× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021105753.jpg
×
সংখ্যা: নভেম্বর, ২০২১
সম্পাদকের কলম
এ দেশের বুকে আরোগ্য আসুক নেমে
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
পর্যটনের ডুয়ার্স
বান্দাপানি বনবাংলোয়
শান্তনু রায়
পর্যটনের ডুয়ার্স
বরফে ঢাকা নাথাং ভ্যালি
প্রতাপ কুমার মণ্ডল
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও উত্তরের উত্তরণ লিপি। পর্ব - ৫
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
রাজনগরের রাজনীতি। পর্ব - ৯। স্বাধিকারের দাবিতে বারবার আন্দোলনমুখী হয়েছে কোচবিহার।
অরবিন্দ ভট্টাচার্য
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন। পর্ব - ১
সব্যসাচী দত্ত
ধারাবাহিক উপন্যাস
ডাউন হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট। পর্ব - ১৩
সুজিত দাস
নিয়মিত কলম
মুর্শিদাবাদ মেইল। বাংলার বিস্মৃত বীর মীরমদন
জাহির রায়হান
নিয়মিত কলম
ল্যাব ডিটেকটিভ। পর্ব -৩। ডিএনএ টেস্ট অপরাধী ধরায় বিপ্লব আনলো
নিখিলেশ রায়চৌধুরী
নিয়মিত কলম
আমচরিত কথা। পর্ব - ৯। ভালবাসা ভালবাসা
তনুশ্রী পাল
নিয়মিত কলম
এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? স্বর্ণকোশের কাছে
শৌভিক রায়
বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ভারতীয় নারী
সত্যবতী মতিলাল সিরসত: ভারতে আধুনিক ক্যান্সার গবেষণার রূপকার
রাখি পুরকায়স্থ
পুরানের নারী
যযাতি পত্নী শর্মিষ্ঠা
শাঁওলি দে
পাতাবাহার
মিনি চিজ কেক
পাতা মিত্র

এই ডুয়ার্স কি তোমার চেনা? স্বর্ণকোশের কাছে

শৌভিক রায়
EiDooarsKiChena_Kumargram
ছবি - সংকোশ

রাজধানী কলকাতা থেকে দূরত্বের বিচারে এই রাজ্যের সবচেয়ে দূরের ব্লক কুমারগ্রামে তখন সদ্য সকাল হয়েছে। সকালের শান্ত নির্জন এই ছিমছাম পরিবেশে একটু কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে স্বর্ণকোশের বয়ে চলার জলশব্দ। নদীতীরের সোনালি বালিতে রোদ ঠিকরে চোখ ঝলসে দিচ্ছে যেন! মন বলে উঠল অরণ্যদেবের সেই কিলাউয়ের সোনাবেলা বোধহয় এরকমই! নদীর ওপারে, উত্তরদিকে, ভুটান পাহাড়ের নীলে গাঢ় সবুজের সমাহার। পুবে তাকালে সবুজে ছাওয়া যে সমতলভূমি দেখা যাচ্ছে, সেটি প্রতিবেশী রাজ্য অসম। এত উদাত্ত প্রকৃতি ডুয়ার্সের খুব কম জায়গাতেই দেখা যায়। পর্যটন মানচিত্রে এই এলাকাটি আজকাল যেন একটু অবহেলিত। অথচ বাজি ধরে বলা যায় যে, এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য টেক্কা দিতে পারে তাবড় বিখ্যাত জায়গাগুলিকে।

