× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105716.jpg
×
সংখ্যা: পৌষ, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
শীতের গল্পগাছা
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
বিশেষ নিবন্ধ
বইমেলা মানে বই যেখানে ছুতো নিমিত্তমাত্র
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১৬
সব্যসাচী দত্ত
খোলা মনে খোলা খামে
টিনের চালে লাল টুকটুকে লেপ - আমার শীতের ছোটবেলা
রম্যাণী গোস্বামী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টউন | পর্ব - ৯
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
টাউন স্টেশন থেকে শুরু করে এশিয়ান হাইওয়ে: শিলিগুড়ির শতাব্দীব্যাপী বিবর্তন কথা
নবনীতা সান্যাল
পর্যটন
রিনচেনপং
অনিন্দ্য পাল
শ্রীমতী ডুয়ার্স
নারী মাত্রই মেয়ে কিন্তু মেয়ে মাত্রই নারী নয়!
ড. শুচিস্মিতা দেবনাথ
পাতাবাহার
আতার পায়েস চলতে পারে একটু?
পাতা মিত্র
পুরানের নারী
সতী
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী গৌতমেন্দু রায়

সতী

শাঁওলি দে
Sati

মহাদেব পত্নী সতী দেবী পুরাণে একজন উল্লেখযোগ্য নারী। মহাদেব ও সতীর উপাখ্যান তো সকলেরই জানা। তবু ‘পুরাণের নারী’র এই পর্বে সতীর জন্মবৃতান্তও সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিই।

আমাদের আদি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা। তাঁর নানা অংশ থেকেই পুরুষ ও নারীর জন্ম। সৃষ্টির একেবারে প্রথমে ব্রহ্মার মুখ থেকে জন্ম হয় অঙ্গীরার, নেত্র বা চোখ থেকে জন্ম হয় অত্রির, প্রাণ থেকে জন্ম হয় বশিষ্ট, মন থেকে জন্ম হয় মরীচির, কর্ণ বা কান থেকে জন্ম হয় পুলস্ত, নাভি থেকে জন্ম হয় পুলহ, বাহু থেকে জন্ম হয় ক্রতুর- এই সাতজনকে আমরা সবাই সপ্তর্ষি নামে চিনি ও জানি।

এছাড়াও ব্রহ্মার অন্যান্য অংশ যেমন ত্বক থেকে জন্ম হয় ভৃগু ঋষির, বৃদ্ধাঙ্গুলী থেকে দক্ষরাজ, মস্তক বা মাথা থেকে অর্ধনারীশ্বর প্রকট হন। এই অর্ধনারীশ্বরকে ব্রহ্মাদেব আবার দুইভাগে ভাগ করেন। পুরুষভাগ থেকে সায়ম্ভুব মনু, যাঁকে মানবজাতির পিতা বলা হয়, আর নারীভাগ থেকে শতরূপার জন্ম হয়, যাঁকে বলা হয় জগতের প্রথম নারী। এইবার ব্রহ্মা আদেশ দেন এই মনু ও শতরূপাকে সংসার জীবন পালন করার। এরপর মনু ও শতরূপার বিবাহ হল। বিবাহসূত্রে তাঁদের পাঁচটি পুত্র ও কন্যা জন্মালো, তাঁরা হলেন যথাক্রমে, বীর (পুত্র), প্রিয়ব্রত (পুত্র), উত্তানপাদ (পুত্র), আকুতি (কন্যা), প্রসুতি (কন্যা)।

বীরের এক কন্যা জন্মালো, নাম কাম্যা, প্রিয়ব্রতের সন্তানেরা ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত হলেন। উত্তানপাদের দুই স্ত্রী- সুনীতি ও সুরুচি। সুনীতির পুত্র ধ্রুব-ধ্রুবতারা, সুরুচির পুত্র উত্তম। আকুতির স্বামীর নাম রুচি, পুত্র ও কন্যার কথা জানা যায় না।

