দোতারা ডাঙা পালা
কোচবিহারের একটি অনানুষ্ঠানিক (ব্রত বা আচার ধর্মী নয় এমন বা অবসর বিনোদনের জন্যে পরিবেশিত) পালা ‘দোতারা পালা’ বা ‘দোতারা ডাঙা’র গান । লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি নির্ভর এই পালা অত্যন্ত জনপ্রিয়। সত্যকাহিনি, প্রাচীন লোককথা, সামাজিক ঘটনা অবলম্বনে এই পালার বিস্তার ঘটে। অতীতে অন্যান্য লোকনাট্যের মতই গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সংবাদ পরিবেশনের কাজ করত দোতরা ডাঙা পালা।
অগ্রহায়ণ মাস হেমন্ত কালের। মাঠে মাঠে ধান পেকে যায়। সোনার ফসলে ভরে থাকে খেত। কৃষকের গোলা ভরে ওঠে নিশ্চিন্ত সম্পদে। গাঁয়ে সকলের মন খুশিতে ঝলমল করে। স্বাভাবিক কারণেই কৃষিপ্রধান এই উত্তরবঙ্গে অবসর মেলে অনেকটা। আর এই সময়টা উৎসবের মাসও। শারদীয়া উৎসব সদ্য পেরিয়ে নবান্নের সুগন্ধ মনকে পুলকিত করে। বাঁধা হয় গান, শুরু হয় পালার মহড়া। একটু শীত পড়তেই গ্রামে গ্রামে বসে পালার আসর। কোনও বিস্তৃত ময়দানে বা খেলার মাঠে শামিয়ানা টাঙিয়ে অথবা ম্যারাপ বেঁধে অভিনয়ের স্থান নির্ণয় করা হয়। তা পরিস্কার করা হয়। কখনও বা গোবর দিয়ে লেপে দেন উৎসাহী কোনও গ্রাম্য গৃহবধূ। গ্রামের লোকনাট্যের আসরগুলিকে গাঁয়ের মানুষ খুব আপনার মনে করেন। একটু বেশি রাতে আহারের পর এসে বসেন সকলে। সারারাত চলে সে আসর। সে আসরের একটু দূরেই জমে ওঠে জুয়াখেলা। দেশি মদ্যের টুংটাং। সারারাত পালা চলে। গান-নাচ-সংলাপ-অভিনয়-কৌতুক ইত্যাদি মিলেমিশে অপার আনন্দ হাট।
কুশান গানের মূল গায়েনের হাতে থাকে ‘ব্যানা’। তেমনই দোতরা ডাঙা পালায় মূল গীদালের হাতে থাকে ‘দোতারা’। উপস্থাপনা উত্তরের অন্যান্য লোকনাট্যের মতই। দোতারা ডাঙার বিখ্যাত পালাগুলি হ’ল মদনকুমার-মধুবালা, দুবুলাবলী পালা, বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলী, মরুচমতী কন্যা, গুঞ্জরা বিবি-সাত সতীনের পালা, করিম-বাদশা, চোখা ঠগ ইত্যাদি। পালাগুলি গড়ে ওঠে কোনও সত্য ঘটনা অবলম্বনে কল্পনার রঙে রাঙিয়ে। কোনও মেয়েলি কেচ্ছা, প্রেম-কাহিনি, সমাজের ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা বা কাল্পনিক কাহিনি অবলম্বনে। জনপ্রিয় দুটি দোতারা ডাঙা পালা ‘বিশ্বকেতু-চন্দ্রাবলী’ ও ‘করিম বাদশা’ সম্পর্কে কিছু কথা বলা যেতে পারে।
বিশ্বকেতু-চন্দ্রাবলী
