× home হোম archive আগের ওয়েব সংখ্যা panorama ডুয়ার্স সম্পর্কে play_circle_filled ভিডিও file_download মুদ্রিত সংখ্যার পিডিএফ library_books আমাদের বইপত্র
people এখন ডুয়ার্স সম্পর্কে article শর্তাবলী security গোপনীয়তা নীতি local_shipping কুরিয়ার পদ্ধতি keyboard_return বাতিল/ফেরত পদ্ধতি dialpad যোগাযোগ
login লগইন
menu
ad01112021081913.jpg
×
সংখ্যা: আষাঢ়, ১৪৩০
সম্পাদকের কলম
মৌসুমির আবাহন
সম্পাদক - এখন ডুয়ার্স
ধারাবাহিক প্রতিবেদন
উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতি ও সংস্কৃতির লোকজন | পর্ব - ১০
সব্যসাচী দত্ত
ডাকে ডুয়ার্স
জলবায়ু পরিবর্তনে উত্তর ও উত্তরপূর্বের চা শিল্পে সংকট, ভুরুতে ভাঁজ প্ল্যান্টার-ব্যবসায়ীদের
প্রদোষ রঞ্জন সাহা
বিশেষ নিবন্ধ
পাহাড়ে এ কোন নতুন সমীকরণ? ফের তপ্ত হতে চলেছে দার্জিলিং?
সৌমেন নাগ
দুয়ার বার্তা
আলিপুরদুয়ার জেলার দশে পা: প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি
রূপন সরকার
শিলিগুড়ি স্টোরিলাইন
রসনাতৃপ্তির বৈচিত্র্যে শিলিগুড়ি সদাই চলমান
নবনীতা সান্যাল
কোচবিহার কড়চা
নতুন প্রজন্মের উৎসাহেই কোচবিহারের পাটি শিল্পে প্রসার ও আধুনিকতার ছোঁয়া
তন্দ্রা চক্রবর্তী দাস
দিনাজপুর ডে আউট
রাজদিঘি- হেমেন চৌধুরীর পুকুর
মনোনীতা চক্রবর্তী
জলশহরের কথা
এক যে ছিল টৌন | পর্ব - ৩
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর-পূর্বের চিঠি
ইরেইমা লাইরেম্বী
মেঘমালা দে মহন্ত
উত্তরের বইপত্র
উত্তরবঙ্গের রেল ইতিবৃত্ত: এক জরুরি গ্রন্থ
প্রীতম ভৌমিক
উত্তরের বন্যপ্রাণ
হাতিদের উপেক্ষিত ঐতিহাসিক যাত্রাপথ ফিরিয়ে দিতে হবে
অভিযান সাহা
পর্যটন
চিন্তাফু
তড়িৎ রায় চৌধুরী
আমচরিত কথা
লতুন দিদিমুনি
তনুশ্রী পাল
নেট গল্প
ডায়েরি
রঙ্গন রায়
সুস্বাস্থ্যই সম্পদ
প্রবল গরমে ডায়াবেটিকদের ডায়েট কেমন হবে?
ডঃ প্রজ্ঞা চ্যাটার্জি
প্রবাসী কলম
দিল্লিতে রবীন্দ্র জয়ন্তীতে কবিপ্রণাম
পরমা বাগচী চৌধুরী
পাতাবাহার
প্রেমে পড়বার পানীয়
পাতা মিত্র
পুরানের নারী
ভরতপত্নী মান্ডবী
শাঁওলি দে

প্রচ্ছদ ছবি

এই সংখ্যার প্রচ্ছদ শিল্পী হাসান আলমাসি

ইরেইমা লাইরেম্বী

মেঘমালা দে মহন্ত
Iremba Lairembi

শহর শিলচর থেকে ৩৭ নং শিলচর-মণিপুর হাইওয়ে ধরে আঠারো কিলোমিটারের মতো এগিয়ে গেলে পালোরবন্দ চা বাগান। বাঁদিকের বাগান-রাস্তাটার ঠিক উল্টোদিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে চিরি নদীর বুক চিরে সেই রাস্তাটা ধরে এক কিলোমিটার পূর্ব দিশায় পথের দু'পাশে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে অজস্র প্রাচীন শিমূল পলাশ, আর মাদার গাছ। হেমন্তে যত দূর চোখ যায়, চোখে পড়ে, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে শুধুই সোনারঙের। গোটা শীতকাল জুড়ে এই পথ যেন লাল ঘোমটায় ঢাকা নতুন কনে বৌ। শীত শেষে শিমূল পলাশের বিদায় বেলায় আবার অন্যরূপ। বীজ ফেটে পেঁজা পেঁজা সাদা তুলো সমস্ত গ্রামের চারপাশ শুভ্রতায় ঢেকে দিয়ে উড়ে বেড়ায় ইতস্তত ইচ্ছেমতো। ছোট্ট একটা গ্রাম নুংফৌ । গোটা গ্রামটিকে একদিকে চিরি আর অন্যদিকে বরাক এবং আনোয়া, এই তিনে মিলে ঘিরে রেখেছে। শ'দুয়েক বাঙালি এবং মণিপুরী পরিবারের বাস। হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ই আছেন ভরসা ভালোবাসার উত্তাপে একে অন্যকে জড়িয়ে। নুংফৌ শব্দটির আভিধানিক অর্থও হচ্ছে জলের নীচ থেকে উঠে আসা ভূখণ্ড।

