মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান। অতীতে ভাষার ভিত্তিতে ভারতের অনেক রাজ্যের বিভাজন ঘটেছে। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বাঙালি জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানকে খন্ডিত করে সৃষ্টি করেছে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। পৃথক রাজ্য গঠনের প্রাথমিক শর্ত মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় - এ কথা মাথায় রেখেই কামতাপুরী ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে ১৯৯৭ সাল থেকে কেপিপি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে। ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফশিলে কামতাপুরী ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে কেপিপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। শুধু তাই নয়, ৯ দফা দাবি সম্বলিত ওই স্মারকলিপিতে ২০০১ সালের আদম সুমারিতে কামতাপুরী ভাষীদের কামতাপুরী হিসেবে নিবন্ধীকরণ এবং তাঁদের মাতৃভাষাকে কামতাপুরী হিসেবে নথিভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচন ছাড়াও ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রার্থী দেয় কেপিপি। বলাবাহুল্য একটি আসনেও জিততে পারে নি তারা। এর প্রেক্ষিতে দলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে প্রচণ্ড হতাশা দানা বাধে। ২০০৩ সালে কেপিপি নেতা অতুল রায় কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। কেপিপি অতুল রায়কে দল থেকে বহিষ্কার করে। ধীরে ধীরে কেপিপিও একটু একটু করে দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রায় সমসময়িক সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসমের বিচ্ছন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম (ULFA) এর অনুকরণে উত্তরবঙ্গে গঠিত হলো কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পৃথক কামতাপুর রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সামিল হয়ে কিছু রাজবংশী যুবক গঠন করলেন এই সংগঠন। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম থানার উত্তর হলদিবাড়ি গ্রামে শ্রীনিবাস দাসের বাড়িতে ১৯৯৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর এক সভার মধ্যে দিয়ে জন্ম হলো কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের।
সে দিনের সভায় কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা ও নিম্ন অসম থেকে মোট এগারো জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে তমির দাস ওরফে জীবন সিংহ পরবর্তিকালে কেএলও র সুপ্রিম কমাণ্ডার নির্বাচিত হন। শ্রীনিবাস ছাড়াও ওই সভায় তাঁর ভাই মধুসুদন দাস ওরফে টার্জন উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা হলেন, কুমারগ্রামের হর্ষবর্ধন বর্মন (যিনি পরবর্তীতে কেএলও-র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন), ভক্তিনগরের চিরঞ্জিত রায়, বাদল রায়, অজিত রায়, শীতলকুচির পুলক বর্মন ও নকশালবাড়ির মনীন্দ্রনাথ সিং। এরা সবাই ছিলেন অল কামতাপুর স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা “আকসু” র সাবেক সদস্য। এ ছাড়া ওই সভায় অসমের কোকরাঝাড় জেলা থেকে উলফা নেতা ভাস্কর ও অজয় কোচারিও উপস্থিত ছিলেন।
কেএলও সদস্যদের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নিলো উলফা কমান্ডোরা। কখনো অসম ভুটান সীমান্তের গভীর জঙ্গলে, কখনো মায়ামমারে রাখাইন প্রদেশে আবার কখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর অরণ্যে। সবটাই চললো গোপনে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে রাজবংশী যুবক কেএলওতে যোগ দিয়ে গোপন ডেরায় চলে গেলেন। ১৯৯৪ থেকে ২০০২ পর্যন্ত মোট ১৭৪ জন যুবক নাম লেখালেন সরকার নিষিদ্ধ এই সংগঠনে। ভুটান বাংলাদেশে গড়ে ওঠে কেএলও-র ঘাঁটি। বাংলাদেশের খালেদা জিয়া সরকার উলফার মতোই ভারত বিরোধী এই সংগঠনকে সে দেশের মাটিতে লালন করতে থাকে।