কালিখোলা ভুটানের অসামান্য পরিবেশে স্বর্ণকোশের কাছে আসা। এই নদী সংকোশ নামেই পরিচিত। ভুটানের পুনাখায় পাচু আর মাচুর মিলিত প্রবাহ স্বর্ণকোশ বা সংকোশের যাত্রাপথে জড়িয়ে রয়েছে এই অঞ্চলের কত ইতিহাস! ভুটানের ভাষায় 'চু' মানে নদী। 'পা' অর্থে পিতা এবং 'মা` অর্থে মাতা। অর্থাৎ পিতা ও মাতা সদৃশ দুই নদী মিলে সৃষ্টি হয়েছে সংকোশের। কোচবিহার রাজবংশের আদি পুরুষ হরিদাস বা হাড়িয়া মন্ডলের রাজ্যাভিষেকের বর্ণনায় যেমন সংকোশের কথা পাওয়া যায় তেমনি মহারাজা নরনারায়ণের সময় এই নদীর গতিপথকে চিহ্নিত করে কামরূপ ও কোচবিহারের সীমানা নির্ধারণ করা হত। ১৫৮৬ সালে এই অঞ্চলে আসা ইংরেজ ব্যবসায়ী রালফ ফিচের বর্ণনাতেও সংকোশের আভাস পাওয়া যায়। অতীতের সেই গতিপথ খানিকটা পরিবর্তন করলেও সংকোশের গুরুত্ব আজও কমে নি। কালজানি ও রায়ডাকের মিলিত ধারা সংকোশের সঙ্গে মিশে গদাধর নামে অসমে প্রবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ আর অসমের সীমান্তে বয়ে চলা এই নদীর রূপলাবণ্যে মোহিত হতে সময় লাগে না।

ছবি - নিউল্যান্ড চা-বাগানের শতাব্দী প্রাচীন পোস্ট অফিস

একসময় কোঙাররা ছিলেন এই এলাকার জমিদার। ভুটানরাজ তাঁদের কাঠাম বা বিচারক নিযুক্ত করেন। আসলে কাঠামরা ছিলেন রেভিনিউ এজেন্ট। মনে করা হয় যে, হংসদেব কোঙারের নামে এই এলাকার নাম হয়েছে কুমারগ্রাম। তবে এই বংশে জয়দেব কোঙারও ছিলেন ডাকসাইটে মানুষ। কুমারগ্রামের সঙ্গে দুয়ার বসেছে ভুটানে যাওয়ার অন্যতম দ্বার বোঝাতে। তবে রাজপরিবারের কুমার বা কায়স্থ পরিবারের বসবাস থেকেও কুমারগ্রাম শব্দটি আসবার তত্ত্বকে অস্বীকার করা যায় না। রাজধানী কলকাতা থেকে দূরত্ব বিচারে অন্তিম ব্লক কুমারগ্রামদুয়ার ডুয়ার্সের 'আঠারো দুয়ার'-এর অন্যতম। অত্যন্ত সমৃদ্ধ প্রাচীন এই জনপদের ইতিহাস কিন্তু আজ আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের সময় পোয়াতু দাস, দেবেন দাস, অবিনাশ দাস, সুনীল সরকার, দেওয়ান রায় প্রমুখের নেতৃত্বে এই কুমারগ্রাম থানা দখল করে স্বাধীন ভারতের পতাকা তোলা হয়েছিল। শোনা যায় যে, পোয়াতু দাস দারোগার বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লে তিনি বন্দুক নামাতে বাধ্য হন। তারও আগে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে কুমারগ্রামে মঘা দেওয়ানি, পশুপতি কোঙারের সরকারি হাট বয়কট করে কুলকুলির হাট স্থাপন নিঃসন্দেহে সাড়া জাগানো ঘটনা ছিল। মঘা দেওয়ানিকে গ্রেপ্তার করেও জনতার চাপে মুক্তি দিতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রশাসন। আর সেই আন্দোলনে চন্দ্রদীপ সিং ও কুলদীপ সিং নামে দুই পাঞ্জাবি যুবকের ভূমিকা কখনই ভুলবার নয়। দেশপ্রেমিক সতীন সেনকে বন্দি করা হয়েছিল এখানকার থানায়।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালেও কুমারগ্রামের চা-বাগানগুলির শ্রমিক আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। কুমারগ্রামদুয়ারের থানা কিন্তু অত্যন্ত প্রাচীন। মনে করা হয় যে, লস্ট হরাইজন বা স্যাংগ্রিলা অর্থাৎ ভুটান থেকে নেমে আসা দুর্বৃত্তদের দমন করবার জন্যই এখানে থানা তৈরি করা হয়েছিল। গড়ে তোলা হয়েছিল তহশিল। এই এলাকার জয়দেবপুর, অমরপুর ইত্যাদি নামের মধ্যে অতীতের সেই তহশিলদারের নাম লুকিয়ে রয়েছে। দুর্দান্ত ভুটিয়ারা অতীতে এসব এলাকায় এলে ঘরবাড়ি ছাড়া হওয়াটা মোটামুটি নিয়মের মধ্যে ছিল। কেননা অত্যাচারী ভুটানিদের হাত থেকে পরিত্রানের উপায় থাকত না। কুমারগ্রামদুয়ারে আজও শোনা যায় যে, ভুটানরাজ বা রাজপুত্রদের শিকারে যাওয়ার সময় তাঁদের দিকে তাকানো নিষিদ্ধ ছিল। কিছুদিন আগেও এই অঞ্চলে ধুলিয়া নামের এক সম্প্রদায়ের বাস ছিল। কালের যাত্রায় আজ তারা মিলেমিশে গেছে।