নুংফৌ গ্রাম পেরোতে পেরোতে চোখে পড়ে রাস্তার ডান পাশে সবুজ খোলা প্রান্তরে ছোট্ট একটা মঙ্গোলয়েড ধাঁচের মন্দির। এই মন্দির ইরেইমা লাইরেম্বী বা জলদেবীর মন্দির।

মন্দিরটি অন্য আর দশটা তিন ধাপ চূড়ার মন্দিরের মতো হলেও, এই তিন ধাপ মূলত আত্ম, কর্ম, মোক্ষ-র প্রতীক। মন্দিরের চূড়ার তিনটি ধাপের বর্ডারে রয়েছে মণিপুরী মহিলাদের পোষাকের পাড়ের মোটিফ। মায়ের মন্দিরে মায়ের কাপড়ের নক্সার ডিজাইন। এই তিন ধাপের ওপরে যে নীল রঙের সমতলের ওপর গোলাপী পদ্মটি রয়েছে তা আসলে জলের ওপর মায়ের প্রিয় ফুল। সেই ফুলের বুকে শীর্ষ চূড়াটি সাতটি খাজে ভাগ করা। এই সাত খাঁজ মণিপুরীদের নিংথৌজা, খুমন, মোইরাং, লুবাং, আঙোম, খাব-ঙানব, শরাং-লৈশাংথেম ( চেংলৈ) এই সাতটি গোষ্ঠীর প্রতীক।

মন্দিরের বাঁ পাশের ধার ঘেঁষে বরাকের ফেলে যাওয়া অভিমানী আনোয়া। যেখানে শীতকালে ছুটি কাটাতে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। গ্রামের মানুষ যতটা সম্ভব দূর থেকে আগলে রাখেন এই অতিথি পাখিদের। মন্দিরের চারপাশের জলে নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে ছুটি কাটিয়ে তারা ফিরে যায় তাদের পরবর্তী গন্তব্যে।

ইরেইমা লাইরেম্বী দেবী ঠিক কখন থেকে এই নুংফৌ গ্রামে পূজিত হয়ে আছেন তা সঠিক ভাবে গ্রামবাসীদের কেউই বলতে পারেন না। তাঁদের কথানুযায়ী এই গ্রাম গড়ে ওঠার শুরু থেকেই দেবী এখানে আছেন। প্রথম দিকে কোনো মন্দির ছিল না দেবীর। এখন যে মন্দিরটি রয়েছে সেটি কখন কীভাবে কোথায় নির্মাণ হবে এসমস্ত কিছুইই নাকি দেবীর স্বপ্নাদেশের মাধ্যমে হয়েছে।

নুংফৌতে বহুযুগ আগে থেকেই মুখে মুখে প্রচলিত ছিল ইরৈমা লাইরেম্বীকে নিয়ে নানা গল্প বিশ্বাস মিথ। এখনও আছে। ইরেইমা লাইরেম্বী জলদেবী। এই গ্রামে রয়েছে দুটি নদী একটা আনোয়া। কাজেই মাছ শিকারের জন্য নুংফৌ এক আদর্শ গ্রাম৷ স্থানীয় এবং আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষদেরই মাছধরা নেশা এবং পেশা দুইই। কিন্তু প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী ইরেইমা লাইরেম্বীর আশীর্বাদ না নিয়ে মাছ শিকারে সফলতা আসে না সেখানে। হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের জেলেরাই মাছ ধরতে যাবার আগে মন্দিরে ইমাকে ফুল ফল দিয়ে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে যান এবং সফলও হন তাঁরা। জাল ভরে ওঠে রূপালি মাছে। বিশেষত মন্দিরের পাশের আনোয়ার চাপিলা মাছ আকারে প্রকারে এই উপত্যকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। স্থানীয়রা চাপিলাকে বলেন হুগা মাছ।

বর্ষার মরসুমে কচুরিপানার বেগুনি রঙের অপূর্ব সুন্দর ফুলে ফুলে সেজে ওঠে এই আনোয়া। সুগন্ধি থাইম আর পানিফল তুলতে গ্রামের ছেলেমেয়েদের কলরবে ভরে যায় ইরেইমার মন্দিরের ঘাট। এই ইরেইমা লাইরেম্বী মন্দিরটি প্রকৃত অর্থেই গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীদের এক বৃন্তে বেঁধে রেখেছে বিশ্বাস, ভরসা, কিংবদন্তীতে।

