বহুযুগের ওপার হতে আষাঢ় এল, এল আমার মনে
কোন সে কবির ছন্দ বাজে ঝর ঝর বরিষণে।
অবশেষে তিনি এসে পৌঁছলেন। জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া দেশে তিনি এবারেও নিয়ম মেনেই এলেন। যদিও আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এ দেশে মৌসুমির গতি নাকি ক্রমেই স্লথ হচ্ছে। গতবারের মতো এবারেও তাঁদের গবেষণা-প্রাপ্ত ডেটা তাই বলছে। যে উষ্ণ আবহাওয়া কয়েক মাস ধরে দেশ জুড়ে বইতে থাকে, জলীয় বাষ্প ভরা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আবির্ভাবে ও অগ্রগতিতে সেই হলকা অন্তর্হিত হয়, পরিবর্তে ভেজা বাতাস এসে রক্ষা করে আমাদের শরীর, মন এবং অবশ্যই আমাদের অস্তিত্বকে। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে বাতাসের সেই উষ্ণতা কমতে সময় লাগছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশেষ করে গত দুবছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ও পরিমাণও কমছে, কোথাও বেশ খানিকটা, কোথাও অনেকটা। তাঁদের মতে, এই সময়ে অন্যান্যবার বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তা মৌসুমি বায়ুর অনুকূলে থাকে, তা এবার অনুপস্থিত। এছাড়া ‘এল নিনো’ নামক বহু আলোচিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে জলবায়ু প্যাটার্নের উষ্ণ পর্বের প্রভাব তো আছেই। সর্বোপরি এবার বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসবার পথে ‘মাওয়ার’ নামক টাইফুনের প্রভাবে মৌসুমি বায়ুর গতি অনেকটা রুদ্ধ হয়েছে বলে তাঁদের অভিমত। আরব সাগরের সাইক্লোন ‘বিপর্যয়’এর এতে বড়সড় ভূমিকা না থাকলেও উত্তর ভারতে মৌসুমি ঢুকতে কিঞ্চিৎ বিলম্বের কারণ বইকি।
সব মিলিয়ে মৌসুমির এই দুর্বল ও ধীর অগ্রগতির ফলে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশের কৃষি, কারণ যুগ যুগ ধরে এই মৌসুমি বায়ুর উপরেই নির্ভর করে আমাদের কৃষি। প্রয়োজনীয় বৃষ্টি আসতে দেরি হলে চারা বপনের সময় বিলম্বিত হবে। রোপনে দেরি হওয়া মানে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব, যার প্রভাব গিয়ে পড়বে পরবর্তী মরসুমি ফসল রোপনের উপর। অর্থাৎ বছরভর ফসল উৎপাদনের চক্রটাই ঘেঁটে ঘ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা, যা এ দেশের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল চাষিদের চোখে অন্ধকার দেখার শামিল। মধ্য ও পশ্চিম ভারতের কৃষকদের এই অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হবে বেশি। বলাই বাহুল্য, জলবায়ুর পরিবর্তনের কুপ্রভাব আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড কৃষির উপর পড়তে শুরু করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাবসিডি-র দাওয়াই আপাতরক্ষার উপায় হতে পারে, কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক গবেষণা-রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে পৃথিবী জুড়ে কৃষিক্ষেত্রে ক্রমাগত সাবসিডি-র ফলে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় এবং অতিরিক্ত জ্বালানির ব্যবহারে উৎপাদনের যে প্রাবল্য সৃষ্টি হয়েছে তা কখনই পরিবেশ বান্ধব নয়। অতএব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিবর্তনের পথ বের করতে হবে নিজেদেরকেই। ‘সাস্টেনেবল’ শব্দটির মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের দিকে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছি, যত দিন যাবে ততই তার মর্ম উপলব্ধি হবে।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team