লেপচা ভাষায় তাকদা মানে নাকি কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা। নামে কী আসে যায়? এখন আর তত পর্দানশীন, অনাঘ্রাতা নয় তাকদা। আসলে আমাদের ভ্রমণ চাহিদার চোটে উত্তরবঙ্গের সব গ্রামই মনে হয় এটুঁ হয়ে গেছে। দার্জিলিং থেকে ৩০কিমি মতো দূরে তাকদাও ব্যতিক্রম নয়।
বিয়ের আগে কুলগোত্র জানার চেষ্টা করিনি বটে কিন্তু বেড়াতে যাবার আগে একটু খোঁজখবর করে না নিলে ঠিক রস জমে না। কেমন আলুনি লাগে। বিশেষত ইতিহাসের গন্ধ তো খাবারের সেন্টের মতো। জিভ যা খায় নাক তাতে বেশি সায় দেয়। আপেলকে আলাদা করে আলুর স্বাদ থেকে। ভেতো মাংসকে করে তোলে নবাবী বিরিয়ানী।
দেখা শোনা মিলে যা বুঝলাম, অন্যান্য শৈল শহরের মতো এটাও ইংরেজদের হাত ধরেই পরিচিতি পেয়েছে সমভূমিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছু আগে এটাই ছিল বৃটিশ সেনা শহর। এখনো তাই লেখা আছে তাকদা ক্যান্টনমেন্ট। কিন্তু বেচারার ভাগ্য খারাপ। বিশ্বযুদ্ধের শেষে দলবল সরে গেল কালিম্পং এর দিকে। সুদৃশ্য ইউরোপিয়ান স্থাপত্যের নিদর্শন নিয়ে পরিত্যক্ত হল তাকদা। আর্মি অফিসারের বাংলো হয়ে গেল শোনপুরের রাজার বেড়ানোর বাড়ি। যা এখন বাংলো নম্বর ১২ নামে খ্যাত।এ রকম প্রায় ১৩-১৪ টা বাংলো এখনো হেরিটেজ হোটেল বা কর্মস্থল হিসেবে টিকে আছে। বৃটিশ বাবুদের ক্লাব কালচার ছিল মাস্ট। বিনোদনের কেন্দ্রস্থল, সেকালের ক্লাবহাউস এখন মন্ত্রী-সান্ত্রীদের বিশ্রামাগার। পরিত্যক্ত বসতি এখন পর্যটনকেন্দ্র। তা ভালো।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু আমি তো রাজা-গজা মন্ত্রী-টন্ত্রী নই তাই জনগনতান্ত্রিক হীনমন্যতায় ভাবছিলাম ব্যারাকগুলো কোথায় গেল? মানে সেনা শহরে তো আর শুধু সেনানায়করা থাকেন না; আমার মতো সাধারণ সৈনিকরা কোথায় থাকত? অফিসারদের বাংলো তো বড়লোকেরা পেল, সেনাদের ব্যারাকগুলো আমাদের জন্য ডরমেটারি হতে পারত না? আমার শোনা পড়ার সীমিত মানচিত্রে তাদের কোন খোঁজ নেই। অগত্যা.....
তবে এবার পুজোতে খুঁত ছিল নিশ্চয়। পাহাড়ে গিয়ে বরুণদেবের রোষে ঘরে শুয়েই কেটে গেল সারা সারা দিন। তবুও যে সন্ধ্যালোকে আভাষণ মিলে গেল তাঁর; সে পরম ভাগ্য। ফেরার দিন সকালে আবার যেতে হল ছবি তুলতে। আহা সে কী সাংঘাতিক আবিষ্কার!
মূলত তাকদা বাজার থেকে যে চোরাবাটো নেমে গেছে কোলবং-এর জন্য, তার দুপাশে পেলাম বেশ কিছু সৈন্যাবাসের স্মৃতি। নীচের রাস্তাতেও আছে। সেনা ছাউনিগুলি কেউ হসপিটাল হয়েছে, কেউ স্কুল। কেউ কেউ নিশ্চিন্তে ভেঙে যাচ্ছে যেভাবে ভোর রাতে ভাঙে স্বপ্ন।
ভারি মজা লাগল। পাহাড়ের ধাপে ধাপে কেমন হায়ারার্কি মেইনটেইন হতো সেকালে! সত্যি তো! পাহাড়ের ধাপকে আমার কখনো রাজপ্রাসাদের সিঁড়ি মনে হয়নি কেন?
তথ্য-- তাকদা বা তাগদায় কিছু প্রিমিয়াম দামের বাংলো ছাড়াও হোমস্টে আছে, পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ওয়েব সাইটে গেলে অনলাইনে বুকিং ইনফরমেশন পাওয়া যাবে। তাকদা থেকে কোলবং গ্রামের দূরত্ব দু কিলোমিটার। কোলবং-এ চমৎকার হোমস্টে রয়েছে। যোগাযোগ ৯৪৩৪৮৭৩০৮০, পাশের আরেকটি খুব পরিচিত পর্যটন গাঁয়ের নাম তিনচুলে।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team