কবি সাফাতুল্লা খান প্রচলিত কাহিনি অবলম্বনে রচনা করেছেন এই পালা। অত্যন্ত জনপ্রিয় পালাটির অভিনয় হয় নিয়মিত। অনেকেই দলবেঁধে করেছেন। করছেন। রচনা ও উপস্থাপন শৈলিতে স্থানীয় প্রভাব আছে বলা বাহুল্য। কাহিনি এইরূপ— চন্দ্রাবলী স্বর্গের অপ্সরা। একদিন ইন্দ্রের সভায় নৃত্যের সময় তালের গোলমাল হ’ল। এই রস ভঙ্গে ইন্দ্র গেলেন রেগে। অভিশাপ দিলেন বারো বছর হরিণ রূপে মর্তে থাকতে হবে। একজন নৃত্য শিল্পী তাল ভঙ্গ হ’লে স্বাভাবিক ভাবেই বিধ্বস্থ হবেন। তার ওপর এই অভিশাপ। মুষড়ে পড়লেন তিনি। কাতর হয়ে ক্ষমা চাইলেন ইন্দ্রের কাছে। শান্ত হয়ে ইন্দ্র তাঁকে পরিত্রানের উপায় হিসেবে বললেন, মর্তে অবস্থান কালে চন্দ্রাবলীর সঙ্গে দেখা হবে বিশ্বকেতুর। দুজনে কাম সরোবরে ডুব দিলেই শাপমুক্ত হবেন চন্দ্রাবলী। দুঃখ কষ্টে কাতর চন্দ্রাবলী কাঁদতে কাঁদতে পিতা-মাতার কাছে খুলে বললেন সব। তারপর মৃগরূপে জন্ম নিলেন পৃথিবীতে।
জোনালি নগরের রাজা উদয়কেতুর ছেলে বিশ্বকেতু। একদিন শিকারে বেরিয়েছেন, সঙ্গে তাঁর দুই পারিষদ। অরণ্যে প্রবেশ ক’রে দেখতে পেলেন সুন্দর একটি হরিণ। দুই সঙ্গী তাজা ও ভজাকে নির্দেশ দিলেন এবং নিজেও ছুটলেন সেই হরিণের পেছনে। এদিকে বিশ্বকেতুকে দেখে হরিণের মনে পড়ল ইন্দ্রের অভিশাপের কথা। ছুটতে ছুটতে গিয়ে ডুব দিল কাম সরোবরে। হরিণের পিছে বিশ্বকেতুও। আশ্চর্য হয়ে বিশ্বকেতু দেখলো হরিণ ডুবে গিয়ে উঠে এলো এক সুন্দরী যুবতী। যুবতী নিজের পরিচয় দিল। খুলে বললো তার অভিশাপের কাহিনি। চন্দ্রাবলী শেষে বললো, এবার তাকে ফিরে যেতে হবে স্বর্গে মাতা-পিতার কাছে। কিন্তু প্রথম দর্শনেই বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলীর প্রেমে ডুবে গেছে। সে চাইল পরিণয়ে আবদ্ধ হ’তে। চন্দ্রাবলী বললো তাকে ফিরে যেতেই হবে মাতা-পিতার কাছে, কারণ তাঁরা অপেক্ষা করছেন ওর জন্য। কিন্তু মনে মনে সুন্দর দেহসৌষ্টবের অধিকারী বীর বিশ্বকেতুকে হৃদয় দান করে ফেলেছে চন্দ্রাবলী। তাই সে বিশ্বকেতুর কাছে অঙ্গীকার করল মধু চৈত্রমাসের পূর্ণিমা তিথিতে ফিরে আসবে।
চন্দ্রাবলী ফিরে গেল স্বর্গে। বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলীর বিরহে কাতর হয়ে গেল। সে সরোবর ছেড়ে যেতে চাইলো না। হা চন্দ্রাবলী, বলে বারংবার মূর্ছিত হ’তে লাগলেন। রাজা উদয়কেতু ও রাণী ভাগ্যবতী বিশ্বকেতুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে অসমর্থ হলেন। শেষে ধাইমা ভারতীকে রেখে গেলেন তার কাছে। চন্দ্রাবলী ফিরে এল সরোবরে মধু চৈত্রমাসের পূর্ণিমা তিথিতে দুই বোন রূপালী ও সোনালীকে সঙ্গে ক’রে। এই একবছরে চন্দ্রাবলী কোনও খোঁজ করেনি বিশ্বকেতুর। এই কথায় দুইবোন চন্দ্রাবলীকে ভর্ৎসনা করল। তিন বোন সরোবরে নামল অবগাহনের জন্য। এমন সময় বিশ্বকেতু এসে তাদের কাপড় লুকিয়ে রাখল। বলল, সে একবছর এখানেই অপেক্ষা করেছে তার জন্য। তাই বিয়ে করেই প্রাসাদে ফিরবে। কিন্তু চন্দ্রাবলী কিছুতেই রাজী হ’ল না। পূর্ণিমা তিথি পেরিয়ে গেছে, তাই আরও একবছর অপেক্ষা করতে হবে। এই অবস্থায় বিশ্বকেতু ধাইমা ভারতীকে পাহাড়ায় রেখে জোনালীনগরে ফিরে গেলেন। বললেন একবছর পর লোকজন নিয়ে আসবেন নির্দিষ্ট দিনে।
