 
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             তনুশ্রী পাল
                                            
                                                
                                                তনুশ্রী পাল
                                            
                                            
                                         
                                            
                                        তখন কর্মসূত্রে নিত্যযাত্রী, মাঝে প্রায় আট কিমি পথ গরুমারা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। দৃষ্টি শুষে নেয় অরণ্যের অপার সৌন্দর্য আর মাঝে মধ্যে সাক্ষাৎ পাই অরণ্যচারী প্রাণীকুলের। বিকেলের পথে দেখি সূর্যাস্তের লালাভ রঙ মাখা অপরূপা সবুজ বনানী, কেকাধ্বনি তুলে, ময়ূরকণ্ঠী রঙের আঁচল উড়িয়ে একডাল থেকে অন্যডালে উড়ে বসে ময়ূর। পথের ধারে, শালবনে অঝোর বৃষ্টির মধ্যে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়ের মতো ঐরাবত। সুঠাম পেশী আর চকচকে লালচে খয়েরি শরীর নিয়ে দ্রুতবেগে রাস্তা পেরোয় বাইসন। ড্রাইভারদাদা ঝটিতি ব্রেক চাপেন নইলে অঘটন অবশ্যম্ভাবী। জঙ্গলমধ্যে মহাকালধাম পেরিয়ে যাওয়ার খানিক পরেই মাঝেমধ্যেই দেখা দিত এক বাইসন দম্পতি। তাদের মধ্যে পুরুষ বাইসনটির সঙ্গেই একদিন একটি বাসের সরাসরি ধাক্কা লাগে এবং সেই বিশালদেহী বাইসনটি মারা যায়। মহাবলশালী প্রাণীটির ধাক্কায় বাসটিও রাস্তা ছেড়ে অনেকটা নেমে কাত হয়ে পড়ে। বাসযাত্রীও কয়েকজন অল্পবিস্তর চোট পান। যাতায়াতের পথে আমরা সে দৃশ্য দেখেছি। আশ্চর্য হবার মতো এরপরের ঘটনা, বাসযাত্রীরা প্রায় সবাই দেখেছি, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটে তার ঠিক উল্টোধারে জঙ্গলের মধ্যে মাঝেমাঝে গাছের নিচে এধারে চেয়ে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকত মৃত বাইসনের সঙ্গিনীটি। এমন চলেছিল বেশ কিছুদিন। অবাক হয়ে ভেবেছি তারাও এমন ভালবাসে?
এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন আমচরিতের আজকের পর্বে লিখতে বসেছি মায়াময় এ জগত ও জীবনের আদি অকৃত্রিম চিরন্তন অনুভবের কথা। এ তো প্রাণময় বিশ্বচরাচরের চিরকালীন অস্তিবাচক অনুভব বৈ কিছু নয়। আজ সারা পৃথিবী যখন অতিমারির নিষ্ঠুর প্রতাপে, মৃত্যুর প্রবল শাসনে বিধ্বস্ত তখন সাধারণ মানুষই এগিয়ে আসছেন অপর মানুষের ভরসা হয়ে, আশ্রয় হয়ে। জীবন পর্যন্ত বাজি রেখে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই ভরসার মঙ্গলময় স্পর্শ, নিরাপত্তার আশ্বাস এই ধস নামা সময়েও আমাদের আনন্দময় আগামীর স্বপ্ন দেখা থেকে বিরত হতে দেয় না। অস্তিবাচক বোধে জেগে থাকে আমাদের চেতনা। আমরা মনে মনে উচ্চারণ করি ‘আমরা করব জয় নিশ্চয়।’ জীবনদায়ী উপকরণের কালোবাজারি, চিকিৎসার নামে দুর্নীতিমূলক বাণিজ্য, কতিপয় লোভী মানুষের ষড়যন্ত্র, এমন নানান বিষিয়ে ওঠা বিরুদ্ধ বাতাসে মন যখন ভারাক্রান্ত, জীবন যখন কঠিন মনে হচ্ছে, তখন অপর ঘটনাও আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই তো মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। একটা শিশুও তার জমানো পয়সার মাটির ভাঁড় ভেঙে অসুস্থ মানুষের জন্যে দান করছে। ওষুধ পথ্য নিয়ে মানুষই মানুষের জন্যে ছুটে যাচ্ছে। রক্তদান করছে, অক্সিজেন পার্লার খুলছে, ঘরে ঘরে ওষুধ, খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে এমন মহত্তম কর্মযজ্ঞ শতশত মানুষ সামিল হয়েছেন। ভরসা জাগানিয়া ঘটনাগুলো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনছে, স্বপ্ন দেখার মনটিকে জাগিয়েছে। ভাবছি রোগমুক্ত পৃথিবীতে একদিন ঠিকই আমরা বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেব; সুস্থ হয়ে উঠবো শরীরে, মনে। শুধু অপ্রেম, লোভ, নিষ্ঠুরতা নয়; প্রেম ভালোবাসা, পারস্পরিক বিশ্বাসই একদিন হবে জগতের মূল চালিকাশক্তি। ভাগ্যিস জন্মলগ্ন থেকে মানুষের মনে ভালোবাসবার বীজ থাকে, পরের হিত করবার আকাঙ্খা থাকে।
আজকের পর্বে আমার দেখা প্রেম-অপ্রেম বিষয়ে দু-চার কথা বলার ইচ্ছে; এতে বিখ্যাত মানুষের মহত্তম প্রেম উপাখ্যানের দাবি না থাকলেও সত্যিটুকু আছে। হ্যাঁ যা দেখেছি, শুনেছি, উপলব্ধি করেছি তাই বলার চেষ্টা। প্রেমবিষয়ক যত কাহিনি কাব্যে, মহাকাব্যে, আখ্যানে, উপাখ্যানে, চলচ্চিত্রে, উপন্যাসের বিষয় হয়ে কালোত্তীর্ণ হয়েছে তার কিছুকিছু আমিও পাঠ থেকে বা অন্যান্য মাধ্যম থেকেই জেনেছি। মানুষ চিরকালই ভালবাসার অনুভবে উদ্বেলিত হয়, বিচিত্র অভাবনীয় কান্ড ঘটায় এমনকি জীবন পর্যন্ত বাজি রাখে সেসব কমবেশি আমরা সবাই জানি। সে ঈশ্বরপ্রেম বা মানবপ্রেম, প্রকৃতি বা দেশপ্রেম অনেক অনেককিছুই হতে পারে।
পরিচিত সুকুমার দাস, রিক্সা চালান। টোটোর আগমনে তার ইনকামে বেশ খানিকটা ভাঁটা পড়েছে। সুকুমারদার স্ত্রী লক্ষ্মীবৌদি পরিচারিকার কাজ করেন। দুজনে সারাবছর একটু একটু করে পয়সা জমান। প্রতিবছর সে পয়সায় তাঁদের পাড়ার বাচ্চাদের বই খাতা পেন পেন্সিল কিনে দেন। দেখা হলেই খুব হা হুতাশ করেন আজকাল। ইনকাম কমে গেছে বলে নয়। স্কুলটুল সব বন্ধ হয়ে আছে ছাত্রদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে সে কারণে। লেখাপড়া না শিখতে পারলে ছেলেমেয়েগুলোর কী হবে? বলেন, আচ্ছা দিদিমণি শিক্ষা ছাড়া কি মনের আন্ধার দূর হয়? খুব দুঃখ করেন, করোনা আর চীনদেশের ওপর তাঁর খুব রাগ। সুকুমারদা নিজে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়াশুনো করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র। আর্থিক এমন দৈন্যের মাঝে শিক্ষার প্রতি ওনার এমন অনুরাগ, আন্তরিক ভালবাসায় মুগ্ধ হই। গভীর শ্রদ্ধা জাগে।