আরেকটি ব্যতিক্রমী বিষয় হচ্ছে এই মন্দিরে স্থায়ী কোনো ব্রাহ্মণ পুরোহিত নেই। সমাজের সব বর্ণ গোত্রের মানুষের পূজা অর্চনা প্রার্থনার জন্য ইরেইমার দ্বার খোলা রাখা হয় সবসময়। মণিপুরীরা বিশ্বাস করেন গ্রীষ্মের শুরুতে দেব দেবীরা মানুষের সুখ শান্তির জন্য পৃথিবী ঘুরে দেখেন। আর এই জন্য তারা ওই সময় আয়োজন করেন আনন্দ অনুষ্ঠানের।

নুংফৌর এই ইরেইমা লাইরেম্বী মন্দিরেও প্রতি বছর সমস্ত গ্রামবাসী মিলে এই ধরণের পূজা এবং মিলনমেলার আয়োজন করেন। সেদিন পূজা অর্চনার পাশাপাশি সকালবেলা হয় লাই- হারাওবা। লাই শব্দের অর্থ হচ্ছে দেবতা আর হারাওবা মানে আনন্দ। অর্থাৎ দেবতাকে ঘিরে আনন্দানুষ্ঠান। প্রকৃতি পূজাই লাই হারাওবার মূল বিষয়। সৃষ্টিকর্তা জড় পৃথিবীতে প্রাণ সৃষ্টির পর আনন্দে যে নৃত্য করেছিলেন সেই নৃত্যই লাই হারাওবা বলে প্রচলিত বিশ্বাস। সেখানে জলদেবীর স্থলে আসা থেকে শুরু করে সৃষ্টিতত্ত্ব (লৈশেম জাগোই), গৃহ নির্মাণ (লৈতা জাগোই), কুমারী নৃত্য (লৈসা জাগোই), শস্য বপন, জন্ম মৃত্যু সমস্ত কিছুই নাচের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

এই লাই হারাওবা ঘিরে সবচেয়ে উল্লেখ্য যে বিষয়টি তা হচ্ছে এই অনুষ্ঠান সমস্ত গ্রামকে একটা অদৃশ্য অবিচ্ছেদ্যতার অনুভূতিতে বেঁধে রাখে। গোটা গ্রাম যেন এক যৌথ পরিবার। সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যদি কোনো গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়, বাতিল করে দেওয়া হয় মন্দিরের অনুষ্ঠান। পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে যেরকম সেই পরিবারের সদস্যরা শোকে, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধায় বিরত থাকেন সমস্ত আনন্দ আমোদ থেকে ঠিক তেমনি সেই একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে গোটা নুংফৌ গ্রামের বাসিন্দারা বন্ধ করে দেন নির্ধারিত আনন্দ অনুষ্ঠান। বিচ্ছিন্নতাবোধে আক্রান্ত এই সময়ে যখন প্রতিটা মানুষ ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে একে অপর থেকে তখন ইরেইমা লাইরেম্বীকে কেন্দ্র করে নুংফৌ-বাসিন্দাদের এই একাত্মতা যেন পারস্পরিক সম্প্রীতি সহমর্মিতার এক নতুন পাঠ।

নিরিবিলি ছোট্ট এই মন্দিরটির চারপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে রয়েছে সেই সমস্ত উপাদান যা উদ্ভাবন ও পরিচর্যার অভাবে রয়ে গেছে সবার লোকচক্ষুর আড়াল হয়ে। যেন কোনো মগ্ন শিল্পীর হাতে আঁকা তাঁর প্রেমিকা প্রকৃতির সৌন্দর্যের পটচিত্র, যা কিনা প্রতিটি ঋতুতে সেজে ওঠে নতুন নতুন সাজে। বিশেষত মন্দিরটির গা-ঘেঁষে বুকে একটা ছোট্ট দ্বীপ কোলে দাঁড়িয়ে থাকা বরাক-বিরহী আনোয়া সামান্য প্রসাধনে হয়ে উঠতে পারে বিভূতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসের ফুলকিয়া বৈহারের মতো এক পরিরাজ্য, এই অঞ্চলের মানুষের প্রকৃতির কোলে দু' দন্ড সময় কাটাবার শান্তির আশ্রয়স্থল। প্রয়োজন শুধু সেই যুগলপ্রসাদের যার সযত্ন ছোঁয়ায় সরস্বতী কুন্ডীর মতো নুংফৌর আনোয়াতেও হেমন্ত-বাতাসে সুগন্ধ ছড়াবে ফুটন্ত স্পাইডারলিলি, সমস্ত শীত বরাকের আনোয়ার কলমী বনে সোনালি রোদ গায়ে মেখে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিরা যখন আবার ফিরে যাবে তাদের মুলুক তখন নাকে লেগে থাকবে দুধলি ফুলের গন্ধ।

এই সংখ্যার সূচী

করোনা কালের প্রতিবেদন ফ্রি রিডিং

Disclaimer: Few pictures in this web magazine may be used from internet. We convey our sincere gratitude towards them. Information and comments in this magazine are provided by the writer/s, the Publisher/Editor assumes no responsibility or liability for comments, remarks, errors or omissions in the content.
Copyright © 2025. All rights reserved by www.EkhonDooars.com

Design & Developed by: WikiIND

Maintained by: Ekhon Dooars Team