বিশ্বকেতু চলে গেলে চন্দ্রাবলী ধাইমা-কে বোঝাল এত সহজে চন্দ্রাবলীকে পেয়ে গেলে তার মূল্য থাকবে না। তাই স্বর্গে ফিরে যাওয়া দরকার। কাপড় ফেরৎ চাইলো পরিবর্তে একটি আংটি দিয়ে বললো, এই আংটি নিয়ে বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলীর রত্নময়পুরের বাড়িতে গেলে সে বিয়ে করবে। ভারতী সেই আংটি নিয়ে গিয়ে বিশ্বকেতুর কাছে গিয়ে সবকথা বলল। বিশ্বকেতু আংটি নিয়ে রত্নময়পুরের উদ্দেশে রওনা হ’ল। পথে এক রাক্ষসের সঙ্গে লড়াই করতে হ’ল। তাকে যুদ্ধে হারিয়ে রাজকন্যা পদ্মাবতীকে উদ্ধার ক’রে রাজ্যে পাঠালো। তারপর দেখা হ’ল এক মেষাম্বরের সঙ্গে। সে আসলে এক অভিশপ্ত গন্ধর্ব। বিশ্বকেতুর ছোঁয়াতেই যার শাপমুক্তি ঘটল। শাপমুক্ত গন্ধর্ব রত্নময়পুরের রাস্তা বলে দিল। এরপর বিভিন্ন ঘটনার পর ত্রিবেণির ঘাটে চন্দ্রাবলীর সঙ্গে দেখা হ’লে মিলন হ’ল। বিবাহ হ’ল দুজনের।
শাফাতুল্লা সরকার—এক অজ্ঞাত কবি
‘বিশ্বকেতু-চন্দ্রাবলী’ একটি জনপ্রিয় কাহিনি। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দোতারা ডাঙার পালা। সে জনপ্রিয় কাহিনিকে কাব্যে বেঁধেছেন কবি শাফাতুল্লা সরকার। আমাদের অনেকের কাছেই তিনি অজ্ঞাত। প্রত্যন্ত গাঁয়ের প্রায় অজ্ঞাত এই কবি অত্যন্ত যত্ন নিয়ে বেঁধেছেন কাব্য কাহিনিটি। কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার পানিশালা গ্রামে বাস করতেন কবি শাফাতুল্লা সরকার। ‘বিশ্বকেতু-চন্দ্রাবলী’ নামেই এই কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন,
শুন শুন সদাশয় অধীনের পরিচয়
সভাস্থ সকল বন্ধুগণ।
ভূবন বিখ্যাত নাম, রাজ্য কোচবিহার ধাম,
মেখলীগঞ্জ পোলি ষ্টেশন।।
চ্যাংড়াবান্ধা নামে গ্রাম, তথা মম জন্ম ধাম,
কালে কালে তথায় বসতি।
পিতামাতা গুণধাম, চেল্টু সরকার নাম,
ছিল অতি শুদ্ধ শান্তমতি।।
বিধির ইচ্ছায় হায়, ছাড়িয়া মানব কায়,
লোকান্তরে করিলেন গতি।
সদাকাল সদাচার, হাস্য ছিল আস্যে তাঁর,
স্মরণে বিষ্ময় হয় মতি ।।
তাঁহার নন্দন চারি, দিয়েছে আপনি বারি,
সুচারু স্বভাব শুদ্ধ মতি।
সরকার পদবী তাঁর, প্রকাশিত চরাচর,
করিয়েছিলেন সৃষ্টিপতি।।
জ্যেষ্ঠের অনুজ আমি, চ্যাংড়াবান্ধা জন্মভূমি,
আছি এবে পঞ্চ সহদোর।।
জাত্রু সরকার নাম, জ্যেষ্ঠ চাচ্চাজীর নাম,
দ্বিতীয়ে মানুল্লা সরকার।
পিতার চতুর্থ ভ্রাতা, পিতৃ বৈমাত্রীয় ভ্রাতা,
