ইসলামপুর সহ উত্তর দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে প্রচুর জমিদার, রাজা-বাদশা, মহারাজা এবং এমনকি বিদেশি শাসকেরাও রাজত্ব করেছেন আমরা জানি। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে থেকে গেছে তাদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রচুর জমিদার বাড়ি, কাছারি, রাজবাড়ি, ডাকবাংলো, নীলকুঠি, মঠ, মন্দির, মসজিদ, দরগা, প্রচুর দিঘি, পুকুর। আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য রেখে সেগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে। যদিও জরাজীর্ন অবস্থা সেগুলোর, যথাযথ সংস্কারের অভাবে। আসলে, তৎকালীন শাসক বা জমিদারেরা জলের বিপুল প্রয়োজনীয়তা থেকেই খনন করেছিলেন বিভিন্ন জলাশয়, পুকুর, দিঘি ইত্যাদি। কারণ, আগেই উল্লেখ করেছি ইসলামপুরে কোনও নদী নেই। যদিও চোপড়ার ওপর দিয়ে ডক নদী গিয়েছে।
তা প্রায় অনেক বছর আগে এক ধর্মপ্রাণ রাজা ইসলামপুরের শিশু-উদ্যানের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি উঁচু ঢিবির ওপরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শোনা যায়, ওই ঢিবির মাটি কাটতে গিয়ে অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওই ঢিবির কিছুটা পাশে নলকূপ বসানোর জন্য মাটি খনন করতে গিয়ে পাওয়া যায় বেশ কিছু নকশা করা ইট এবং একটি কালো পাথরের প্রাচীন যুগের অসামান্য কারুকার্যখচিত বিষ্ণুমূর্তি। এই ঢিবির অদূরেই বর্তমানে যেখানে সংশোধনাগার অবস্থিত সেখানে রাজবাড়ি ছিল। ঠিক তার অদূরেই লেকটাউনে রাজার উদ্যোগে দুটি দিঘি তৈরি করা হয়। এই দুটি দিঘিই এলাকায় 'রাজদিঘি' বলেই পরিচিত। কথিত আছে, রাজপরিবারের ব্যক্তিবর্গ সেখানেই স্নান করতেন। দক্ষিণ দিকের বড় দিঘিটি যখন ১৯৭০ সালে সংস্কার করা হয়, তখন সেখান থেকে কিছু প্রাচীন মূর্তি উঠে আসে। খুব সম্ভবত ত্রয়োদশ শতকে তুর্কিদের আক্রমণের সময় এই মূর্তিগুলো জলে ফেলে দেওয়া হয়। এই দুটি দিঘির একটু দূরে একসময় দুটি রিং-কুয়ো দেখা যেত। যার জল নাকি পান করা হত।
আসলে মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় থেকে ইংরেজ আমলের বহু জমিদার, রাজা, মহারাজা, বাদশা, পির, ফকিররা সেচ ও পানীয় জলের জন্য বাংলা তথা সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য দিঘি খনন করিয়েছিলেন। রাজদিঘির একটি দিঘি এখন কালের গর্ভে আর লেকটাউনে অবস্থিত রাজদিঘিই বর্তমানে হেমেন চৌধুরীর পুকুর। হেমেন চৌধুরী এই পুকুরের মালিক। তাঁর মালিকানায় ১৯৭০ সালে এই পুকুরটির সংস্কার করার সময় পুকুরের নীচ থেকে পাওয়া যায় বিষ্ণু, মনসা সহ আরও কিছু দেবদেবীর প্রাচীন মূর্তি। আগে এই পুকুরে অনেকে সাঁতারও কাটতো। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির দু'জন ছাত্রের মৃত্যু হয় এই পুকুরে সাঁতার কাটতে গিয়ে। তারপর থেকে কাঁটাতারে ঘিরে ফেলা হয় পুকুরটি এবং বন্ধ করে দেওয়া সাঁতার কাটা। এখন এখানে মৎস চাষ করা হয়।
Have an account?
Login with your personal info to keep reading premium contents
You don't have an account?
Enter your personal details and start your reading journey with us
Design & Developed by: WikiIND
Maintained by: Ekhon Dooars Team