ছবি - কালিখোলা ভুটানের একটি বাড়ি

অন্যদিকে, আজকের সংকোশ বলতে অবশ্য ডুয়ার্সের কুমারগ্রাম ব্লকের ছবি চোখে ভাসে। অত্যন্ত প্রাচীন এই জনপদ আঠারো দুয়ারের অন্যতম এবং এখান থেকে খুব সহজে কালিখোলা হয়ে চলে যাওয়া যায় ভুটানে। রায়ডাক ও সংকোশ নদীর মাঝের এই তরঙ্গায়িত ভূখন্ড অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সবুজ চা-বাগান এবং শাল-সেগুন-জারুল-চিকরাশির অরণ্যে সমৃদ্ধ। চা-বাগান, বক্সার গভীর অরণ্য, রায়ডাক-সংকোশ নিয়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়া যায় এখানে। কিন্তু টুরিস্টের দৃষ্টিতে নয়, দেখতে হবে ট্রাভেলারের মতো। তবেই মিলবে আসল রস। আলিপুরদুয়ার থেকে ৫০ কিমি দূরের কুমারগ্রামদুয়ার পৌঁছনো যায় ঘন্টা দেড়েকের ছোট্ট সফরে। প্রকৃতি, মানুষজন ধীরে ধীরে পাল্টে যায় সফরপথে। কুমারগ্রামদুয়ার পেছনে ফেলে সামনে এগোলে আরণ্যক পরিবেশ আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চা-বাগান। কুমারগ্রাম চা-বাগানের শোভায় বুঁদ হতে না হতেই চলে আসে নিউল্যান্ডস চা-বাগান। আর একদিকে দেখা যায় সংকোশ চা-বাগানের রূপরেখা। টি-ট্যুরিজমের এক অনন্য গন্তব্য এই ত্রয়ী।

নিউল্যান্ডস চা-বাগান ঘেঁষে বয়ে চলেছে রায়ডাক নদী আর নদীর ওপারে বক্সা টাইগার রিজার্ভের ঘন জঙ্গল। এখানে যদি নদীর ওপর সেতু থাকতো তবে সামান্য সময়ে পৌঁছে যাওয়া যেত শামুকতলা, তুরতুরি, হাতিপোতা বা জয়ন্তীতে। কিন্তু সে দুঃখ কেটে যায় নিউল্যান্ডস চা-বাগানের উত্তরপ্রান্তের বনবস্তি আর বক্সার গা ছমছমে অরণ্যের স্পর্শে। ইদানিং কিছু হোম স্টে হয়েছে এখানে। রয়েছে এস এস বি-এর অতন্দ্র প্রহরা। নিউল্যান্ডস চা-বাগানের উল্টোদিকে গুডরিক কোম্পানির অধীনে থাকা সংকোশ চা-বাগানও কম যায় না। ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন এই চা-বাগানটি মুহূর্তেই মন কেড়ে নেয়। হাসপাতাল, বিদ্যালয়, ক্রেশ, শ্রমিক ও বাগানের কর্মচারীদের জন্য সুন্দর কোয়ার্টার আর বিরাট কারখানা মিলে সংকোশ চা-বাগানকে ভালো না বেসে থাকা যায় না। বাগান লাগোয়া জনবসতিতে ডুয়ার্সের কসমোপলিটান ছাপ সুস্পষ্ট। এখনও রয়েছে কাঠের দোতালা জাতীয় ডুয়ার্সের ট্রাডিশনাল বাড়ি। মন্দিরের পাশেই গড়ে ওঠা চার্চ মনে করিয়ে দেয় যে, ডুয়ার্সের নানা জনজাতির মিশ্র সংস্কৃতিতে ধর্ম কোনোদিন বাধা হতে পারে নি।