১৯৯৮ সাল থেকে গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়ে যায় কেএলওর জঙ্গি কার্যকলাপ। মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ছয়জন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে কেএলও জঙ্গিরা। দু জন পুলিশ সহ তাঁদের হাতে খুন হয়ে যায় ৩১ জন সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জন ছিলেন সিপিএম-এর কর্মকর্তা। ১৯৯৯ সালের নভেম্বর মাসে শিলিগুড়ির কাছে রেলের একটি ক্যাশ কাউন্টার থেকে কেএলও জঙ্গিরা দুজন রেলরক্ষীকে খুন করে সাত লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পরই কেন্দ্রীয় সরকারের টনক নড়ে। ভুটানের মাটি থেকে ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে শুরু হয় ভুটান সরকারের সাথে ভারত সরকারের আলোচনা। প্রথমত সে দেশ থেকে ঘাঁটি গুটিয়ে ফেলতে জঙ্গিদের সাথে আলোচনা শুরু করে ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র ভুটান। কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয় নি। শান্তি আলোচনার পাশাপাশি জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে থাকে উলফার মদতপুষ্ট কেএলও।
২০০৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভর সন্ধ্যায় নিশিগঞ্জ বাজারে একদল সশস্ত্র কেএলও জঙ্গি হামলা চালিয়ে গোপাল দেবনাথ নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যাবার সময় তাঁদের এলোপাথাড়ি গুলি বৃষ্টিতে সুকুমার মিত্র ও লক্ষণ দাস নামে দুজন নিরীহ মানুষ নিহত হন। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে গোপালবাবুর বাবা ব্যবসায়ী কালী দেবনাথের কাছে চিঠি লিখে মোটা টাকা দাবি করা হয়েছিল কেএলও-র পক্ষ থেকে। টাকা না দিয়ে এই হুমকির কথা তিনি পুলিশকে জানিয়ে দেন। গোপালবাবুকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জঙ্গিরা রাতের অন্ধকারে চম্পট দেয়।
একের পর এক জঙ্গি তত্পরতায় কেন্দ্র রাজ্য উভয় সরকারই ব্যতিব্যস্ত হয়ে হয়ে ওঠে। এবার দক্ষিণ ভুটানে গজিয়ে ওঠা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি গুড়িয়ে দিতে ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় ভুটান-ভারত যৌথ সামরিক অভিযান “অপারেশন অল ক্লিয়ার”। শুধু কেএলও নয়, ভুটানের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠা উলফা, এনডিএফবি সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটিগুলো গুড়িয়ে দিতে এই অভিযান চললো প্রায় এক মাস ধরে। সেনা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে অনেক জঙ্গির মৃত্যু হয়। আলিপুরদুয়ার ভুটান সীমান্তের কালিখোলায় সংকোষ নদীর তীরে ভুটানের পাহাড় থেকে নেমে আসা জঙ্গিদের সাথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর লড়াই চলে টানা দশ-বারো দিন ধরে। ভারত-ভুটান এই যৌথ সেনা অভিযানে বেঁচে থাকা প্রচুর জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে। অনেকে পালিয়ে গিয়ে উত্তরের বনাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। “অপারেশান অল ক্লিয়ার” শেষ হয় ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি।
