তী চুপ করে ছিল বহুদিন, মুখে কথা ছিল না। সাবিত্রীদির ধৈর্য আর বাকি মেয়েদের শুশ্রূষায় সেরে ওঠে আস্তে আস্তে।
বাসন্তী শুক্রাকে দেখলে কয়েকপলক অতিরিক্ত চেয়ে থাকত। ঠিক ওইটুকু ইশারা টেলিগ্রাফের তারের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া টরে টক্কার মতোই অবশ করে দিত এই আদিবাসী তরুণটিকে। যে বয়সের যে ধর্ম। শরীরের ভেতরে এত রাসায়নিক, কী বিচিত্র তাদের ক্রিয়াকলাপ। আর শরীরকে বশে রাখলেও এই হারামি মন এক বেবাক আজব জিনিস। বিকেলে মনখারাপ হয়, সারারাত বাতারিয়া নদীর ছলাত ছল শব্দে বাসন্তীর চাউনি, হাসি, ভঙ্গি ঠোকর দেয় শুক্রার মাথায়।
এখন এই নিভে আসা আলোয় প্র্যাকটিস শেষ করে ফিরে আসছে ফুটবলাররা। নাংডালা চা-বাগানের সূর্য ডুবে যাচ্ছে গোমটু বর্ডারে। শুক্রার হাত ছুঁয়ে দিছে পাহাড়ি নদী, ঘুমিয়ে থাকা ভলক্যানো এবং গোলাপি বৃন্ত। আজ পূর্ণিমার রাতে একটি বর্তুল চাঁদ উঠবে আকাশে, গায়ে তার কলঙ্কের মিথ্যে দাগ। আর এখন, বাসন্তী নিজেই একটি গোলাপি চাঁদ ছুঁইয়ে দিচ্ছে শুক্রার ঠোঁটে, গালে, মুখে। বিকেলের দিকে এদের দুজনেরই মনখারাপ হয়। এবং বিকেলের দিকেই কোন কৃষ্ণগহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে একটি পোকায় কাটা নিষ্পাপ শরীর। জঙ্গল সন্তান শুক্রা আঁজলা ভর্তি জলপান করে সেই পবিত্র জংলি ঝোরাটির থেকে।
৩০।
‘একটি স্তনের ভেতরে অজস্র রূপকথা
একটি বৃন্ত গোলাপি দ্বীপের জোনাকমালা
এস, এই অবেলায়, শিশুর চুম্বনের মতো পবিত্র মুখ নিয়ে এস…’
‘স্নিগ্ধদা, আপনার কবিতা এত বহুরৈখিক, এত মন ছুঁয়ে যায়, বলবার নয়। শরীরের ভেতরে যে আরেকটা শরীর আছে, বিট্যুইন দ্য লাইনস্ কত না বলা গল্প! আপনার কবিতা না পড়লে জানতেই পারতাম না…’
‘আরেহ্ জন্নত, তুমি তো খুব ভাল কবিতার ভেতরে ঢুকে যেতে পারো। লেখো নাকি?’
‘ওই তো সামান্য লেখালিখি আমার। বলবার মতো কিছু নয়, স্নিগ্ধদা’, দু-হাত ওপরে তুলে চুল ঠিক করে জন্নত। স্লিভলেস টপ উন্মুক্ত করে বাহুমূল।
স্নিগ্ধসুন্দরের চোখের মণি চুল ঠিক করার মতোই দ্রুতগামী। টের পায় জন্নত। একটু আগেই কবির অনুরাগী মহিলাবৃন্দ ফিরে গেছে। ডেঙ্গুয়ামার চা-বাগানের গেস্ট হাউসটা মোটামুটি ফাঁকা। সকাল দশটাতেও রোদ ওঠেনি তেমন। কাবার্ড থেকে ‘অ্যাবসোলুট’ ভদকা বের করেন স্নিগ্ধসুন্দর,
‘একটু মুড না বানালে আমার আবার ঠিক হয় না’, স্নিগ্ধ গন্ধরাজ লেবু এবং হলদিবাড়ির মাইক্রো কাঁচালঙ্কা মেশান ভদকায়।
‘আপনার কবিতায় একটা শিশুর সারল্য মিশে থাকে, শৈশব খুব মিস্ করেন না স্নিগ্ধদা?’, সামনের দিকে একটু ঝুঁকে ব্যাকুল চোখে কবির দিকে তাকায় জন্নত।
‘শৈশব আমাকে খুব হন্ট করে জন্নত। শৈশবের স্মৃতি আমাকে কুরে কুরে খায়’, এক চুমুকে প্রথম পেগটা শেষ করেন স্নিগ্ধসুন্দর।
জন্নত বোঝে এখন গেস্টহাউস ফাঁকা এবং কেউ এত মহিলার ভিড়ে ওকে আলাদা করে লোকেট করতে পারেনি। এখনই বধ করতে হবে একে,
‘ড্রিঙ্ক করার পরে আপনার মুখ ঈষৎ রক্তাভ হয়ে যায়, স্নিগ্ধদা। দারুণ সেক্সি লাগে আপনাকে, জানেন আপনি?’
