প্রায় সারা দেশেই এখন তাপপ্রবাহ চলছে। তাপপ্রবাহ ও তীব্র গরমে বাড়ছে নানাবিধ সমস্যা ও রোগব্যাধি। এই সময়টায় সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কী খাবেন এবং কী খাবেন না তা নিয়ে সকলে চিন্তায় ভোগেন। গরমে এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। এই অবস্থায় কী খাওয়া উচিত, ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ফাঁপার সমস্যা মোকাবিলায় কী করণীয়, ওজন কমাতে মিষ্টি ফল বিশেষ করে আম খাওয়া যায় কিনা - ইত্যাদি একাধিক প্রশ্ন থাকে সকলের।
গরমে সুস্থ থাকার প্রধান চাবিকাঠি শরীরকে হাইড্রেটেড (আর্দ্র) রাখা। কারণ, এই সময় অতিরিক্ত ঘামের কারণে আমাদের শরীরে জলের মাত্রা (ডিহাইড্রেশন) কমে যায়। তেষ্টা মেটাতে বা অসহ্য গরমে আরাম পেতে অনেকেই ঠান্ডা জল বা সোডা জাতীয় পানীয় খেয়ে থাকেন, যেটা একদম ভুল করেন। কারণ, প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে গেলে রক্তনালি সংকুচিত হতে পারে, যার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের তাপ কমার প্রক্রিয়ার ওপর। উচ্চ আর্দ্রতায় আপনার যথেষ্ট ঘাম হয় না। ফলে গরমটা আপনার শরীরে থেকে যায়। এজন্যই প্রচুর জল খাওয়ার প্রয়োজন হয়। ব্রেনে মাত্র ২ শতাংশ জল কমে গেলেও আপনার স্মৃতিশক্তি, কগনিটিভ বিহেভিয়র, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই তেষ্টা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন না। কারণ, যতক্ষণে আপনার তেষ্টা পাচ্ছে ততক্ষণে আপনার শরীর ৪০ শতাংশ জলশূন্য হয়ে গিয়েছে। এজন্য গরমে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার জল খাওয়া উচিত। বাইরে বেরোলে জলের বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। নুন-চিনির জল, ওআরএস বোতলে নিয়ে যেতে পারলে ভালো হয়।
বিভিন্ন ফল, কাঁচা স্যালাড ও সবজি যেমন হজম করা সহজ, তেমনই জলের পরিমাণ বেশি থাকায় আপনাকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশন মোকাবিলায় ডাবের জল, লেবুর জল, বাটারমিল্ক, লস্যি, আখের রস, বেলের শরবত প্রভৃতি খেতে পারেন। সফট ড্রিংকস, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় না খাওয়াই ভালো। এই জাতীয় পানীয়ে শর্করা ও অন্যান্য প্রিজারভেটিভ বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ। ফলে শরীরে জলের ঘাটতি হয়ে থাকে। বরং জলে তুলসী বীজ (বেসিল সিডস) ভিজিয়ে খেতে পারেন, যা আপনার শরীরকে শীতল রাখতে সাহায্য করবে। শরীর ঠান্ডা রাখতে মৌরিও দারুণ কাজ করে। সকালে উঠে খেতে পারেন মৌরি ভেজানো জল।
যেসব সবজি খেলে আমাদের শরীর ঠান্ডা থাকে সেগুলো হল, কাঁচা পেঁপে, পটল, ধুন্ধুল, শসা, চিচিঙ্গা, করলা, লাউ, পালং শাক, টমেটো, ঝিঙে, গাজর, বিট প্রভৃতি। এগুলোতে জলের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সহজে হজমযোগ্য এসব সবজি আপনাকে পুরো গ্রীষ্মকাল সুস্থ রাখবে। যাদের গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন সবজি খুবই উপকারী।
পুদিনা পাতা শরীর ঠান্ডা করে। তাই গরমে সু্স্থ থাকতে খেতে পারেন পুদিনা পাতার চাটনি বা রস। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং গরমের দিনে পেটের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
পাতলা করে টক ডাল, সজনে ডাল, তেতোর ডাল শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
এই গরমে সানস্ট্রোক ও শারীরিক দুর্বলতা মোকাবিলায় কাঁচা আম খান। কাঁচা আমের রস বা আম পান্না শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া কাঁচা আমের টক বা চাটনিও সমান উপকারী।