এর কদিন পর ২০০৪ এর ১৪ জানুয়ারি সন্ধেয় ভুটান থেকে পালিয়ে আসা চার জঙ্গি মাথাভাঙার হাজরাহাটে অতর্কিতে বাইকে চেপে এসে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গৌতম সরকার, অজয় বিশ্বাস, গৌড় মণ্ডল ও রবি বিশ্বাস নামে চারজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে একে-৪৭ এর তিনটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনার দুদিন পর পুলিশ মোট আটজন সন্দেহভাজন কেএলও জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। জলপাইগুড়ি রেঞ্জের আইজি ভূপিন্দ্র সিং জানান, রাজ্যের প্রাক্তন এক মন্ত্রীর পুত্র জনৈক মৃণাল রায় এই ঘটনার মাষ্টারমাইন্ড। মূলত এই ঘটনার পর থেকেই উত্তরবঙ্গে কেএলও তত্পরতা কমে যায়। এ দিকে সেনা অভিযানের ফলশ্রুতিতে নিশিগঞ্জের অপহৃত ব্যবসায়ী গোপাল দেবনাথ মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
সেনা অভিযানে কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ মারা গেছেন না বেঁচে আছেন - এ নিয়ে নানা রকম খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অনেকে বলেন তিনি বেঁচে আছেন। বাংলাদেশ বা মায়ানমারে আশ্রয় নিয়েছেন। জীবন সিংহ ওরফে তমির দাসের দাদা সমীর দাস কদিন আগে আলিপুরদুয়ার জেলার উত্তর হলদিবাড়ি গ্রামে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কলেজে পড়ার সময় তাঁর ছোট ভাই তমির (জীবন সিংহ) সেই যে বাড়ি ছেড়ে শিলিগুড়িতে চলে গিয়েছিলেন আর কোনওদিন ফিরে আসেন নি। জীবন সিংহের ঘরদুয়ার তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। কেএলও র তত্পরতা ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে এলো।
বাম আমলে কোচবিহারের স্থানীয় মানুষের ধর্মীয় অধিকারে অবাঞ্ছিতভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। যার ফলাফল হয়েছে মারাত্মক। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে কোচবিহারের মহারাজার সম্পাদিত ভারত ভুক্তির চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহারের দেবদেউল ধর্মস্থানগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি “দেবত্র ট্রাষ্ট বোর্ড” গঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোচবিহারের মহারাজাকে এই বোর্ডের সভাপতি পদে অভিষিক্ত করা হয়। কোচবিহারের জেলা শাসককে পদাধিকার বলে এই বোর্ডের সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। মহারাজার সুপারিশ অনুযায়ী বাকি তিনজন সদস্যকে এই সভায় মনোনীত করা হয়। গঠনতন্ত্রে লিপিবদ্ধ ছিল যে মহারাজার অবর্তমানে (মৃত্যুর পর) কোচবিহার রাজবংশের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ট্রাষ্ট বোর্ডের সভাপতি পদে আসিন হবেন। ভারতভুক্তির চুক্তিতে, ভারতে মিশে যাবার পরও প্রতিটি ক্ষেত্রে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার কথা লিপিবদ্ধ করা আছে।
কিন্তু বাম সরকার শুধু মাত্র একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে এক হটকারি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে “দেবত্র ট্রাষ্ট বোর্ড” এর গঠনতন্ত্র আমূল পাল্টে দেয়। কোচবিহার থেকে নির্বাচিত বামফ্রন্টের এক মন্ত্রী পেছন থেকে গোটা ঘটনার কলকাঠি নাড়তে থাকেন। মহারাজার মৃত্যুর পর থেকে শূন্য সভাপতি পদে কোচবিহার রাজবংশের উত্তরসুরি হিসেবে কুমার অনিলেন্দ্রনারায়ণকে মেনে নিতে অস্বীকার করে বাম সরকার। কুমার অনিলেন্দ্রনারায়ণ এ নিয়ে জেলা আদালতে মামলা দায়ের করেন। জেলা আদালত কুমার অনিলেন্দ্রনারায়ণকে ঐ পদে বসাতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। কিন্তু এই রায়কে মর্যাদা না দিয়ে রাজ্য সরকার কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলাটি নিয়ে যায়। ক্ষোভের আগুন অনেক দূর ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ১৯৯৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কোচবিহারের মাটিতে জন্ম হলো “গ্রেটার কোচবিহার পিপলস এসোসিয়েশন” এর।