‘বয়স অনেক হলো, মাই ডিয়ার লেডি। ব্লাড প্রেসার অসম্ভব বেশি আমার।‘
‘জানি স্নিগ্ধদা, ‘সেইবেলা’ পত্রিকায় আপনার ইন্টারভিউ পড়েছি আমি। তখন বলেছিলেন। এনিওয়ে, আপনাকে দেখে বয়স একদম বোঝা যায় না। ইউ লুক সো ইয়ং।‘
মদ আস্তে আস্তে নিজের কাজ করতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধসুন্দর অবলীলায় জন্নতের পাশে এসে বসেছেন। ডান হাত খেলা করছে জন্নতের পিঠে।
‘আহ্, একটু ধীরে এগোন স্নিগ্ধদা, সবকিছুরই একটা টেক অফ টাইম আছে।‘
সেক্সুয়াল প্রিডেটরদের এমন ছোটখাট বিরক্তি গায়ে মাখতে নেই বরং জন্নতের এই হালকা আপত্তি স্টিম্যুলান্ট হিসেবেই দেখছেন কবি। স্টিম্যুলান্ট! শালা একসময় অসভ্য কথা ভাবলেই উত্তেজিত হয়ে পড়তেন যে স্নিগ্ধ, আজ তারও উত্তেজক লাগে। তবে এই মেয়েটা মাথায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। শরীরেও নিশ্চয়ই আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়বে এই আগুন। অনেক সময় আছে হাতে, বইমেলার উদ্বোধন সেই সন্ধেবেলা।
জন্নত জানে কিছুটা ছাড় আজ দিতেই হবে। পার্ট অফ দ্য ওয়র্ক। এটুকু নেসেসারি ইভিল মেনে নিতেই হবে। এই যে স্নিগ্ধসুন্দরের হাত ক্রমশ আরও বিপদজনক হয়ে উঠছে, সহ্য করতে হবে এটুকু। লোকটা পাগলের মতো বুকে হাত দিচ্ছে এখন। চিন্তায় ছেদ পড়ে স্নিগ্ধর কথায়,
‘সোফায় কেন? লেটস্ ডু ইট অন দ্য বেড।’
‘আহা স্নিগ্ধদা, এটাকেই ‘মেরিলিন মনরোর সঙ্গমসোফা’ হিসেবে ভেবে নিন না।’
‘বাহ্, দারুণ বললে। রণজিৎ দাশ।’
‘আমি ভালই বলি স্নিগ্ধদা, আপনি আরও দু-এক পেগ নিন। আপনার ভেতরের মানুষটা ঘুমিয়ে আছে এখনও। হ্যাভ সাম মোর ড্রিঙ্ক। আই নিড ইউ রক সলিড।’
এভাবেই সময় বয়ে চলেছে। ডেঙ্গুয়ামার চা-বাগানে দুপুর শেষ হওয়ার মুখে। মদ খেতে খেতে স্নিগ্ধসুন্দরের ফর্সা মুখ আরও লাল। জন্নত বুঝতে পারে লোকটার ইরেকশন হচ্ছে না তাই এত ফ্রাস্টেটেড মুখে জন্নতের দিকে তাকাচ্ছেন উনি।
‘কিছু বলবেন, স্নিগ্ধদা?’
‘হ্যাঁ, জন্নত। একটা গোপন কথা বলব তোমায়। বদলে যা চাও দেবো তোমাকে। পুরস্কার, বিদেশযাত্রা, কবিতা ছাপা...ইউ জাস্ট নেম ইট।‘
‘আমি কিচ্ছু চাই না, স্নিগ্ধদা। আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ রক সলিড। দুমড়ে মুচড়ে দাও আমাকে। ডু হোয়াটএভার ইউ লাইক। জাস্ট কিল মি। ইফ ইউ নিড ট্যাবস্, আই ডু হ্যাভ ইট। আছে আমার কাছে। ইটস্ অ্যাফ্রোদিসিয়াক।‘
‘ওসবে আমার কিছু হয় না জন্নত। আই নিড টু সি ইট। নাউ।‘
‘কী দেখবে? আমাকে? আমি তো আছিই তোমার জন্য এখন। হেসিটেট করছ কেন?’