প্রসুতির সঙ্গে বিয়ে হল দক্ষরাজের, যাঁদের চব্বিশজন কন্যা, যারা হলেন, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ধৃতি, তুষ্টি, পুষ্টি, মেধা, ক্রিয়া, বুদ্ধি, লজ্জা গৌরি, বপু, শান্তি, সিদ্ধিকা, কীর্ত্তি, খ্যাতি, সতী, সম্ভূতি, স্মৃতি, প্রীতি, ক্ষমা, সন্নতি, অনসূয়া, ঊর্জ্জা, স্বাহা, স্বধা। দক্ষরাজের অপর স্ত্রীর নাম পাঞ্চজনী, যাঁদের হল আরও ষাটজন কন্যা। ফলে যা দাঁড়ালো তা হল, দক্ষরাজের কন্যার সংখ্যা মোট চুরাশিজন, এদের মধ্যে কনিষ্ঠতম হলেন সতী, যিনি আবার মহাদেবের স্ত্রী।

হিন্দুধর্মে সতী হলেন বৈবাহিক সুখ ও দীর্ঘদাম্পত্য জীবনের দেবী। স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় দেবী সতীর আরাধনা করা হয়। আদ্যাশক্তি মহামায়ার রূপ হলেন দেবী সতী। মহাদেব শিবের প্রথমা স্ত্রী, অন্যজন পার্বতী। মনে করা হয় একই নারী দুই জন্মে সতী ও পার্বতীরূপে মহাদেবকে স্বামী হিসেবে লাভ করেছিলেন।

দেবী সতী মেয়েবেলা থেকেই শিবের আরাধনা করতেন এবং তাঁকেই স্বামীরূপে পেতে চাইতেন। কিন্তু দক্ষ (দক্ষিণ) যখন তাঁর এই প্রিয় কন্যার সয়ম্বরসভার আয়োজন করেন তখন শিবকে আমন্ত্রণ জানাননি। দেবাদিদেব শিব তাঁর পছন্দের পাত্রের তালিকায় ছিলেন না। সতী তাঁর পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েই শিবকে স্বামীরূপে বরণ করেন ও পতীগৃহে যান। শিবকে গৃহমুখী করার সব কৃতিত্বই সতীর।

পরবর্তীতে দক্ষ একবার এক যজ্ঞের (পুরাণখ্যাত দক্ষযজ্ঞ) আয়োজন করলে তাতে শিব ও সতীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। বাকি সকলেই ছিলেন আমন্ত্রিত। বিনা নিমন্ত্রণেই দেবী সতী আসেন, কিন্তু আসার পর নিজের স্বামীর চেহারা নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য শুনতে পান। নিজের ও স্বামীর এই অসম্মান ও অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি যজ্ঞ নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেন ও সেই যজ্ঞেই প্রাণত্যাগ করেন। শিব এই খবর শুনে সতীর দেহ ঘাড়ে নিয়ে ক্রোধে তান্ডব লীলা চালান। সেই থেকে কোনো পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে আমরা সাধারণত বলে থাকি দক্ষযজ্ঞ বেঁধেছে।

শিবের ওই প্রলয় নৃত্যে জগত সংসার লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সকল দেবতার ভয় পেয়ে যান। শিবকে সেই সময় রুখতে পারে এমন কেউ ছিল না। তাঁর ক্রোধের সামনে দাঁড়াতে পারে এমন সাহসও ছিল না কারো। তখনই দেবতাদের অনুরোধে জগতপালক বিষ্ণু নিজের সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে দেন, যাতে ওঁর আবার জন্ম হয় ও শিবের রাগ কিছুটা হলেও ঠান্ডা হয়। পরের জন্মে এই সতীই পার্বতীরূপে জন্মগ্রহণ করেন ও শিবকেই স্বামী হিসেবে বরণ করেন।