কুমার অনিলেন্দ্রনারায়ণকে “দেবত্র ট্রাষ্ট বোর্ড” এর সভাপতি পদে নিয়োগের পাশাপাশি, কোচবিহারের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিকে রক্ষা করা এবং কোচবিহার রাজ্যের ইতিহাস, রাজ্যের বিদ্যালয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করার দাবিও জানানো হয় গ্রেটারের দাবি পত্রে। তবে তাদের দাবিপত্রে কোথাও পৃথক রাজ্যের দাবির উল্লেখ ছিল না। কুমার অনিলেন্দ্রনারায়ণকে সভাপতি ও অরুণকুমার রায়কে সম্পাদক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে কোচবিহারের বিশিষ্ট দুই আইনজীবি আনন্দজ্যোতি মজুমদার এবং মোহিতানন্দ চক্রবর্তীও ছিলেন। ভারতভুক্তি চুক্তি একতরফাভাবে খেলাপ করে কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের গঠনতন্ত্র আমূল পাল্টে দেওয়াকে কোচবিহারের ধর্মপ্রাণ মানুষেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। ক্ষোভ ধূমায়িত হতে থাকে তৃণমূল স্তরে। এই ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে গ্রামেগঞ্জে গ্রেটারের প্রচারে বিপুল জনসমর্থন মিলতে শুরু করলো। এদিকে গ্রেটারের ক্রমবর্ধমান জনসমর্থনের সাথে সাথে সংগঠনের ভেতরে শুরু হয়ে গেল তুমুল গোষ্ঠী কোন্দল। ২০০০ সালের শেষ দিকে একুশ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয় গ্রেটার কোচবিহার পিপলস এসোসিয়েশনের নতুন কমিটি। এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন জ্যোতিষচন্দ্র সরকার আর সম্পাদক নির্বাচিত হন বংশীবদন বর্মন। কোচবিহারের রাজনৈতিক অঙ্গনে বংশীবদন বর্মন একটু একটু করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে শুরু করেন। বংশীবাবুর পাশে ছিলেন আশুতোষ বর্মা ও ফণীন্দ্রনাথ বর্মনের মতো লড়াকু নেতারা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা অরুণ রায়রা ধীরে ধীরে ব্যাকফুটে চলে গেলেন।
এবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে দিল গ্রেটার কোচবিহার পিপলস এসোসিয়েশন। ১৯৪৯ সালের কোচবিহারের ভারতভুক্তির চুক্তি অনুযায়ী, কোচবিহারকে “গ” শ্রেণীর রাজ্যের মর্যাদা প্রদানের জন্য ২০০০ সালের ২৬ ডিসেম্বর, এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ঐ স্মারকলিপিতে বলা হয়েছিল, কোচবিহার রাজ্য ১৯৪৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের সাথে সংযুক্ত হয় এবং ঐ বছর ২৬ নভেম্বর ভারতীয় সংবিধানে কোচবিহারকে একটি “গ” শ্রেণীর রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সুতরাং কোচবিহারকে “গ” শ্রেণীর রাজ্যের মর্যাদা আবার ফিরিয়ে দিতে হবে। তাদের মতে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারী কোচবিহার রাজ্যের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সংযুক্তি সম্পূর্ণ অবৈধ, অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করা হয় ঐ স্মারকলিপিতে। তাদের দাবির সমর্থনে গোটা জেলার গ্রামেগঞ্জে শুরু হয় মিছিল জনসভা।
গ্রেটারের অভূতপূর্ব জনসমর্থনে বাম সরকার বিচলিত হয়ে পড়ল। ২০০৫-এর ১৮ জুলাই কোচবিহার শহরের বুকে গ্রেটারের প্রথম শোভাযাত্রা ও সমাবেশ আলোড়ন ফেলে দিল জেলার রাজনীতিতে। জেলার গ্রামগঞ্জ থেকে লক্ষ মানুষ সেদিন এই শোভাযাত্রায় পায়ে পায়ে সামিল হলেন। ঘন ঘন উলুধ্বনি আর ঢোল দোতারার ড্যাঙে শহরের আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠলো। গোটা শহর কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়লো। জেলা শাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করে সুশৃঙ্খলভাবে নীরব পদচারনায় আবার ফিরেও গেলেন সবাই যে যার গন্তব্যে। প্রশাসনিক কর্তারা কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়লেন এই বিশাল সুশৃঙ্খল জনসমাগম দেখে। বংশীবদনের নেতৃত্ব সেদিন পূর্ণ মান্যতা পেল। আত্মম্ভরী বাম সরকার এবারও কিন্তু আলাপ আলোচনার রাস্তায় হাটলো না। পুলিশী দমনপীড়ন বজায় থাকলো আগের মতই।
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team