‘না জন্নত। আই নিড টু সি দ্য ফিল্মস?’
‘ফিল্ম! ইউ মিন পর্ন?’
‘হ্যাঁ।‘
‘দেখ না। ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট বাট কিল মি। আমি আর পারছি না, স্নিগ্ধদা’, স্নিগ্ধর কোলে মাথা রাখে জন্নত।
‘আই ওয়ন্ট টু সি চাইল্ড পর্ন, জন্নত। বাচ্চা কিংবা বাচ্চাদের ছবি ছাড়া আমার হয় না জন্নত। প্লিজ, বেয়ার উইথ মি।‘
‘বাট দ্যাটস আটারলি ইল্লিগাল। পাবেন কোথায় সেসব ক্লিপ?’
‘আমি নিজেই অনেক সেলফ শ্যুট করেছি। আছে আমার কাছে। দেখবে?‘
কোনও উত্তর না দিয়ে জন্নত স্নিগ্ধর চুলে বিলি কেটে দেয়।
নিজের ল্যাপটপে একটার পর একটা পর্ণ ছবি দেখতে থাকে স্নিগ্ধসুন্দর। বাচ্চাদের মলেস্ট করার ফিল্ম। কী পারভার্ট লোকটা! নিজের এইসব ক্রিয়াকলাপ নিজেই শ্যুট করে রেখেছে ভবিষ্যৎ উত্তেজনার খোরাক হিসেবে। একটা পর একটা ছবি! শিশুদের নিয়ে এমন করেছে লোকটা, জাস্ট চোখে দেখা যায় না। তবে এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখার সময়। ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড মাথায় গেঁথে নিয়েছে। স্নিগ্ধর পাজামার ওপরে হাত দেয় জন্নত,
‘পুরো তো এখনও হয়নি স্নিগ্ধদা। কাম অন, কিল মি, স্নিগ্ধদা‘, জন্নত বোঝে অতিরিক্ত মদ বাধা দিচ্ছে স্নিগ্ধর শরীরকে, ‘হ্যাভ সাম পিলস্ ম্যান।’
‘দাও, যা আছে দাও আমাকে। তোমাকে পেয়েও এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না আমি।‘
চারটে ট্যাবলেট খাওয়ার পর কপালের রগ চেপে শুয়ে পড়ে স্নিগ্ধসুন্দর। জন্নত বোঝে কবির শরীরের সব শিরা এখন ফেটে যেতে চাইছে। যাবেও একটু বাদে। হাই ব্লাড প্রেসার, প্রচুর মদ এবং এত এত ট্যাবস কাজ করবে একটু বাদেই। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে সাহিত্য জগতের এই মহান কবি। ওঠার ক্ষমতা নেই। নাক দিয়ে গড়িয়ে আসছে সুতোর মতো সরু রক্তের রেখা। ওর সামনেই পেনড্রাইভ বের করে একটার পর একটা ক্লিপ ল্যাপটপ থেকে তুলে নেয় জন্নত। অস্ফুটে কিছু একটা বলছে স্নিগ্ধসুন্দর। বিস্ফারিত চোখ। সব ক্লিপ ডাউনলোড করার পরে জন্নত লোকটার পাশে আসে। নিজের ভাইপোকেও এভাবে করেছিলেন তো, স্নিগ্ধসুন্দর, দ্য গ্রেট পোয়েট?’