আমার এক্কেবারে বাল্যকালের সহচর সঞ্জু। তার কস্মিনকালেও পড়াশুনো ভাল লাগত না। নাম কা ওয়াস্তে স্কুলে যাওয়া, বাড়ির অপরিসীম দারিদ্র্যও বড় বাধা। কিন্তু সে চমৎকার সব গল্প বলতে পারত, রূপকথার মতো সব গল্প। ওই ছোট্টগ্রামের চৌহদ্দির মধ্যে আবাল্য থেকেও কেমন করে সে দূরের গ্রহ নক্ষত্র চাঁদ তারার দেশের গল্প বানিয়ে বানিয়ে বলত সে এক আশ্চর্য ব্যাপার! যেন সে স্বচক্ষে কত কী দেখেছে আর সশরীরে সেসব জায়গা পরিভ্রমণ করে এসেছে! গোটা তিন চার গল্পই সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলত; আর তার বলার গুণে আমরা বন্ধুরা সেসব আজগুবি কাহিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। প্রকৃতির নিয়মে আমরা বড় হলাম, কেউ কেউ গ্রামের ছোট গণ্ডীর বাইরে বেরোলাম। ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ খানিক কমে এল।
তা একবার খবর পেলাম সঞ্জু এক দারোগাসাহেবের মেয়েকে কোন মন্দিরে নিয়ে সিঁদুর দান করেছে এবং দুজনে কোথায় আত্মগোপন করেছে। পরের ঘটনা উদ্বেগজনক, প্রচন্ড রাগী সে দারোগাবাবু জেলায় জেলায় খবর পাঠিয়ে কন্যা অপহরণকারী অপরাধীকে পাকড়াও করবার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যে তারা ধরাও পড়ল; সঞ্জু থানায় প্রচন্ড মারধোর খেয়ে জ্ঞান হারায়, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাড়িতে অনশনরত দারোগাবাবুর আদরের কন্যাটি সঞ্জুর খবর শুনে হাতের শিরা কেটে ফেলে এবং তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্রমে তারা সেরে ওঠে এবং তারপর মধুরেন সমাপয়েৎ। অগত্যা সেই রাগী দারোগাবাবু নিজে উদ্যোগী হয়ে ধুমধাম করে কন্যার সঙ্গে সঞ্জুর বিয়ে দেন। সত্যি আমরাও যারপরনাই এই ভেবে অবাক হয়েছিলাম সঞ্জুর না আছে রূপ, না আছে গুণ, না ধনসম্পত্তি; কিন্তু কোন গুণে সে মেয়ে মুগ্ধ হয়ে এমন এক কাণ্ড ঘটালো! তবে তারা আজও সুখেই ঘর-সংসার করছে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে দারিদ্রকে জয় করেছে, মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠাই হয়েছে আর ছেলেমেয়ে দুটিকে সুশিক্ষিত করেছে। বেশ ভালো আছে আমাদের সঞ্জু। তাদের ভালবাসা জয়ী হয়েছে বৈকি।
তখন কলেজ বেলা। বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বসে থাকি বাসের জন্যে। সেখানেই দেখ হত ময়না পিসির সঙ্গে, পরনে শাদা থান আর ব্লাউজ, কপালে চন্দনের টিপ, কালো কুচকুচে চুলে হাতখোপা, কাঁধে ভিক্ষের ঝুলি, হাতে ছোট্ট পেতলের খঞ্জনি। ঠোঁটের কোণে পানের রস আর মুখে প্রশান্তির হাসি। ব্রহ্মপুরের ওইদিকে তার বাড়িতে যাবার জন্যে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানাতেন দেখা হলেই। দেখে মনে হত বেশ স্বাধীন আর সুখি মানুষ। তেমন সুরেলা কন্ঠস্বর ছিলনা ময়নাদির। বাসস্ট্যান্ডের সেই চাঁপাগাছতলায় বসে মাঝেমধ্যে সুখদুঃখের গল্প বলতেন, গুনগুন করে গাইতেন ‘গোলেমালে গোলেমালে পিরিত কইর না’। মাইকে তখন এ গান বাজতে শোনা যেত। সেখান থেকেই শিখে নিয়েছে হয়ত!