শ্রীরহমতুল্লা সরকার।।
মম জ্যেষ্ঠ বেরাদর, নেয়ামতুল্লা সরকার,
তিনি অতি শুদ্ধ শান্ত মতি।
বাকা উল্লা সরকার, সদাকাল সদাচার,
দিবানিশি প্রভূ-অনুরক্তি।।
আলাউদ্দিন মুন্সি ভাই, তৃতীয় কনিষ্ঠ সেই,
বিহার পুলিশ জমাদার।
চতুর্থ কনিষ্ঠ আমি, পানিশালা জন্মভূমি,
শ্রীশাফাতুল্লা পাপাচার।।
আমার কনিষ্ঠ যেই, পঞ্চম কনিষ্ঠ সেই,
শ্রীমেহেরুল্লা সরকার।
যিনি সৃষ্টি অধিকারী, তিনি কৃপা সৃষ্টি করি,
কৃপা নীরে পালে সবাকার।।
আমি অতি নরাধীন, জগতের দীন হীন,
পুত্র এক দিল সৃস্টিশ্বর।
অতি শুদ্ধ শান্ত মতি, প্রভু পদে অতি ভক্তি,
শ্রীসামসুদ্দিন সরকার।।
শুদ্ধ শান্ত কবিগণ, শ্রোতা-সভাসদজন,
আশীর্বাদ কর তার প্রতি।
পরিচয় হৈল সায়, আড়ম্বরে বেড়ে যায়,
কবিগণে প্রচুর প্রণতি।।
বইটি প্রথম ছেপে প্রকাশিত হয় ২৪শে বৈশাখ, ১৩১৯ বঙ্গাব্দে। অর্থাৎ ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দে। এই বইটি হঠাৎই এসে পৌঁছয় হাতে। অমূল্য সব মণিমানিক্য ছড়িয়ে আছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। সে সব রত্নের খোঁজে ঘুরে বেড়াই গাঁয়ের পথে পথে। সেভাবেই খোঁজ পেলাম প্রতিভাবান প্রায় অজ্ঞাত এই কবির। মেখলিগঞ্জ মহকুমার পানিশালা গ্রামে তাঁর বসতভিটে। পেলাম তাঁর রচিত ‘বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলী’। প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি কপি। মূল বইয়ের নবম সংস্করণ এইটি। প্রকাশকাল ০২-০১-২০৮০। প্রকাশক গওসিয়া লাইব্রেরী, মেছুয়াবাজার, কলকাতা-৭০০০০৭। বংশ পরম্পরায় বহুপাঠে বইটি লড়ঝড়ে হয়ে গেছে।
বিস্মিত হই আমি পানিশালা গ্রামে পৌঁছে। সে গায়েঁর প্রায় প্রতিজন কবিকে সম্মান করেন, আপনার মনে ক’রে ভালোবাসেন। প্রত্যেক পরিবারে বংশানুক্রমে বইটি পড়বার চল আছে। এমনটা ঘটে না সচরাচর। মুঠোফোনের দাপটে সে চর্চা কমেছে বটে একেবারে চলে যায়নি। কবিকে ঘিরে কত যে কাহিনি লোকমুখে! তেমনই এক কাহিনি শোনালেন বৃদ্ধ একজন প্রাচীন বটতলার বাঁশের মাচায় বসে। “কবি গ্রন্থটি রচনার পর রাজ স্বীকৃতির জন্যে কোচবিহার রাজ দরবারে পাঠিয়েছেন ছ’বার। প্রতিবারই পরিমার্জন করেছেন। কিন্তু রাজ আশীর্বাদ মিলছিল না। এরপর কবি শাফাতুল্লা সরকার একটি ঘরে প্রবেশের পর জানালা দরজা বন্ধ করে দিলেন। ত্যাগ করলেন আহার-নিদ্রা। কয়েক মাস কাটালেন নিবিড় সাধনায়। রাজ দরবারে কেন গৃহিত হচ্ছে না, সেই কারণের সন্ধানে নিজেকে নিমগ্ন রাখলেন। আবিষ্কার করলেন, রাজবংশ বর্ণনা করেননি তাঁর গ্রন্থে এবং করেননি পুর-বর্ণনাও। রচনা করলেন নতুন দুটি অধ্যায়। এবার বইটি পাঠালেন কোচ রাজের কাছে। বইটি গৃহিত হ’ল। কাঙ্খিত স্বীকৃতি পেলেন কবি।