ডেঙ্গুয়ামার চা-বাগানের গেস্টহাউস থেকে সন্তর্পণে বেরিয়ে আসে জন্নত। কেয়ারটেকার ভগালু-দাকে হালকা ইশারা করে। ভগালু-দা দূর সম্পর্কে পীযূষ-দার কাকা। কোড গ্রিনের পুরনো লোক। স্কুটি চালিয়ে খুব আস্তে বাইরে আসে আসে জন্নত। গোশালা মোড় পেরিয়ে একটা ফোন করে টাউন ডিএসপি-কে। শান্তিপাড়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে মংরাদা থাকবে। ওকে দিয়ে দিতে হবে এই পেনড্রাইভটা।
বাড়ি ফিরে শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে বমি পায় জন্নতের। স্নিগ্ধসুন্দরের ছোঁয়াকে মুছে ফেলতে থাকে শরীরের ওপর থেকে। গরম জলের স্রোত আয়ুধ এবং স্বস্তি হয়ে নেমে আসছে ওপর থেকে। কাউকে খুন করেও যে এত শান্ত থাকা যায়, এটা ভেবে আশ্চর্য লাগে জন্নতের।
সাদার স্ট্রিটের সাইবার ক্যাফের ঘুপচি ঘরে একটার পর একটা ক্লিপ ডাউনলোড করছেন ট্রিপল আর। সব ক’টা ক্লিপ থেকে বাচ্চাদের মুখগুলো আবছা করে দিয়ে তারপর পাঠাতে হবে। বিদেশি কোনও ফেক মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে। নইলে ট্রেসড হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে। দু-তিন ঘন্টা সময় লাগবে। লাগুক, বইমেলার উদ্বোধন তো সেই সাড়ে ছয়টায়। তার আগে টাউন ডিএসপি এবং প্রশান্ত কর নিজের নিজের কাজ করুক। যাক, একটা পিডোফিল তো বিদায় নিলো। এই কাজটা ওভারডিউ ছিল। মিটে যাওয়ায় খুব শান্তি পাচ্ছেন রাধারানি। সাদার স্ট্রিটের এই ঘুপচি মতো সাইবার ক্যাফে থেকে জন্নতের জন্য একটা উড়ন্ত চুমু ছুড়লেন মাদাম ভ্যালেরি ডোমিনিক।
ভগালু বর্মনের ত্রাহি চিৎকারে দূরের বাগানিয়া বাবুরা কোয়ার্টার থেকে গেস্টহাউসে জড়ো হয়। এতবড় কবি অর্ধ উলঙ্গ হয়ে বিছানায় মরে ভেটকে আছে। নাক-কান-মুখ দিয়ে রক্তের ধারা। টেবিলে মদের বোতল, বিছানায় যৌন উত্তেজনা বাড়ানো ড্রাগসের স্ট্রিপ।
‘কোনও প্যাটার্ন পেলেন, স্যর?’, আই সি মিত্র জিজ্ঞেস করে টাউন ডিএসপি-কে।
না, তবে ল্যাপটপ খোলা কেন? ফোল্ডারগুলো দেখুন আই সি সাহেব। এই মহান কবি তো নিজেই পর্ন স্টার!
‘বলেন কি স্যর! ফরেনসিকের লোকদের ডাকি তবে?’
‘হ্যাঁ, ডাকুন। আমি এসপি সাহেবকে ব্রিফ করি ব্যাপারটা। জটিল কেস।‘
গেস্টহাউসে যখন পুলিশের তদন্ত চলছে, ফরেনসিক টীম পরীক্ষা করছে গোটা ঘর তখন বাইরে অর্ধেক মধুপুর শহর। লোকাল এবং বড় সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোকজনও উঁকি দিচ্ছে জানালা দরজা দিয়ে। এদের একজনকে আমরা চিনি। প্রশান্ত কর। প্রশান্ত জানে কতটুকু নিউজ করতে হবে এখন। হেডলাইনটাও মনে মনে ভেবে নেয়। পরের খবরটা তো ধামাকাদার খবর হবে। ওর জীবনের সেরা খবর। আপাতত এটুকুই,
‘বাংলা কবিতার জগতে ইন্দ্রপতন। স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায়-এর রহস্যজনক মৃত্যু। ল্যাপটপে নীল ছবি, বিছানায় অবৈধ ড্রাগসের স্ট্রিপ এবং টেবিলে মদের বোতল।‘