গরমের সময় অনেকেই পান্তাভাত খেতে পছন্দ করেন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকে। শরীরে জলের অভাব দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফার্মেন্টেশনের ফলে পান্তাভাতে ভিটামিন বি-১২ বেড়ে যায়, যা ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক এবং সারাদিনের কাজ করার শক্তি জোগায়। পান্তাভাত পিএইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। আলসারের রোগীদেরও সুফল দেয়। প্রোবায়োটিক্স ভরপুর পান্তাভাত হজম শক্তি রক্ষায় সাহায্য করে। পান্তাভাত ল্যাকজেটিভ হিসেবেও কাজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। পান্তাভাত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসে ভরপুর। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১০০ গ্রাম সাধারণ ভাতে ৩.৪ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। অন্যদিকে, পান্তাভাতের ক্ষেত্রে সেটাই দাঁড়ায় প্রায় ২১ গুণ ৭৩.৯১ মিলিগ্রাম। পান্তাভাত কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। ফলে ত্বক মসৃণ, টানটান ও উজ্জ্বল দেখায়। ফার্মেন্টেশনের কারণে পান্তায় কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। ফলে ওজন কমাতে সহায়ক। তবে অবশ্যই সেটা পরিমাণ মতো খেতে হবে। সাধারণ ভাতের তুলনায় এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম, অন্যদিকে পটাশিয়াম যথেষ্ট বেশি। সুতরাং, গরমের খাবার হিসেবে পান্তার জুড়ি মেলা ভার। তবে পান্তাভাত করতে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ফার্মেন্টেশনের প্রয়োজন। এর থেকে বেশি সময় হলে পান্তাভাতের গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
দই অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটিরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, হজমশক্তি ভালো করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সারাদিনে একবার বিশেষ করে সকালের খাবারে দই-চিঁড়ে-কলা রাখতে পারলে ভালো। এটা যেমন শরীরকে ঠান্ডা রাখবে, তেমনই শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। বিশেষ করে যারা আইবিএস (ইরেটেবল বাওয়েল সিনড্রোম)-এ ভুগছেন তাঁদের জন্য এটি খুবই উপকারী।
গরম মানেই ফলের সময়। বিভিন্ন রংয়ের সবরকম ফল খাওয়াই ভালো। তরমুজ, আনারস, পাকা পেঁপে, বাঙ্গি, লিচু, কাঁঠাল, আম ইত্যাদি গরমের প্রধান ফল। রঙিন ও রসালো এই ফলগুলো যেমন পুষ্টি জোগাবে, তেমনই শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখবে। তরমুজ শরীরের জলের অভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজের লাইকোপিন ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচায়। এছাড়া আনারসে রয়েছে ভিটামিন সি, কপার ও পটাশিয়াম। এই পুষ্টি উপাদান একসঙ্গে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পাকা আমে থাকে ভিটামিন এ এবং সি। পাকা আমের ক্যারোটিন ত্বক মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। লিচুতে রয়েছে পটাশিয়াম ও অক্সালেট, যা শরীরের জন্য উপকারী।
একবারে বেশি খাবার খাবেন না। এতে অ্যাসিড হতে পারে এবং হজমে প্রভাব ফেলতে পারে। অল্প খান। তাতে হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকবে, আপনিও স্বস্তি বোধ করবেন।
গরমকালে অতিরিক্ত মশলা ও তেল না খাওয়াই ভালো। ভাজাভুজি এবং জাংক ফুড হজম হতে সময় লাগে। তাছাড়া মশলাদার খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া রেড মিটও কম খাওয়া ভালো।
কাঁকড়া ও চিংড়ি শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। তাই গরমে এগুলো এড়িয়ে চলুন।
পাতলা মাছের ঝোল, হালকা মশলাযুক্ত তরকারি এবং ভাত এই সময়ের জন্য উপকারী।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team