বইটি সম্পর্কে কবি নিজে লিখেছেন, “হে প্রিয়তম সুধিবর মহাশয়গণ! আমি কৃতাঞ্জলিপুষ্টে সর্ব্ব চরণাম্বুজে আবেদন করিতেছি যে, বিপুল পরিশ্রম এবং যত্ন স্বীকার করতঃ এই অভিনব “বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলী” নামক গ্রন্থ শ্রীল শ্রীযুক্ত মহারাজাধিরাজ রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদূরের কিঞ্চিত সুখ্যাতি বর্ণনা সহিত প্রকাশ করিলাম। বোধ করি ইহার স্থানে স্থানে প্রচুর ভ্রম হইয়া থাকিবেক। আমি অত্র কর্মে প্রথম ব্রতী হইয়াছি। যদি পাঠক মহোদয় গণের সন্নিধানে গ্রন্থ আদরণীয় হয়, তবে পুনঃ মুদ্রিতকারে ইহার যে সকল ভ্রম আছে, তাহা সংশোধন করণে যতদূর যত্ন করিতে হয় করিব। আমি এতাদৃশ প্রত্যাশা করিতে পারি না যে, অত্র গ্রন্থ দর্শনে পাঠকবৃন্দ সন্তোষলাভ করিতে পারিবেন। মানবজাতির ভাব একরূপ নহে, ইহা কে না প্রসন্ন বদনে স্বীকার করিবেন, তবে এই মাত্র প্রত্যশা যে, অত্র গ্রন্থাবলোকনে রসিক ব্যক্তিদিগের অন্তঃকরণে আনন্দদায়ক হইলেই শ্রম সফল জ্ঞান করিব। নিবেদন ইতি। শাফাতুল্লা সরকার। কোচবিহার, ২৪ বৈশাখ, ১৩১৯।” (বানান অপরিবর্তিত)
“বিশ্বকেতু-চন্দ্রাবলী” গ্রন্থটির জনপ্রিয়তা ছিল। আগ্রহী পাঠকগণ তা সংগ্রহ করতেন। বিশেষ কারণে উক্ত গ্রন্থ-স্বত্ব পরবর্তীকালে কবি বিক্রি ক’রে দিতে চাইলে হাজী আফাজুদ্দিন আহমেদ সাহেব তা সংগ্রহ করেন। সে সম্পর্কে স্বত্বাধিকারী নুরউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, “এই বিশ্বকেতু চন্দ্রাবলীর সর্ব্বস্বত্ব কবি সাফাতুল্লা সরকার সাহেবের নিকট হইতে উচিৎ মূল্যে খরিদ করিয়া আমার পিতা হাজী আফাজুদ্দিন আহমদ সাহেব নিজ নামে রেজেস্টারী করিয়া ছাপাইয়াছিলেন। এক্ষণে আমি উক্ত স্বত্বে যত্নবান হইয়া নিজনামে ছাপাইলাম অতএব আমার অনুমতি ভিন্ন কেহ ছাপিবেন না ছাপিলে আইন আমলে আসিবেক।’’
বইটি শুরু করছেন কবি এইভাবে—
ভূবন বিখ্যাত নাম কলকা নগরে ধাম,
ঐশ্বকেতু নাম নরপতি।
ভূবন ভরিয়া যশ, ভূবন তাহার বশ,
কালী-ভক্ত কালী-পদে মতি।।
আমরা জিনিয়া পুরি, অধিক উজ্জ্বল করি,
শিলাময় বিশাই গড়ন।
চৌদিকে শহর পনা, দ্বারে চৌকি কতজনা,
সমরে অটল মল্লগণ।।
কামানের ছড়-ছড়ি, বন্দুকের দুড়-দুড়ি,
ফিরিঙ্গি ফরাস সেনাপতি।
ইরাকী তুরকী তাজই, আরবী জাহাজী বাজী,
থানে বান্ধা মদমত্ত হাতী।।
সারস সারসী সারী, পিঞ্জরায় সারি সারি,
পালিয়াছে পশু-পক্ষীগণ।
ব্রাক্ষ্মণ পন্ডিত সব, শিব পূজা মহোৎসব,
চণ্ডী পাঠ স্মৃতি দরশন।। (…ইত্যাদি)
(ক্রমশ)
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team