ম্যাডাম ডিএম আরতিরানি হতবাক। আজ রাতেই স্নিগ্ধসুন্দরের জন্য ডিনারের আয়োজন করে রেখেছিলেন নিজের বাংলোয়। তার মধ্যে এই কেস। বইমেলা কমিটির লোকেরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। একটু বাদেই উদ্বোধন। কাউকে দিয়ে না হয় উদ্বোধন করিয়ে নেওয়া যাবে কিন্তু একটার পর একটা পুলিশের ফোন আসছে মোবাইলে। হারামজাদা কবি মরেও ডুবিয়ে গেল। আর খবরিলাল পোর্টালের দ্বিতীয় নিউজটা তো বোমা একেবারে। শালা স্নিগ্ধসুন্দর মুখোপাধ্যায় শুধু পিডোফিলই না সব কুকর্মের ছবি জমিয়ে রেখেছে নিজের ল্যাপটপে! মদ খাবি খা সঙ্গে ড্রাগও লাগে! মরবার আর জায়গা পেলো না, মধুপুর বইমেলায় এসেই মরতে হবে সাত্ত্বিক ব্রাহ্মণ এই ঢ্যামনা কবিকে। বইমেলা একেবারে ছ্যারাব্যারা করে দিল লোকটা।
একটু আগেই সবাই স্টেশনে এসে সি-অফ্ করে গেছে।
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্টের এই ফার্স্ট ক্লাস কুপে শুধু বলবিন্দর আর আরাত্রিকা। বাইরে একটার পর একটা স্টেশন সরে যাচ্ছে জানালা দিয়ে। বলবিন্দর উসখুস করছে।
‘ওয়েট হানি। এই এপিসোডের শেষ কাজটুকু করতে হেল্প করো আমাকে। তোমাকে পোর্টালের জন্য ক্লিপগুলো পাঠাচ্ছি। নিউজটা রেডি করো। ন্যাশনাল পোর্টাল, একটু খেয়াল রেখো। আমি কালকের ‘দ্য ডেইলি নিউ এজ’-এর লিড স্টোরি অলমোস্ট রেডি করে ফেলেছি। আফটার অল ন্যাশনাল আওয়ার্ড পাওয়া একজন কবির এই কেচ্ছামৃত্যু। কালকে ইস্টার্ন জোনে পেপারের বিক্রি ডাবল হবে, ইউ বেট। প্রশান্ত-দার লোকাল পোর্টাল ‘খবরিলাল’-এর ভিউ এতক্ষণে দশ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। কলকাতার টিভি গুলোতে ঘন্টাখানেক-এর শোগুলোতে শুধু এই একটাই নিউজ।‘
‘আরাত্রিকা তুমি একবার দেখে নাও এয়ার করবার আগে। হাউসের হাতে এডিট করার সময় নেই। আমাদেরই ছাড়তে বলল। একবার দেখে নাও।‘
বলবিন্দরের তৈরি করা স্টোরিটায় চোখ বুলোয় আরাত্রিকা। ফটোগ্রাফার ইংরেজিটা ভালই লেখে। তবে স্পাইস নেই। একটু ব্রাশ আপ করে ‘দ্য ডেইলি ইউ এজ’-এর ন্যাশনাল পোর্টালে ভিডিও ক্লিপসহ খবরটা আপলোড করে আরাত্রিকা। এই মুহূর্তে ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্টের জানালা দিয়ে সরে যাচ্ছে একটার পর একটা নাম না জানা স্টেশন। কুপের ভেতরে গলে যাচ্ছে উত্তর কুড়ি ইঞ্চি পুরু একসময়ের ঠান্ডা দেওয়াল।
ট্রেন ছাড়ার পরই এনজেপি থেকে টানা গাড়ি চালাচ্ছে বাটা সুভাষ। এতক্ষণে খিদে টের পায়। মল্লি চেকপোস্টের পাশে সুব্বা-ক্যাফের সামনে গাড়ি দাঁড় করালো যখন, প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। সুভাষকে দেখে একগাল হেসে এগিয়ে আসে বসন্ত্ সুব্বা। টম ক্রুজের মতো দেখতে এই ছেলেটি খুব ভালোবাসে সুভাষকে। একপ্লেট ভেজ মোমো খাওয়ার পর ক্যাপুচিনো হাতে নিয়ে বসন্ত্কে শুভরাত্রি জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে বাটা সুভাষ। ‘দ্য হরাইজন’ এখনও অনেকটা পথ। তবে কুয়াশা নেই রাস্তায়। একটার পর একটা কাজ নেমে আসছে আস্তে আস্তে। ট্রিপল আর বেশ কিছুদিন ‘দ্য হরাইজন’-এই থাকবেন। কোড গ্রিন এখন ছড়িয়ে পড়ছে গুণোত্তর প্রগতিতে। কফিনে শেষ কয়েকটা পেরেক মারা দরকার। তারপর আমাদের দরকার নেই আর। মানুষ নিজেই বয়ে নিয়ে যাবে কোড গ্রিন।
এই পাহাড়ি রাস্তা হাতের তালুর মত চেনে সুভাষ। আর স্টিয়ারিং যেন পোষা ল্যাব্রাডর।
………………………………………………………………………………………………
সব চরিত্র কাল্পনিক।
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team
