কথায় বলে পাঁচজন বাঙালি একত্রিত হলেই একটি দুর্গাপুজো করার কথা ভাবে। প্রবাসে সংস্কৃতিমনন বাঙালি একজোট হয় আরও একটি বিশেষ কারণে, বাঙালির প্রাণের ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে কবি গুরুর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী এবার বিশেষ উদ্দীপনার সাথে পালিত হল। মধ্য দিল্লির মান্ডি হাউস এলাকায়, বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে প্রতিবারের মতো এবারও রবীন্দ্রভবনে এক প্রভাতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এ শহরের গুণীজনদের সান্নিধ্যে সকালটি সুর তাল ছন্দে মনোরম হয়ে উঠেছিল। প্রবাসে বেশিরভাগ অনুষ্ঠান মানুষের সুবিধার্থে সপ্তাহান্তে (রবিবার) অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি, ৭ই মে রবিবারে প্রভাতী অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিল্পীদের সাথে রাজধানীর বেঙ্গলি স্কুলগুলোর কচিকাঁচারাও অংশগ্রহণ করেছিল। এই প্রসঙ্গে বলি, দিল্লিতে যে কয়েকটি বেঙ্গলি স্কুল আছে তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল প্রবাসী বাঙ্গালীদের বাংলা চর্চার জন্য। এই স্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে (CBSE) পড়ানো হয় তবে বাংলা বিষয়টা পড়ানো হয় বলে বাঙালি পড়ুয়ারাই এসব স্কুলে সংখ্যা গরিষ্ঠ।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই দিল্লির বাঙালি প্রধান এলাকা হিসাবে চিত্তরঞ্জন পার্ককেই জানেন বেশিরভাগ মানুষ, কিন্তু পুরো দিল্লিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাঙালি (তথ্যসূত্র: অন্তর্জাল) তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংগঠনের পক্ষ থেকে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান করেন। এখানে কালীবাড়িগুলিকে কেন্দ্র করে বেশিরভাগ জায়গায় বাঙালি সংগঠন (ক্লাব) গঠিত হয়েছে। সি.আর পার্কে বহু অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে কবিপক্ষ পালিত হয়েছে। কবিপক্ষ পালিত হয়েছে সমগ্র দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই। পূর্ব দিল্লি ও নয়ডার শিল্পীদের নিয়ে পূর্বাঞ্চল বঙ্গীয় সমিতি ময়ূরবিহার কালীবাড়িতে গত ১৪ই মে পালন করেছে আরেকটি প্রভাতী অনুষ্ঠান।
এবছর আমাদের কবি প্রণামের বিষয় রেখেছিলাম 'রবি ঠাকুরের ভাবনায় তিন নারী’। যেখানে কবিগুরুর নৃত্যনাট্যের তিন প্রধান নারী চরিত্র প্রাধান্য পেয়েছিল। চন্ডালিকা, শ্যামা ও চিত্রাঙ্গদা, আমি শ্যামা চরিত্রটি কে রূপদান করেছিলাম। তিনটি নৃত্যনাট্যের অংশবিশেষ নিয়ে করা অনুষ্ঠানটি নৃত্য, গীত ও পাঠে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল।
দিল্লিতে রবীন্দ্র আশীর্বাদধন্য রাইসিনা (মন্দিরমার্গ) বঙ্গীয় বিদ্যালয় যেখানে আমি শিক্ষকতা করি, একবার কবিগুরু এসেছিলেন এই স্কুলে, তাই কবি জন্মজয়ন্তী যে এখানে স্বমহিমায় পালিত হয় তা বলাই বাহুল্য। এবারেও ৯ই মে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে তাঁর ১৬২ তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয় এই স্কুলে।
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই প্রবাসেই। বাংলার বাইরে থেকেও যেন তাদের ভাবনায়, চেতনায়, মননে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা, তার বাণী প্রভাব ফেলতে পারে। “সংসারের সব কাজে, ধ্যানে, জ্ঞানে…” তিনি যেন “হৃদয়ে থাকেন” আপামর বাঙালির, সেই কর্মকাণ্ডে দিল্লি প্রবাসী বাঙালিদের এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team