ছবি - কালিখোলা ভুটানের একটি মন্দির

চা-বাগানের একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছটফটে সংকোশ আর নদীর ওপারে অসমের ভূখণ্ড। নদীর নামেই চিহ্নিত ছোট্ট জনপদ সংকোশ প্রসিদ্ধ তার চা-বাগানের জন্য। সংকোশ চা-বাগান সহ কাছের কুমারগ্রাম, নিউল্যান্ড ইত্যাদি চা-বাগানগুলি উনবিংশ শতকের শেষদিকে তৈরী হয়েছিল। সংকোশ চা-বাগান ও চা-বাগান ঘিরে গড়ে ওঠা ছোট্ট জনপদ আক্ষরিক অর্থেই কসমোপলিটান। ভীষণ ভাল লাগে মন্দিরের পাশে নির্মীয়মাণ চার্চটি দেখে। এই জনপদে রয়েছে ডুয়ার্সের বহু প্রাচীন বাড়ি যাদের বয়স শতাধিক। বেশ কিছু জনজাতির বাসও এই এলাকায়। সংকোশ থেকে সামান্য দূরত্বে নিউল্যান্ড চা-বাগানের শেষ সীমায় ডুয়ার্সের আর এক বিখ্যাত নদী রায়ডাক। বাগানের উত্তরে বক্সার দুর্ভেদ্য অরণ্য। তবে পথ রয়েছে অরণ্যের ভেতর দিয়ে। একসময় এই পথেই  পৌঁছে যাওয়া যেত জয়ন্তীতে। ১৯৬৮ সালে জাতীয় সড়ক হওয়ার পর থেকে সে পথ আজ পরিত্যক্ত। পাশাপাশি কুমারগ্রাম চা-বাগানের এলাকা অনেকটা বিস্তৃত হলেও নিউল্যান্ড, সংকোশ ও কুমারগ্রাম চা-বাগান এতটাই গায়ে গায়ে লাগোয়া যে তাদের সীমা নির্ধারণ মুশকিল হয়ে ওঠে।

সংকোশ তীরের কুমারগ্রাম ব্লক সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কিন্তু সেভাবে বদলায় নি। অতীতের জয়ন্তী, নিউল্যান্ড হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বলে কুমারগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের অসুবিধা নিঃসন্দেহে এই এলাকার বড় সমস্যা। ভাবতে খারাপ লাগে যে, একসময় যে নিউল্যান্ড চা-বাগানে এয়ারস্ট্রিপ ছিল সেই নিউল্যান্ড চা-বাগানকে আজ বহু দূরে থাকা এক বিচ্ছিন্ন এলাকা বলে মনে হয়। একই কথা প্রযোজ্য সংকোশের ক্ষেত্রেও। বক্সার অরণ্য অত্যন্ত কাছে হওয়ায় বনচরদের লোকালয়ে হঠাৎ আগমন এই অঞ্চলের আর একটি বড় সমস্যা। চা ব্যতীত সেভাবে কোনো শিল্প না থাকায় কর্মসংস্থান বাড়ে নি, ফলে অন্য রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাওয়ার প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কেবল। কুমারগ্রামে থাকা বাংলা ও হিন্দি মাধ্যম বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছরই ভালোভাবে উত্তীর্ণ হওয়া ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য এখনও বড় ভরসা কামাখ্যাগুড়ি বা আলিপুরদুয়ার। অথচ এখানকার মদন সিং উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই ১৯৩৪ সালে! জাতীয় সড়ক ছাড়া আর কোনো বিকল্প না থাকায় কাছের শামুকতলা ঘুরপথে অনেকটা দূর। ফি বছর রায়ডাক, সংকোশ-সহ অন্য নদীগুলির দুকূল ছাপিয়ে বন্যা ডেকে আনাটাও বিরাট সমস্যা। সংকোশকে ঘিরে ইন্দো-ভুটান যৌথ সহায়তায় যে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে তাতে অনেকেই আশংকা করছেন যে এই অঞ্চলের পরিবেশে বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে। এর ফল কী হবে তা অজানা হলেও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে যে তা কখনোই পরিবেশের পক্ষে সদর্থক হবে না।

