ভোরের প্রথম সূর্যালোকের আভায় কাঞ্চনজঙ্ঘার রক্তিম চূড়াকে ব্যালকনি থেকেই উপভোগের ইচ্ছে? ঘরের জানালা থেকেই মেঘ কুয়াশার আলিঙ্গনকে সাক্ষী রেখে বাতাসে উড়তে থাকা রঙীন পতাকার দিকে এক মনে চেয়ে থেকে স্মৃতি আর কল্পনার মেলবন্ধনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে? রাতের অন্ধকারে তারাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ওই দূরে ধ্যানগম্ভীর বুদ্ধমূর্তির কাছে সত্যিকারের পাহাড় প্রেমী হবার প্রতিজ্ঞা করার ইচ্ছে? তবে চলে আসুন সিকিমের রিনচেনপং, আপনার ইচ্ছেপূরণে অপেক্ষারত কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে এই ছোট্ট জনপদ।
শিলিগুড়ি থেকে সকাল সাতটায় যাত্রা শুরু। সত্যি বলতে পূর্ব নির্ধারিত কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। তবে ইচ্ছে ছিল এবার সিকিমের কোনো নতুন গন্তব্যে যাওয়ার। ভার্সে, কালুক, রিনচেনপং-- এর মধ্যে কোথাও একটা। আর ফেরার প্ল্যান করব গন্তব্যে পৌঁছনোর পর। রাতে গুগল ম্যাপে একটু স্টাডি করে অস্পষ্ট কিছু ধারণা নিয়ে পাহাড়ে যাচ্ছি এই আনন্দে ঘুমিয়ে সকাল হল। সকাল সাতটায় শিলিগুড়ি থেকে রওনা দিয়ে সবার প্রথমে পৌছলাম জোরথাং-এ। যাত্রাপথে মেল্লি, তিস্তা বাজারকে একপাশে রেখে রঙ্গিতের পাশ দিয়ে এগিয়ে চলা এক দারুণ অনুভূতি।
জোরথাং থেকে এক অচেনা নতুন পথে দুপুর দুটো নাগাদ আমরা এলাম জুম-এ। সেখানে একটা রাস্তা ভাগ হয়ে দাজিলিং-এর দিকে যাচ্ছে আর অন্যটা উপরে উঠে যাচ্ছে কালুক রিনচেনপং-এর দিকে। জুম থেকে পাহাড়ের পাকদন্ডী পেয়ে যতই উপরে উঠলাম অনেক দূরে পাখির চোখে জোরথাংকে ভারী সুন্দর লাগছিল। বিকেলে পৌছলাম সোরেং। বিকেলে মেঘ কুয়াশার আনাগোনায় হিমেল হাওয়ায় সোরেং-এ তখন সূর্যাস্তের প্রস্তুতির প্রাকমুহূর্ত! প্রথমেই কথা বলে নিলাম এক হোম স্টে তে, যদি অন্য কোথাও না জায়গা পাই সোরেং-এই থাকব ঠিক হল। ওখান থেকে একদিকে ভার্সে দশ কিমি, কিন্তু রাস্তা ভাল নয়। স্থানীয় এক ব্যক্তি পরামর্শ দিলেন ভার্সেতে রোডোডেনড্রনের ফুল ফোটার সিজনে আসতে। ঠিক হল অন্য পথে ভালো রাস্তায় একুশ কিমি দূরে কালুক যাব। সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় পথে ক্ষণিকের জন্যে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলল। নানা রঙের ফুলের সমাহার আর ছোটো বড়ো ঝর্ণার জলধারাকে সাক্ষী রেখে সন্ধ্যায় নামতেই কালুক হয়ে রিনচেনপং পৌছলাম।
রিনচেনপং ছোট্ট এক জনপদ। হোটেল মাউন্ট ভিউ-এ থাকব ঠিক হল। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু হোটেল, হোম স্টে রয়েছে। রাত নামতেই হোটেল মাউন্ট ভিউ-এর জানালা দিয়ে আকাশে তারাদের সঙ্গেই দৃশ্যমান হল ছোটো ছোটো অচেনা জনপদের জোনাকীর মতো আলো। রাতে ডিনার করে ব্যালকনি থেকে অনেক দূরে ধ্যানগম্ভীর বুদ্ধমূর্তি স্মৃতির আলপনায় চিরকাল জায়গা করে নেবে।
ব্রেকফাস্ট করে আমরা বেরিয়ে ঘুরে এলাম রিংচেনপং মনাস্ট্রিতে। সকালের মিঠে রোদে মনাস্ট্রির উড়তে থাকা পতাকা আর তার সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের পঠন পাঠনের সাক্ষী থাকা এই ট্যুরের আরো এক প্রাপ্তি। পশ্চিম সিকিমের এই অংশের প্রত্যেকটি রাস্তাই যেন অপার সৌন্দর্য নিয়ে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ফেরার সময় সবসময় অন্য পথ দিয়ে পরিকল্পনা করা আমার বরাবরের অভ্যেস। সেই মতো পেলিং-এর দিকে এগিয়ে চললাম। প্রথমে সবুজ জলের পাহাড়ী নদীর তীরে ডেনটাম, তারপর কয়েকটি ঝর্ণা পেরিয়ে পেলিং-এর কাছে এশিয়ার অন্যতম সুউচ্চ সেতু দেখে পৌছলাম পেলিং মনাস্ট্রির বিখ্যাত গ্লাস ব্রীজে। দ্বিতীয়বার পেলিং ঘুরে রিংচেনপংকে আবার ফিরে আসব কথা দিয়ে দ্বিতীয় দিন রাতে শিলিগুড়ি ফিরলাম। চোখ বন্ধ করলে এখনও যেন দেখতে পাই রিংচেনপং-এর ব্যালকনি থেকে সূর্যোদয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তার সঙ্গে ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধমূর্তির উপস্থিতি।
থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 9434409989। প্রসঙ্গত রিনচেনপং আর কালুক দুটি পাশাপাশি গ্রাম। কালুকে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি নান্দনিক রিসর্ট। সেখানেও থাকতে পারেন।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team