একদিন সে তার পিরিতের গল্প শোনায়, কোন ছোটবেলায় তার বিয়ে দিয়েছিল বাবা আর কবেই সে বিধবা হয়েছে কিন্তু ভগবান তার মনের কথা শুনে খুব ভালো একটা মানুষের সঙ্গে তার পিরিত করিয়ে দিয়েছে। সে লোকের অল্প জমি জিরেত, বৌ বাচ্চা আছে কিন্তু তার মন পড়ে থাকে ময়নাদির দিকে। সে নদীতে মাছ ধরলে দিয়ে যায়, জমি থেকে পাটশাক, লাউশাক, আলু, বেগুন, লঙ্কা তুলে দিয়ে যায়, জ্বর হলে আদা নুন দিয়ে চা করে খাওয়ায়, হাট থেকে চিড়া মুড়ি মোয়া কিনে দিয়ে যায়। তার একবার খুব পেটের গন্ডগোল হলে সে লোক তার শাড়িকাপড় পর্যন্ত নিজে কেচে ধুয়ে দিয়ে গেছে। ময়নাদির প্রেমকাহিনি বড় মুগ্ধ করেছিল। তার বাড়ি আমার যাওয়া হয়নি ঠিকই কিন্তু বাঁশ গাছের ছায়ায় তকতকে খড়ে ছাওয়া কুটীরটি যেন স্পষ্ট দেখতে পেতাম। আর ময়নাদির মতো তার সেই পিরিতের মানুষটিকেও বড় নিজের মনে হত। কতকাল চলে গেছে, কোথায় হারিয়ে গেছে সে সময়, সেই ময়নাদি আর তার পিরিতের মানুষ কিন্তু ময়নাদির তৃপ্তমুখের হাসিটি আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে মনের গভীরে।
অত্যন্ত স্নেহভাজন কৃষ্ণ রায়। কোনও সমস্যা হলেই তার মুখখানাই মনে পড়ে। এক দিদি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, রক্ত দিতে হবে। কৃষ্ণকে ফোনেই ঘটনা সবিস্তারে জানাই। তিন বন্ধু জোগাড় করে সে হাসিমুখে হাসপাতালে গিয়ে হাজির। অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে সে বিরল অসুখে। তার হাসিমুখখানি বড্ড মনে পড়ে। পরিচিত অপরিচিতর বালাই নেই, কারও কষ্টের কথা শুনলেই পাশে দাঁড়ানোর অভ্যাস ছিল তার, এই ভয়ংকর আত্মকেন্দ্রিক সময়েও।
বিজয় লেখে। কবিতা, ছড়া, ভূতের গল্প এরকম সব বিষয়। দিন নেই রাত নেই কাঁধে ঝোলা নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। বাড়িতে অভাব ও জনা ছয়েক সদস্য। ভর দুপুরে বা ব্যস্ত কাজের সময় সে এসে মাঝেমধ্যে হানা দিত। ঝোলা থেকে বেরুতো ঝুরঝুরে কবিতার খাতা। আহা, লেখার ইচ্ছে ছেলের ভেবে তাকে ডাইরি, খাতা, পেন উপহার দিই। বলি, ‘অনেক লেখো বিজয়, যা যা লিখতে ইচ্ছে করে লিখবে। তবে কী বল তো! শুধু লিখলে তো হয় না, একটু উপার্জনের চেষ্টা দ্যাখো। তোমাদের বাড়িতে মুদির দোকান আছে, সেখানে রোজ একটু বস। নয়ত দুএকটা টিউশনি কর।’ সে আমার কথার উত্তর না দিয়ে ঝোলা থেকে আরও কাগজের টুকরো বের করে আর উচ্চস্বরে ছড়া পাঠ করে। নানা বিষয় নিয়ে লিখেছে- চিতাবাঘ, ভালুক, হাতি, কুকুর, আম, জাম ইত্যাদি আর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছড়া ভূত বিষয়ক। ভরদুপুরে উচ্চকন্ঠে এতসব কবিতা ছড়া শুনে বাড়ির লোকেরা মোটে খুশি হয় না, আমিও হই না। কিন্তু তাকে বলতেও পারি না, একজন আদ্যন্ত কাব্যপ্রেমিককে আমি কীই বা বলতে পারি? তবে তার মলিন কোঁচকানো সার্ট প্যান্ট আর দাড়িগোঁফের ফাঁকে অমলিন শিশুসুলভ হাসি দেখে অবাক হয়ে ভাবি, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেটির ভেতর ঈশ্বর কেন যে একটি শিশুমন ভরে দিয়েছেন তা তিনিই জানেন।