প্রসঙ্গত, সতীর এই দেহত্যাগ বা আত্মবলিদানের ঘটনা থেকে সতীদাহ প্রথা চালু হয় যেখানে স্বামী মারা গেলে তাঁর চিতায় জীবন্ত অবস্থায় স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়। যদিও বর্তমানে এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ও বৈআইনি।

বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের দ্বারা কাটা সতীর দেহের বিভিন্ন টুকরো ৫১টি জায়গায় পড়ে, এবং সেখানেই গড়ে ওঠে এক একটি শক্তিপীঠ। পরবর্তীতে সেই শক্তিপীঠগুলিই হয়ে ওঠে হিন্দুধর্মের তীর্থস্থান।

এই একান্ন (৫১)টি তীর্থস্থান ভারতবর্ষসহ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্থানে অবস্থিত।

১। হিঙ্গুলা(হিংলাজ)— সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র, করাচি, পাকিস্তান।

২। করবীর/সর্করারে- দেবীর ত্রিনেত্র, করাচি, পাকিস্তান।

৩। সুগন্ধা- দেবীর নাসিকা, বরিশাল, বাংলাদেশ।

৪। অমরনাথ- সতীর কন্ঠ, শ্রীনগর।

৫। জ্বালামুখী- সতীর জিহ্বা, পাঠানকোট।

৬। জালন্ধর- সতীর বামস্তন, জালন্ধর, পঞ্জাব।

৭। বৈদ্যনাথ- সতীর হূদপিণ্ড, দেওঘর, ঝাড়খণ্ড।

৮। মানস- সতীর ডান হাত, মানস সরোবর।

৯। নেপাল- সতীর জানুদ্বয়, গুজ্যেশ্বরী মন্দির, নেপাল।

১০। উৎকল বিরজাক্ষেত্র- সতীর নাভী, পুরীর মন্দির চত্বরে।

১১। গণ্ডকী- সতীর গণ্ডদেশ, মুক্তিনাথ মন্দির, নেপাল।

১২। বহুলা- সতীর বাম বাহু, কেতুগ্রাম, বর্ধমান।

১৩। উজানী- দেবীর ডান কনুই, গুসকরা, বর্ধমান।

১৪। চট্রল/চট্রগ্রাম- সতীর ডান বাহু, চট্রগ্রাম, বাংলাদেশ।

১৫। ত্রিপুরা- সতীর ডান পা, ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির, ত্রিপুরা।