ছবি - বক্সা অরণ্য

সংকোশ চা-বাগান থেকে এবার চলা কালিখোলায়। কিছুদিন আগেও এই অঞ্চল গোলমালের জন্য পর্যটকবিহীন ছিল। দু`পাশে দুই চা-বাগানের মাঝ দিয়ে কালো পিচের চকচকে রাস্তায় খানিক এগোলেই শুরু অরণ্যভূমি। সেই অরণ্যভূমির মাঝেই এস এস বি ক্যাম্পে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আরও এগিয়ে চলা। কিমি তিন-চারেক এগোতেই শুরু ভুটান সীমান্ত। ভুটানে প্রবেশের জন্য এখানেও বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন। অবশ্য অনুমতি পেতে কোনো অসুবিধে হয় না। সোজা পথে খানিকটা এগোলে ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। লামোইজিংঘার এই ছোট্ট জনপদ এক নিমেষে প্রশান্তি নিয়ে আসে মনে। ইতস্তত কিছু বাড়ি, দোকানপাট, মনাস্ট্রি, বিদ্যালয়, হোম স্টে ইত্যাদি সব মিলে সুন্দর প্রকৃতির মাঝে যেন কোনো এক অদৃশ্য শিল্পী এই জনপদের নকশা এঁকে গেছেন। এখানকার উঁচু টিলা থেকে দৃশ্যমান দুই পাহাড়ের মাঝে বেশ খানিকটা নিচে বয়ে চলা সংকোশ। টিলা থেকে পাকদন্ডী বেয়ে নেমে যাওয়া যায় নদী বক্ষে। আর টিলার ওপর বসেও অনন্তকাল কাটিয়ে দেওয়া যায় নদীর দিকে তাকিয়ে, পাখিদের বিজন তানে হারিয়ে যেতে যেতে। ভুটান কালিখোলার এই জনপদ থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় থিম্পু। তবে সে পথ আমাদের মতো ভারতীয়দের জন্য নয়। মোবাইল ফোনেও মিলবে না টাওয়ার। এখানকার আরণ্যক পরিবেশে আজও যেন সময় থমকে আছে। ভাবতে রোমাঞ্চ হয় যে এই পথ ধরেই অতীতে ভুটান পাহাড় থেকে সমতলে আসতেন ভুটানি যোদ্ধা ও ব্যবসায়ীরা। আজ অবশ্য সে সবকিছুই গল্পকথা। বরং সংকোশের বাঁধ নিয়ে অনেক বেশি উচ্চকিত বিবাদ দুই দেশের।

টি-ট্যুরিজমের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুমারগ্রাম-নিউল্যান্ডস-সংকোশ-কালিখোলা। উপরি পাওনা কালিখোলার অপার সৌন্দর্য্ ও ডুয়ার্সের আদি ফ্লেভার যার মধ্যে মিশে আছে মিশ্র জনজাতি, গহন অরণ্য, সবুজ চা-বাগান আর অবশ্যই অন্য রাষ্ট্র ভুটানের মিষ্টি স্পর্শ। উত্তরবঙ্গের মানুষদের কাছে যেমন ঢিল-ছোঁড়া দূরত্বে এই গন্তব্য, তেমনি দূরের মানুষেরা যাতায়াত বাদে মাত্র দু-তিনদিনে প্রকৃতিকে চেখে নিতে পারেন অনায়াসে। প্রকৃতি এখানে এত সুন্দর যে, তার কোনও তুলনা হয় না। তাছাড়াও মিশ্র জনজাতি, অসমের প্রভাব আর ডুয়ার্সের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে কুমারগ্রামদুয়ার আজও অনেকটাই অচেনা। এখানে বেড়াতে বেড়াতে তাই বারবার মনে হয় এই ডুয়ার্স কি আমার চেনা?

ছবি: শৌভিক রায়
এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team