সৃষ্টির গোপন কথাই তো প্রীতি, প্রেম, ভালবাসা। সেইই জন্ম দেয় সুর, ছবি, নৃত্যভঙ্গি, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, কাব্য, মহাকাব্যের? জন্ম দেয় ফুল আর ফসলের? প্রাসাদে, মন্দিরে, মসজিদের খিলানে খিলানে সেইই মানুষের যাদু আঙুলে আঁকিয়ে নেয় অনবদ্য সংলাপ! দেশপ্রেম সেই অনবদ্য স্বপ্নময় দর্শন যা বহু বহু রক্তক্ষয়ের মধ্য দিয়ে জন্ম দেয় নতুন রাষ্ট্র বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার, উলটে দেয় কায়েমী স্বার্থের গদি। মানব প্রেম বা প্রীতি তো সেই মহত্তম অনুভব, যার প্রেরণায় দুঃখী পরাধীন মানুষের মুক্তির পথ খুঁজে দেয় মানুষই।
আবার আত্মপর, আত্মকেন্দ্রিক নিশ্চেতন মানুষের মানসিক মুক্তির পথ খুঁজে ফেরেন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। মানুষের জরা, ব্যাধি, মৃত্যুময় শোকতপ্ত জীবনে আলোর সন্ধান দেন যে মানুষেরা তাঁদেরই আমরা মহাপুরুষ বলি; এবং আদ্যন্ত এঁরা মানবপ্রেমিক। মানবজীবনে প্রকৃত আনন্দ ও সুখের অনুসন্ধান করেন। শুধু ভোগ নয় ত্যাগ, শুধু আত্মকেন্দ্রিকতা নয় পরহিত কামনায়, জনকল্যানের মধ্যে সুখ মেলে এ কথাই তাঁরা বলেন।
আর মানব মানবীর ‘প্রেমের জোয়ার’ যা দোঁহারে ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিরুদ্দেশে, সে বিষয়ে কত শত পদই না রচিত হয়েছে, সেই পৌরাণিককাল থেকে! প্রেমাস্পদকে জীবনে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় হারানোর আশংকা তাই শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণের বিচ্ছেদ গাথায় বৈষ্ণব পদকর্তা লেখেন ‘দুহুঁ ক্রোড়ে দুহুঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া’। এ সবই নর নারীর জাগতিক প্রেম উপলব্ধিজাত আখ্যান। যুগযুগান্তর ধরেই মানুষ ভালবেসে এসেছে। রোমিও-জুলিয়েট, ক্লিওপেট্রা–মার্ক এন্টনি, সিরহি-ফরহাদ, শাহজাহান-মুমতাজ, বাজি রাও-মাস্তানি, পৃথ্বিরাজ চৌহান-সংযুক্তা, সেলিম-আনারকলি, নেপোলিয়ন-জোসেফিন এমন কত শত প্রেম আখ্যান! পৃথিবীর পৌরাণিক আর ইতিহাসের কাহিনীতে ছড়ানো এমনই কত মনিমুক্তোয় গাঁথা প্রেমগাথা। কতক তার পূর্ণতা পেয়েছে কতক ডুবে গেছে লবনাক্ত চোখের জলে, কতক শেষ হয়েছে জিঘাংসা বা প্রতিশোধের আগুনে প্রাণ আহুতি দিয়ে।
তবে আমরা সাধারণ মানুষ শেষপর্যন্ত প্রেম প্রীতি, আস্তিক্যবোধেই থিতু হই, আস্থা রাখি। এই পৃথিবী আর প্রাণের প্রতি ভালবাসাতেই বিশ্বাস রাখি।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team