১৬। ত্রিস্রোতা- সতীর বাম পা, জলপাইগুড়ি।

১৭। কামরূপ কামাক্ষা- সতীর যোনি, গুয়াহাটি।

১৮। যুগাদ্যা- সতীর ডান পাদাঙ্গুষ্ঠ, ক্ষীরগ্রাম, বর্ধমান।

১৯। কালিঘাট- সতীর ডান পাদাঙ্গুলি, কালিঘাট, কলকাতা।

২০। প্রয়াগ- দেবীর হাতের আঙুল, এলাহাবাদ।

২১। জয়ন্তী/জয়ন্তাতে- সতীর বাঁ জঙ্ঘা, শ্রীহট্র, বাংলাদেশ।

২২। কিরীট/কিরীটকোণা- সতীর কিরীট অঙ্গ, মুর্শিদাবাদ।

২৩। বারাণসী- দেবীর কর্ণ, বারাণসী।

২৪। কন্যাশ্রম- দেবীর পৃষ্ঠদেশ, তামিলনাডু।

২৫। কুরুক্ষেত্র- দেবীর গুল্ফ, হরিয়ানা।

২৬। মনিবেদ/মনিবেদিক- দেবীর মনিবদ্ধ, রাজস্থান।

২৭। শ্রীশৈল- দেবীর কর্ণকুণ্ডল, শ্রীহট্র, বাংলাদেশ।

২৮। কাঞ্চিদেশ- দেবীর কঙ্কাল, কঙ্কালীতলা, বোলপুর।

২৯। কালমাধব- দেবীর বাঁ নিতম্ব, মধ্যপ্রদেশ।

৩০। শোন- দেবীর ডান নিতম্ব, মধ্যপ্রদেশ।

৩১। রামগিরি- দেবীর ডান স্তন, উত্তরপ্রদেশ।

৩২। বৃন্দাবন- দেবীর কেশজাল, ভূতেশ্বর মন্দির।

৩৩। শূচি বা অনল- দেবীর ওপরের দাঁতের পাটি, কন্যাকুমারী, ত্রিবান্দ্রম।

৩৪। পঞ্চসায়র- দেবীর অধোদন্তপংক্তি, সঠিক অবস্থান অজানা।

৩৫। করতোয়াতট- সতীর তল্প, বগ্ডুড়া, বাংলাদেশ।

৩৬। শ্রীপর্বত- সতীর ডান তল্প, গুন্টুর, অন্ধ্রপ্রদেশ।

৩৭। বিভাষ- দেবীর বাম গুল্ফ, তমলুক, মেদিনীপুর।

৩৮। প্রভাস- দেবীর উদর, কাথিয়াওয়ারা।

৩৯। ভৈরব পর্বত- দেবীর ঊর্ধ্ব ওষ্ঠ, উজ্জয়িনী, মধ্যপ্রদেশ।

৪০। জনস্থানে/জলেস্থলে- সতীর চিবুক, নাসিক, মহারাষ্ট্র।

৪১। গোদাবরীতট- সতীর বাম গণ্ড, রাজমহেন্দ্রী, অন্ধ্রপ্রদেশ।

৪২। রত্নাবলী- দেবীর ডান স্কন্ধ, খানাকুল, হুগলী।

৪৩। মিথিলা- দেবীর বাম স্কন্ধ, সঠিক স্থান অজানা।

৪৪। নলহাটি- দেবীর নলা, নলহাটি, বীরভূম।

৪৫। কর্ণাট- দেবীর কর্ণদ্বয়, সঠিক স্থান অজানা।

৪৬। বক্রেশ্বর- দেবীর মন/ভ্রূমধ্যস্থ, দুবরাজপুর, বীরভূম।

৪৭। যশোহর- দেবীর পানিপদ্ম, খুলনা, বাংলাদেশ।

৪৮। অট্রহাস- দেবীর ওষ্ঠ, লাভপুর, বীরভূম।

৪৯। নন্দপুর- দেবীর হার, সাঁইথিয়া, বীরভূম।

৫০। লঙ্কা- দেবীর নূপুর, শ্রীলঙ্কা।

৫১। বিরাট- দেবীর উত্তর পাদাঙ্গুলি, জয়পুর।

পুরাণে তথা হিন্দুধর্মে সতী একজন উল্লেখযোগ্য নারী। আজকের দিনেও তাঁর নাম শ্রদ্ধা ও ভক্তির সঙ্গে উচ্চারিত হয়। ৫১টি পীঠে উপচে পড়া ভক্তদের জনসমাগমই তার প্রমাণ। নির্দিষ্ট তিথি ছাড়াও প্রায় রোজই অসংখ্যা মানুষ মায়ের আরাধনায়, নিজেদের ইচ্ছেপুরণের, সুস্বাস্থ্যের, ধন ও ঐশ্বর্যের, সুখ শান্তি কামনার জন্য ভিড় করেন। সতী নামের মাহাত্ব্য লোকের মুখে মুখে ফেরে। তাঁর আত্মবলিদানের গল্প কাহিনীতে জড়িয়ে থাকে অদ্ভুত এক আবেগ।

যদিও এই ৫১টি পীঠস্থানের জায়গা, দেহের টুকরো অংশ, আদৌ এটা ভারতবর্ষসহ এশিয়ারই কিছু দেশের লোকসৃষ্ট গল্প নাকি অন্য কোনো দেশের গল্পকথা লোকমুখে ঘুরতে ঘুরতে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে, এইসব নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে, তবু হিন্দুধর্মে ওপরের ঘটনাগুলোই বিশ্বাস করা হয় এবং যা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team